Pages

Friday, March 30, 2012

৪০ পরিবারের পৈতৃক জমি এখন অর্পিত সম্পত্তি!

দৈনিক প্রথম আলো


ফরিদপুরের মধুখালীতে বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ সংখ্যালঘু ৪০টি পরিবারের পৈতৃক ৩৭ একর জমি নতুন করে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কারণ্যপুর গ্রামের সংখ্যালঘুরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ফরিদপুর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলোক সেন বলেন, ‘এটি সংখ্যালঘুদের ওপর একরকম নির্যাতন। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা-পয়সা খেয়ে এ অন্যায় কাজ করেছেন, তাঁদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।’
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার সরকার প্রথম আলোকে জানান, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে মধুখালীর অর্পিত সম্পত্তির যে তালিকা গেজেট তৈরির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, তাতে কারণ্যপুর মৌজার ওই সম্পত্তিও অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির দায় থেকে মুক্ত হলেও সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে পুরোনো তালিকা পাঠানোর কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পরে আমাদের নজরে আসে। এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। তবে গেজেট প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে সেখানে আপিল করার সুযোগ থাকবে।’
কারণ্যপুর গ্রামের বাসিন্দা কাদেরদী উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক কানাইলাল গাঙ্গুলীর চার একর ৬৬ শতাংশ, অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা গুরুদাস চক্রবর্তীর পাঁচ একর ৩৪ শতাংশ জমি রয়েছে। বসতবাড়িসহ তাঁদের দুজনের জমিও অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় ফেলা হয়েছে।
শিক্ষক কানাইলাল গাঙ্গুলী বলেন, ‘১৯৮৪ সালে সরকার একটি আইন করেছিল। সে আইনবলে নতুন করে আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত (ভিপি) করা হবে না। কিন্তু ১৯৯০ সালে আমাদের এলাকার সব সংখ্যালঘুর সম্পত্তি ভিপি তালিকাভুক্ত করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই বছর মাঠজরিপের পর যখন জমির অ্যাটাসটেশন হয়, তখন আমরা জানতে পারলাম, আমাদের কারণ্যপুর মৌজার সব হিন্দু সম্পত্তি (৫৪ খতিয়ান) অর্পিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি ফরিদপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। পরে জেলা প্রশাসন তালিকা সংশোধন করে মূল তালিকা ও সংশোধিত তালিকাসহ ভূমিসচিবকে প্রতিবেদন পাঠায়। এরপর ওই জমি আমাদের এলাকার ৪০টি পরিবারের নামে রেকর্ড হয়।’ চলতি বাংলা ১৪১৮ সন পর্যন্ত সব জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই শিক্ষক গাঙ্গুলী। তিনি জানান, সমপ্রতি তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই সম্পত্তি আবার অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করে গেজেট তৈরি হচ্ছে।
মধুখালী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইউসুফ আলী মোল্লা জানান, গেজেটে ঠিকমতো সংশোধন হয়ে থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়।

Tuesday, March 27, 2012

উত্তর ভারত বনাম দক্ষিণ পাকিস্তান

সূত্রঃ প্রথম আলো

উপমহাদেশের দুটি অঞ্চল ভারতের উত্তর প্রদেশ এবং পাকিস্তানের সিন্ধুর মধ্যে অনন্য বন্ধন আছে, আছে ব্যবধানও।
প্রথমেই বন্ধনের কথা। ১৯৪৭ সালে উত্তর প্রদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান পাকিস্তানের সিন্ধু চলে আসে। প্রদেশটির বর্তমান জনসংখ্যার ২১ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু। সিন্ধুর প্রতি পাঁচজন অধিবাসীর মধ্যে একজন ভারত এবং বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ থেকে আসা অভিবাসীদেরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম।
পূর্বপুরুষদের গ্রাম, শহর বা বসতির প্রসঙ্গ এখনো অনেকের চোখকে উজ্জ্বল করে তোলে, অন্যদের করে তোলে স্মৃতিকাতর। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ও সমৃদ্ধ পারিবারিক জীবনের প্রত্যাশায় তারা সবাই জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশত্যাগ করেছে। তাদের সন্তানদের পাঠ্যবই স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবে আগামী অনেক দশকেও অভিবাসী হিন্দুদের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে না এবং তারা অবহেলিতই থেকে যাবে।
উত্তর প্রদেশ সম্প্রতি তাদের ৪০৩ আসনের বিধানসভার সদস্য নির্বাচন করেছে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতে বেশি সংখ্যক মুসলমান বাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যার (প্রায় ২০ কোটি) মধ্যে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশই মুসলমান। রাজ্যেও প্রায় অর্ধেক সাধারণ আসনে মুসলমান প্রার্থীরা ছিলেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনকি তাঁদের মধ্যে ৬৮ জন বিধানসভার সদস্য হতে পেরেছেন। আরও ৬৪ জন দ্বিতীয় হয়েছেন।
প্রায় সব দলই মুসলমান প্রার্থী দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির (এসপি) আদিল শেখ বিধানসভার স্পিকার সুখদেব রাজহারকে পরাজিত করেছেন। সাবেক মন্ত্রী নন্দ গোপাল গুপ্ত এসপির নতুন মুখ হাজি পারভেজ আহমেদের কাছে হার মেনেছেন। চারবার জয়ী বিজেপির ইন্দ্র দেব সিং ভোটযুদ্ধে হেরেছেন মোহাম্মদ গাজীর কাছে। ফলাফলের পর কেউ অপ্রীতিকর কথা বলেনি, কোনো ধরনের অভিযোগ তোলা হয়নি, হিন্দুত্ববাদীদের ধরাশায়ী করতে কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব পাকানোর কথা বলা হয়নি, এমনকি নিম্ন বর্গের মুসলমানদের কাছে সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের পরাজয়ের পেছনে বহুল প্রচলিত বিদেশি হাতও কেউ দেখেনি।
এ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি তাদের আসন সংখ্যা ৯৭ (২০০৭) থেকে ২২৪-এ (সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) উন্নীত করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বহুজন সমাজ পার্টি ২০৬ থেকে মাত্র ৮০-তে নেমে গেছে। মাত্র ৪ শতাংশ ভোট ঘুরে যাওয়ায় এই বড় পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে এবং সব সমালোচকই বিশ্বাস করেন, মুসলমানদের ভোটই সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে।
স্মরণ রাখা দরকার, উর্দু সংস্কৃতি ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কেন্দ্র উত্তর প্রদেশ। কংগ্রেসের নিজের শহর রায়বেরেলিতে সংখ্যালঘু মুসলমান ভোটাররাই রাজনৈতিক ভাগ্য ঘুরিয়ে দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এটাই নির্বাচনের বৈচিত্র্য এবং গণতন্ত্রের ক্ষমতা।
আমি বলছি না, সীমান্তের ওপারে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। তারাও অনেক সমস্যা মোকাবিলা করে। কিন্তু অপেক্ষা করুন, আমি মনে করি দেশপ্রেম-হীনতার তকমা এড়াতে আমি যা বলতে চাই তার জন্য আমার দুঃখপ্রকাশ এবং আসল কথা বলার আগে যুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। তার চেয়ে ভালো তা উচ্চ স্বরে ও পরিষ্কারভাবে বলা।
১৯৪৭ সালে বিপুল সংখ্যক হিন্দু সিন্ধু থেকে ভারতে চলে যায় এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে সেখানকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তখন জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বহু হিন্দু দেশত্যাগ করেনি। সিন্ধুতে অমুসলিমদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ এবং উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের অর্ধেক। কিন্তু কেউ কি কখনো শুনছে, একটি সাধারণ আসনের নির্বাচনে একজন অমুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং জিতেছেন? কিছু পীড়াদায়ক তথ্য বলছি:
২০০৮ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে একজন মাত্র হিন্দু প্রার্থী ছিলেন। জাতীয় পরিষদের ২২৯ নম্বর আসনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মনোনয়ন নিয়ে মহেশ কুমার মালহানি হাজার খানেক ভোট পেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল) আরবাব জাকাউল্লার কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। সিন্ধুর প্রাদেশিক আসন পিএমএল-এফের প্রার্থী রাজবীর সিং পিপিপির আলী মারদান শাহর বিপক্ষে বিপুল ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পিপিপির ডা. দয়ারামই একমাত্র হিন্দু, যিনি ২০০৮ সালে সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
দুই দেশ ও প্রদেশের মধ্যে এটাই পার্থক্য। এর অর্থ এই নয়, পাকিস্তানে হিন্দুদের রাজনীতি হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ধার্মিক ভোটারদের জন্য হিন্দু প্রার্থীদের যথেষ্ট হালাল মনে করে না। সিন্ধুর জাতীয় ও প্রাদেশিক আসনে ২৬ জন স্বতন্ত্র হিন্দু প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নয়জন চিকিত্সক এবং অন্যদের অধিকাংশই প্রকৌশলী ও আইনজীবী। এটা সুস্পষ্ট, সিন্ধুর মধ্যবিত্ত হিন্দু শ্রেণী রাজনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। এদের মধ্যে কেউ-ই প্রকৃতপক্ষে ১০০ ভোটও পাবে না। এর অর্থ তাদেরকে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। কোনো দল কি তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সাহস করবে?

Monday, March 26, 2012

লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান উৎসবের কারণে ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি




নারায়ণগঞ্জে লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান উৎসবের কারণে আগামী ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি।
হরতালের পরিবর্তে ২৯ মার্চ জেলায় জেলায় এবং ৩১ মার্চ ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে বিএনপি।রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদার জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে চারদলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে খালেদার জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এ কথা জানান।তিনি ব
লেন, “লাঙ্গলবন্দে পূণ্যস্নান উদযাপন কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চার দলসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া।”২৯ মার্চ ঢাকার বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।গত ১২ মার্চ ঢাকার মহাসমাবেশে বাধা প্রদান, হামলা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ২৯ মার্চ হরতালের এই কর্মসূচি দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট।রাত পৌনে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ে পরিতোষ কান্তি সাহার নেতৃত্বে লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান উদযাপন কমিটির ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়।বৈঠকের পর পরিতোষ কান্তি সাহা সাংবাদিকদের বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতার কাছে আমরা একটি আবেদন জানিয়ে এসেছি। তিনি সুবিবেচনা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।”তিনি বলেন, নাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান শুরু হবে ৩০ মার্চ। দুয়েকদিন আগে থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্তরা এখানে আসতে শুরু করেন।তাই ২৯ মার্চের হরতাল এই উৎসবে ভক্তদের আসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।উদযাপন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, জয়ন্ত কুমার কুণ্ড ও লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, পূণ্যস্নান উদযাপন কমিটি নেতারা চলে যাওয়ার পর রাত ১০টা ১০ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত খালেদা জিয়া চার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আবদুল রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Saturday, March 24, 2012

মেবারের রাণী পদ্মিনীঃ হিন্দু সতি নারীদের আদর্শ



बोलहु सुआ पियारे-नाहाँ । मोरे रूप कोइ जग माहाँ ? सुमिरि रूप पदमावति केरा । हँसा सुआ, रानी मुख हेरा ॥ (नागमती-सुवा-संवाद-खंड) "Who is more beautiful, I or Padmavati?, Queen Nagamati asks her new parrot and it gives a displeasing reply…";
অভিমন্যু


ক্ষত্রিয়-নন্দন || অতএব রণভূমে চল ত্বরা যাই হে, চল ত্বরা যাই | দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে, তুল্য তার নাই || যদিও যবনে মারি 
চিতোর না পাই হে, চিতোর না পাই | স্বর্গসুখে সুখী হব, এস সব ভাই হে, এসো সব ভাই || *********************** ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ কাব্য থেকে নেওয়া

আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ইতিহাস আমরা ঠিক ভাবে জানি না বা কেউ আমাদের শেখায় না। আমাদের শিখতে হয় হিন্দুরাজারা ছিল অত্যাচারী আর আরব তুর্কি থেকে আক্রমণকারী বহিরাগত দস্যুরা আমাদের উদ্ধারকর্তা। আমরা শিখি সোমনাথ মন্দির লুটকারী গজনি অধিপতি মাহমুদ নাকি প্রকৃত রাজা। তাজমহল প্রেমের প্রতিক। অথচ শাহজাহান মমতাজের স্বামীকে হত্যা করেছিলেন মমতাজকে বিয়ে করার জন্য। মমতাজ ছিলেন শাহজাহানের সাতবিবির চার নম্বর। তিনি ১৪তম প্রসবের সময় মারা যান এবং তারপর শাহজাহান তার বোনকে বিয়ে করেন।
পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত দেখানো হয়। কিন্তু ঘোরিকে ১১৯১ সালে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত করার পর পর তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অসুরদের ক্ষমা করার ফল তিনি পেয়েছিলেন যখন ১১৯২ সালে আবার ঘোরি অন্যায়যুদ্ধে তাঁকে পরাজিত এবং হত্যা করেন। কিন্তু পৃথ্বীরাজ চৌহান অন্যায়ের কাছে কখনও চোখ নামান নাই।
আপনারা কি তৈমুরের কঙ্কালের পাহাড়ের কথা ভুলে গেছেন? যেটা হিন্দুদের মাথা দিয়ে বানানো হয়েছিল?  লিস্ট আরও বাড়তে থাকে। আজ এক সত্য ঘটনা বলব।
আমরা জানি উপমহাদেশে খিলজি রাজবংশের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী নৃপতি আলাউদ্দিন খিলজি ১৩১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিনি দিল্লিতে শায়িত। ১২৯৬-১৩১৬ সাল পর্যন্ত তার শাসনামলের ব্যাপ্তি ছিল।



কিন্তু আমরা কি জানি  খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জালাল আল-দীনের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা তিনি। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি এলাহাবাদ শহরের কারা অঞ্চলের শাসক ছিলেন। ১২৯৬ সালে তিনি জালাল আল-দীনকে হত্যা করেন। এ অবস্থায় জালাল আল-দীনের স্ত্রী মালিকা জাহান তার ছেলে রুকন-উদ-দীনকে সিংহাসনে বসান। তখন আলাউদ্দিন খিলজি দ্রুতবেগে দিল্লিতে উপস্থিত হয়ে মালিকা জাহানকে বন্দি করেন এবং রুকন-উদ-দীনকে অন্ধ করে দেন। এভাবেই তিনি দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন।
কিন্তু এই পিশাচের সব থেকে ন্যক্কারজনক কৃতি আপনাদের কাছে এখন বলব।
১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর গড় দখল করেন। চিতোরের রানী পদ্মিনীর রূপের কথা শুনে এ অভিযানে লিপ্ত হয়েছিলেন আলাউদ্দিন। মালিক মুহাম্মদ জয়সির মহাকাব্য পদ্মাভতে অমর হয়ে আছে এই কাহিনী।
১৩০৩ সালের ২৮ জানুয়ারি রাজপুতদের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি মেবারের উদ্দেশে রওনা করেন আলাউদ্দিন। এ খবর রাজপুতদের কাছে পৌঁছার পর রাজপুত সেনাপতিরা কূটকৌশলে সুলতানকে পরাজিত করার ফন্দি আঁটে। তারা সুলতানকে জানান, পরদিন সকালে পদ্মিনীকে তার কাছে হস্তান্তর করা হবে। নির্দিষ্ট সকালে রাজপুতদের দেড়শ’ পাল্কি আলাউদ্দিনের তাঁবুর দিকে যাত্রা করে। পাল্কিগুলো তাঁবুর কাছে এমন জায়গায় থাকে যেখানে পদ্মিনীর স্বামী রাজা রতন সিং বন্দি ছিলেন। আকস্মিকভাবে পাল্কি থেকে রানী পদ্মিনী ও তার পরিচারিকাদের পরিবর্তে নেমে আসে সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী। তারা রতন সিংকে মুক্ত করে নিয়ে যান আলাউদ্দিন কিছু বুঝে ওঠার আগে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সুলতান চিতোর গড় তছনছ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ লক্ষ্যে চিতোর দুর্গ তিনি অবরোধ করেন। এ অবস্থায় রাজা রতন সিং দুর্গের ফটক খুলে দিয়ে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার জন্য রাজপুতদের নির্দেশ দেন। রাজার এই নির্দেশে রানী পদ্মিনী হতচকিত হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন সুলতানের শক্তিশালী বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হবে অসম। এ অবস্থায় তার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল। হয় জহরপানে আত্মহত্যা, নয়তো রাজপুত রমণীসহ নিজেকে সুলতানের কাছে সমর্পণ করা। এদিকে প্রাসাদের বাইরে লড়াইয়ে রাজপুতদের পরাজয় ঘনিয়ে আসছিল। ১৩০৩ সালের ২৬ আগস্ট আলাউদ্দিন দলবলে চিতোর দুর্গে ঢুকে পড়েন।
নগর রক্ষার্থে রাজপুতগণ প্রাণপণে যুদ্ধ করে নিহত হন। দুর্গের অভ্যন্তরে রানী পদ্মিনীর সঙ্গে তেরো হাজার রাজপুত রমণী ‘জহরবতের’ অনুষ্ঠান করে প্রাণ বিসর্জন করেন।  তারা জীবন্ত অগ্নিকুণ্ডে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। একই ভাবে আরব লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচতে সিন্ধুর নারীরা ‘জহরবতের’ অনুষ্ঠান করে প্রাণ বিসর্জন করেছিলেন।

আত্মহত্যা করা সৈন্য ও রানীদের ছাইভস্ম দেখে আলাউদ্দিন  হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন হিন্দু নারীদের কাছে সম্মান জীবনের চাইতেও বড়।

মেবারের রাণী পদ্মিনীঃ হিন্দু সতি নারীদের আদর্শকিন্তু আমরা কি জানি খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জালাল আল-দীনের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা তিনি। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি এলাহাবাদ শহরের কারা অঞ্চলের শাসক ছিলেন। ১২৯৬ সালে তিনি জালাল আল-দীনকে হত্যা করেন। এ অবস্থায় জালাল আল-দীনের স্ত্রী মালিকা জাহান তার ছেলে রুকন-উদ-দীনকে সিংহাসনে বসান। তখন আলাউদ্দিন খিলজি দ্রুতবেগে দিল্লিতে উপস্থিত হয়ে মালিকা জাহানকে বন্দি করেন এবং রুকন-উদ-দীনকে অন্ধ করে দেন। এভাবেই তিনি দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন। কিন্তু এই পিশাচের সব থেকে ন্যক্কারজনক কৃতি আপনাদের কাছে এখন বলব। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর গড় দখল করেন। চিতোরের রানী পদ্মিনীর রূপের কথা শুনে এ অভিযানে লিপ্ত হয়েছিলেন আলাউদ্দিন। মালিক মুহাম্মদ জয়সির মহাকাব্য পদ্মাভতে অমর হয়ে আছে এই কাহিনী। ১৩০৩ সালের ২৮ জানুয়ারি রাজপুতদের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি মেবারের উদ্দেশে রওনা করেন আলাউদ্দিন। এ খবর রাজপুতদের কাছে পৌঁছার পর রাজপুত সেনাপতিরা কূটকৌশলে সুলতানকে পরাজিত করার ফন্দি আঁটে। তারা সুলতানকে জানান, পরদিন সকালে পদ্মিনীকে তার কাছে হস্তান্তর করা হবে। নির্দিষ্ট সকালে রাজপুতদের দেড়শ’ পাল্কি আলাউদ্দিনের তাঁবুর দিকে যাত্রা করে। পাল্কিগুলো তাঁবুর কাছে এমন জায়গায় থাকে যেখানে পদ্মিনীর স্বামী রাজা রতন সিং বন্দি ছিলেন। আকস্মিকভাবে পাল্কি থেকে রানী পদ্মিনী ও তার পরিচারিকাদের পরিবর্তে নেমে আসে সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী। তারা রতন সিংকে মুক্ত করে নিয়ে যান আলাউদ্দিন কিছু বুঝে ওঠার আগে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সুলতান চিতোর গড় তছনছ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ লক্ষ্যে চিতোর দুর্গ তিনি অবরোধ করেন। এ অবস্থায় রাজা রতন সিং দুর্গের ফটক খুলে দিয়ে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার জন্য রাজপুতদের নির্দেশ দেন। রাজার এই নির্দেশে রানী পদ্মিনী হতচকিত হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন সুলতানের শক্তিশালী বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হবে অসম। এ অবস্থায় তার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল। হয় জহরপানে আত্মহত্যা, নয়তো রাজপুত রমণীসহ নিজেকে সুলতানের কাছে সমর্পণ করা। এদিকে প্রাসাদের বাইরে লড়াইয়ে রাজপুতদের পরাজয় ঘনিয়ে আসছিল। ১৩০৩ সালের ২৬ আগস্ট আলাউদ্দিন দলবলে চিতোর দুর্গে ঢুকে পড়েন। নগর রক্ষার্থে রাজপুতগণ প্রাণপণে যুদ্ধ করে নিহত হন। দুর্গের অভ্যন্তরে রানী পদ্মিনীর সঙ্গে তেরো হাজার রাজপুত রমণী ‘জহরবতের’ অনুষ্ঠান করে প্রাণ বিসর্জন করেন। তারা জীবন্ত অগ্নিকুণ্ডে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। একই ভাবে আরব লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচতে সিন্ধুর নারীরা ‘জহরবতের’ অনুষ্ঠান করে প্রাণ বিসর্জন করেছিলেন। আত্মহত্যা করা সৈন্য ও রানীদের ছাইভস্ম দেখে আলাউদ্দিন হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন হিন্দু নারীদের কাছে সম্মান জীবনের চাইতেও বড়।


Wednesday, March 21, 2012

স্বরুপকাঠিতে বৃটিশ আমলের পুরানো মন্দির ভেঙ্গে দিয়েছে দুবৃত্তরা


BangladeshNews




উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন বিন্যা সার্বজনীন শ্রী শ্রী কালী মন্দির ভেঙ্গে দিয়েছে একদল দূবৃত্তরা। সরজমিনে দেখা যায় ১৯২০ সালে প্রতিষ্টিত এ মন্দিরের সম্পর্ন অংশ এবং প্রতিমা গুড়িয়ে দেয়া হয় মাটির সাথে। মন্দিরের সভাপতি সুধাংশু মজুমদার  জানান সোনারঘোপ মৌজার আর এস ৪৮৬ খতিয়ানের এস এ ৫৫৬ খতিয়ান ভূক্ত ২৯৫১ নং দাগের মধ্যে ৭ শতাংশ জমির উপর প্রতিণ্ঠিত এ মন্দিরে জন্মলগ্ন থেকে কালি পূজা ও শীতলা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
স্থানীয় একাধিক পূজারী জানান সখানাত চক্রবর্তী নামে এক পূজারী এখানে পূজা অর্চনা করতেন। তিনি শঠতার আশ্রয় নিয়ে মন্দিরের জমি তার নিজ নামে আর এস রেকর্ড করেন। কিন্তু ওই সময় তার নামে রেকর্ড হলেও নিয়মিত পূজা অর্চনা হওয়ায় এ বিষয় নিয়ে কোন সমস্যা হবেনা বলে তিনি আশ্বাস দিলে তখন সংশোধনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হযনি।সখানাত চক্রবর্তি মৃত্যু বরন করলে তার ছেলে মনমথ চক্রবর্তি এই জমি গোপনে দক্ষিন বিন্যার মনোরঞ্জন মজুমদার নিরঞ্জন মজুমদার, স্বপন মজুমদার ও বিধান মজুমদারের নিকট বিক্রি করে দেয়। পরবর্তিতে এই ক্রেতারা আবার গোপনে একি গ্রামের হেমায়েত হোসেনের নিকট পূনরায় বিক্রি করে ২০১২ সনে।
এই মন্দিরের জায়গা ক্রয় করেই আবু হানিফ, মোনজ গাইন, এনায়েত হোসেন ও আঃ রহিম সহ অন্নান্য কতিপয় ব্যাক্তি মিলে গত সপ্তাহে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মন্দিরের সকল প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলে ও মন্দিরের ঘরটি সম্পর্ন মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে মন্দির সংলগ্ন কয়েক হাজার টাকার গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
বিষয়টি নিয়ে মন্দিরের কোষাদক্ষ কৃসনো কান্ত মজুমদার বলেন মন্দির ভাঙ্গতে আসা হেমায়েত আমাকে জানান বলদিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রুহল আমিনের কাছ থেকে তারা জমি অধিগ্রহনের লিখিত আদেশ নিয়েই মন্দির ভেঙ্গে ফেলছেন।মন্দিরের অবস্থান অক্ষুন্য রাখতে স্থানীয় পুজারী ও ভক্তবৃন্দ পিরোজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৮ মার্চ ২০১২ ইং তারিখে মামলা দায়ের করেন। তারা বলেন কোর্টের আদেশ থাকার পড়ও হানিফ গং মন্দিরের একাধিক গাছ গতকাল কেটে নিয়ে যায়।

Monday, March 19, 2012

সুনামগঞ্জে হিন্দুদের বাড়ি অর্পিত সম্পত্তির নাম দিয়ে সাংসদের পিএস কে বন্দোবস্ত

সূত্রঃ প্রথম আলো


সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়ায় ৬২ বছর ধরে বাস করছে সরকারি কলেজের সাবেক অফিস সহকারী দীনেশ চন্দ্র রায়ের পরিবার। তারা যে বাড়িতে আছে সেটি অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে। বাড়িটির ১৮ শতাংশ জমি তারা বন্দোবস্ত পায় ১৯৬৭-৬৮ সালে। সমপ্রতি তাদের বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।

বাড়ির ১০ শতাংশ জমি সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ মতিউর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) এমদাদুল হক ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মো. ইব্রাহিমের নামে 
বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাংসদ মতিউর রহমান জানান, তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি জেনে সঙ্গে সঙ্গে বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন।
দীনেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে দীগেশ চন্দ্র রায় জানান, ১৯৪৯ সাল থেকে তাঁরা উকিলপাড়ায় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের কৃষ্ণচন্দ্র ছাত্রাবাসের পাশের ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। সেখানে তাঁদের আধা পাকা বাড়ি রয়েছে। ১৯৬৭-৬৮ সালে এটি তাঁর বাবা দীনেশ চন্দ্র রায়ের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বাবার মৃত্যুর পর এখানে তিনি ও তাঁর ভাই আশীষ রায়, দীপ্তেশ রায় ও কৃপেশ রায়ের পরিবার বাস করছে। 
দীগেশ চন্দ্র রায় আরও জানান, বাড়িটি নিয়ে তাঁদের একটি অর্পিত সম্পত্তি মামলাও (নং-২৫৫,৬৭-৬৮) রয়েছে। গত বুধবার তাঁরা জেনেছেন, বাড়ির ১৮ শতাংশ জমির মধ্যে ১০ শতাংশ এমদাদুল হক ও ইব্রাহিমের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
বাড়িটির পাঁচ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার কথা স্বীকার করে সাংসদের পিএস ও জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি সব নিয়ম মেনেই জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছি। কোনো অন্যায় করিনি। এর সঙ্গে সাংসদকে জাড়ানো ঠিক হবে না।’ তবে গত শনিবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এই জায়গা এখন আর আমি নেব না।’
স্থানীয় লোকজন জানান, উকিলপাড়া এলাকাটি শহরের কেন্দ্রস্থলে থাকায় এখানে জমির দাম বেশি। এই ১০ শতাংশ জমির দাম কম করে হলেও ৫০ লাখ টাকা হবে। সুনামগঞ্জের অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় ১৭৪টি বাড়ি ও ১৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই বাড়িটিও রয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন-২০১১ অনুযায়ী, সরকার যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভোগদখলকারীদের সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে লক্ষ্যে সারা দেশে তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ সময় ৬২ বছর ধরে ভোগদখলে থাকা বাড়ি অন্যের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ায় শহরের সংখ্যালঘুদের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। 
সুনামগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী স্বপন কুমার দেব বলেন, ‘এক ভাই ভারতে গেছে। চার ভাই দেশে আছে। এমন অনেক জায়গার পুরোটাই অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু জানলে কোনো যাচাই-বাছাই না করেই তালিকায় নাম উঠানো হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি সুনামগঞ্জে অনুপস্থিত থাকার সময় জায়গাটি ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বন্দোবস্ত দিয়েছেন। বন্দোবস্ত নিয়মানুযায়ী হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামরুল আলম বলেন, যাঁদের আগে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা দীর্ঘদিন খাজনা না দেওয়ায় তাঁদের নামে বন্দোবস্ত বাতিল করে অন্যকে দেওয়া হয়েছে।
দীগেশ চন্দ্র রায় দাবি করেন, বাংলা ১৪০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জমির খাজনা পরিশোধ করেছেন তাঁরা। এরপর বারবার খাজনা পরিশোধের জন্য আবেদন করলেও ভূমি কার্যালয় তাঁদের খাজনা রাখেনি। 

Thursday, March 15, 2012

Hindu girls are forced to marry Muslims: Pakistani president Asif Ali Zardari's sister

ISLAMABAD: Acknowledging that Hindus face a lot of challenges in Sindh, sister of Pakistan president Asif Ali Zardari said in Pakistan's parliament on Thursday that Hindu girls are being forcibly kept in madrassas in the province and are forced to marry Muslims.

The remarks by Azra Fazal Pechuho, a lawmaker of the ruling Pakistan People's Party, came against the backdrop of the Pakistan supreme court's recent directive to authorities to produce three Hindu women who were allegedly kidnapped in Sindh.

Two of the women - Rinkle Kumari and Lata Kumari - have told magistrates they voluntarily converted.

Speaking in the National Assembly or lower house of parliament on the issue of Rinkle Kumari, Pechuho said Hindus faced a lot of challenges in Sindh.

She stressed the need for laws to protect the rights of minority communities and to end forced conversions.

Nafeesa Shah, another lawmaker from Sindh, endorsed Pechuho's stand and said parliament should introduce legislation on forced conversions.

Wednesday, March 14, 2012

কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ......

অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম



‘দুদিন এক রকম ঘরে বন্দি অবস্থায়ই ছিলাম। ’৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনি। তবে শুনেছি, কি বিভৎস নির্যাতন চলেছে মানুষের ওপর। মনে হচ্ছিল, আমরা যেন একাত্তর সালে ফিরে গেছি।’ কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বোসপাড়া গ্রামের এক হিন্দু যুবক, যিনি ২০০১ সালের ২ ও ৩ অক্টোবর হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামের মানুষের ওপর বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠীর উন্মত্ত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী।

নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলার কেএম কলেজের প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল মুক্তিযুদ্ধের শহীদ নিতাই মণ্ডলের পুত্র। একাত্তরে রঞ্জিত হারিয়েছেন পিতাকে। তারপরও ২০০১ সালের ৯ অক্টোবর তার পরিবার ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাকে তিনি ’৭১-এর চেয়েও নারকীয় ও বিভৎস বলে বর্ণনা করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকারদের হাতেও আমরা এ রকম নির্যাতনের শিকার হইনি।’

২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাত থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ বছর পরে যেন দেশে এসেছিল আরেকটি ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভিনদেশি পাকিস্তানি হায়েনাদের পাশে ছিল অল্প কিছু সংখ্যক এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরেরা। আর ২০০১ এর হায়েনাদের সবাই ছিল এ দেশী। নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর পাশাপাশি একাত্তরের পরাজিত জামায়াতিদের সঙ্গে ’৭৫ পরবর্তী খুনি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী সবগুলো অপশক্তি, যাদের মধ্যে ছিল না বিন্দুমাত্র মানবতাবোধ, তারাই সম্মিলিতভাবে হিংস্র উন্মত্ত আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্ত চেতনার বাঙালির ওপর।

এ কারণেই বোধ হয়, ত্রিশ লাখ বাঙালির প্রাণহানির একাত্তরের চেয়ে ২০০১ এর ভয়াবহতাকে অনেকের কাছেই বেশি মনে হয়েছে। নির্যাতিত প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল ঘটনার ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবে, ‘এবারের নৃশংসতা একাত্তরকে ছাড়িয়ে গেছে। কেননা, জামায়াতিরা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমিনীদের মতো মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী চক্র আর অপশক্তিগুলো।’


আর ৯ বছর পরে ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা-নির্যাতন সম্পর্কিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনও একই সত্যই তুলে ধরছে। সরকারের কাছে গত বছরের ২৪ এপ্রিল দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে মাত্র ১ বছর ৩ মাসে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ হাজার নেতা-কর্মী ও মৌলবাদী ক্যাডার সন্ত্রাসী বাহিনীর ৩৬২৫টি অপরাধের নানা প্রমাণভিত্তিক তথ্য তুলে বলা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা আরো ১৪ হাজার, অর্থাৎ পরিস্থিতির ভয়াবহতা ছিল আরো ৫ গুণ বেশি।

১ অক্টোবর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ওই রাত থেকেই সারা দেশের মতোই ফরিদপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে-অভিযোগে নির্বিচার নির্যাতন শুরু হয় আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষের ওপর। সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষেরা। হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, মন্দির ও ক্ষেতে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদা দাবি ও আদায়ের সে ভয়াবহতা নেমে এসেছিল হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলের ওপরই। অনেকে পালিয়ে যান বিভিন্ন স্থানে। অনেককে চাঁদা দিয়েই এলাকায় থাকতে হয়, কেননা, চাঁদা না দিলে হত্যা বা দেশছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ ও নিরীহ-অসহায় বিবেচনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলে তুলামূলকভাবে বেশি। তাদেরকে জমি-জমা, বাড়িঘর ও এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দখল করতে নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময় বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। নারকীয় এ নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায় সেবার সব ধরনের আলোকসজ্জা, বাদ্য-বাজনা, মাইক ব্যবহার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি বর্জন করে অনাড়ম্বর পূজা উদযাপন করে। পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে কালো ব্যানার ও কালো পতাকা টানিয়ে চলে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, স্মারকলিপি পেশ, গণঅনশন, মানববন্ধন ও নীরবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি।

ভোরের কাগজের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ও পাশাপাশি জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা(বছর খানেকের জন্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম সে সময়।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের সঙ্গে নিয়ে অন্তত মাস তিনেক আক্রান্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদী গোষ্ঠীর নির্যাতন-সন্ত্রাসের সংবাদগুলো তুলে ধরেছিলাম ভোরের কাগজ-জনকণ্ঠে। মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের রোষাণলে বিপন্ন মানবতাকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছিলাম আমরা প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণমাধ্যমগুলোর কর্মীরা। নির্যাতনের সেসব ভয়াবহতা দেখে সাংবাদিকতার সাধারণ নির্লিপ্ততার বাইরে আসতে বাধ্য হয়ে আমরাও বিষ্ময়ে, আতঙ্কে বিমূঢ় হয়েছিলাম, ‘মানুষ মানুষের ওপর এভাবে নির্যাতন চালাতে পারে!’

১ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে রাতের অন্ধকারে মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বোসপাড়া গ্রামের মনিশঙ্কর বোসের বাড়ির মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৬ অক্টোবর রাতে মৌলবাদীরা ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রথখোলা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও বাসস্ট্যান্ড সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভেঙে ফেলে। ১১ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের শেতলা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে একদল মৌলবাদী সন্ত্রাসী নগরকান্দা উপজেলার চৌমুখা গ্রামের নমশূদ্র পাড়ার সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেখে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা ৩টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

নির্বাচনের পরদিন থেকে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকায় কথিত সন্ত্রাস দমন কমিটি গঠন করে বিএনপি-জামায়াতিরা এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছেন বা ভোট দিয়েছেন তাদের তালিকা করে চাঁদাবাজি, মারপিট, হামলা ও নির্যাতন চালায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ২৭ অক্টোবর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জীবন করকে মারাত্মকভাবে কোপায় তারা। ২৮ অক্টোবর একই কারণে ২৮ অক্টোবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাকিরের। ওই সময়       

অন্যদিকে ২ অক্টোবর সকাল থেকে লাঠিসোঠা ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজার ও বোসপাড়া গ্রামে নেমে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের নেতৃত্বে মৌলবাদী গোষ্ঠী। বাগাট ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের চিহ্নিত রাজাকার সালাম ফকিরের ছেলে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী কর্মী জাকির ফকিরের নেতৃত্বে ৪০ জনের বেশি বিএনপি সমর্থক এ হামলা চালায়। তারা বেছে বেছে বাগাট বাজারের আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর করে। দোকানের মালামাল লুটপাট করা হয়। এদের হাতে প্রহৃত হন বাগাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র সিকদারসহ আরো কয়েকজন। পরে এ দলটিই বাগাট বাজার সংলগ্ন বোসপাড়াসহ অন্য গ্রামগুলোতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত হোসেনের বাড়িসহ ৮টি হিন্দুবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর শেষে হুমকি-ধামকি দেয়। তারা মনিশঙ্কর বোসের একটি ঘরে আগুন দিয়ে সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই করে দেয়। পরদিন ৩ অক্টোবর সকাল থেকেই পুনরায় বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠী হুমকি দিতে শুরু করে নিরীহ গ্রামবাসীদের। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকাবাসী। অনেকে ভয়ে-আতঙ্কে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

৫ অক্টোবর গভীর রাতে ভাঙ্গা বাজারের নিজের তেলের মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অতুল চন্দ্র সাহা। ৬ অক্টোবর রাতে ভাঙ্গা উপজেলারই অাজিমনগর গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের ওপর নির্যাতনও ’৭১ এর বর্বরতাকে হার মানায়। ‘নৌকায় ভোট দেওয়ার মজা দেখাচ্ছি’ বলে রাত ৯টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের ভাই হাবি, পলাশ, মোঃ সেকেন, জামাল, এসকেন, কামাল ও টেক্কা নামক ৭ বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসী হামলা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে পরিবারটির গৃহকর্তা পেছনের দরোজা খুলে পালিয়ে যান। বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা ঘরের মধ্যে জোর করে ঢুকে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় মায়ের সামনেই ওই পরিবারের কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতে শুরু করে। মা সন্ত্রাসীদের হাতে-পায়ে ধরে মেয়ের ইজ্জত ভিক্ষা চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারপিট করে। রাত একটা পর্যন্ত এ পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর পর সন্ত্রাসীরা ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটিকে বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে এবং ভোররাতে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে যায়।

ওই তরুণী পরে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে বাঁচলেও বাঁচতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামের তরুণী বিলকিস আক্তার। পুরো পরিবার নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বিএনপি নেতা করিম মাতবরের পুত্র সৈয়দ আলী মাতবর ও তার আত্মীয় গঞ্জের খাঁ ও আকমালের নেতৃত্বে ১৬ অক্টোবর রাতভর ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোরে বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড়ের বিলকিসের শরীরের চেয়ে কম উচ্চতার বাঁশের সঙ্গে উড়না পেচিয়ে বিলকিসের লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হলেও ময়না তদন্তে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার আলামত মিললে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায় এবং প্রভাবশালীরা পরিবারটিকে হুমকি দিতে থাকে। হতদরিদ্র পরিবারটির বাড়িতে কবর দেওয়ারও জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে বিলকিসের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়।      

পায়ে ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলেও দুই চোখ বাঁচাতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী হায়দার মোল্লা। ১ অক্টোবর রাত থেকেই মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুজ্জামান শাহীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়ে হায়দারসহ মাঝারদিয়াসহ ৫টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। দেড় মাস পর হায়দার বাড়িতে ফিরলে ১৯ নভেম্বর রাতে শাহীদ চেয়ারম্যানের ১৫/২০ জন ক্যাডার সন্ত্রাসী হামলা চালায়। প্রাণভয়ে হায়দার ঘরের চালে আত্মগোপন করলে সেখান থেকেই টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে তাকে মাটিতে ফেলে চারজন হাত-পা পাড়িয়ে ধরে রাখে, একজন গলায় পা দিয়ে চেপে রাখে এবং দুজন বুকের ওপর বাঁশ চেপে রাখে। মোকো, ইউনুস ও ইলিয়াস- এই তিন সন্ত্রাসী চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে হায়দারের দুই চোখ তুলে নেয়। চোখ তোলার সময় হায়দার সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলে অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের মন গলেনি।

এর আগে শাহীদ চেয়ারম্যানের লোকজন মাঝারদিয়া গ্রামের পাঁচটি এলাকাসহ অাশেপাশের আরো ৪টি গ্রামের    শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিলে তারা মাঝারদিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক চেয়ারম্যান হামেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হামেদ চেয়ারম্যানও পালিয়ে থাকতে বাধ্য হলে দীর্ঘ দু’মাস শত শত মানুষকে রেখে খাওয়ান তার স্ত্রী।

সেখানেও গ্রামের ৩ দিক থেকে হামলা চালায় কয়েক হাজার সন্ত্রাসী। ওই গ্রামে আমাদের ঢুকতে হয়েছিল পুলিশি প্রহরায়। আমরা যখন গ্রামটিতে গেলাম, তখনো চলছিলো চোরাগুপ্তা হামলা পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও। মোটরসাইকেল পাশের মাঝারদিয়া বাজারে রেখে হাটা পথে গ্রামে ঢোকার সময় গ্রামটির মুখে পাহারায় থাকা বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমাদের লক্ষ্য করে বলেছিল, ‘পুলিশ নিয়ে ঢোকা হচ্ছে, যাওয়ার সময় সাংবাদিকতার মজা টের পাইয়ে দেবো’। হুমকির মুখে চারপাশে পুলিশ পাহারায়ই বের হতে হলো ফের।


মাঝারদিয়া ব্রিজ এলাকার সম্ভ্রান্ত ইব্রাহিম মাতুববর পালিয়ে গেলে তার স্ত্রী রোমেছাও আশ্রয় নেন হামেদ চেয়ারম্যানের বাড়িতে। মাঝে একদিন তিনি বিএনপির সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা নিজের বাড়িতে গিয়ে শিশু সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ভাতের হাড়িতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে খাবার লুটপাট করে নিয়ে যায়।            

সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের চর চাঁদপুর গ্রামে চলা এরকমই এক নির্যাতনের খবর পেয়ে অন্য একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছুটে গিয়েছিলাম ওই গ্রামে। ২৭ নভেম্বর দুপুরের দিকে আমাদের মোটরসাইকেল বাজার ছাড়িয়ে চর চাঁদপুর গ্রামের পথে এগিয়ে যেতে দেখলাম, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি খালি গায়ে কাধে গামছা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমাদের দেখতে পেয়েই থেমে গেলেন এবং ঘুরে দৌঁড় দিলেন যে দিক থেকে আসছিলেন, সেদিকেই। অনেক কষ্টে তাকে থামানো গেলেও থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি। ‘আমরা তার জন্য ক্ষতিকর কেউ নই’-অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে এটুকু আশ্বস্ত করার পর জানা গেলো, তিনি হিন্দু নমশূদ্র-শীল সম্প্রদায়ের মানুষ এবং চর চাঁদপুর গ্রামের নির্যাতিত ৮টি নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবারের একটির গৃহকর্তা। আগের দিনই তাদের ওপর নেমে এসেছিলো নারকীয় তাণ্ডব। নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন তাদের বাড়িঘরে এখনো বিদ্যমান। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদেই যাচ্ছিলেন নিকটবর্তী বাজারে।

অপরিচিত আমাদের দেখে নতুন নির্যাতনের আশঙ্কা-আতঙ্কে বাড়ির দিকে দৌঁড় দিয়েছিলেন অন্যদের খবর দিয়ে পালিয়ে রক্ষা পেতে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৭টায় ওই হামলা শুরু হয় ‘এখন আর তোদের বাজানরা নেই- কেউ বাঁচাতে পারবে না। নমদের(হিন্দু)থাকতে দেওয়া হবে না। গাট্টি-বোঁচকা বেঁধে ওপার চলে যা’- এ হুমকি দিয়েই।

গ্রামের বিএনপি নেতা বলে দাবিদার আদেলউদ্দিন বেপারির নেতৃত্বে তার পুত্র গোলাম বেপারি, ভাই মানা বেপারি, আজগরপ প্রামাণিক, অখিল প্রামাণিক, রব বেপারি ও আক্কাস বেপারির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা ও মুগুর নিয়ে হামলে পড়ে বৃদ্ধ রমেশ চন্দ্র শীল, তার বৃদ্ধা স্ত্রী হামি শীল, পুত্র সুকুমার শীল, পুত্রবধূ সবিতা, কার্তিক চন্দ্র শীল, রমেশ চন্দ্র শীল, সুরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, তার স্ত্রী চারুবালা বাড়ৈ, নিতাই চন্দ্র বাড়ৈ, অনীল চন্দ্র বাড়ৈ, কাশিনাথ বাড়ৈ ও তার স্ত্রী শোভা রানী বাড়ৈসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে নির্বিচার মারধর করা হলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন।  

সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মহিলা ও শিশুরাও সেদিন রক্ষা পাননি। প্রাণভয়ে পাশের বাড়িতে পালালেও টেনেহিচড়ে এনে মারধর ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়। বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা।

বর্বর ওই নির্যাতনের হাত থেকে অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন কমান্ডার রাজ্জাক মুন্সী, কালাম ও ইউনুসসহ অনেক মুসলমান প্রতিবেশী এগিয়ে এলে তারাও লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমাকে মোবাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিয়েছিলেন ওই আসনের বিএনপি’র প্রার্থী এবং পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

এ ছাড়াও ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকার পরিবহন ড্রাইভার নূরুল ইসলাম শেখ, কাঠ ব্যবসায়ী এম এ হাসান ও সোহবান শেখসহ শতাধিক মানুষ, বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া ইউনিয়নের সূর্যদিয়া গ্রামের গোবর্ধন ভট্টাচার্য, উত্তম ভট্টাচার্য, চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের দিলীপ কর, তার মা কালিদাসী কর, স্ত্রী রমা রানী, সন্ধ্যা কর, নারায়ণ সাধু, সত্য কুমার সাহা, তার পুত্র স্বরুপ কুমার সাহা, সঞ্জিব কুমার দাস, যদুনাথ চুনিয়া ও মিন্টু কুমার দত্ত, নগরকান্দা উপজেলার লস্কারদিয়া ইউনিয়নের সাকরাইল গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল ও আটাইল গ্রামের সরোয়ার মাতুব্বর, ফুলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কালিপদ মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল, গোকুল মণ্ডল, যুধিষ্ঠির মণ্ডল, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, সুশীল মণ্ডল ও ইয়াবলদি গ্রামের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ, ডাঙ্গি ইউনিয়নের চৌষাড়া গ্রামের মনিরুদ্দিন শেখ, হাশেম শেখ, মিজানুর রহমান, হাকিমুদ্দিন শেখ ও মোজাহার শেখ শতাধিক পরিবার, তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আদেল মোল্লাসহ অসংখ্য মানুষ আহত বা মারধরের শিকার হন ওই সময়কার মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনে।  

প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই সন্ত্রাসীরা নির্যাতনের ঘটনা পুলিশে বা অন্য কাউকে না জানাতে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে কোনো কোনো স্থানে গেলেও নীরব ভূমিকা পালন বা সন্ত্রাসীদের সহায়তার অভিযোগ ওঠে। কেউ কেউ আরো অভিযোগ করেন, ঘটনা জানিয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি, জড়িতদের গ্রেপ্তার করেনি বা নির্যাতিতদের নিরাপত্তা দেয়নি। অনেকে লোকলজ্জা ও প্রাণের ভয়ে থানায় জানাতে বা মামলা দিতেও সাহস পাননি। নির্যাতনকারী অথবা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে-আতঙ্কে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাননি। এমনকি নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়েও ‘আমাদের ওপর কোনো হামলা বা নির্যাতন করা হচ্ছে না’ মর্মে ১১ অক্টোবর মুচলেকা প্রদান করতে বাধ্য হন বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের নির্যাতিত ১৪ হিন্দু পরিবার। প্রভাবশালীরা এ মর্মে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদনপত্র তৈরি করে জোরপূর্বক পরিবারগুলোর প্রধানদের স্বাক্ষর নিয়ে পাঠিয়ে দেন।

সবচেয়ে আতঙ্কজনক ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক, কোনো নির্যাতন হচ্ছে না, ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা, কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত প্রমাণে বিএনপি-জামায়াতের উর্ধ্বতন নেতা ও সাংবাদিকদের(!) নিয়ে জেলা বা উপজেলা সদরের পুলিশ কর্মকর্তাদের রীতিমতো গাড়ি নিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে টহল দিতে দেখেছি সে সময়। দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি(!) রক্ষায় তাদের করা তদন্তে ধরা পড়ে, জেলায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে! সেসব তদন্ত প্রতিবেদন চলে যায় সরকারের শীর্ষ মহলে আর ছাপা হয় দিনকাল, সংগ্রাম, ইনকিলাবসহ তাদের সমর্থক মিডিয়ায়। অার ওইসব মিথ্যা ও কল্পকাহিনী(!)প্রচার-প্রকাশকারী সাংবাদিক অর্থাৎ আমাদের বানানো হয়, যুবলীগ কর্মী এবং সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের চক্রান্তকারী হিসেবে।

তবে সরাসরি হুমকি দিয়ে নির্যাতিতদের ঘটনা মিথ্যা বলতে বাধ্য করা, সাজানো সাক্ষী দিয়ে সাজানো তদন্ত কার্যক্রম চালানোর রিপোর্ট প্রকাশেও আমরা দেরি করিনি। আইন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও প্রকৃত সত্য ও পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি এ ‘তদন্ত জালিয়াতি’ ফাঁসে অগ্রণী ভূমিকা নেয়।

এগুলো মাত্র একটি জেলার মাত্র তিন মাসের প্রকাশ্যে আসা নির্যাতন-সন্ত্রাসের খতিয়ান, যা মানবতাকে শিউরে দেয়। আরো অসংখ্য ঘটনার কথা আমরা জানতে পারিনি। আর বিএনপি-জামায়াতের পুরো ২০০১-২০০৬ সময়কালে শুধুমাত্র ফরিদপুরেই সংঘটিত সব ঘটনা তুলে ধরতে গেলে পুরো একটি ইতিহাস বইই লিখতে হবে! সারা দেশের কথা তো বলাই বাহুল্য।

এসবও তো মানবতাবিরোধী অপরাধ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চেয়ে এসব অপরাধ কম কিসে? বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা একাত্তরকেও হার মানিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সরকার চূড়ান্তভাবে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন। আর এবার চিহ্নিত হয়েছে ২৬ হাজার। নির্যাতনের নানা মাত্রায় এসব অপরাধী তাই যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও কম অপরাধ করেননি।

ওই সব আক্রান্ত গ্রামগুলোতে গিয়েও বার বার মনে হচ্ছিলো, একাত্তরের যুদ্ধকবলিত বাংলাদেশের পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্যাতনের শিকার কোনো গ্রামে বুঝি অলৌকিকভাবে ঢুকে পড়েছি ৩০ বছর পরে।

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী, আব্দুল আলীমদের একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এদের প্রায় সবাইসহ চিহ্নিত আরো যুদ্ধাপরাধীরাও ২০০১ পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন যুদ্ধাপরাধীদের নব্য দোসর ও রক্ষার ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত-আমিনী-মৌলবাদী-জঙ্গি চক্র।

স্বাধীনতার ৪০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি বলেই দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের সিরিজ ও নানা বোমা হামলা, হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, জেএমজেবি, হিজবুত, বাংলাভাইমার্কা মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উত্থান ঘটেছে। আর এসবের নেপথ্য-প্রকাশ্য স্রষ্টা যে বিএনপি’র ঘাড়ে সওয়ার হওয়া যুদ্ধাপরাধীরা-এটাও এখন ষ্পষ্ট।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি ২০০১ পরবর্তী নির্যাতন-সহিংসতারও বিচার তাই পৃথক পৃথক ট্রাইব্যুনালে শুরু হওয়া জরুরি। না হলে তারা আবারো একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বাংলাদেশকে অন্ধকারের যুগে ফিরিয়ে নেবে, যেমনটি নিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সময়কালে।        

যখন ফরিদপুরে নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী ছিলাম, এ ধরনের দু:সময়ে বিপন্ন মানবতাকে রক্ষার লক্ষ্যে মানুষের মানবিকতার গুণগুলোকে জাগিয়ে তুলে প্রতিবাদে-প্রতিরোধে আর সাহসে-সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করতে জড়াতাম নানা আয়োজনে-কর্মসূচিতে। এসব আয়োজনে একটি স্লোগান-বক্তব্য রাখতাম প্রায়ই, ‘কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ’

আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে-পরের সেনা ক্যু চেষ্টা, বিডিআরসহ নানা হত্যাকাণ্ড, বিএনপি-মৌলবাদী অপশক্তির সম্মিলিত সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র, এখনো চলমান তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা সব এক সূত্রে গাথা, যা রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। ’৭৫ এর পরে অন্ধকার গর্তে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপেদের গর্ত থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে এসে বার বার ছোবল দিতে দেখে আমরাও তার প্রমাণ পেয়েছি। এসব সাপেদের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে পিষে মেরে ফেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সদা জাগ্রত থাকতে হবে, যেমনটি বীর বাঙালি জেগে আছে ’৭১-’৭৫ এর খুনিচক্রের বিচার চেয়ে।   

৪০ বছর ধরে চলে আসা বাংলা জননীর লাজ-কলঙ্ক ঘুচাতে কে কে নয়, সবাইই তাই জাগবেই, জাগতেই হবে।

Monday, March 12, 2012

গফরগাঁওয়ে হিন্দু কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করল যুবলীগ নেতা

দৈনিক প্রথম আলো


ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যুবলীগ নামধারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ওই ছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করারও অভিযোগ উঠেছে।
পরিবারের লোকজনের সহযোগিতায় গত শনিবার দুপুরে ওই কলেজছাত্রী বাদী হয়ে গফরগাঁও থানায় গফরগাঁও উপজেলার টাঙ্গাব ইউনিয়নের বামনখালী গ্রামের শামছুল হকের ছেলে আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গতকাল রোববার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা হয়েছে।
থানায় দায়ের করা ছাত্রীর অভিযোগ ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, আলতাফ হোসেন অনেক আগে থেকে ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় আলতাফ তাকে একাধিকবার অপহরণের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সে ওই ছাত্রীর পরিবারের কাছে কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া বাজারের জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ের প্রস্তাব দেয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তির সহযোগিতায় আলতাফ ওই ছাত্রীকে কৌশলে অপহরণ করে প্রথমে কিশোরগঞ্জ ও পরে শ্রীপুর উপজেলার মাওনায় নিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রীকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের কথা বলে ছবি তোলে এবং লেখাবিহীন চারটি হলুদ কাগজে স্বাক্ষর নেয়।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে ছাত্রীটি আরও দাবি করে, মাওনা এলাকায় মাটির একটি টিনশেড ঘরে তাকে নিয়ে সঙ্গের লোকটিকে বিদায় করে দেয় আলতাফ। এ সময় আলতাফ তাকে জানায়, নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সে নাকি তাকে বিয়ে করেছে। অভিযোগে ছাত্রীটি আরও দাবি করে, ঘরে আটকে রেখে আলতাফ তাকে ধর্ষণ করেছে।
ছাত্রীর পিতা অভিযোগ করেন, ছাত্রীটি পালিয়ে আসার পর থেকে আলতাফ এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিলে দেশান্তর করাসহ তাঁর মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
টাঙ্গাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন জানান, আলতাফ বাজে লোক হিসেবে পরিচিত। এ পর্যন্ত সে পাঁচ-ছয়টি বিয়ে করেছে। আলতাফ যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তবে এলাকায় নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দেয়।
গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, ছাত্রীর দেওয়া অভিযোগের তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Sunday, March 11, 2012

দেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমছে




আদমশুমারির তথ্য মতে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ
দেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমছে


দৈনিক প্রথম আলো
তারিখ: ০৫-০৯-২০১০


দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমছে। গত ১১টি আদমশুমারির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আগামী বছর যে আদমশুমারি হতে যাচ্ছে, তাতে ওই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানের চেয়েও কমে আসতে পারে।
আদমশুমারির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯০১ সালে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ৩৩ শতাংশ। স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম আদমশুমারিতে এই হার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৫ এবং ২০০১ সালের শুমারিতে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে, একই সময়ে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
বিবিএসের কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে জন্মহার কম এবং অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় দেশে তাদের সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু জন্মহার কম হওয়ায় একটি জনগোষ্ঠী ছোট হয়ে আসছে, এই বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (নিপোর্ট) কয়েকজন কর্মকর্তা ও গবেষক।
নিপোর্টের কর্মকর্তাদের মতে, মূলত দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমছে। এর পেছনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য এবং বিদেশে সামাজিক মর্যাদা ও উন্নততর জীবন পাওয়ার সুযোগ বড় ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সহিংসতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশ ছেড়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা, চাঁদাবাজি, লুটপাট, সম্পদ ধ্বংস, দৈহিক নির্যাতন, বিশেষত, ধর্ষণ ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণহানির কারণে এরা দেশ ছাড়ে। এর একটি প্রভাব ২০১১ সালের আদমশুমারিতে পড়বে বলেও ধারণা করছেন তাঁরা।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, একসময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্য ছিল যেসব জেলায় সেই গোপালগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, খুলনা, দিনাজপুর ও বাগেরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমে গেছে। একমাত্র নড়াইল ছাড়া অন্যসব জেলায় ১৯৯১ সালের পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমেছে। শুধু নড়াইলে ’৯১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০০১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৪৯ শতাংশে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব কটি বিভাগে মুসলমান জনগোষ্ঠীর খানার (হাউসহোল্ড) তুলনায় সংখ্যালঘুদের খানা আকারে ছোট। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে একটি সংখ্যালঘু খানার গড় সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ৯। সেই তুলনায় একটি মুসলমান খানার সদস্যসংখ্যা গড়ে ৫ দশমিক ৬।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ১৯০১ সালে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ। স্বাধীন বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০১ সালের আদমশুমারিতে ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়। দেশ বিভাগের কারণে ১৯৪১—৪৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুসলমানদের আগমন এবং প্রায় সব সময়ই মুসলমানদের মধ্যে উচ্চ জন্মহার বজায় ছিল বলে বিবিএসের তথ্য থেকে জানা যায়।
অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মধ্যে ১৯৭৪ সালে এ দেশে বৌদ্ধদের সংখ্যা ছিল মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক ৬ শতাংশ। ২০০১ সালেও এই হার অপরিবর্তিত ছিল। একই সময়ে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ছিল দশমিক ৩ শতাংশ। এই সংখ্যারও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান এ কে এম নূরুন্নবী প্রথম আলোকে বলেন, জনসংখ্যার কাঠামোতে ধর্মভিত্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর বাড়া-কমা এবং এর কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশে খুব একটা গবেষণা হয়নি। তবে কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হলে শেষ পর্যন্ত মোট জনসংখ্যায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা কম হতে পারে।
কিন্তু নূরুন্নবীর এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন নিপোর্টের পরিচালক ও গবেষক আহমেদ আল সাবির। তিনি বলেন, এ কথা সত্য যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে জন্মহার কম এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণের হার বেশি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এতে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমে আসবে। যেমন, এক পরিবারে যদি আট ভাইবোন থাকে এবং পরবর্তী সময়ে যদি তাদের একটি করেও সন্তান হয়, তাহলে জনসংখ্যা না কমে বরং বেড়ে ১৬ জনে পৌঁছাবে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে জন্মহার কম হলেই সংখ্যা কমে আসার যুক্তি এখনো বাস্তবসম্মত নয়।
ধর্মভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিবাসনের কারণে জনসংখ্যা কমে আসার বিষয়টি অধিকতর সত্য বলে তিনি মনে করেন। আদমশুমারির প্রতিবেদনে অভিবাসনের কথা উল্লেখ করা হলেও ঠিক কত সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশ ছেড়েছে এবং কেন ছেড়েছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
বেসরকারি পর্যায়ে কয়েকজন গবেষক বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন। অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত তাঁদের অন্যতম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় এ দেশে ৪৫ শতাংশ ভূমির মালিক ছিল হিন্দুরা। অর্পিত সম্পত্তি আইনের সুযোগ নিয়ে অনেকে এই জমিগুলো গ্রাস করেছে। ফলে দেশ ছাড়তে হয়েছে অনেক হিন্দু পরিবারকে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষক মোহাম্মদ রফি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গবেষণায় দেখেছেন, অত্যাচারের কারণে অনেক সময় হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে। এ ছাড়া, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া সন্তান আছে যে পরিবারগুলোর, তারা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ ছাড়ছে। শুধু ভারত নয়, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অভিবাসন হচ্ছে। মুসলমানেরাও কাজের খোঁজে এসব দেশে যাচ্ছে। তবে, নির্যাতনের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়ার যে ধারা, তা বন্ধে কোনো সরকারই কার্যকর উদ্যোগ নেয় না।
রফি তাঁর একটি গবেষণাগ্রন্থে দেখিয়েছেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের মাস অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২০টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে, হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। ১৯০টি উপজেলায় এরা চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। ১৩৭টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ১২৮টি উপজেলায় সহায়সম্পদ লুটের ঘটনা ঘটে। ১৬২টি উপজেলায় সম্পত্তি ধ্বংস হয় এবং ২০২টি উপজেলায় হিন্দুরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবাদ না জানিয়ে দেশ ছাড়ে বলে সম্পত্তি দখলের জন্য তাদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা হয়। সরকার সংখ্যালঘুদের দেশ ছেড়ে যাওয়া বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয় না। বরং কিছুটা নির্বিকার আচরণ করে।
বিবিএসের আদমশুমারি উইংয়ের প্রধান অসীম কুমার দে বলেন, শতকরা হিসাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সংখ্যার হিসাবে এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমছে না। মুসলিম পরিবার এবং হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে মোট সদস্যদের যে পার্থক্য, তা ক্রমেই বড় হচ্ছে। অভিবাসনের কারণটিও স্বীকৃত। কিন্তু কত মানুষ দেশ ছাড়ছে, সে বিষয়ে কখনো বিশদ কোনো জরিপ হয়নি। ভবিষ্যতে বিষয়টি তাঁরা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করবেন।