হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের আকর হল বেদ , যার মুখ্যতঃ দুটি অংশ - ' জ্ঞান কাণ্ড' ও 'কর্ম কাণ্ড' । 'কর্ম কাণ্ড' যুগ ভেদে পরিবর্তন শীল । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ যখন বললেন - '' কলি যুগে বেদ মত চলে না '' তখন তিনি এই 'কর্ম কাণ্ড' কেই নির্দেশ করেছেন ।' জ্ঞান কাণ্ড' যুগ ভেদে অপরিবর্তনীয় । অরণ্যচারী ঋষি দের সাধনার দ্বারা আবিষ্কৃত পারমার্থিক সত্য এই ' জ্ঞান কাণ্ড' । এটি কোনও সাম্প্রদায়িক মত নয় । হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে যেমন জল হয় , এটা যেমন যে কোনও মানুষের দ্বারা পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হবে , ঠিক তেমনি ' জ্ঞান কাণ্ড ' নির্দেশিত অনুভূতি সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্যে প্রযোজ্য । এখানেই হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মত কে নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছে । অথবা ঐতিহাসিক বিচারে বলতে হয় হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মতের জন্ম দিয়েছে ।হিন্দু ঋষিগণ ধর্মপথ নির্দেশের সময় মানুষের রুচি ও ক্ষমতার ভিন্নতার কথা চিন্তা করেছেন , তাই মূর্তি পূজা থেকে শুরু করে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা পর্যন্ত সবই হিন্দু ধর্মে স্বীকৃত হয়েছে । বিভিন্ন মাপের মানুষের জন্য একই মাপের পোশাক এই ধর্ম দেয়না । হিন্দুরা নিজ নিজ রুচি ও ক্ষমতার স্তর অনুযায়ী নিজের উপযুক্ত সাধন পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । উদ্দেশ্য সবারই এক , এবং তা হল - আত্ম জ্ঞান , অর্থাৎ স্ব-স্বরূপ কে জানা ।হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সাধন পথ গুলিকে মুখ্যতঃ চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে । এগুলি হল জ্ঞান যোগ , কর্ম যোগ , ভক্তি যোগ ও রাজ যোগ ।জ্ঞান যোগে আত্ম বিশ্লেষণ এবং ' শ্রবণ , মনন ও নিদিধ্যাসনের ' দ্বারা ' নেতি নেতি ' বিচারের মাধ্যমে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । আচার্য শঙ্কর এই সাধনা প্রচার করেছেন ।কর্ম যোগে নিষ্কাম কর্ম দ্বারা সকাম কর্ম বন্ধন কেটে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুন কে কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে কর্মযোগে উদ্দীপ্ত করেছেন ।ভক্তিযোগে প্রেমের বন্ধনে ভক্ত সাধক ঈশ্বরকে ধরার চেষ্টা করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য ( মহাপ্রভু ) এই ভাবের প্রচার করেছেন ।রাজযোগে ধ্যান , প্রাণায়াম প্রভৃতি শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সাধক স্ব-স্বরূপ লাভ করেন । মহর্ষি পতঞ্জলি এই সাধন পদ্ধতি প্রচার করেছেন । পৃথক পৃথক ভাবে এই চারটি পথের সাধক অনেক ক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন , যেমন জ্ঞান যোগ মানুষকে শুষ্ক বিচার প্রবণ করতে পারে । কর্ম যোগে কর্ম সকাম হয়ে সাধকের অবনতি ঘটাতে পারে । ভক্তি যোগে গোঁড়ামি আসতে পারে । রাজ যোগে সিদ্ধাই বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের দিকে মন চলে যেতে পারে । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ এই নবযুগের জন্য তাই নির্দেশ করেছেন যোগ - চতুষ্টয়ের সমন্বয় । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - জ্ঞান - কর্ম - ভক্তি অথবা রাজ যোগ এই চারটি পথের যে কোনও একটি অবলম্বন করে সাধক সিদ্ধ হতে পারেন , কিন্তু ' শ্রী রামকৃষ্ণ - রূপ মুষায় ( ছাঁচে) জীবন উৎকীর্ণ করিতে হইলে ( জীবন ঢেলে গঠন করতে গেলে ) সেই জীবনে থাকিবে - চতুর্বিধ যোগের সমন্বয় ' সমন্বয়ের PRACTICAL প্রয়োগ হিসাবে স্বামীজী তুলে ধরেছেন শিব - জ্ঞানে জীব সেবার আদর্শ । এই হল স্বামী বিবেকানন্দ নির্দেশিত 'PRACTICAL বেদান্ত' । বনের বেদান্ত এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজে ও সংসারের সর্বত্র ।
হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । অনেক ভাষাতে হিন্দু ধর্মের উপর সাইট থাকলেও বাংলা ভাষাতে একেবারেই হাতে গোনা। কিছু ওয়েবসাইট আবার বন্ধও হয়ে গেছে। তাই বাংলা ভাষায় হিন্দু ধর্মের মহিমা প্রচারের জন্যই আমাদের এই আয়োজন বাঙ্গালি হিন্দু পোস্ট।
Pages
▼
Monday, April 30, 2012
হিন্দু ধর্মের ' অ-আ-ক-খ' : লেখক-তাপস ঘোষ
হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের আকর হল বেদ , যার মুখ্যতঃ দুটি অংশ - ' জ্ঞান কাণ্ড' ও 'কর্ম কাণ্ড' । 'কর্ম কাণ্ড' যুগ ভেদে পরিবর্তন শীল । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ যখন বললেন - '' কলি যুগে বেদ মত চলে না '' তখন তিনি এই 'কর্ম কাণ্ড' কেই নির্দেশ করেছেন ।' জ্ঞান কাণ্ড' যুগ ভেদে অপরিবর্তনীয় । অরণ্যচারী ঋষি দের সাধনার দ্বারা আবিষ্কৃত পারমার্থিক সত্য এই ' জ্ঞান কাণ্ড' । এটি কোনও সাম্প্রদায়িক মত নয় । হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে যেমন জল হয় , এটা যেমন যে কোনও মানুষের দ্বারা পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হবে , ঠিক তেমনি ' জ্ঞান কাণ্ড ' নির্দেশিত অনুভূতি সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্যে প্রযোজ্য । এখানেই হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মত কে নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছে । অথবা ঐতিহাসিক বিচারে বলতে হয় হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মতের জন্ম দিয়েছে ।হিন্দু ঋষিগণ ধর্মপথ নির্দেশের সময় মানুষের রুচি ও ক্ষমতার ভিন্নতার কথা চিন্তা করেছেন , তাই মূর্তি পূজা থেকে শুরু করে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা পর্যন্ত সবই হিন্দু ধর্মে স্বীকৃত হয়েছে । বিভিন্ন মাপের মানুষের জন্য একই মাপের পোশাক এই ধর্ম দেয়না । হিন্দুরা নিজ নিজ রুচি ও ক্ষমতার স্তর অনুযায়ী নিজের উপযুক্ত সাধন পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । উদ্দেশ্য সবারই এক , এবং তা হল - আত্ম জ্ঞান , অর্থাৎ স্ব-স্বরূপ কে জানা ।হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সাধন পথ গুলিকে মুখ্যতঃ চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে । এগুলি হল জ্ঞান যোগ , কর্ম যোগ , ভক্তি যোগ ও রাজ যোগ ।জ্ঞান যোগে আত্ম বিশ্লেষণ এবং ' শ্রবণ , মনন ও নিদিধ্যাসনের ' দ্বারা ' নেতি নেতি ' বিচারের মাধ্যমে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । আচার্য শঙ্কর এই সাধনা প্রচার করেছেন ।কর্ম যোগে নিষ্কাম কর্ম দ্বারা সকাম কর্ম বন্ধন কেটে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুন কে কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে কর্মযোগে উদ্দীপ্ত করেছেন ।ভক্তিযোগে প্রেমের বন্ধনে ভক্ত সাধক ঈশ্বরকে ধরার চেষ্টা করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য ( মহাপ্রভু ) এই ভাবের প্রচার করেছেন ।রাজযোগে ধ্যান , প্রাণায়াম প্রভৃতি শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সাধক স্ব-স্বরূপ লাভ করেন । মহর্ষি পতঞ্জলি এই সাধন পদ্ধতি প্রচার করেছেন । পৃথক পৃথক ভাবে এই চারটি পথের সাধক অনেক ক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন , যেমন জ্ঞান যোগ মানুষকে শুষ্ক বিচার প্রবণ করতে পারে । কর্ম যোগে কর্ম সকাম হয়ে সাধকের অবনতি ঘটাতে পারে । ভক্তি যোগে গোঁড়ামি আসতে পারে । রাজ যোগে সিদ্ধাই বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের দিকে মন চলে যেতে পারে । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ এই নবযুগের জন্য তাই নির্দেশ করেছেন যোগ - চতুষ্টয়ের সমন্বয় । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - জ্ঞান - কর্ম - ভক্তি অথবা রাজ যোগ এই চারটি পথের যে কোনও একটি অবলম্বন করে সাধক সিদ্ধ হতে পারেন , কিন্তু ' শ্রী রামকৃষ্ণ - রূপ মুষায় ( ছাঁচে) জীবন উৎকীর্ণ করিতে হইলে ( জীবন ঢেলে গঠন করতে গেলে ) সেই জীবনে থাকিবে - চতুর্বিধ যোগের সমন্বয় ' সমন্বয়ের PRACTICAL প্রয়োগ হিসাবে স্বামীজী তুলে ধরেছেন শিব - জ্ঞানে জীব সেবার আদর্শ । এই হল স্বামী বিবেকানন্দ নির্দেশিত 'PRACTICAL বেদান্ত' । বনের বেদান্ত এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজে ও সংসারের সর্বত্র ।
শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন – দেশের এক কালো অধ্যায়
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত; সব ধর্মের লোকে যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ন ভাবে এ দেশে মিলে মিশে বসবাস করে আসছে, ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সম অধিকার ’৭২ সাল থেকেই সংবিধানে স্বীকৃত। আমাদের অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ন চেহা্রায় মুগ্ধ হয়ে কোন এক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে আমরা ‘মডারেট মুসলিম’ কাউন্ট্রি খেতাব পেয়েও ধন্য হয়েছি, গর্বের সাথে সে পরিচয়ও আমরা পেশ করি। মোক্ষম প্রমান পাশের দেশ ভারতেও হিন্দু মুসলমান সাম্প্রতিক সময়েও ভয়াবহ দাংগায় লিপ্ত হলেও যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে হিন্দু মুসলমান কোন দাংগা হয় না, শেষ দাংগা দেশে হয়েছে সেই ’৬৪ সালে। এ হিসেবে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুবাতাস বইছে তা অস্বীকার করার উপায় কই? মুশকিল হল এসব ভাল ভাল কথা সংখ্যালঘুরা (আসলে হিন্দু) কিছুতেই বুঝতে চায় না। তারা খায় দায় এ দেশের আর তালে থাকে কিভাবে ভারতে রাতারাতি সর্বস্ব পাচার করে পালিয়ে যাবে। এমন কথাবার্তা শুধু মৌলবাদী লোকজনে নয়, হিন্দু বান্ধব বলে খ্যাত আওয়ামী নেত্রী খোদ প্রধানমন্ত্রী হাসিনাও একবার নিউ ইয়র্কে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন।
সাম্প্রদায়িকতা/সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে ঠিক কি বোঝায় তা আমরা আসলে কতটুকু বুঝি? বিদেশে থাকি বলে দেশের অনেকেই আমাদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক মনে করেন। দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক আসলেই ঠিক কি জিনিস? সাম্প্রদায়িকতা মানে শুধুই দল বেঁধে অপর সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা যেমনটা গুজরাটে দেখা গেছিল? নিজের দেশের বিশেষ এক সম্প্রদায়ের লোককে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ‘শত্রু’ আখ্যায়িত করে বিশেষ আইন বানিয়ে তাদের সহায় সম্পত্তি রাষ্ট্রের কব্জায় নিয়ে নিজের দলের লোকজনদের মাঝে বছরের পর বছর ধরে বিতরন প্রক্রিয়াকে ঠিক কি বলা যেতে পারে? আর আম জনতা যে যুগ যুগ ধরে নীরব দর্শকের মত এই অন্যায় দেখে এসেছে তারাও নিশ্চয়ই সকলে শান্তিপূর্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনার জনগন যারা সংখ্যালঘুদের সমাধিকারে পূর্ন বিশ্বাসী? শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশেই (শুধু পাকিস্তান আমলেই নয়) এমন ঘটনা শত শত, হাজারে হাজারে ঘটেছে সম্পূর্ন আইন সম্মত প্রক্রিয়ায় – ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’, পরবর্তিকালে নাম পালটে অর্পিত সম্পত্তি আইন নামে। রাষ্ট্র কর্তৃক এই আইন সম্মত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয় সম্পত্তি হাত করা বিষয়েই দুটো কথা বলব, আমার ধারনা এই আইনের কথা শুনে থাকলেও ব্যাপকতা বেশীরভাগ লোকেই জানেন না।
’৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগ হয়ে গেলেও হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক কোনদিন এ অঞ্চলে স্বভাবিক হয়নি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ লাগে, ভারতকে সরকারী ভাবেই শত্রু দেশ হিসেবে গন্য করা হয়। ‘দ্য ডিফেন্স অব পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ১৯৬৫’-এর মাধ্যমে আইনটি করা হয় যা শত্রু সম্পত্তি আইন নামে পরিচিত। ওই অধ্যাদেশের ১৬৯ উপবিধি অনুযায়ী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের যেসব নাগরিক ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আগে থেকে ভারতে ছিল এবং সেই তারিখ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতে চলে গিয়েছিল, তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় যার মালিকানা সরকার অস্থায়ীভাবে নিয়ে নিতে পারে। তখনকার বিবেচনায় হয়ত আইনটি খুব একটা আপত্তিকর হবার কথা নয়, কারন হাজার হোক আপনার দেশের বিরুদ্ধে কোন দেশ যুদ্ধ করছে, আপনি পাততাড়ি গুটিয়ে সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে আপনার দেশপ্রেম নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। ভারতও সে সময় তাদের দেশে অনুরূপ এক আইন জারি করে পাকিস্তানে নাগরিকত্ব গ্রহনকারী ভারতীয় সম্পত্তি সরকারের অধিকারে নিয়ে আসার ব্যাপারে। সোজা কথায় এই আইনের আওতায় পাকিস্তানের কোন নাগরিক ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে সরকার তার নামে থাকা দেশের সব সম্পত্তি নিয়ে নিতে পারত।
এরপর স্বল্প সময়তেই বহু পানি গড়িয়েছে, শত্রু ভারতের সহায়তাতেই বাংলাদেশে স্বাধীন হয়, এক সময়ের শত্রু পরিনত হয় পরম মিত্রে। তবে ভারত মিত্র হয়ে গেলে কি হবে, স্বাধীন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদেরই এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শত্রু বিবেচনার পালা শুরু হল। বংগবন্ধুর প্রতিশ্রুতি ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়বেন, সে মোতাবেক ’৭৪ সালে এক সরকারী গেজেটে এই শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হল, তবে জারী করা হল দেশে পরিত্যাক্ত অবাংগালীদের সম্পত্তি সরকারী অধিগ্রহনের জন্য ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’। আগের শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হলেও পূর্ব পাকিস্তান থাকা অবস্থায় যাদের সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহন করেছিল সেসব আর ফেরত দেবার বন্দোবস্ত এ আইনেও রাখা হল না। আরো বিপদজনক হল যে এই ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ এর আওতাতেও যেসব বাংলাদেশী দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নন কিংবা অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন তাদের নামে থাকা সম্পত্তি অধিগ্রহন করার জন্য সরকারকে ক্ষমতা ঠিকই দেওয়া হল। যদিও এই আইনের লক্ষ্য ছিল আসলে পাকিস্তানে যুদ্ধের পর স্বেচ্ছায় হিজরত করা বাংগালীদের সম্পত্তি সরকারী তক্ত্বাবধনে আনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকে স্বভাবতই বাংলাদেশ ফেলে পাকিস্তানে যায়নি, কিন্তু কার্যত ভুগতে হয়েছে তাদেরই। অর্পিত সম্পত্তি আইনের ছত্রছায়াতেই মোটামুটি নির্বিঘ্নেই চলতে লাগল তাদের সহায় সম্পত্তি দখলের মহোতসব। কোন মুসলমান অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে তার নামে দেশে থাকা সম্পত্তি কোনদিন বাজেয়াপ্ত হবার প্রশ্ন আসে না, তবে সংখ্যালঘু হলেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার দেখা গেছে যে আসলে সব সংখ্যালঘুও নয়, এই আইনের একচেটিয়া শিকার কেবল হিন্দু সম্প্রদায়; বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরাও এর শিকার হন না। ’৭৪ সালেই শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হয়ে গেছে এমন দাবী অনেকে করে থাকলেও তা পুরোপুরি সঠিক নয়। ফাঁক রেখে দেওয়া হয়েছিল ঠিকই যার প্রমান পরবর্তিকালে সরকারের অধিগ্রহনকৃত হিন্দু সম্পত্তির বিশাল তালিকা, যা নানান সমীক্ষায় দেখা গেছে। কার্যক্ষেত্রে শুধু নামই পরিবর্তন করে শত্রু সম্পত্তি থেকে অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল। আইনের ভেতরেও কিন্তু সম্পত্তির মালিকদের শত্রু হিসেবেই লেখা ছিল। [১]
’৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর অবস্থার আরো অবনতির ঘটানো হল। ’৭৬ এর নভেম্বরে ’৭৪ এর আইন পরিবর্তন করে সরকারের ক্ষমতা আরো বাড়ানো হল, এবার সরকার শুধু অধিগ্রহনই নয়, সম্পত্তি নিজের ইচ্ছেমত প্রদান করারও ক্ষমতা পেয়ে গেল, যা বিভিন্ন মেয়াদে লীজ দেওয়া শুরু হল। বিহারীদের সম্পত্তিও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এবং তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি বাদ দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় পরিনত হয় মূল টার্গেটে। শুরু হল নিজ নিজ দলীয় কর্মীদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিগ্রহন করা সম্পত্তির বাটোয়ারা করার নোংরা ও নিষ্ঠুর সংস্কৃতির। কোন দলীয় সরকারই এই লোভ সামাল দিতে পারেনি (পরে আসছি কিছু হিসেব নিয়ে)। আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক দলের নেতা হবার জন্য দলীয় কর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায়, এমনকি খুনাখুনিও হয় তার কারন তো নিশ্চয়ই আছে, আমাদের দেশের মত এত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী মনে হয় না অন্য কোন দেশে পাওয়া যাবে বলে। এই ন্যাক্কারজনক আইন সম্মত সাম্প্রদায়িক লুটপাট নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে অনেকবার আপত্তি তোলা হয়, আন্তর্জাতিক অংগন থেকেও কিছু চাপ আসা শুরু হয়। ফলে এরশাদ আমলে ’৮৪ সালে আর কোন সম্পত্তি এই আইনে অধিগ্রহন করা হবে না ঘোষনা দেওয়া হয়, যদিও কার্যক্ষেত্রে এর কোনই প্রতিফলন দেখা যায়নি। [১]
৪ঠা জুলাই, ’৯১ সালে সংসদে দেশে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ একর জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের অধীনে আছে বলে জানানো হয়। সে সময় এই আইন দেশ বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলির প্রবল সমালোচনার শিকার হয়, ফলে ততকালীন বিএনপি সরকার শুরু করে অর্পিত সম্পত্তির ব্যাপারে জরীপ ও সমীক্ষা। সরকারের দাবী ছিল এ সমীক্ষার উদ্দেশ্য এ সমস্যা চিরতরে দূর করে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, বাস্তবে দেখা গেছে উলটো। সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আরো নুতন নুতন হিন্দু সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহন করে, বলাই বাহুল্য যে এ রিপোর্ট কোনদিন আলোর মুখ দেখেনি। ’৯৫ ও ’৯৭ সালে একটি এনজিও দুটি সমীক্ষায় প্রকাশ করে যে মোট ১.০৫ মিলিয়ন একর জমি শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগ্রহন করা হয়েছে, এবং দেশের শতকরা ৩০ ভাগ হিন্দু বসতবাড়ি এই কালো আইনের প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছে। [১]
আগেই বলেছি যে অধিগ্রহনকৃত সম্পত্তি বাটোয়ারা করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের ভোগেই যায়। আইন ও শালিস কেন্দ্র ’৯৫ সালে প্রকাশ করে যে মোট সম্পত্তির ৭২% বিএনপির লোকজনের গ্রাসে গেছে, যদিও ’৮৮ সালে ৪৪% আওয়ামী লোকদের ভাগে ও ৩২% বিএনপির ভাগে ছিল, জাতীয় পার্টি জামাতও পিছিয়ে নেই। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত ’৯৭ সালে ‘Inquiry into Causes and Consequences of Deprivation of Hindu Minorities in Bangladesh through the Vested Property Act’ নামের একটি গবেষনা মূলক গ্রন্থতে এসব তথ্য প্রকাশ করেন। ওনার গবেষনায় বেরিয়ে আসে যে মোট ৯২৫,০৫০ হিন্দু বসতবাড়ি (বাংলাদেশের শতকরা ৪০% হিন্দু পরিবারের) এই আইনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চাষাবাদের জমি হারায় ৭৪৮,৮৫০টি পরিবার। মোট জমির পরিমান ১.৬৪ মিলিয়ন একর, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকানাধিন মোট ৫৩% ভূসম্পত্তি। এই সম্পত্তির পরিমান সমগ্র বাংলাদেশের ৫.৩% ভাগ। অন্যদিকে সম্পত্তি দখল করে লাভবান হয়েছে মাত্র ০.৪% লোক। এই আইনের করাল গ্রাস সম্পর্কে তেমন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। [২]
আবুল বারাকাতের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ এর ওপর হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। নিজ জন্মভূমি কেউ স্বেচ্ছায় ছাড়তে চায়? হিন্দু জনসংখ্যা কি হারে দেশে কমেছে (নাকি কমানো হচ্ছে) সে হিসেব তো মোটামুটি সকলেরই জানা।
এই ভাগাভাগি/ দলীয় লোকদের প্রদান আইনসিদ্ধ, এর বাইরেও সরকারী দলের লোকজনের বলপূর্বক দখল তো আছেই যা স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় সহায়তা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলির দলের নেতাকর্মীদের নানান মহান আদর্শে উজ্জীবিত রাখার এটি একটি স্বীকৃত মাধ্যম; যার জন্যই বছরের পর বছর এই কালো আইন প্রায় বিনা চ্যালেঞ্জে চলে এসেছে। হয়ত মনে হতে পারে যে যারা ভারতে স্থায়ীভাবে চলে গেছে বা যাচ্ছে তাদের সম্পত্তি গ্রহন করায় এমন কি সমস্যা? আপত্তি কি কেবল একমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তিই দেশ ত্যাগ করে গেলে গ্রহন করা হয় এ যায়গাতেই? প্রবাসে স্থায়ী হওয়া মুসলমানদেরও সম্পত্তি এভাবে অধিগ্রহন হয়ে থাকলেই সমস্যা ছিল না? অনেকটা এই রকম আইন ভারতেও ক’বছর আগেও ছিল। ভারতীয়দের দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত ছিল না। তখন কেউ বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যেত, ভারত সরকার তার সম্পত্তি গ্রহন করত। তবে সে আইনের আওতায় ধর্মীয় পরিচয়ের কোন ব্যাপার ছিল না। এ কারনে তখন প্রবাসে থাকা ভারতীয়দের স্বামী বা স্ত্রী একজন নাগরিকত্ব গ্রহন না করে গ্রীন কার্ড জাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে থেকে যেতেন দেশের সম্পত্তি রক্ষার্থে।
প্রথমত, কাগজে কলমে এই আইনের আওতা প্রবাসে স্থায়ী হওয়া নাগরিকদের জন্য হলেও কার্যত এর আওতা শুধু সেখানেই ঠেকে ছিল না। এই আইন ছিল আসলে আইন সম্মত উপায়ে দূর্বলের সম্পত্তি গ্রাস করার এক চমতকার উপায়; এর আওতায় উইল করে মারা যাননি এমন বহু হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি হরির লুট হয়েছে। প্রক্রিয়া খুবই সহজ; সরকারকে দিয়ে তার জমি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহন করানো, এরপর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে লিজ নিয়ে ভোগদখল করা। বেশ কিছু উদাহরন আছে যা সমগ্র জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেবার দাবী প্রথম পাকিস্তান গনপরিষদে ’৪৮ সালে বলিষ্ঠ কন্ঠে তুলেছিলেন কুমিলার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পাক সরকার চিরদিনই ভদ্রলোকের ওপর তীব্র আক্রোশে ভুগেছে, ’৭১ এর ২৫শে মার্চ গনহত্যা শুরুর প্রথম প্রহরেই তাকে তার ছেলেসহ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে অবর্ননীয় অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ তার এই সপরিবারে চরম আত্মত্যাগের প্রতিদান দেয় তার সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহন করে? অপরাধ? জন্মই তাদের আজন্ম পাপ, তারা হিন্দু। তিনি দেশের শত্রু, কাজেই তার সম্পত্তি রাষ্ট্রের, এতে তার পরিবার পরিজনের আর অধিকার নেই। বিশ্বব্যাপি সাড়া জাগানো ব্রিটিশ রাজের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মাষ্টার দা সূর্যসেনের পারিবারিক সম্পত্তিও ’৭৬ সালে এভাবেই আমাদের সদাশয় সরকার হুকুম দখল করে নিয়েছে। কি বিস্ময়ের কথা, ভদ্রলোক সেই ’৩৪ সালে অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ফাঁসিতে আত্মহুতি দেন যখন ভারত পাকিস্তান বলেও কিছু ছিল না, অথচ সরকারী নথিতে তার স্থায়ী ঠিকানা লেখা হয়েছিল ভারত। এই চমকে যাবার মত তালিকায় আরো আছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, রবি নিয়োগী (৩৪ বছর ব্রিটিশের জেল খেটে বাংলাদেশের শেরপুরেই মারা যান), কবি নবীন চন্দ্র সেন, পশ্চীম বংগের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। মুক্তিযুদ্ধের আরো দুই শহীদ বুদ্ধিজীবি দেবতূল্য অধ্যাপক জিসি দেব ও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জমিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে অবৈধ ভোগ দখলে আছে। [৩] অমর্ত্য সেনও আছেন এই তালিকায়।
সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অবিচার করেছে জে এম সেন অর্থাৎ যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের প্রতি। তিনি ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সেনের প্রধান অনুসারী এবং ব্যারিস্টার। ১৯২১ সালে স্বাধীনতার জন্য তিনি অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে নিজের আইন পেশা পরিত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। এমন সম্মান দেশের খুব কম মহিলার ভাগ্যেই জুটেছে। অথচ তিনি জীবিত থাকাকালে রহমতগঞ্জের বাড়ি থেকে তাঁকে নির্মমভাবে উচ্ছেদ করে সে বাড়ি দখল করে নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সেখানে তিনি শিশুবাগ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এখনো সে বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। ১৯৩৩ সালে রাঁচী জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় দেশপ্রিয় মারা গেলেও তাঁকে দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি ১৯৬৫ সালের আইনে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।’
সাম্প্রদায়িকতা/সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে ঠিক কি বোঝায় তা আমরা আসলে কতটুকু বুঝি? বিদেশে থাকি বলে দেশের অনেকেই আমাদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক মনে করেন। দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক আসলেই ঠিক কি জিনিস? সাম্প্রদায়িকতা মানে শুধুই দল বেঁধে অপর সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা যেমনটা গুজরাটে দেখা গেছিল? নিজের দেশের বিশেষ এক সম্প্রদায়ের লোককে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ‘শত্রু’ আখ্যায়িত করে বিশেষ আইন বানিয়ে তাদের সহায় সম্পত্তি রাষ্ট্রের কব্জায় নিয়ে নিজের দলের লোকজনদের মাঝে বছরের পর বছর ধরে বিতরন প্রক্রিয়াকে ঠিক কি বলা যেতে পারে? আর আম জনতা যে যুগ যুগ ধরে নীরব দর্শকের মত এই অন্যায় দেখে এসেছে তারাও নিশ্চয়ই সকলে শান্তিপূর্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনার জনগন যারা সংখ্যালঘুদের সমাধিকারে পূর্ন বিশ্বাসী? শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশেই (শুধু পাকিস্তান আমলেই নয়) এমন ঘটনা শত শত, হাজারে হাজারে ঘটেছে সম্পূর্ন আইন সম্মত প্রক্রিয়ায় – ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’, পরবর্তিকালে নাম পালটে অর্পিত সম্পত্তি আইন নামে। রাষ্ট্র কর্তৃক এই আইন সম্মত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয় সম্পত্তি হাত করা বিষয়েই দুটো কথা বলব, আমার ধারনা এই আইনের কথা শুনে থাকলেও ব্যাপকতা বেশীরভাগ লোকেই জানেন না।
’৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগ হয়ে গেলেও হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক কোনদিন এ অঞ্চলে স্বভাবিক হয়নি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ লাগে, ভারতকে সরকারী ভাবেই শত্রু দেশ হিসেবে গন্য করা হয়। ‘দ্য ডিফেন্স অব পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ১৯৬৫’-এর মাধ্যমে আইনটি করা হয় যা শত্রু সম্পত্তি আইন নামে পরিচিত। ওই অধ্যাদেশের ১৬৯ উপবিধি অনুযায়ী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের যেসব নাগরিক ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আগে থেকে ভারতে ছিল এবং সেই তারিখ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতে চলে গিয়েছিল, তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় যার মালিকানা সরকার অস্থায়ীভাবে নিয়ে নিতে পারে। তখনকার বিবেচনায় হয়ত আইনটি খুব একটা আপত্তিকর হবার কথা নয়, কারন হাজার হোক আপনার দেশের বিরুদ্ধে কোন দেশ যুদ্ধ করছে, আপনি পাততাড়ি গুটিয়ে সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে আপনার দেশপ্রেম নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। ভারতও সে সময় তাদের দেশে অনুরূপ এক আইন জারি করে পাকিস্তানে নাগরিকত্ব গ্রহনকারী ভারতীয় সম্পত্তি সরকারের অধিকারে নিয়ে আসার ব্যাপারে। সোজা কথায় এই আইনের আওতায় পাকিস্তানের কোন নাগরিক ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে সরকার তার নামে থাকা দেশের সব সম্পত্তি নিয়ে নিতে পারত।
এরপর স্বল্প সময়তেই বহু পানি গড়িয়েছে, শত্রু ভারতের সহায়তাতেই বাংলাদেশে স্বাধীন হয়, এক সময়ের শত্রু পরিনত হয় পরম মিত্রে। তবে ভারত মিত্র হয়ে গেলে কি হবে, স্বাধীন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদেরই এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শত্রু বিবেচনার পালা শুরু হল। বংগবন্ধুর প্রতিশ্রুতি ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়বেন, সে মোতাবেক ’৭৪ সালে এক সরকারী গেজেটে এই শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হল, তবে জারী করা হল দেশে পরিত্যাক্ত অবাংগালীদের সম্পত্তি সরকারী অধিগ্রহনের জন্য ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’। আগের শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হলেও পূর্ব পাকিস্তান থাকা অবস্থায় যাদের সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহন করেছিল সেসব আর ফেরত দেবার বন্দোবস্ত এ আইনেও রাখা হল না। আরো বিপদজনক হল যে এই ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ এর আওতাতেও যেসব বাংলাদেশী দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নন কিংবা অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন তাদের নামে থাকা সম্পত্তি অধিগ্রহন করার জন্য সরকারকে ক্ষমতা ঠিকই দেওয়া হল। যদিও এই আইনের লক্ষ্য ছিল আসলে পাকিস্তানে যুদ্ধের পর স্বেচ্ছায় হিজরত করা বাংগালীদের সম্পত্তি সরকারী তক্ত্বাবধনে আনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকে স্বভাবতই বাংলাদেশ ফেলে পাকিস্তানে যায়নি, কিন্তু কার্যত ভুগতে হয়েছে তাদেরই। অর্পিত সম্পত্তি আইনের ছত্রছায়াতেই মোটামুটি নির্বিঘ্নেই চলতে লাগল তাদের সহায় সম্পত্তি দখলের মহোতসব। কোন মুসলমান অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে তার নামে দেশে থাকা সম্পত্তি কোনদিন বাজেয়াপ্ত হবার প্রশ্ন আসে না, তবে সংখ্যালঘু হলেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার দেখা গেছে যে আসলে সব সংখ্যালঘুও নয়, এই আইনের একচেটিয়া শিকার কেবল হিন্দু সম্প্রদায়; বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরাও এর শিকার হন না। ’৭৪ সালেই শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হয়ে গেছে এমন দাবী অনেকে করে থাকলেও তা পুরোপুরি সঠিক নয়। ফাঁক রেখে দেওয়া হয়েছিল ঠিকই যার প্রমান পরবর্তিকালে সরকারের অধিগ্রহনকৃত হিন্দু সম্পত্তির বিশাল তালিকা, যা নানান সমীক্ষায় দেখা গেছে। কার্যক্ষেত্রে শুধু নামই পরিবর্তন করে শত্রু সম্পত্তি থেকে অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল। আইনের ভেতরেও কিন্তু সম্পত্তির মালিকদের শত্রু হিসেবেই লেখা ছিল। [১]
’৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর অবস্থার আরো অবনতির ঘটানো হল। ’৭৬ এর নভেম্বরে ’৭৪ এর আইন পরিবর্তন করে সরকারের ক্ষমতা আরো বাড়ানো হল, এবার সরকার শুধু অধিগ্রহনই নয়, সম্পত্তি নিজের ইচ্ছেমত প্রদান করারও ক্ষমতা পেয়ে গেল, যা বিভিন্ন মেয়াদে লীজ দেওয়া শুরু হল। বিহারীদের সম্পত্তিও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এবং তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি বাদ দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় পরিনত হয় মূল টার্গেটে। শুরু হল নিজ নিজ দলীয় কর্মীদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিগ্রহন করা সম্পত্তির বাটোয়ারা করার নোংরা ও নিষ্ঠুর সংস্কৃতির। কোন দলীয় সরকারই এই লোভ সামাল দিতে পারেনি (পরে আসছি কিছু হিসেব নিয়ে)। আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক দলের নেতা হবার জন্য দলীয় কর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায়, এমনকি খুনাখুনিও হয় তার কারন তো নিশ্চয়ই আছে, আমাদের দেশের মত এত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী মনে হয় না অন্য কোন দেশে পাওয়া যাবে বলে। এই ন্যাক্কারজনক আইন সম্মত সাম্প্রদায়িক লুটপাট নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে অনেকবার আপত্তি তোলা হয়, আন্তর্জাতিক অংগন থেকেও কিছু চাপ আসা শুরু হয়। ফলে এরশাদ আমলে ’৮৪ সালে আর কোন সম্পত্তি এই আইনে অধিগ্রহন করা হবে না ঘোষনা দেওয়া হয়, যদিও কার্যক্ষেত্রে এর কোনই প্রতিফলন দেখা যায়নি। [১]
৪ঠা জুলাই, ’৯১ সালে সংসদে দেশে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ একর জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের অধীনে আছে বলে জানানো হয়। সে সময় এই আইন দেশ বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলির প্রবল সমালোচনার শিকার হয়, ফলে ততকালীন বিএনপি সরকার শুরু করে অর্পিত সম্পত্তির ব্যাপারে জরীপ ও সমীক্ষা। সরকারের দাবী ছিল এ সমীক্ষার উদ্দেশ্য এ সমস্যা চিরতরে দূর করে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, বাস্তবে দেখা গেছে উলটো। সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আরো নুতন নুতন হিন্দু সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহন করে, বলাই বাহুল্য যে এ রিপোর্ট কোনদিন আলোর মুখ দেখেনি। ’৯৫ ও ’৯৭ সালে একটি এনজিও দুটি সমীক্ষায় প্রকাশ করে যে মোট ১.০৫ মিলিয়ন একর জমি শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগ্রহন করা হয়েছে, এবং দেশের শতকরা ৩০ ভাগ হিন্দু বসতবাড়ি এই কালো আইনের প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছে। [১]
আগেই বলেছি যে অধিগ্রহনকৃত সম্পত্তি বাটোয়ারা করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের ভোগেই যায়। আইন ও শালিস কেন্দ্র ’৯৫ সালে প্রকাশ করে যে মোট সম্পত্তির ৭২% বিএনপির লোকজনের গ্রাসে গেছে, যদিও ’৮৮ সালে ৪৪% আওয়ামী লোকদের ভাগে ও ৩২% বিএনপির ভাগে ছিল, জাতীয় পার্টি জামাতও পিছিয়ে নেই। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত ’৯৭ সালে ‘Inquiry into Causes and Consequences of Deprivation of Hindu Minorities in Bangladesh through the Vested Property Act’ নামের একটি গবেষনা মূলক গ্রন্থতে এসব তথ্য প্রকাশ করেন। ওনার গবেষনায় বেরিয়ে আসে যে মোট ৯২৫,০৫০ হিন্দু বসতবাড়ি (বাংলাদেশের শতকরা ৪০% হিন্দু পরিবারের) এই আইনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চাষাবাদের জমি হারায় ৭৪৮,৮৫০টি পরিবার। মোট জমির পরিমান ১.৬৪ মিলিয়ন একর, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকানাধিন মোট ৫৩% ভূসম্পত্তি। এই সম্পত্তির পরিমান সমগ্র বাংলাদেশের ৫.৩% ভাগ। অন্যদিকে সম্পত্তি দখল করে লাভবান হয়েছে মাত্র ০.৪% লোক। এই আইনের করাল গ্রাস সম্পর্কে তেমন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। [২]
আবুল বারাকাতের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ এর ওপর হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। নিজ জন্মভূমি কেউ স্বেচ্ছায় ছাড়তে চায়? হিন্দু জনসংখ্যা কি হারে দেশে কমেছে (নাকি কমানো হচ্ছে) সে হিসেব তো মোটামুটি সকলেরই জানা।
এই ভাগাভাগি/ দলীয় লোকদের প্রদান আইনসিদ্ধ, এর বাইরেও সরকারী দলের লোকজনের বলপূর্বক দখল তো আছেই যা স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় সহায়তা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলির দলের নেতাকর্মীদের নানান মহান আদর্শে উজ্জীবিত রাখার এটি একটি স্বীকৃত মাধ্যম; যার জন্যই বছরের পর বছর এই কালো আইন প্রায় বিনা চ্যালেঞ্জে চলে এসেছে। হয়ত মনে হতে পারে যে যারা ভারতে স্থায়ীভাবে চলে গেছে বা যাচ্ছে তাদের সম্পত্তি গ্রহন করায় এমন কি সমস্যা? আপত্তি কি কেবল একমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তিই দেশ ত্যাগ করে গেলে গ্রহন করা হয় এ যায়গাতেই? প্রবাসে স্থায়ী হওয়া মুসলমানদেরও সম্পত্তি এভাবে অধিগ্রহন হয়ে থাকলেই সমস্যা ছিল না? অনেকটা এই রকম আইন ভারতেও ক’বছর আগেও ছিল। ভারতীয়দের দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত ছিল না। তখন কেউ বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করলে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যেত, ভারত সরকার তার সম্পত্তি গ্রহন করত। তবে সে আইনের আওতায় ধর্মীয় পরিচয়ের কোন ব্যাপার ছিল না। এ কারনে তখন প্রবাসে থাকা ভারতীয়দের স্বামী বা স্ত্রী একজন নাগরিকত্ব গ্রহন না করে গ্রীন কার্ড জাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে থেকে যেতেন দেশের সম্পত্তি রক্ষার্থে।
প্রথমত, কাগজে কলমে এই আইনের আওতা প্রবাসে স্থায়ী হওয়া নাগরিকদের জন্য হলেও কার্যত এর আওতা শুধু সেখানেই ঠেকে ছিল না। এই আইন ছিল আসলে আইন সম্মত উপায়ে দূর্বলের সম্পত্তি গ্রাস করার এক চমতকার উপায়; এর আওতায় উইল করে মারা যাননি এমন বহু হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি হরির লুট হয়েছে। প্রক্রিয়া খুবই সহজ; সরকারকে দিয়ে তার জমি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহন করানো, এরপর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে লিজ নিয়ে ভোগদখল করা। বেশ কিছু উদাহরন আছে যা সমগ্র জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেবার দাবী প্রথম পাকিস্তান গনপরিষদে ’৪৮ সালে বলিষ্ঠ কন্ঠে তুলেছিলেন কুমিলার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পাক সরকার চিরদিনই ভদ্রলোকের ওপর তীব্র আক্রোশে ভুগেছে, ’৭১ এর ২৫শে মার্চ গনহত্যা শুরুর প্রথম প্রহরেই তাকে তার ছেলেসহ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে অবর্ননীয় অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ তার এই সপরিবারে চরম আত্মত্যাগের প্রতিদান দেয় তার সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহন করে? অপরাধ? জন্মই তাদের আজন্ম পাপ, তারা হিন্দু। তিনি দেশের শত্রু, কাজেই তার সম্পত্তি রাষ্ট্রের, এতে তার পরিবার পরিজনের আর অধিকার নেই। বিশ্বব্যাপি সাড়া জাগানো ব্রিটিশ রাজের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মাষ্টার দা সূর্যসেনের পারিবারিক সম্পত্তিও ’৭৬ সালে এভাবেই আমাদের সদাশয় সরকার হুকুম দখল করে নিয়েছে। কি বিস্ময়ের কথা, ভদ্রলোক সেই ’৩৪ সালে অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ফাঁসিতে আত্মহুতি দেন যখন ভারত পাকিস্তান বলেও কিছু ছিল না, অথচ সরকারী নথিতে তার স্থায়ী ঠিকানা লেখা হয়েছিল ভারত। এই চমকে যাবার মত তালিকায় আরো আছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, রবি নিয়োগী (৩৪ বছর ব্রিটিশের জেল খেটে বাংলাদেশের শেরপুরেই মারা যান), কবি নবীন চন্দ্র সেন, পশ্চীম বংগের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। মুক্তিযুদ্ধের আরো দুই শহীদ বুদ্ধিজীবি দেবতূল্য অধ্যাপক জিসি দেব ও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জমিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে অবৈধ ভোগ দখলে আছে। [৩] অমর্ত্য সেনও আছেন এই তালিকায়।
সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অবিচার করেছে জে এম সেন অর্থাৎ যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের প্রতি। তিনি ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সেনের প্রধান অনুসারী এবং ব্যারিস্টার। ১৯২১ সালে স্বাধীনতার জন্য তিনি অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে নিজের আইন পেশা পরিত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। এমন সম্মান দেশের খুব কম মহিলার ভাগ্যেই জুটেছে। অথচ তিনি জীবিত থাকাকালে রহমতগঞ্জের বাড়ি থেকে তাঁকে নির্মমভাবে উচ্ছেদ করে সে বাড়ি দখল করে নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সেখানে তিনি শিশুবাগ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এখনো সে বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। ১৯৩৩ সালে রাঁচী জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় দেশপ্রিয় মারা গেলেও তাঁকে দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি ১৯৬৫ সালের আইনে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।’
কয়েকজন কুখ্যাত দেশের শত্রু (অন্তত সরকারী খাতায়)। |
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ করা দোতলা বাড়ির ফটকে ‘শিশুবাগ’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম আছে সামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইসহাকের।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শহীদ, ভাষা আন্দোলনের নেতা কি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এসব কিছুই হার মেনে গেছে ধর্মীয় পরিচয়ের সংকীর্ন গন্ডিতে, কারন তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। আমাদের কি লজ্জা পাবার মত বিবেক বুদ্ধিও সকলের আছে? আমি ভালই জানি যে এসব জেনেও অনেকেরই চেতন হবে না। অসীম মেধা ওঁ বিবেচনা বোধের পরিচয় দিয়ে খুজে খুজে ভারতে কি হয় উদাহরন হাজির করে ফেলবেন। নিদেনপক্ষে কোন কালে হিন্দু ব্রাক্ষ্মনরা কিভাবে জাতপাতের বিচারে মুসলমানদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে হাতে জল ঢেলে দিতেন এসব টেনে দায় মোটামুটি আধাআধি ভাগ করে ফেলতে পারবেন। যেমনটা কিছুদিন আগে দেখলাম আমার প্রিয় দুই ব্লগার সাম্প্রদায়িক সমস্যা নিয়ে সাম্প্রতিক এক লেখায় করেছেন। বৈষয়িক বা অর্থগত বিচার বাদ দিলেও ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের এহেন অবিচার আচরন কিভাবে এসব ব্যাক্তিত্বদের আত্মীয় স্বজনদের নিদারুন মর্মবেদনা দিতে পারে তা কি ভাবার নয়? তারা নিজেদের কোন শ্রেনীর নাগরিক বিবেচনা করতে পারে?
অমানবিকভাবে জবর দখল করা এসব সম্পত্তি ফেরত দেওয়া নিয়ে সংখ্যালঘু সমাজ, দেশী বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলি সব সময়ই সোচ্চার, স্বভাবতই অগতির গতি আওয়ামী সরকারই যা কিছু ভরসা। ’৯৬ সালের আওয়ামী সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এই আইন বাতিল করে গৃহীত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া। ’৯৮ সালে আইন করার চেষ্টা করলেও নানান মহলের তীব্র চাপের মুখে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। অবশেষে বিএনপি জামাতের তীব্র আপত্তির মুখেও তড়িঘড়ি করে ২০০১ সালের মার্চ/এপ্রিলে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়া আইন সংসদে তড়িঘড়ি করে আধা খেঁচড়া আকারে বিল আকারে পাস করানো হয়। এটা অনেকটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল বলে অনেকে মনে করেন কারন এই বিলে যথেষ্ট ঝামেলার কারন ছিল এবং ততকালীন সরকার জানত যে এটা আইন আকারে পাশ করাতে রাষ্ট্রপতির সই লাগবে যা আর সেই টার্মে হত না। কার্যক্ষেত্রে হয়েছেও তাই, অব্যাহত গতিতেই চলতে থাকে ‘শত্রু’ সম্পত্তি অধিগ্রহন।
আওয়ামী সরকাররের গতবারের নির্বাচনেও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন প্রতিশ্রুত ছিল। সরকার ক্ষমতায় বসার পর পরই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানবাধিকার উন্নয়ন বিষয়ে একটি চিঠি দেয় যার মধ্যে এটা ছিল। অবশেষে গত বছরের নভেম্বরে সংসদে এই বিল আবারো সংশোধিত আকারে পাশ করানো হয়। বহু দেরী হবার পরেও একে স্বাগত জানাতে হয়, তবে এতে আগে যারা সম্পত্তি হারিয়েছেন তাদের বাস্তবিক অর্থে তেমন আশাবাদী হবার কিছু মনে হয় না আছে বলে। কারন সরকার যাদের কাছে সম্পত্তি ইতোমধ্যে বিতরন করে দিয়েছে তারা সুড়সুড় করে দাবী ছেড়ে দেবে এমন নয়, আরো মারাত্মক জটিলতা আছে যেসব ক্ষেত্রে সম্পত্তি হাত বদল হয়েছে সেসবের ক্ষেত্রে। যিনি নুতন মালিক এবার ভিক্টিম হবেন তিনি। এটাও অন্য আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এই যুক্তিতেই অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলের ব্যাপারে অপর পক্ষ থেকে ’৯৮ সালেও আপত্তি এসেছিল। কিছু ভুল থাকে যা অমার্জনীয়, অমোচনীয়, রাষ্ট্রের পক্ষে তেমন ভুল করা হয়ে গেলে তা আর সংশোধনের কার্যকরি উপায় থাকে না।
আমি খুব আশাবাদী হতে চাই যে একদিন আমাদের দেশেও সংখ্যালঘুদের দাবী দাওয়া সমাধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে হবে না, কারন সেদিন সমাজে সংখ্যালঘু বলেই কিছু থাকবে না। সবাই হবে কেবল মানুষ, গুরু লঘু কেউ নয়। কালো সাদা হিন্দু, মুসলমান, শিয়া, সুন্নী, কাদিয়ানী এসবের কোন প্রভাব কোনভাবেই দৈনন্দিন জীবনে কোনভাবে পড়বে না। অন্য বহু দেশ এ ভাবেই অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমরা কেন পারব না? এ দেশের বেশীরভাগ লোকেই সাম্প্রদায়িক নয়, এসব সমর্থন করে না জানি। তারপরেও কেন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর এত ক্ষীন?
সূত্রঃ
১। God Willing- The Politics of Islamism in Bangladesh : Ali Riaz; (Rowman & Littlefield Publishers, Inc., 2004)
সৌজন্যে: http://www.amarblog.com
নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের অনুষ্ঠানে হামলা, নিহত ১৫
নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কানো শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার হলে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান চলাকালে রোববার সকালে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্ততপক্ষে ১৫ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে দুজন অধ্যাপকও রয়েছেন বলে বায়েরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র মুস্তাফা জাহরাদিন জানান।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, সকালে মোটরবাইকে করে বন্দুকধারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার হলে পৌঁছে প্রথমে ছোট ছোট বোমা ছুঁড়ে মারে। এরপর খ্রিস্টান উপাসকরা পালাতে শুরু করলে তারা গুলি চালায়। এতে অন্ততপক্ষে ১৫ জন মারা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সেনাবাহিনী বন্দুকধারীদের হটিয়ে দিলে শহরের অন্যান্য এলাকাতেও গোলাগুলি হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “অন্ততপক্ষে ১৫টি মৃত দেহের হিসেব করেছি। আমার মনে হয় সেগুলো আমিনো কানো টিচিং হাসপাতালে রাখা হয়েছে।”
আহত আরো অনেক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সেনাবাহিনী পুরো এলাকা নিজেদেরও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার দায় কেউ স্বীকার করেনি।
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ফাদার ফেডেরিকো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে নাইজেরিয়ায় চালানো সাম্প্রতিক এ হামলা ভয়াবহ ও ঘৃণ্য।”
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একই শহরে বোমা ও বন্দুক হামলায় ১৮৬ জন মারা যায়। মৌলবাদী ইসলামপন্থী সংগঠন বোকো হারামের চালানো ওটাই ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এরপর থেকেই দেশটিতে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
Sunday, April 29, 2012
উড়িষ্যার সূর্য মন্দির কোনার্ক
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের এই সূর্য মন্দিরকে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য ইউনেসকো বিশ্ব সভ্যতার একটি উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে । উড়িষ্যায় পুরী ও ভুবনেশ্বরের কাছে বঙ্গোপসাগরের বেলাভূমিতে ১৩ শ শতকে পূর্ব-গঙ্গা রাজ্যের অধিপতি মহারাজ নরসিংহ দেব সূর্য দেবতার আরাধনার জন্য এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন । এই মন্দির তার অভিনব আকার, বিশালত্ব আর কারুকার্যের জন্য ভারতের সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতম । তামিল শব্দ কোণ আর সংস্কৃত শব্দ অর্ক মিলে কোনার্ক শব্দটির সৃষ্টি । উড়িষ্যা ও দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরটি ধূসর বেলে পাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে । সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া । বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত । চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ । প্রতিটি চাকা একেকটি সূর্যঘড়ি ।চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। এখনো নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে । মন্দিরের প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল দুটি সিংহের মূর্তি যারা লড়াই করছে দুটি রণহস্তীর সঙ্গে । মন্দিরের বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে । দেবতা, অপ্সরা, কিন্নর, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী, পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ, নৃত্যরত নরনারী, প্রেমিক যুগল, রাজদরবারের বিভিন্ন দৃশ্য, শিকারের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে । মূর্তিগুলোর মানবিক আবেদন,নিখুঁত গড়ন,লীলায়িত ভঙ্গী শিল্পকলার চরম উত্কর্ষের নিদর্শন । কলিঙ্গ রীতিতে নির্মিত মন্দিরের চূড়াগুলো পিরামিড আকৃতির।মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্ডপ । এখানে একসময় দেবদাসীরা দেবতার উদ্দেশ্যে পূজানৃত্য পরিবেশন করতেন । মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির, ভোগমন্দির ও গর্ভগৃহ। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট ।তবে মন্দিরের অনেক অংশ এখন বালিতে দেবে গেছে । মন্দিরের দেউল এখনো ২০০ ফুট উঁচু। মন্দিরে সূর্যদেবতার যে বিশাল বিগ্রহ ছিল তা এখন নেই । কালের করাল গ্রাসে স্থাপনার অনেকটাই আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত । কথিত আছে যে বাংলার সুলতান সুলেমান খান কারানির সেনাপতি কালাপাহাড়ের আক্রমণে কোনার্ক মন্দির প্রথম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । উড়িষ্যার ইতিহাস অনুযায়ী কালাপাহাড় ১৫০৮ সালে কোনার্ক আক্রমণ করে । ১৬২৬ সালে খুরদার তত্কালীন রাজা পুরুষোত্তম দেবের পুত্র নরশিমা দেব সূর্যদেবের বিগ্রহটি পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে নিয়ে যান । সেখানে একটি পৃথক মন্দিরে সূর্য ও চন্দ্র দেবতার বিগ্রহ স্থাপন করা হয় । শুধু বিগ্রহই নয় তিনি কোনার্ক মন্দির থেকে কারুকার্য করা অনেক পাথর পুরীর মন্দিরে নিয়ে যান। এমনকি নবগ্রহ পথ নামে একটি বিশাল প্রস্তর খন্ডও তিনি পুরীতে নিয়ে যান । মারাঠা শাসনামলে কোনার্ক মন্দির থেকে অনেক ভাস্কর্য ও প্রস্তরখন্ড পুরীতে নিয়ে যাওয়া হয় এ ১৭৭৯ সালে কোনার্ক থেকে অরুণ কুম্ভ নামে বিশাল একটি স্তম্ভ নিয়ে পুরীর সিংহদ্বারের সামনে স্থাপন করা হয় । এই সময় মারাঠা প্রশাসন কোনার্কের নাট মন্ডপটি অপ্রয়োজনীয় মনে করে ভেঙ্গে ফেলে । সূর্যদেবের বিগ্রহ অপসারণের পর কোনার্কে পূজা ও আরতি বন্ধ হয়ে যায় । পর্তুগীজ জলদস্যুদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে কোনার্ক বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয় । আঠারশ’ শতক নাগাদ কোনার্ক মন্দির তার সকল গৌরব হারিয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে ।মন্দিরের অনেক অংশ বালির নিচে চাপা পড়ে যায় । মন্দির চত্বর ও এর আশেপাশের এলাকা ধীরে ধীরে ঘন অরণ্যে ছেয়ে যায় । বুনো জন্তুরা বাসা বাঁধে মন্দিরের ভিতর । জলদস্যু ও ডাকাতের আস্তানায় পরিণত হয় কোনার্ক মন্দির । সেসময় দিনের আলোতেও সাধারণ মানুষ ভয়ে এর ত্রিসীমানায় যেত না । বিংশ শতাব্দীতে প্রতœতত্ববিদরা কোনার্ক মন্দির পুনরাবিষ্কার করেন । খননের ফলে লোকচক্ষুর সামনে উন্মোচিত হয়। কোনার্ক মন্দিরের অপূর্ব স্থাপত্য শৈলী, বিষ্ময়কর ভাস্কর্যকীর্তি ও অনন্য শিল্প সম্ভার । কোনার্ক মন্দিরের অনেক শিল্প কীর্তি এখন সূর্য মন্দির জাদুঘর ও উড়িষ্যার জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে । প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী কোনার্কের সূর্য মন্দির দেখতে আসেন । প্রাচীন ভারতীয় স্থপতি ও ভাস্করদের শিল্পনৈপুণ্য ও সৃষ্টিশীলতা আজও মানুষকে বিস্ময় বিমুগ্ধ করে।
Saturday, April 28, 2012
বেদে জল সম্পর্কে কি বলা হয়েছে
ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯ শতাংশই হল জল। পৃথিবীতে যাবতীয় জীবনের লক্ষণ প্রকাশের জন্যে জল অপরিহার্য। পৃথিবীতে পাওয়া বেশিরভাগ জলই সাগর বা মহাসাগরের। এছাড়াও ভূপৃষ্ঠের নীচের ভৌমজল (প্রায় ১.৬ শতাংশ) এবং খুবই নগন্য পরিমাণে (০.০০১ শতাংশ) বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প, মেঘ ও অধঃক্ষেপ পৃথিবীতে জলের অন্যতম উৎস। সমুদ্রের জলই ভূপৃষ্ঠে পাওয়া জলের মূল উৎস (প্রায় ৯৭ শতাংশ); এছাড়া হিমবাহ ও মেরুদেশীয় বরফ (প্রায় ২.৪ শতাংশ) এবং নদী, হ্রদ ও জলাশয় ভূপৃষ্ঠের জলের অন্যতম উৎস (প্রায় ০.৬ শতাংশ)। ভূপৃষ্ঠে পাওয়া জলের খুব সামান্য অংশ বিভিন্ন জীবদেহ এবং তা থেকে উৎপন্ন পদার্থগুলিতে থাকে।
বেদে জল সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা দেখে নেইঃ
(ঋগ্বেদ ১০।৯ এবং অথরববেদ ১।৫)
১। শক্তির উৎসঃ
आपो हि ष्ठा मयोभुवस्ता न ऊर्जे दधातन | महेरणाय चक्षसे || ऋ10.9.1, अथर्व 1.5.1
এই জগতকে সুন্দর করে গড়ে তোলার ক্ষমতা জলের আছে।
২। খাদ্যগুণঃ
यो वः शिवतमो रसस्तस्य भाजयतेह नः | उशतीरिवमातरः || ऋ10.9.2,अथर्व 1.5.2
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জল আমাদের পুষ্টি দেয় ঠিক যেমন নবজাতক মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পায়।
৩। জীবন গুনঃ
तस्मा अरं गमाम वो यस्य क्षयाय जिन्वथ | आपोजनयथा च नः ||ऋ10.9.3, अथर्व 1.5.3
জলের ভিতরের জীবন্ত জিনিষ মানুষের জীবনশক্তি বাড়ায়।
৪। জলের পবিত্র গুণঃ
शं नो देवीरभिष्टय आपो भवन्तु पीतये | शं योरभि सरवन्तु नः || ऋ10.9.4, अथर्व 1.6.1
জলের পবিত্র গুণ যেন আমাদের শান্তি ও উন্নতি দান করে। আমাদের রোগশোক থেকে মুক্তি ও সুরক্ষা করুক।
৫। জলের চিকিৎসা গুণঃ
ईशाना वार्याणां कषयन्तीश्चर्षणीनाम | अपोयाचामि भेषजम || ऋ10.9.5, अथर्व 1.5.4
জলের রোগমুক্তি ক্ষমতা আছে। আমরা যেন তা জানতে পারি।
৬। अप्सु मे सोमो अब्रवीदन्तर्विश्वानि भेषजा | अग्निं चविश्वशम्भुवम ||ऋ10.9.6 अथर्व 1.6.2
জলের রোগমুক্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য দানের ক্ষমতা আছে।
৭। आपः पृणीत भेषजं वरूथं तन्वे मम | ज्योक चसूर्यं दृशे || ऋ10.9.7, अथर्व 1.6.3
জলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দিরায়ু দানের ক্ষমতা আছে।
যজুর্বেদ হতেঃ
श्वात्रा: पीता भवत यूयमापो अस्माकमान्तरुदरे सुशेवा: | ता अस्मभ्यमयक्ष्मा अनमीवा अनागस: स्वदन्तु देवीरमृता ऋतावृध: || यजु: 4.12
যখন আমি জলপান করি,আমার পাকস্থলীতে, সাথে সাথে আমাকে অত্যন্ত দ্রুত ভালোলাগার অনুভূতি দেয়। আমি যা পান করি তা যেন আমার রোগমুক্তি ঘটায়, স্বসাদু হয় এবং আমাকে সতেজ করে যাতে আমার গুণাবলী বিকশিত হয়।
इदमापः प्र वहत यत किं च दुरितं मयि | यद्वाहमभिदुद्रोह यद व शेप उतानृतम || ऋ10.9.8, AV 7.89.3
এই প্রবাহমান জলধারা যেন আমার মনের সকল কালিমা ধুয়ে নিয়ে যায় আবর্জনার মত।
आपो अद्यान्वचारिषं रसेन समगस्महि | पোধ स्वानग्ना गहि तं मा सं सृज वर्चसा ||ऋ10.9.9
জলদূষণ রোধ কর জাতে রোগ না ছড়ায়।
‘সম্পত্তি দখলের জন্যই বাঁশখালী হত্যাকাণ্ড’
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/এএইচ/জেকে/১০০৫ ঘ.
বাঁশখালীতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল হাশেমের নেতৃত্বে নয়জন আইনজীবী শনিবার বাঁশখালীর সাধনপুরের শীলপাড়ায় যান। নিহতদের স্বজনরা আইনজীবীদের কাছে সেই সময়ের ঘটনার কথা তুলে ধরেন।
শীলপাড়ার নিহতদের স্বজন ও মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলার পর চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেছেন, “নিহতদের সম্পত্তি দখল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্যই ২০০৩ সালে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।”
আলোচিত এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন শেষে আগামী ১৫ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা রয়েছে। চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার এ কার্যক্রম চলছে।
২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
সাত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হ্লাচিং প্র“ গত বছরের ৯ জানুয়ারি ৩৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
তার ভিত্তিতে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুটতরাজের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ চলতি বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি আগের অভিযোগ বাদ দিয়ে আসামি আমিনুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠনের আবেদন জানায়।
এরপর ১৯ এপ্রিল এ হত্যা মামলায় ৩৭ আসামির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় এ মামলার আসামি বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান চৌধুরী ওরফে আমিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি।
মামলার বাদি বিমল শীল শনিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ভিটে ও জমি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। ওইদিন রাতে ঘর থেকে লাফিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচেছিলাম।”
“গত আট বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নি। সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এখন বিচার কাজ শুরু হচ্ছে। এতে আমরা আশাবাদী” বলেন তিনি।
বিচারকাজ দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ওই ঘটনায় তিন মেয়ে হারানো শচীন্দ্র লাল বলেন, “নতুন ঘরের কাজ চলায় আমার তিন মেয়ে বড়ভাইয়ের ঘরে ঘুমাচ্ছিল। বাড়ির চারপাশে সন্ত্রাসীরা আগুন দেয়। পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। চোখের সামনে সবাইকে মরতে দেখেছি।”
ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সময় তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমার ভাই (তেজেন্দ্র লাল শীল) এলাকার বিচার- সালিশ করতেন। তাকে মেরে ফেললে এ পাড়ায় মুখ তুলে কথা বলার কেউ নেই। সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই সন্ত্রাসীরা এ কাজ করেছে।”
মামলার সাক্ষী মনমোহন শীল ও মো. দেলোয়ার জানান, একটি পুকুরের জমি কেনা-বেচা নিয়ে ২০০৩ সালে আমিন চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী নুরুল ইসলাম হুমকি দেয়। তেজেন্দ্র শীল এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলে তারা তাতে বাধা দেয়।
বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান চৌধুরী ওরফে আমিন চেয়ারম্যান সে সময় পার্শ্ববর্তী কালিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
মামলার সাক্ষী দেলোয়ার বলেন, গত বছরও আমিন চেয়ারম্যান স্থানীয় একটি সভায় প্রকাশ্যে এ মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিয়েছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলার পর চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাশেম বলেন, “সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক। ১৫ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হচ্ছে। আশা করি দ্রুত বিচার শেষ হবে।”
অতিরিক্ত পিপি জসিম উদ্দিন, চন্দন বিশ্বাস, প্রদীপ দত্ত, শামসুদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী টিপু, দীনমনি দে, খালেদ শাহনেওয়াজ, বিশেষ পিপি চন্দন তালুকদার ও নাসির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বর্ণপ্রথা কি এবং কেন?
বর্ণপ্রথা-বর্তমান সময়ে হিন্দুধর্মের অন্যতম বড় শত্রু।কিন্তু প্রকৃত
সত্যকি?অনেকেই হয়তো জানেন।তবুযারা জানেন না
তাদের জন্য আরেকবার বেদের আলোকে আলোচনা করছি।প্রথমেই নামের ব্যাপারটা।মূল এবং
সঠিক নাম হচ্ছে বর্ণাশ্রম।এখানে বর্ণ শব্দটি
এসেছে 'Vrn' root থেকে যার অর্থ 'To choose বা পছন্দ করা
অর্থাত্ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারন।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাব ে আমাদের সমাজে এখন একে
জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়।ভট্যাচার্য,চ ট্যপাধ্যায় নামের
পাশে থাকলেই ব্রাক্ষ্মন অথবা দাস,রায় থাকলেই শূদ্র এরকমহাস্যকর কিছু ধারনা প্রচলিত।আমি বুঝিনা কিভাবে মানসিকভাবে সুস্থ বলে পরিচিত এই আমরা এগুলো
বিশ্বাস করি।চলুন দেখা যাক বেদ এ ব্যাপারে কি বলে।ঋগবেদ ১.১১৩.৬"একজন জ্ঞানের উচ্চ
পথে(ব্রাক্ষ্মন,অপরজন বীরত্বের
গৌরবে(ক্ষত্রিয়),একজন তার নির্দিষ্ট
লক্ষ্যে(পেশাভিত ্তিক),আরেকজন সেবা এর পরিশ্রম এ(শূদ্র)।সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়,সকলের জন্যই ঈশ্বর
জাগ্রত।ঋগবেদ ৯.১১২.১একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেকরকম আর সেঅনুসারে কেউ
ব্রাক্ষ্মনকেউ ক্ষত্রিয় কেউ বেশ্য কেউ শূদ্র।ব্রাক্ষ্মন কে?ঋগবেদ ৭.১০৩.৮যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস,সত্,নিষ্ ঠাবান, সুশৃঙ্খল,বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে
ব্রাক্ষ্মন।ক্ষত্রিয় কে?ঋগবেদ ১০.৬৬.৮দৃড়ভাবে আচার পালনকারী, সত্কর্মের দ্বারা
শূদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন,অহিংস,ঈ শ্বর সাধক,সত্যের ধারক
ন্যায়পরায়ন,বিদ্ বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসত্ এর
বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।বেশ্য কে?অথর্ববেদ ৩.১৫.১দক্ষ ব্যবসায়ী দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারীশূদ্র কে?ঋগবেদ ১০.৯৪.১১যে অদম্য,পরিশ্রমী, অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত
কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্রঋগবেদ ৫.৬০.৫কর্ম ও গুন ভেদে কেউ ব্রাক্ষ্মন,কেউ ক্ষত্রিয়,কেউ বেশ্য,কেউ শুদ্র। এদের সবার জন্য ঈশ্বরের সমান ভালোবাসা।তাহলে দেখুন কি পাপটাই না করে চলেছি আমরা!