Pages

Monday, May 28, 2012

বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ

বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।


বেদ হিন্দুদের আদি ধর্ম গ্রন্থ । বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। এটা হিন্দু সমাজ মেনে চলে কঠোর ভাবে। 

কিন্তু কিছুদিন ধরে ইন্টারনেট ফোরাম গুলো তে হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রপোগান্ডা চলছে। এরা চায় ১০০ কোটি হিন্দু নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করে তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হোক যেটা তাদের মতে সর্বশেষ পথ । বেশির ভাগ হিন্দুই নিজের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানী নয় তাই তারা এই শিকারীদের সহজ শিকারে পরিনত হচ্ছে । দেখা যাক বেদ গোহত্যা নিয়ে কি বলে?

১. Ghrtam duhaanaamaditim janaayaagne maa himsiheeh
Yajurveda 13.49
Do not kill cows and bulls who always deserve to be protected.

২. Aare gohaa nrhaa vadho vo astu
Rigveda 7.56.১৭ 

ঋগবেদে গোহত্যা কে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে বলা হয়েছে । 

৩. Sooyavasaad bhagavatee hi bhooyaa atho vayam bhagvantah syaama
Addhi trnamaghnye vishwadaaneem piba shuddhamudakamaacharantee
Rigveda 1.164.40 or Atharv 7.73.11 or Atharv 9.10.২০

The Aghnya cows – which are not to be killed under any circumstances– may keep themselves healthy by use of pure water and green grass, so that we may be endowed with virtues, knowledge and wealth.

বেদে আঘ্ন্যা . অহি , ও অদিতি হচ্ছে গরুর সমপদ। 

আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয় । 
অহি মানে যার গলা কাটা / জবাই করা উচিত নয় । 
অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা উচিত নয় । 

(Source: Yaska the commentator on Nighantu )

৪. Aghnyeyam saa vardhataam mahate soubhagaaya
Rigveda 1.164.27

আঘ্ন্যা গরু আমাদের সুসাস্থ্য ও উন্নতি আনে । 

৫. Suprapaanam Bhavatvaghnyaayaah
Rigveda 5.83.৮ 

আঘ্ন্যা গরুর জন্য সুপেয় জলের উন্নত ব্যবস্থা থাকা উচিত । 

৬. 
Yah paurusheyena kravishaa samankte yo ashwena pashunaa yaatudhaanah
Yo aghnyaayaa bharati ksheeramagne teshaam sheershaani harasaapi vrishcha
Rigveda 10.87.16
Those who feed on human, horse or animal flesh and those who destroy milk-giving Aghnya cows should be severely punished.

এখানে মানুষ,ঘোড়া ও গোমাংস আহারকারিদের শাস্তির কথা বলা আছে । 

৭. Vimucchyadhvamaghnyaa devayaanaa aganma
Yajurveda 12.73

The Aghnya cows and bulls bring you prosperity.

৮. Maa gaamanaagaamaditim vadhishta
Rigveda 8.101.15
Do not kill the cow. Cow is innocent and aditi – that ought not to be cut into pieces .

৯. Antakaaya goghaatam
Yajurveda 30.18
Destroy those who kill cows .

১০. 
Yadi no gaam hansi yadyashwam yadi poorusham
Tam tvaa seesena vidhyaamo yatha no so aveeraha
Atharvaveda 1.16.4
If someone destroys our cows, horses or people, kill him with a bullet of lead.

১১. Vatsam jaatamivaaghnyaa
Atharvaveda 3.30.1
Love each other as the Aghnya – non-killable cow – loves its calf.

কিছু কি আর বলা লাগবে বেদ গো হত্যার পক্ষে নাকি বিপক্ষে ?

১২. Dhenu sadanam rayeenaam
Atharvaveda 11.1.34
Cow is fountainhead of all bounties .

ঋগ্বেদের ৬ মন্ডলের ২৮ সুক্ত গরুর প্রশংসা করেছে। 

Aa gaavo agnamannuta bhadramakrantseedantu
Bhooyobhooyo rayimidasya vardhayannabhinne
Na taa nashanti na dabhaati taskaro naasaamamitro vyathiraa dadharshati
Na taa arvaa renukakaato ashnute na samskritramupa yanti taa abhi
Gaavo bhago gaava indro me achhaan
Yooyam gaavo medayathaa
Maa vah stena eeshata maaghanshasah

1. Everyone should ensure that cows are free from miseries and kept healthy.
2. God blesses those who take care of cows.
3. Even the enemies should not use any weapon on cows
4. No one should slaughter the cow
5. Cow brings prosperity and strength
6. If cows keep healthy and happy, men and women shall also keep disease free and prosperous
7. May the cow eat green grass and pure water. May they not be killed and bring prosperity to us.

তারপরও কিছু স্বঘোষিত Scholar হিন্দু বিরোধী Site থেকে copypaste করে যাচ্ছে। এদের উদ্দেশ্যে বলব “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী “।

বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ এটা কমুনিস্ট এবং মিশনারীরা মানতে পারে না। আমাদের বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের সমাজ এর চেয়ে আদর্শিক ভাবে উন্নত। এদের সাথে যোগ হয়েছে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী। তারা বেদ ও মনুসংহিতা থেকে গরুর মাংস খাওয়ার Reference খুঁজে বের করতে চায় একটি এদের সহজ Trick হচ্ছে ‘মানসা‘ কে meat / মাংস হিসেবে অনুবাদ করা । ‘মানসা‘ মানে ডাল জাতীয় খাবার । 
আজ বেদ হতে কিছু অপপ্রচার এর জবাব দিব। 

১. অপপ্রচার: 
Rigveda (10/85/13) declares, “On the occasion of a girl’s marriage oxen and cows are slaughtered.”

জবাব: প্রকৃতঅর্থে মন্ত্র টি বলে সূর্যের আলো শীতকালে ম্লান হয়ে যায় এবং বসন্ত কালে শক্তি ফিরে পায় । (the rays of sun get weakened and then get strong again in spring.)

The word used for sun-rays in ‘Go’ which also means cow and hence the mantra can also be translated by making ‘cow’ and not ‘sun-rays’ as the subject. The word used for ‘weakened’ is ‘Hanyate’ which can also mean killing. But if that be so, why would the mantra go further and state in next line (which is deliberately not translated) that in spring, they start regaining their original form.How can a cow killed in winter regain its health in spring? This amply proves how ignorant and biased communists malign Vedas.

সমপদ জিনিস তা এরা বুজে না। 

২. অপপ্রচার: Rigveda (6/17/1) states that “Indra used to eat the meat of cow, calf, horse and buffalo.”

জবাব: মন্ত্র টি বলছে মেধাবী পন্ডিতরা বিশ্ব কে আলোকিত করেন যেমন কাঠ যোগ্গের এর আগুন এর আলো বাড়ায় । 

৩. অপপ্রচার: ব্লগ এ ম জ বাসার নামে এক পন্ডিত বলছে(লিঙ্ক),”বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩], মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।- আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।- গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]। ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]। এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবাদ সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরী।” 

জবাব: সমপদের অর্থ আর প্রয়োগ না জানলে এ রকম ই হবে । 
যেমন: 
�keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH 
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.� 

সোজা কথায় মন্ত্রের অর্থ হবে কেশব/কৃষ্ণ কে পরে যেতে দেখে পান্ডবরা উল্লসিত হলো আর কৌরবরা ও কৃষ্ণ, ও কৃষ্ণ বলে অর্থনাদ করে উঠলো। 
এখন এটার কোনো মানে হয় না । কারণ কৃষ্ণ ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে। 

একই শব্দের নানা অর্থ থাকে। 

দেখুন: 
১. কেশব= জল 
২. পান্ডব= সারস পাখি 
৩. কৌরব= কাক 
৪. শব= মৃত দেহ 
এবার অর্থ দেখুন: 

�keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.� 

মৃত দেহটিকে জলে পড়ে যেতে দেখে সারস পাখি খুশি হলো এবং কাক আর্তনাদ করে উঠলো- মৃত দেহটি 
জলে পড়ে গেছে, মৃত দেহটি জলে পড়ে গেছে। 

এখন আমাদের পন্ডিতরাকি বলবেন ‘ কৃষ্ণকে পান্ডবরা ঘৃনা করতেন?’
একই ভাবে বাসার ভাই চালাকি করেছেন । 

আমি দেখাচ্ছি: 

“বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩], মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।- আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।- গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]। ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]। এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবাদ সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরী।” 

অপপ্রচার: ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪] 
জবাব: 

�ghastta indra ukshshaNaH priyam…..� _RigVeda 10.86.13 

�ukshshaNo hi me panchadasha sAkaM pachanti vimshatiM…� _RigVeda 10.86.14 

অর্থ : 

rik 10.86.13, IndrANi tells Indra, �please receive your favorite soma quickly..� 

In rik 10.86.14 Indra replies, �they are preparing soma for offering fifteen and twenty times..� 

এখানে ukshshNa মানে সোম, বৃষ নয়। 

অপপ্রচার: 
মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮] খাওয়ার কথা রয়েছে । 

জবাব: 
�trI yachChatA mahishshANAmag 
ho mastrI….� _ RigVeda 5.29.8
সঠিক অর্থ: 
oh Indra, when
you have recieved three hundred offerings of soma, you will be powerful to kill vr^tra.

অপপ্রচার: অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো। 
জবাব: 
�eshshachChAgaH puro ashvena vAjinA…� _RigVeda 1.162.3 
সঠিক অর্থ: 

�the morning fire is lit before, thew sun, the giver of food rises� 

এখানে ছাগ মানে shr^ngarahita ajA / সিন্হীন ছাগল নয় বরং উষালোক। 

অপপ্রচার: বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩] খাওয়া হতো। 

জবাব: 

�…ukshANaM pRshnimapachanta vIrAH…….�…_ RigVeda 1.164.43 

সঠিক অর্থ: I saw from far away the smoke of fuel with spires that rose on high o’er that beneath it.
The Mighty Men have dressed the spotted bullock. These were the customs in the days aforetime,

অপপ্রচার: পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]। 

জবাব: 

Excellent is the glance, of brightest splendour, which the auspicious God bestows on mortals-
The God’s glance, longed-for even as the butter, pure, heated, of the cow, the milch-cow’s bounty.

কোথাও বলা নেই গরু কে জবাই কর । 

অপপ্রচার: – গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]। 
জবাব: 
এখানে Grifith সাহেবের Translation করলে হবে না । Grifith হিন্দুদের খ্রিস্টিয়ান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে সেই Translation করেসিলেন এটা প্রমানিত । এখানে এই ধরনের কোনো কথা বলা হয় নি । এটি একটি প্রার্থনা সঙ্গীত । 

Indra- O glorious warrior!
Te- Your
Aghasya- destroyer of evil
Chetya- power
Kahrrisvit- when
Asat- will appear
Yat- with which you
Rakshah- monsters
Bhinadah- kill
Mitrkruvo- those who are cruel to our dear ones
Eshat- cast terror in them
Yat- so that
Shasne- in the battlefield
Na- just like
Aaryak- after death
Gaavah- animals
Prathivyah- on the field
Shayante- lay or sleep

O glorious soldier! Where is your valor with which you kill the devils and cast terror in the hearts of wrong-doer cruel criminals and due to which they will be lying dead just like animals lay on ground while sleeping.(Rig Veda 10.89.14)

আমি সকল কে বলব বেদ থেকে একটি মন্ত্র দেখান যেটাতে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া বৈধতা দেয়া হয়েছে তাহলে আমি আপনার কথা মত বিশ্বের যেকোনো ধর্ম গ্রহণ করব আর আপনি যদি না পারেন তবে আপনাকে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসতে হবে ।

Tuesday, May 22, 2012

পরমাণু সম্পর্কিত বৈদিকবাণী :



পরমাণু সম্পর্কে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত মতবাদটি বিজ্ঞানী ডাল্টনের তবে পরমাণু সম্পর্কিত প্রথম ধারণা দেন গ্রীক দাশর্নিক লুসিপাস ও তাঁর ছাত্র ডেমোক্রিটাস খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে 

তবে বৈদিক যুগে এরও লক্ষাধিক বছর পূর্বে বলা হয়েছে পরমাণুয় কথা...
"চরম:সদ্বিশেষাণাম অনেক:অসংযুত:সদা ।
পরমাণু:স বিজ্ঞেয়ো নৃণাম্ ঐক্য ভ্রমো যত:॥"
(শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১১/১)
অর্থাত্‍,"জড়জগতের যে ক্ষুদ্রতম অংশ অবিভাজ্য এবং দেহরুপে যার গঠন হয় না তাকে পরমাণু বলে।তা সর্বদা তার অদৃশ্য অস্তিত্ব নিয়ে বিদ্যমান থাকে , এমনকি প্রলয়ের পরেও;জড়দেহ এই প্রকার পরমাণুর সম্বনয় কিন্তু সাধারণ মানুষের সেই সমন্ধে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে ॥"

"পরমাণু হচ্ছে ব্যক্ত জগতের চরম অবস্থা ।"-(শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১১/২)
ভগবানকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত পরমাণুর স্রষ্টারূপে কল্পনা করা হয়েছে ব্রহ্মসংহিতায় ৫/৩৫ মন্ত্রে
এছাড়া পরমাণু সম্পর্কিত আরও অনেক অনেক মন্ত্রে...

শুভ নন্দ চৌধুরী
সনাতনধর্ম বিষয়ক প্রচার- সম্পাদক ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
কুষ্টিয়া-বাংলাদেশ

অপহৃত স্কুলছাত্রী উদ্ধার হলেও দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন বাবা-মাঃসাতক্ষীরার শ্যামনগর থানা মামলা নেয়নি

দৈনিক  জনকণ্ঠ  সোমবার, ২১ মে ২০১২, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯



স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ অপহরণের ৪ মাস পর স্কুলছাত্রী ফুলবালা উদ্ধার হলেও বাবা-মায়ের কাছে ফুলবালাকে যেতে দেয়া হয়নি। আদালতে দাঁড়িয়ে মেয়েকে নিজেদের জিম্মায় নেয়ার দাবি জানানোর কারণে অপহরণকারীরা ফুলবালার বাবা-মাসহ সপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এমন খবরে এখন এলাকায় তোলপাড়। অপহরণকারীদের হুমকির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে ওসি অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার পর তারা জীবনের নিরাপত্তার জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র। তারা নদী পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এমন প্রচার এখন এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে জিডি না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামনগর থানার ওসি আলিনুর রবিবার বিকালে জনকণ্ঠকে বলেন, তারা দেশ ছেড়ে যাবে কেন, তারা নিজেদের দেশেই গেছে। ঢাকা থেকে যুদ্ধ করে পুলিশ ফুলবালাকে উদ্ধার করেছে দাবি করে ওসি বলেন, মেয়েকে উদ্ধারের পর তার বাবা-মাকে খবর দেয়া হলেও তারা থানায় মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। জিডি না দিয়ে মেয়ের মা আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানায় এমন দাবি করে তিনি তাদের গ্রেফতার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে স্বীকার করেন। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদহের বর্বরতার রেশ না কাটতেই শ্যামনগর থানা পুলিশের এমন আচরণে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পুলিশ ইচ্ছা করেই অপহরণকারীদের পক্ষ নিয়েছে এমন অভিযোগও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। 

গত ১৩ জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার পূর্বকালীনগর গ্রামের খগেন্দ্রনাথ সরদারের স্কুল পড়ুয়া ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ফুলমালাকে অপহরণ করা হয়। সম্ভাব্য সকল জায়গায় সন্ধান করেও মেয়েকে না পেয়ে খগেন্দ্রনাথ আব্দুল আজিজসহ ছয় জনের নামে শ্যামনগর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। অভিযোগ, তৎকালীন ওসি মামলার অভিযোগ পরিবর্তন করতে বাদীকে বাধ্য করে শুধু হাসানের নামে রেকর্ড করে। চার মাস পর ফুলবালাকে পুলিশ উদ্ধার দেখালেও অপহরণকারীদের হুমকির মুখে মেয়েকে কাছে পায়নি তার বাবা-মা। আদালত থেকে মেয়েটিকে যশোরের সেফ কাস্টডিতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ, আদালতে মেয়েকে নিজেদের জিম্মায় নেয়ার দাবি জানানোর কারণে ১৭ মে দুপুরে আসামিরা তাদের সপরিবারে ভারতে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। দেশ ত্যাগ না করলে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় পরদিন একজন সংবাদকর্মীকে নিয়ে শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে সারাদিন থানায় বসিয়ে রেখে সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দেয় ফুলবালার মা চমৎকার বালা সরদারকে। থানায় জিডি করতে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে রাতে আসামিরা খগেন্দ্রনাথের বাড়িতে এসে আবারও হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে মেয়ের আশা বাদ দিয়ে জীবন বাঁচাতে শনিবার রাতের আঁধারে খগেন্দ্রনাথ সরদার ও চমৎকার বালা সরদার গ্রাম ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়। নিরাপত্তার জন্য গ্রাম ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নিশ্চিত করেন খগেন্দ্রনাথ সরদারের বৃদ্ধ বাবা যুধিষ্ঠির সরদার ( ৭০) । 
বৃদ্ধ যুধিষ্ঠির সরদার সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সহায়তায় আসামিদের দেয়া মাইক্রোবাসে করে আসামিদের সঙ্গে ভিকটিমকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা ও আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করতে পাঠানো হয়। পথিমধ্যে ফুলতলায় আসামি হাসান সরদার ও তার চাচা আজিজ সরদার খগেন্দ্রনাথ সরদারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়। বিষয়টি পরদিন সকালে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। ১৭ মে কয়েক দফায় হুমকি দেয়ার বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। সে অনুযায়ী শ্যামনগরের একজন সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে ১৮ মে দুপুরে চমৎকার বালা সরদার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ডায়েরি না নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরিয়ে দেন। রাতে আবারও আসামিদের হুমকির ফলে শনিবার রাতে সব কিছু ফেলে কালিন্দি নদী পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তারা দেশেই গেছে এমন মন্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ওসি আলিনুর জনকণ্ঠকে বলেন, হিন্দুরা তো প্রায়ই ভারতে যায়। ওখানে ওদের বসবাস রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

পাকিস্তানে ঐতিহাসিক গোরখনাথ মন্দির ধ্বংস



পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পেশোয়ার শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক গোরখনাথ মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন গত রোববার মন্দিরটি ভাঙচুর করে। আদালতের নির্দেশে মন্দিরটি গত বছর পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল। পেশোয়ারের গোর গাথরি এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক একটি ভবনসংলগ্ন ওই মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন ছবি ও ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলে এবং কয়েকটি মূর্তি নিয়ে পালিয়ে যায়। পিটিআই।

Sunday, May 20, 2012

ভারতেও অসহায় তারা

সূত্র

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ‘মুসলমানদের রাষ্ট্র’ পাকিস্তানে (তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তান) হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছিল ১৫ শতাংশ। আজ ৬৫ বছর পর সেই পাকিস্তানে এদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ শতাংশে। গত ৬৫ বছরে নানা কারণে অনেক হিন্দু পরিবার পাকিস্তান ত্যাগ করেছে। বলা বাহুল্য, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সাধারণ হিন্দুদের লক্ষ্য সব সময়ই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। সাতচল্লিশের পর ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, দিল্লি, পাঞ্জাব প্রমুখ প্রদেশ হয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের আবাসভূমি।

পাকিস্তান থেকে কোনোমতে জীবন নিয়ে সীমান্ত ত্যাগ করলেই যে পাকিস্তানি হিন্দুদের সব সমস্যার সমাধান হয়েছে, তা আর এখন জোর দিয়ে বলার কোনো উপায় নেই। ভারতের মাটিতে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আসা এই হিন্দুদের নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। অনেককে জোর করেই আবার ফেরত পাঠানো হয় পাকিস্তানে। নিজভূমি ছেড়ে আসা এমন লোকজন ‘হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ’ রাষ্ট্র ভারতের কাছেও অপাঙক্তেয় হয়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। সব মিলিয়ে কেবল হিন্দু হয়ে জন্মানোর ‘অপরাধে’ পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতেও তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, যার আশু কোনো প্রতিকারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
কিছুদিন আগে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে রিংকেল কুমারী নামের এক পাকিস্তানি হিন্দু কিশোরী তুলে ধরেছিল তার ও তার পরিবারের ওপর ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের দাপটে মত্ত’ এক ব্যক্তির অত্যাচারের কথা। সেই ব্যক্তির ক্ষমতার দাপটে রিংকেলকে ধর্মান্তরিত করে তাঁর সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয়। শুধু তা-ই নয়, পরে রিংকেলকে নাভিদ শাহ পরিবার ত্যাগ করতেও বাধ্য করে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে রিংকেল ফরিয়াদ জানিয়েছিল সুবিচারের। সে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সাহায্য প্রার্থনা করে বলেছিল, সে যেন তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে। তার পরিবার যেন পাকিস্তানের মাটিতে নিরাপদ বোধ করে।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে করা রিংকেলের এই ফরিয়াদ নাড়া দিয়েছিল পাকিস্তানের সুশীল সমাজকে। পত্রপত্রিকায় ঝড় তুলে ছিল বিষয়টি। রিংকেলের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন একটি সহায়ক তহবিল গঠনে উদ্যোগী হয়। কিন্তু এতকিছুর পর রিংকেল কি নিরাপত্তা পেয়েছিল? রিংকেল কি ফিরে যেতে পেরেছিল তার পরিবারের কাছে?
রিংকেল প্রধান বিচারপতির কাছে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আবেদন জানানোর পর গুলিতে নিহত হন রিংকেলের ৭০ বছর বয়সী পিতামহ। পরিবারের ওপর নতুন করে নেমে আসে অত্যাচারের খড়্গ। তার মা-বাবাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়ে রাখে সেই নাভিদ শাহের লোকজন। এর ফলে, যে নাভিদ শাহের বিরুদ্ধে রিংকেলের এত অভিযোগ, তাঁর সঙ্গেই রিংকেল ইসলামাবাদের এক জনাকীর্ণ প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হয়ে ঘোষণা করে, সে নাভিদ শাহকে বিয়ে করেছে এবং সে এখন থেকে একজন ভালো স্ত্রী হয়েই সংসারধর্ম চালিয়ে যেতে চায়। এর পর আর কিছু বলার নেই।
পাকিস্তান পুলিশের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি হিন্দুধর্মাবলম্বী বাস করে সিন্ধু প্রদেশে (৯০ শতাংশ)। এই সিন্ধুতেই প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ জন মেয়ে রিংকেলের ভাগ্য বরণ করে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রাণের ভয়ে অনেক হিন্দু পরিবার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু ভারতে তাদের যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা যেন তাদের কাছে ‘হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র’টির বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। ভারত এদের কখনোই শরণার্থীর মর্যাদা দেয়নি। বরং কিছুদিন আগে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা দায়িত্ব সেরেছিল পুরো বিষয়টিকে পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে এমনকি প্রতিবছর মোট কী পরিমাণ হিন্দুধর্মাবলম্বী পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে আসছে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।
পাকিস্তানে কিশোর কুমার নামের এক ব্যবসায়ী চরম অনিরাপদ বোধ করেন, তাঁর দুই কলেজপড়ুয়া মেয়ের জন্য। তাঁর মতে, যেকোনো সময় এই দুই মেয়ে অপহরণ কিংবা ধর্ষণের শিকার হতে পারে। তিনি প্রায় তিন বছর চেষ্টা করে ভারতের ভিসার সিল লাগিয়েছেন তাঁদের পাসপোর্টে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিন্ধুর মির-খাস সীমান্ত দিয়ে কিশোর কুমার তাঁর পরিবার নিয়ে অবশেষে ভারতের আহমেদাবাদে এসে উঠেছেন। অবশ্য কিশোর কুমার ও তাঁর পরিবার ভারতে স্থায়ীভাবে বাস করতে পারবেন কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কিশোর কুমারের মতো পাকিস্তানের অনেক অবস্থাপন্ন ও শিক্ষিত পরিবারও নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তান ছেড়ে চলে এসেছেন ভারতে। কিন্তু এখানে তাঁরা নাগরিকত্ব না পাওয়ায় দুর্ভোগের জীবন ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। করাচির লিয়াকত মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করা কারমানি নামের এক তরুণ ভারতে এসেছেন। সঙ্গে রয়েছে তাঁর স্ত্রী। পাকিস্তানে বিরাট বাংলোয় বড় হওয়া কারমানি নিরাপত্তার কারণে সব ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে আজ শরণার্থী। প্রায় সাত বছর ধরে ভারতে বাস করার পরও নাগরিকত্ব না হওয়ায় হতাশ তিনি। তাঁর স্ত্রীও নাগরিকত্বের অপেক্ষায় আছে।
এই পাকিস্তানি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা ভারত। ভারতের কাছে তাদের যে প্রত্যাশা, তা অধরাই থেকে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় পাকিস্তানি হিন্দুদের করণীয় কী? কেবল একটি বিশেষ দেশে ও বিশেষ ধর্মে জন্ম নেওয়ার অপরাধে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হবে তারা? তাদের কোনো রাষ্ট্র নেই। তাদের কোনো সহায়ক শক্তি নেই। কারণ তারা ‘পাকিস্তানি হিন্দু’, সংখ্যায় অল্প। ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে

Saturday, May 19, 2012

সুজাতা চাকমারা তবে আমাদের নয়?

গত বছরের মাঝামাঝিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সিমলা দীঘিপাড়া গ্রামে সাঁওতাল নারী মরিয়ম মুর্মুর গাছে বাঁধা লাশের ছবি দেখেছিলাম পত্রিকায়। সেই ছবি দেখে শিউরে উঠেছিলেন কেউ কেউ। আবারও আঁতকে উঠেছেন অনেকেই গত ৯ এপ্রিল পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের উল্টোছড়া প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ১১ বছরের সুজাতার লাশ দেখে। ধর্ষণের আলামতের সঙ্গে শিশুটির শরীরজুড়েই ছিল কাটা চিহ্ন। এর প্রতিবাদে, এই ঘটনার বিচার এবং অপরাধীর শাস্তির দাবিতে লংগদুসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীরা প্রতিবাদ র‌্যালি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ঢাকার আদিবাসী শিক্ষার্থীরা করেছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। তবে এ দুটো ঘটনাতেই নির্যাতনের ধরন দেখে সাধারণ মানুষ যতটা আক্রান্তবোধ করেছে, কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় যে তারা সেইভাবে প্রতিবাদে ফেটে পড়েনি। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী আদিবাসী শিশু সুজাতা চাকমাকে ধর্ষণ এবং হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ইব্রাহিম এর আগে সুজাতার মামাতো বোনকে ধর্ষণ করে এবং ১১ মাস সাজা পাওয়ার পর জেল থেকে বের হয়ে প্রতিশোধ নিতেই সুজাতাকে ধর্ষণ করে ও হত্যা করে। আদিবাসী নারী, শিশু হত্যা এবং ধর্ষণ এবারই প্রথম নয়। গত বছরও মে মাসে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের জিয়ানগরের কাছে পুলিশ একই বয়সী সুনিকা চাকমার মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল এবং সেখানেও ধর্ষণের চিহ্ন ছিল। এর বিরুদ্ধেও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ হয়েছিল।
একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাজশাহীর আদিবাসী নারী ৫৫ বছর বয়সী মরিয়ম মুর্মু আর পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিশু ১১ বছর বয়সী সুজাতা এবং সুনিকা সবার অবস্থান লাশের মিছিলে, সবাই একই ধরনের নির্যাতনের শিকার। এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধেই আওয়াজ উঠেছে, তবে তা হয়তো অন্য আট-দশটা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমবেত প্রতিবাদ হিসেবে নয়। কারণ, সব আওয়াজের জোর এক নয়, সব প্রতিবাদের ঢংও এক নয়। যখন ঢাকা কিংবা এর আশপাশের এলাকায় কোনো নারী-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের নড়াচড়া বেশি হয়। নিজ ‘শ্রেণী’, নিজ ‘এলাকা’, নিজ স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আক্রান্ত হলে আমরা হূদয়ের সব ভালোবাসা, আবেগ, ক্ষোভ নিয়ে খুব অল্প সময়েই প্রতিবাদী হয়ে উঠি। অর্থাৎ আঘাতটি যদি নিজের পরিবারে, আত্মীয় কিংবা পরিচিতজনদের মধ্যে না হয়, তাহলে সেটি নিয়ে আমরা তেমনভাবে প্রতিবাদমুখর হই না। এর বাইরে আমাদের পরিচিত আরও কত ধরনের ধর্মীয়, জাতিগত, বর্ণগত দূরত্বের তকমায় ঠেসা। দূরত্ব অতিক্রম করে নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আমাদের কাছে খুব বেশি সহজ হয়ে ওঠে না।আমরা জেনেছিলাম, রাজশাহীতে নির্যাতকেরা ঘমুন্ত মরিয়ম মুর্মুকে অসম্মানিত করেছিল। সেই অপরাধ করেও তাদের রাগ কমেনি তাঁর ওপর। এরপর তারা তাঁকে ধর্ষণ করেছে। তাতেও হয়নি। এরপর তাঁকে হত্যা করেছে। সেটাও শেষ ছিল না। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তাঁর মৃতদেহ গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। তখনো তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। এই বীভৎস ঘটনার পর কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন ছাড়া কেউ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা নিন্দা জানায়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো নারী সংগঠনের বিবৃতিও চোখে পড়েনি। রাঙামাটির শিশু সুজাতার বেলায়ও সেটি ঘটেছে। তাকে প্রথম ধর্ষণ করা হয়েছে। তাতে ক্ষোভ কমেনি ধর্ষকের। এরপর শিশু সুজাতাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। কিন্তু কেন? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকে একজন সৌভাগ্য চাকমা প্রশ্ন ছুড়েছেন, বাংলাদেশের নারী এবং শিশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনকারীরা আদিবাসী নারী, শিশু সুজাতার বিষয়টিতে কেন চুপ করে আছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বললে খুব অত্যুক্তি হবে না যে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ঘরানা এখনো অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী। মরিয়ম মুর্মু, সুনিকা চাকমা কিংবা সুজাতা চাকমার ক্ষত-বিক্ষত লাশের ছবি দেখে আমরা শুধুই চোখ বন্ধ করি কিন্তু আমাদের মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হয় না। কেন হয় না? কারণ, আমরা বাঙালি নারীর বিষয়ে যতটা তৎপরতা দেখাই, ঠিক ততটাই উদাসীন থাকি কিংবা আমলে নিতে চাই না আদিবাসী নারী নিপীড়নকে। আমরা আরও ভাবি, এটি আদিবাসীদের বিষয়, তারাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, ঠিক যেমন অনেক পুরুষই নারী-নির্যাতনকে ‘নারীর বিষয়’ হিসেবে পাঠ করেন এবং এর প্রতিবাদ নারীরই করা উচিত বলে মনে করেন। নির্যাতনকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখতে পান না। আমরা কি সেই পুরুষদের থেকে ভিন্ন? হয়তো নয়। ঠিক একই ধরনের চিত্র দেখা গিয়েছিল ১২ বছর আগেও, যখন গারো নারী গিদিতা রেমাকে হত্যা করা হয়, তখনো বুদ্ধিজীবী মহল, নারী আন্দোলনের কর্মীরা চুপ ছিলেন। শহীদ মিনারে আদিবাসীরাই প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল। আর এই অবিরত ‘আমরা’-‘অপর’ কিংবা ‘আমরা’-‘তারা’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিপীড়ন চিহ্নিতকরণ এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই একধরনের ‘আমতা-আমতা’ এবং ‘গাঁইগুঁই’ ভাবের মধ্যে নিজেদের গুটিয়ে ফেলি। সীমাবদ্ধ পরিসরে নিজেকে স্থাপন করার বিনিময়ে নিজেদের ক্রমশ ছিটকে ফেলি মানবতার লড়াইয়ের ময়দান থেকে। আর এভাবেই পাহাড়ি ছড়ার (ঝরনা) পানি শিশু সুজাতা চাকমার রক্তে ভাসে আর মরিয়ম মুর্মুরা লাশ হয়ে গাছে ঝোলে। আর কত দিন এগুলো শুধুই ‘আদিবাসী’ বিষয় মনে করা হবে? দূরত্ব বজায় রেখে এগুলো এড়িয়ে যাওয়া হবে? আর কত দিন আমরা এই ভয়ংকর নির্যাতনের ছবি দেখে চোখমুখ ঢাকব? আর কত দিন আমরা সুজাতা চাকমা, মরিয়ম মুর্মুর কিংবা সুনিকা চাকমার ওপর নিপীড়নকে আমাদের নিপীড়নের অংশ নয় বলে হজম করে যাব?  জোবাইদা নাসরীন: সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিএইচডি গবেষক, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য। 

সুজাতা উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের উল্টোছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী এবং উল্টোছড়ি গ্রামের মৃত জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমার মেয়ে।
লংগদু থানার ওসি রেজাউল হক বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় মাইনী এলাকার গাটাছড়া গ্রাম থেকে ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার বলেন্দি গ্রামে।
তিনি জানান, ইব্রাহিমের প্রকৃত নাম কাঞ্চন চন্দ্র বিশ্বাস। কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম রাখেন ইব্রাহিম এলাহি। তার বর্তমান বাড়ি লংগদুর ইয়ারেংছড়িতে।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে গাটাছড়া এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন অপরিচিত ও উসকোখুসকো চেহারার লোক দেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তার কথায় অসঙ্গতি পেলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ইব্রাহিমকে আটক করে।
ওসি রেজাউল হক জানান, ২০১১ সালের ১৫ জুন একই এলাকায় সুজাতার মামাতো বোন বিশাখা চাকমাকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রায় ৮ মাস জেলে থাকার পর সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ইব্রাহিম। 
জেল থেকে বের হয়েই তিনি আবার সুজাতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ কথা স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, বুধবার দুপুরে শিশু সুজাতা চাকমা ৬ বছর বয়েসী এক শিশুসহ উল্টোছড়ি গ্রাম থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গরু আনতে যায়। বেলা আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে ইব্রাহিম সুজাতাকে জোর করে সাদাছড়া নামে একটি পাহাড়ি ছড়ার ওপরের দিকে নিয়ে যান। 
এসময় ওই শিশুটি দৌড়ে গ্রামে এসে লোকজনকে খবর দিলে লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সুজাতার লাশ উদ্ধার করে। 
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী শিশুটির উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, একজন দাড়িওয়ালা বাঙালি সুজাতাকে জোর করে ছড়ার ওপরের দিকে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঙ্গল কুমার চাকমা বুধবার বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন,  গ্রামের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ধর্ষক শিশুটিকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। শিশুটির গলায় ও বাহুতে কাটা চিহ্ন রয়েছে।   
এদিকে, এ ঘটনার পর নিহত সুজাতার ভাই বিকন চাকমা বুধবার রাতেই লংগদু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

Thursday, May 17, 2012

সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের রোমাঞ্চ

প্রথম আলো


আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদার (একিউএপি) ভেতরে পশ্চিমা গোয়েন্দার অনুপ্রবেশ সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। সম্ভবত, দুই পক্ষের হয়েই কাজ করা ওই কথিত ‘ডাবল এজেন্টের’ কারণেই সম্ভাব্য অন্তর্বাস বোমা হামলা থেকে বেঁচে যায় একটি মার্কিন যাত্রীবাহী বিমান। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের আলো-আঁধারির জগতের একটি বিরল ছবি তুলে ধরে এই ঘটনা। একই সঙ্গে পশ্চিমাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আল-কায়েদা উভয়েই যে অভিন্ন এক সমস্যার মুখোমুখি, তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে আরেকবার। এটি হলো কাকে বিশ্বাস করা যায় আর কাকে করা যায় না সেই সমস্যা।

কর্মকর্তারা বলেছেন, ইয়েমেনের গোয়েন্দা অভিযানটি চালানো হয় সর্বোচ্চ মাত্রার গোপনীয়তার মধ্যে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খুঁটিনাটি তথ্য এখন পর্যন্ত সব স্পষ্ট নয়।
তবে প্রাথমিকভাবে যেটুকু প্রকাশ পেয়েছে সে অনুযায়ী সৌদি গোয়েন্দারাই মার্কিন বৈদেশিক গোয়েন্দা সিআইএর সঙ্গে মিলে তাঁকে কাজে লাগিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারাও ঘনিষ্ঠভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র এই অভিযানের জন্যই সৌদি ওই গোয়েন্দাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পর্যন্ত দেওয়া হয়।
বোমা হামলার পরিকল্পনা ফাঁস করে দেওয়া ব্যক্তিকে কেউ কেউ বলেছেন ‘ডাবল এজেন্ট’ যে কি না উভয় পক্ষের হয়ে কাজ করে। তবে এর সম্ভাবনা আসলে কম। খুব সম্ভবত তিনি স্রেফ একজন গোয়েন্দা, যিনি কিনা পরিচয় ভাঁড়িয়ে আল-কায়েদার ভেতরে ঢুকেছিলেন। ওই গোয়েন্দা ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদা গোষ্ঠীকে এ কথা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে তিনি একটা আত্মঘাতী হামলা চালাতে চান। কিন্তু তাঁকে যে অত্যাধুনিক বোমাটি দেওয়া হয় তা ব্যবহারের বদলে, যাদের ওপর হামলা করার কথা সেই মার্কিনিদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। অন্তর্বাস বোমা নামে পরিচিত এ বোমাটি এতই দক্ষতার সঙ্গে তৈরি যে বেশির ভাগ বিমানবন্দরে তা শনাক্ত করার মতো যন্ত্র নেই। এটি আগে তৈরি অন্তর্বাস বোমার উন্নত সংস্করণ।
একটি খবরে বলা হয়েছে যে ওই গোয়েন্দা এখন সৌদি আরবে রয়েছেন। খবরটি চাউর হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এটা ভেবে উদ্বিগ্ন যে করিৎকর্মা গোয়েন্দা বা তাঁর পরিচিতেরা এখন বিপদে পড়বেন কি না।
উদ্ধার হওয়া অন্তর্বাস বোমাটি এখন মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর হেফাজতে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা তাঁদের গবেষণাগারে এটি পরীক্ষা করে দেখছেন। তাঁরা এ থেকে যেমন বোমাটির কারিগরি দিক সম্পর্কে ধারণা পাবেন, তেমনি জানতে পারবেন ২০০৯ সালের সংস্করণের চেয়ে এর কতটা উন্নতি করা হয়েছে। আগের ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হতে ব্যর্থ হয়েছিল। খুব গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হচ্ছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার পক্ষে এটি চিহ্নিত করার কোনো উপায় আছে কি না সেটি বোঝা। এ বোমার মধ্যে কোনো ধাতব অংশ না থাকায় তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ধরা যায় না। আর খুব ভালো করে আড়াল করা গেলে শরীর স্ক্যান করা মেশিনও একে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হতে পারে। 
অন্তর্বাস বোমা এনে দেওয়া ছাড়াও গোয়েন্দা নাকি গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছু তথ্যও দিয়েছেন। সম্ভবত এর মধ্যে থাকবে আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদার বিভিন্ন নেতা ও দলটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ তথ্য। মনে করা হয়, এ মুহূর্তে একিউএপিই আল-কায়েদার সবচেয়ে সক্ষম শাখা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওই গোয়েন্দার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যই হয়তো ইয়েমেনে গত সপ্তাহের মার্কিন ড্রোন হামলায় সহায়তা করেছে। ওই হামলায় নিহত ফাহদ আল-কুসো ২০০০ সালে মার্কিন রণতরী ইউএসএস কোলে বোমা হামলায় জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আল-কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হয়ে উঠেছিলেন আল-কুসো।
নতুন এই অভিনব গোয়েন্দা অভিযানের অনেক বিশদ তথ্য মার্কিন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কখনোই তাদের গোপন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়া পছন্দ করে না। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দার বিপদ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও উদ্বেগের বড় একটি কারণ হচ্ছে, এতে করে ভবিষ্যতে আবার এ ধরনের অভিযান চালানো আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। তবে তাদের ভেতরে কৌশলে ঢোকার জন্য প্রতিপক্ষের গোয়েন্দারা যে চেষ্টা করতে পারে অনেক আগে থেকেই সে বিষয়ে সচেতন আল-কায়েদা। অতীতে দেখা গেছে, ঝুঁকি এড়াতে আল-কায়েদা নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানোর আগে নির্ভরযোগ্য সুপারিশ ও পরিচিতি যাচাই-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এখন নিশ্চয়ই ওই প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
ছদ্মপরিচয়ে কাজ করা গোয়েন্দার শারীরিক বিপদ ও মানসিক চাপ বিশাল। এর জন্য স্নায়ুর চাপ সামলানোয় প্রায় অমানুষিক দক্ষতা প্রয়োজন। একটা মাত্র ভুল শব্দ উচ্চারণে ফাঁস হয়ে যেতে পারে পরিচয়, যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু।
এফবিআই ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেমন ধরা যাক, জঙ্গিবাদী ‘জিহাদে’ যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহী তরুণ-যুবকেরা স্থানীয় কোনো আল-কায়েদাপন্থী দলে যোগ দিল। তাদের তখন বোমা বা অস্ত্র দেওয়া হয়। ওই তরুণ-যুবকেরা তো আল-কায়েদায় যোগ দিতে পেরে খুশি। বাস্তবে ওই আল-কায়েদাপন্থী দলগুলো সরকারের লোক। তাদের সরবরাহ করা বোমা বা বন্দুকও অচল। এভাবে তারা ফাঁদে পড়ে। তবে ইয়েমেনের ঘটনার ক্ষেত্রে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত একজন গোয়েন্দা একটি সত্যিকারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে দেওয়া বোমাটিও ছিল সত্যিকারের।
এত কিছুর পরও আলোচ্য গোয়েন্দাটি সত্যিই কোন পক্ষের লোক তা নিয়ে দৃশ্যত কিছু সংশয় রয়ে গেছে। এ কারণেই হয়তো তিনি অন্তর্বাস বোমা সিআইএর হাতে তুলে দেওয়ার পরও কেউ পুরোপুরি নিরুদ্বিগ্ন হননি। বরং সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গোয়েন্দাগিরির লড়াইয়ে কাকে সত্যিই বিশ্বাস করা যায়, সেটা জানাটা সহজ নয়। এর জন্য খুব চরম মূল্যও দিতে হতে পারে। সিআইএ কর্তৃপক্ষের এ রকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এক গোয়েন্দা সিআইএকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের সন্ধান দেবেন। সিআইএ তাঁর সঙ্গে লেগে ছিল বেশ কিছুদিন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ওই গোয়েন্দা প্রথম থেকেই বরাবর আল-কায়েদার হয়ে কাজ করে গেছেন। তাঁরই আত্মঘাতী হামলায় আফগানিস্তানের খোস্তে সিআইএর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন। সেবারেরটি এবং সাম্প্রতিকতম ঘটনা গোয়েন্দাগিরি আর শত্রুমিত্র চিহ্নিত করার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাফল্যের সম্ভাবনা ও বিপদের মাত্রা দুটোই ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে।

কাশ্মীর : হিন্দুদের পবিত্রভূমিতে দানবরা যেভাবে প্রবেশ করেছিল



কাশ্মীরে কীভাবে ইসলাম এসেছিল? এ প্রশ্নের উত্তর আসে যে, সূফীদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণার মাধ্যমে ইসলাম এসেছিল কাশ্মীরে।

পৃথিবীব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচারের জন্য সর্বজনীনভাবে সূফীদেরকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। এক কিংবদন্তী অনুযায়ী কাশ্মীরে কোন এক কালে এক রাজা ছিলেন যার কোন ধর্ম ছিল না। একদিন তিনি ঠিক করলেন, যে তিনি কোন একটি ধর্ম গ্রহণ করবেন। মুসলমান এবং হিন্দু উভয় দলই রাজাকে স্বধর্মে দীক্ষিত করতে চাইল। অতঃপর রাজা উভয় পক্ষের পরস্পর বিরুদ্ধ বক্তব্য শুনে বিভ্রান্ত হলেন এবং ঠিক করলেন যে, “পরদিন সকাল বেলায় তিনি প্রাসাদ থেকে রাস্তায় বেরিয়ে যে ব্যক্তিকে প্রথম দেখবেন তিনি তার ধর্ম গ্রহণ করবেন।” (Chapter 2, Baharistan-i-Shahi, an anonymous 17th-century Persian book on the history of Kashmir, translated by Prof. K. N. Pundit)। এবং পরদিন রাজা প্রথম দেখা পেলেন এক সুফি-দরবেশের এবং এভাবে কাশ্মীরে ইসলামে প্রবেশ করল।
অনেক জায়গাতে এ ধরনের কিংবদন্তীয় কাহিনী প্রচলিত আছে যেঃ একজন সূফী তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে অথবা অন্য কোনভাবে সেখানকার রাজাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছিলেন। এভাবে সে রাজ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করে এবং ইসলামের এ শান্তিপূর্ণ প্রচারের জন্য সূফীদেরকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
আমার এক কাশ্মীরী বন্ধু বর্বর শিক্ষার জন্য ইসলামের উচ্ছেদ চাইলেও আমাকে বলেঃ ইসলামের এ বর্বর চরিত্র সত্ত্বেও সূফীদের শান্তিপূর্ণ প্রচারের মাধ্যমে কাশ্মীরে ইসলাম এসেছিল। এবং সে আফসোচ করে যে, ইসলামের সে শান্তিময় উপত্যকা কীভাবে আজ বর্বরতার ভূমিতে পরিণত হয়েছে? এর জন্য সে দায়ী করে ওয়াহাবী ইসলামি মতবাদকে।
কাশ্মীর ও সারা পৃথিবীব্যাপী সূফীদের শান্তিপূর্ণ প্রচারের মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করেছিল – এ ধারণা মুসলিম ও অমুসলিম পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকদের মাঝে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। ইসলামের উপর এক খ্যাতনামা পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক এবং সূফীদের উপরে বিশেষজ্ঞ ডঃ যোগিন্দর সিকান্ত্‌কে জিজ্ঞাসা করুন, তিনি এই কথাই বলবেন।
সুফিদের কর্মকাণ্ডের উপর ঐতিহাসিক তথ্য অপ্রত্যুল। তবে যে সব ঐতিহাসিক দলিল পাওয়া যায়, তা থেকে সুফিদের ব্যাপারে ভিন্ন চিত্র, অর্থাৎ বর্বরতামূলক চিত্র, ফুটে উঠে। অথচ সুফিদের শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচারের চিত্রটি একচেটিয়া ও সফলভাবে প্রচারিত হয়ে চলেছে।
কাশ্মীরে ইসলামী শাসন কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটা জানা কঠিন। ৭১৫ খ্রীষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম কাশ্মীর আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তারপর থেকে কাশ্মীর অনেকগুলি ইসলামী আক্রমণের শিকার হয়। মুসলমানরা যাকে নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু যিনি শ্রেষ্ঠ বর্বর ছাড়া আর কিছু নন, সেই সুলতান মাহমুদও সেখানে একটি ব্যর্থ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। হিন্দু অঞ্চলগুলির বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ পরিচালনার জন্য খলীফা আল মনসুর (৭৫৫-৭৪) হাশাম বিন আমরুর নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কান্দাহার এবং কাশ্মীরের মধ্যে বহু স্থান তিনি দখল করেন এবং তিনি “কাশ্মীরকে পদানত করে বহু সংখ্যক বন্দী ও দাসকে নিয়ে যান” [Elliot H.M. & Dawson J., "History of India as Told by Its Own Historians" (এতে মুসলমানদের দ্বারা লিপিবদ্ধ ঘটনাপঞ্জি থেকে বিভিন্ন অংশ নেওয়া হয়েছে), Vol. 1, p. 122-23, 203]। সুলতান মাহমুদের পুত্র সুলতান মাসুদ তার পিতার মত কীর্তিমান ছিলেন না। ১০৩৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পিতার ব্যর্থতার প্রতিকারের উদ্দেশ্যে “কাশ্মীরের সুরসুতি দুর্গ আক্রমণ করেন। নারী ও শিশু বাদে দুর্গের সকল সৈন্যকে হত্যা করা হয় এবং জীবিত নারী ও শিশুদেরকে দাস হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়।”
এটা বলা কঠিন যে এ সকল অভিযানের মধ্যে কোনটি দ্বারা কাশ্মীরে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে কাশ্মীরকে ইসলামীকরণে তথাকথিত শান্তির দূত সূফীদের যে একটা প্রধান ভূমিকা ছিল সেটা নিশ্চিত বলা যায়। কিন্তু তাদের পন্থাটা ছিল বর্বরোচিত।
কাশ্মীরে জনগণের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে আমরা যে ধারণা পাই সেটা হচ্ছে এ রকমঃ ১৩৭১ অথবা ১৩৮১ সালের দিকে একজন বিখ্যাত সূফী দরবেশ বা সাধু সাঈদ আলী হামদানী কাশ্মীরে আসেন, এবং তার সঙ্গে কাশ্মীরে আসে ইসলামি গোড়ামি। তিনি প্রথম যে কাজ করেছিলেন, সেটা হচ্ছে “একটি ছোট মন্দির যেটাকে ধ্বংস করা হয়েছিল”, সেই জায়গার উপর তার খানকা (আস্তানা বা আশ্রম) স্থাপন করা (Baharistan, p. 36)। তার আগমনের পূর্বে শাসনকারী সুলতান কুৎবুদ্দীন ইসলামী আইন বলবৎ করার ব্যাপারে সামান্যই মনোযোগ দিয়েছিলেন। কাশ্মীরের সহনশীল হিন্দু সংস্কৃতি ও আচার-আচরণের ভিতরে সুলতান থেকে কাজী পর্যন্ত সমাজের সকল স্তরের মুসলমানরা নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল (Baharistan, p. 37)।কিন্তু সূফী দরবেশ সাঈদ হামদানী কাশ্মীরী মুসলমানদের এমন সকল আচার-কার্য দেখে আতঙ্কিত হন এবং ইসলামী নিয়ম পালনে শৈথিল্য দূর করে গোঁড়া ইসলাম প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। শাসক কুৎবুদ্দীন তার ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী গোঁড়ামি অনুশীলন করার চেষ্টা করেন, কিন্তু “আমীর সাঈদ আলী হামদানীর ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ইসলাম প্রচারে ব্যর্থ হন” (ঐ)। এর ফলে সূফী দরবেশ পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান প্রাধান্যের দেশে বাস করতে নারাজ হয়ে ও প্রতিবাদস্বরূপ কাশ্মীর ছেড়ে চলে যান।
পরবর্তী কালে তার পুত্র ও আরেক বিখ্যাত সূফী দরবেশ আমীর সাঈদ মুহাম্মদ বিখ্যাত প্রতিমা-ধ্বংসকারী সুলতান সিকান্দারের শাসনকালে কাশ্মীরে আগমন করেন। সুলতান সিকান্দার পবিত্র সূফী দরবেশ সাঈদ মুহাম্মদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত এতটা বর্বর ও গোঁড়া ছিলেন না। সূফী দরবেশ কাশ্মীরে ইসলামী আইন কার্যকর করার জন্য সিকান্দারকে প্রণোদিত করেন। সুলতান কুৎবুদ্দীন সূফী দরবেশের নির্দেশনা মানেন নই, কিন্তু সুলতান সিকান্দার তা মেনে নিতে রাজী হন। এভাবে কাশ্মীর থেকে মূর্তিপূজা এবং তার অনুসারীদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য সিকান্দার এবং সূফী সাধক সাঈদ মুহাম্মদ ঐক্যবদ্ধ হন।
দিল্লী সম্রাটের দরবারের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ফেরিশতা (মৃত্যু ১৬১৪) জানান (History of the Rise of the Mahomedan Power in India, Vol. 1V. 1997, imprint, p. 268) যে, সিকান্দার আদেশ জারী করেন:
“.... কাশ্মীরে মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসারীর বসবাস বেআইনী ঘোষণা ক’রে; এবং তিনি চান যাতে কেউ কপালে কোন চিহ্ন না লাগায়। ....সবশেষে তিনি সকল স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত মূর্তি ভাঙ্গার এবং সেগুলি গলিয়ে ধাতব মুদ্রায় পরিণত করেন। অনেক ব্রাহ্মণ তাদের ধর্ম অথবা দেশ ত্যাগের পরিবর্তে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কেউ কেউ বাসভূমি ত্যাগ করে দেশান্তরী হন, কেউ কেউ বিতাড়নের শাস্তি এড়ানোর জন্য মুসলমান হন। ব্রাহ্মণরা দেশান্তরী হলে সিকুন্দুর (সিকান্দার) কাশ্মীরের সকল মন্দির ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। ....কাশ্মীরের সকল প্রতিমা ধ্বংস করে তিনি “প্রতিমা ধ্বংসকারী” উপাধি অর্জন করেন।”
আরেক সপ্তদশ শতাব্দীর পারস্যীয় বিবরণ, HM Chaudurah-র Tarikh-i-Kashmir-এ বলা হয়েছেঃ সিকান্দার “অবিশ্বাসীদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস সাধনের কাজে অবিরামভাবে ব্যস্ত ছিলেন এবং অধিকাংশ মন্দির ধ্বংস করেছিলেন” (Trans. Razia Bano, Delhi, 1991, p. 55)।
বিদ্বান ফারিশতার নিকট সুলতান সিকান্দারের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ছিল এটাই। আর এর জন্য আসল কৃতিত্ব ছিল কার? এই প্রশ্নের উত্তরে Baharistan-i-Shahii-এর গর্বিত লেখকের কথা থেকেই বের করে নিন, যিনি লিখছেনঃ “...এই ভূমির বাসিন্দাদের বিবেকের আয়না থেকে নাস্তিকতা এবং সত্য ধর্মে অবিশ্বাসের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে ফেলার কৃতিত্ব ছিল” সূফী দরবেশ সাঈদ মুহাম্মদের (ঐ, পৃঃ ৩৭)।
প্রতিমা ধ্বংসকারী সিকান্দারের পুত্র আমীর খান (আকা আল্লী শাহ্‌) কাশ্মীরে হিন্দু নিধন অব্যাহত রাখেন। ফারিশতা বলেনঃ “এরপরেও যে সামান্য কিছু সংখ্যক ব্রাহ্মণ তাদের স্ব-ধর্মে অটল ছিলেন, তাদেরকে তিনি নির্যাতন করেন এবং যারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন তাদের সকলকে হত্যা করেন। এরপরেও যারা কাশ্মীরে ছিলেন তাদের সকলকেই সেই রাজ্য থেকে বিতাড়ন করেন” (ঐ, পৃঃ ২৬৯)।
এরপর উদার ও সহিষ্ণু সুলতান জয়নুল আবেদীন (১৪২৩-১৪৭৪) নিগৃহীত অমুসলমানদের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরিয়ে আনেন। তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অনুমোদন দেন, এমনকি জবরদস্তিমূলকভাবে ধর্মান্তরিত হিন্দুদেরকে তাদের নিজ ধর্মে ফিরে যেতেও অনুমতি দেন। এটা হিন্দু ধর্মের সমৃদ্ধি ঘটতে সাহায্য করে, “যা কিনা প্রতিমা ভগ্নকারী সুলতান সিকান্দারের ইতিপূর্বেকার শাসনকালে উচ্ছেদ হয়েছিল” (ঐ, পৃঃ ৭৪)। সিডনি ওয়েন বলছেনঃ ভিন্ন ধরনের শাসক জয়নুল আবেদীনের শাসনাধীনে, “অনেক হিন্দু (অর্থাৎ জবরদস্তির মাধ্যমে ইসলামে ধর্মান্তরিত হিন্দুগণ) হিন্দুধর্মে ফিরে যায়” (From Mahmud Ghazni to the Disintegration of Mughal Empire, Delhi, p. 127)| সুলতান জয়নুল আবেদীনের নীতিতে অসন্তুষ্ট ও আতঙ্কিত Baharistan-i-Shahi-র লেখক তাঁর অধীনে হিন্দুধর্মের উত্থান এবং ইসলাম ধর্মের পতনের ব্যাপারে আফসোচ করে বলেন (পৃঃ ৭৪):
“... অবিশ্বাসীরা এবং তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনৈতিক আচার-আচরণ এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে, এমনকি এ দেশের উলেমা, সাইয়ীদ (সম্ভ্রান্ত) এবং কাজীগণও সে সব অপকর্মের কোন রকম বিরোধিতা করার পরিবর্তে বরং সেগুলিতে ডুবে যান। তাদেরকে নিষেধ করার মত কেউ ছিল না। এর ফলে ইসলাম ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর অনুশাসন ও নীতিমালা পালনে শিথিলতা দেখা দেয়; প্রতিমা পূজা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনৈতিক আচার-অনুষ্ঠান বিস্তার লাভ করে।”
আকবরের মত সুলতান জয়নুল আবেদীন ধার্মিকদের মুসলমানদেরকে অগ্রাহ্য ও ক্রুদ্ধ করে সকল ধর্মের প্রতি উদার নীতি অনুসরণ করেন। উদাহরণ হিসাবে সুলতানের উদার নীতিতে না’খুশ পারস্য পণ্ডিত মুল্লা আহমদের চিঠির কথা উল্লেখ করা যায়, যেখানে তিনি সুলতানকে স্মরণ করিয়ে দেনঃ
“...তাদের উপর জিযিয়া কর আরোপের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে অপমান করা। ...তাদেরকে অপমানিত করার জন্যই ঈশ্বর জিযিয়া কায়েম করেছিলেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের অবমাননা এবং মুসলমানদের মর্যাদা ও সম্মান (প্রতিষ্ঠা)” (Quted by KS Lal, "Theory and Practice of Muslim State in India", p.113)।
কিন্তু মালিক রাইনা এবং কাজী চাকের রাজত্বকালে কাশ্মীরের অমুসলিমদের উপর পুনরায় সন্ত্রাস নেমে আসে। তারা হিন্দুদেরকে তলোয়ার দ্বারা ইসলামে ধর্মান্তরিত করেন। আর এবারে এমন বর্বরতায় উস্কানীদাতা ছিলেন আরেক সূফী দরবেশ আমীর শামসুদ্দীন মুহাম্মদ ইরাকী, যিনি কিনা কাশ্মীরে আগত সর্বশ্রেষ্ঠ সূফী সাধক হিসাবে পরিচিত।মালিক মুসা রাইনা ১৫০১ সালে কাশ্মীরের শাসক হবার পর মুহাম্মদ ইরাকী কাশ্মীরে আগমন করেন, এবং মালিক মুসার সঙ্গে জোট বেঁধে তিনি যেসব কর্মকাণ্ড চালান, সে সম্পর্কে Baharistan-i-Shahi (p. 93-94)-তে বলা হয়েছেঃ
“আমীর শামসুদ্দীন মুহাম্মদ সকল মূর্তিপূজার গৃহ পাইকারীভাবে ধ্বংস করেন এবং সেই সঙ্গে নাস্তিকতা ও অবিশ্বাসের ভিত্তিমূল পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করেন। মূর্তিপূজার প্রতিটি গৃহ ধ্বংস করার পর ইসলামী কায়দায় উপাসনা করার জন্য তার উপর মসজিদ নির্মাণ করার আদেশ দেন।”
এবং “শামসুদ্‌-দীন ইরাকীর অনুরোধে মুসা রাইনা আদেশ জারী করেন যে, প্রত্যেক দিন ১৫০০-২০০০ অবিশ্বাসীকে মীর শামসুদ্দীনের অনুসারীরা তার সামনে হাজির করবে, এবং তাদের পবিত্র সূতা খুলে ফেলবে, তাদেরকে কলেমা (ইসলামের মূল মন্ত্র) পড়াবে, খৎনা করানো হবে এবং গরুর মাংস খাওয়ানো হবে”; এবং এভাবে “বলপ্রয়োগ এবং বাধ্যতাপূর্বক ২৪,০০০ (চব্বিশ হাজার) হিন্দু পরিবারকে ইরাকীর ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়” (ঐ, পৃঃ ১০৫-১০৬)।
সুলতান মুহাম্মদ শাহর অধীনে ১৫১৯ খ্রীষ্টাব্দে মালিক কাজী চাক সেনানায়ক হওয়ার পর সাধু-সন্ত ইরাকী তার ভয়াবহ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। Baharistan-i-Shahi (p. 116)-তে বলা হয়েছে: “তিনি (কাজী চাক) আমীর শামসুদ্দীন মুহাম্মদ ইরাকীর যে প্রধান নির্দেশটি কার্যকর করেন, সেটা হল এ দেশের অবিশ্বাসী ও পৌত্তলিকদেরকে পাইকারীভাবে হত্যা।” এ নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিল যারা মালিক রাইনার সময়ে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর আবার পৌত্তলিকতায় (হিন্দুধর্ম)-এ ফিরে গিয়েছিল। মুসলমানরা এ গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, সেসব ধর্মত্যাগীরা “পাছার নীচে পবিত্র কুরআন রেখে তার উপর বসেছিল।” এটা শুনে সূফী দরবেশ ক্রুদ্ধ হয়ে কাজী চাকের নিকট এটা বলে প্রতিবাদ জানায় যেঃ
“এ মূর্তি-পূজারী সম্প্রদায় ইসলামী ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ ও তাতে আত্মসমর্পণ করার পর এখন ধর্মভ্রষ্টতা ও ধর্মদ্রোহে ফিরে গেছে। যদি আপনি নিজে শরীয়ার বিধান অনুযায়ী তাদেরকে শাস্তি (ইসলামে ধর্মদ্রোহের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু) না দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ জনিত শাস্তি না দেন, তাহলে আমার নিকট স্বেচ্ছা-নির্বাসনে যাওয়া প্রয়োজনীয় ও বাধ্যতামূলক হবে।” (ঐ, পৃঃ ১১৭)
লক্ষ্য করুন যে, কুরআন অবমাননার যে কথা উপরে বলা হয়েছে, ইরাকী সেটা উল্লেখ করেননি, বরং তিনি কেবল ইসলাম গ্রহণের পর হিন্দুরা তা ত্যাগ করার কথা বলেছেন মাত্র, ইসলামে যার শাস্তি হচ্ছে “মৃত্যু”। বাহারিস্তান-ই-শাহী (Baharistan-i-Shahi)-তে বলা হয়েছেঃ ক্রুদ্ধ সূফী দরবেশকে শান্ত করার জন্য মালিক কাজী চাক “অবিশ্বাসীদেরকে পাইকারীভাবে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।” আশুরার পবিত্র পর্বের দিনকে হত্যার দিন হিসাবে ধার্য করা হয় (মুহররম, ১৫১৮ সাল; ইরাকী ছিলেন শিয়া)। বাহারিস্তান-ই-শাহীতে আরও বলা হয়েছেঃ
“... প্রায় সাতশত থেকে আটশত অবিশ্বাসীকে হত্যা করা হয়। যাদেরকে হত্যা করা হয়, তারা ছিলেন সেই সময় অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব” (পৃঃ ১১৭)।
Baharistan-i-Shahi-এর গর্বিত লেখক আরও বলছেনঃ
“তরবারির মুখে কাশ্মীরে অবিশ্বাসী ও পৌত্তলিকদের পুরো সম্প্রদায়কে ইসলামে দীক্ষিত হতে বাধ্য করা হয়। এটা ছিল মালিক কাজী চাকের সর্বোত্তম কীর্তি” (পৃঃ ১১৭)।
এবং মৌলিক অর্থে এ ভয়ঙ্কর কাজের নির্দেশ যিনি দিয়েছিলেন, তিনি মহান সূফী দরবেশ ব্যতীত আর কেউ নন।
সূফীদের আসল চরিত্র তুলে ধরার জন্য আমার আর কিছুই বলার প্রয়োজন নাই। ভারতে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রসারের সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হিসাবে মুসলমানরা যে কাশ্মীরকে ঢাকঢোল পিটিয়ে জাহির করে, সে কাশ্মীরের ঘটিত ঘটনা ছিলএরূপ! ধর্মান্তরের জন্য চমৎকার শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি বটে! এবং এটাই হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব থেকে ভারতে আগত সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সূফীদের কীর্তি-কাহিনী।
ভারতের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ সূফীদের কাহিনীও এর চেয়ে ভাল কিছু নয়। অবিশ্বাসীদের উপর নরমেধ যজ্ঞ চালাবার জন্য জিহাদী ইসলামি দখলদার বাহিনীর সাথে ঘৃণ্য জিহাদী যোদ্ধাদের তারা আসতেন ভারতে। আজমীরের মঈনুদ্দীন চিশতি এসেছিলেন মুহাম্মদ গোরীর সেনাবাহিনীর সঙ্গে, যে ঘৌরী বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণভাবে মানবিক ও মহানুভব রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করেছিলেন।
বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সূফী দরবেশ শেখ শাহ জালাল সিলেটের হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দের বিরুদ্ধে জিহাদী যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন বলে বহুল প্রচারিত। এবং এসব সূফীই ওসব রক্তাক্ত যুদ্ধে জয়লাভের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাধান্যকারী ভূমিকার দাবী করে গর্ব প্রকাশ করেছেন। ভারত থেকে আফ্রিকা এবং আফ্রিকা থেকে বলকান পর্যন্ত সর্বত্র শ্রেষ্ঠ সূফীদের অধিকাংশেরই কাহিনী হচ্ছে এ রকম যুদ্ধ, বলপ্রয়োগ ও রক্তপাতময় কর্মকাণ্ডের উস্কানি প্রদান ও তাতে অংশগ্রহণ।*----------------------------------------------* সূফীদের লোকহর্ষক কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য দেখুন আমার বই, "Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery", p. 115-133 [এম, এ, খান]