Pages

আমাদের কথা

হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন-শাশ্বত-অব্যয়। স্বামী বিবেকানন্দ  যাকে সব ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ বিশ্বে প্রচলিত মতবাদ গুলির প্রায় সবার মূল ভাব হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাখায় প্রতীয়মান।বিভিন্ন ভাষাতে হিন্দু ধর্মের উপর অনেক ব্লগ,ফেসবুক পেজ থাকলেও বাংলা ভাষাতে একেবারেই হাতে গোনা। তাই বাংলা ভাষায় হিন্দু ধর্মের মহিমা প্রচারের জন্য এবং বিশ্বের সকল প্রান্তের বাঙ্গালি হিন্দুদের এক প্লাটফর্মে আনার লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন ‘বাঙ্গালি হিন্দু পোস্ট’।
এই পেজটি হিন্দুত্ববাদ বা হিন্দুত্বকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে।বর্তমানে অপপ্রচারের ফলে হিন্দুত্ব বা হিন্দুত্ববাদ শব্দটি নিয়ে আমরা দ্বন্দ্ব বা হীনমন্যতায় ভুগি। তাই এখানে আমরা ইতিহাস ঘেঁটে হিন্দুত্ববাদের সংজ্ঞা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। হিন্দুত্ববাদ অর্থ বুঝলেই আমাদের পেজের উদ্দ্যেশ্য আপনারা বুঝতে পারবেন। 
বীর সাভারকারের  মতে "আসিন্ধু সিন্ধু পর্যন্তা যস্য ভারতভূমিকা। পিতৃভূ পুন্যভূশ্চৈব স বৈ হিন্দুরিতি স্মৃতঃ"।।অর্থাৎ তিনিই হিন্দু যিনি সিন্ধু নদ ও সমুদ্রের মাঝখানের ভূমিকে নিজের পিতৃভূমি বলে মনে করেন এবং যা তার কাছে এক পবিত্র ভূমিও বটে। 
আমরা সব সময় বলে থাকি হিন্দুত্ব একটি জীবনধারা,এটি কোন রিলিজিয়ন(religion) নয়।কারণ আমাদের মৌলিক চিন্তাধারার ভিত্তি হলো একাত্ম মানব বাদ অর্থাৎ সকল বিশ্বকে এক বলে মনে করা। আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থাদির মূল পাঠও হল মানবতাবাদ। বেদ –পুরাণ- রামায়ন- মহাভারত কোথাও হিন্দু শব্দটি নেই; আমাদের প্রয়োজনও হয়নি কখনো। আমরা সবসময় জোর দিয়েছি এই ব্যবহারের উপর যে, তুমি আমার বিশ্বাসকে সন্মান কর কারণ আমি তোমার বিশ্বাসকে কেবল সন্মানই করি না, আস্থাও প্রকাশ করি এবং বিশ্বাস করি আমরা উভয়েই এক ঈশ্বরের প্রতি ধাবমান। 
আমরা কাউকে ব্রাহ্মন-হরিজন-শৈব্য-বৌদ্ধ-মুসলমান-খ্রীষ্টান-নাস্তিক রূপে আলাদা করি না।আমাদের উদ্দেশ্য প্রত্যেক কে এই সত্য উপলব্ধি করানো যে তারা হিন্দু এবং সেই সাথে একটা শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তোলা যা কোন আক্রমনকারীকে হিন্দুদের উপর আঘাত করার আগে দ্বিতীয় বার চিন্তা করতে বাধ্য করবে।হিন্দুত্ব মানে কোন জাতি বিশেষের বিরোধিতা করা নয়।কারণ হিংসা সে যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন তা কখনই হিন্দুত্ব নয়। 
হিন্দুত্ব আমাদের মিশন। হিন্দুত্ব নিয়েই আমরা জয় করব অথবা শেষ হয়ে যাব। এটা একটা ঐশ্বরিক কাজ। আর আজ হিন্দু সমাজ আক্রান্ত। এই আক্রমন দ্বিমুখী ;একদিকে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্য শত্রু আর অন্য দিকে চলছে অপপ্রচার। এই সবের বিরুদ্ধে হিন্দুদেরই উঠে দাঁড়াতে হবে । কারণ হিন্দুত্বের জয় মানে মানবতার জয়। হিন্দুত্বের পরাজয় মানে মানবতার পরাজয়;আর তখনই ভেঙে পরবে বহুত্ব বাদের ধারনা। মানুষ বুঝতে পারবে বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব, ডাঃ হেডগেওয়ারজীর হিন্দুত্ব, সাভারকারজীর হিন্দুত্ব, সংঘের হিন্দুত্ব, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হিন্দুত্ব, বজরং দলের হিন্দুত্ব,একজন ভারতীয়ের হিন্দুত্ব,একজন ইউরোপীয়ের হিন্দুত্ব বলে পৃথক পৃথক স্বত্তা হয় না। হিন্দুত্ব কখনো বিভিন্ন ধরনের হতে পারেনা। এর কোন ব্রাণ্ড নেই, এর উপর কারোর একাধিপত্য নেই। হিন্দুত্ব হল একটি ক্রীয়া শীল সত্যের পিছনে নিরন্তর সন্ধনী প্রয়াস। তাই একে ব্রাণ্ডের অধীন মনে করাটাই ভুল।হিন্দুত্ব ভারতের আত্মা।" 
এখানে হিন্দুত্ববাদ সম্পর্কে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু এই ধারনা অসম্পূর্ণ থাকবে যদি আমরা না জানি ধর্ম বলতে আমরা কি বুঝি। কারণহিন্দুত্ববাদ আর ধর্ম অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।
সহজ কথায়, যা মানুষের মনুষ্যত্ব কে জাগিয়ে তোলে তাই ই ধর্ম।মানুষের যা স্বভাব(মানবতা) ,যা-ই মানবতা তাই-ই ধর্ম। স্বামী বিবেকানন্দের  ভাষায়,ধর্ম মানুষের পশুত্বকে দমন করে আর দেবত্ব জাগিয়ে তোলে । আর মানব ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা মানবতার এই অনন্য দর্শন বৈদিক ঋষিরা দেখেছিলেন, যারা সিন্ধু নদীর তীরে সভ্যতার পত্তন করেছিলেন। অনার্যরা সিন্ধুকে হিন্দ বা হিন্দু উচ্চারন করত তাই এ মানব ধর্মই হল হিন্দু ধর্ম কিংবা বৈদিক ধর্ম। অর্থাৎ সনাতন বা মানব ধর্মের আজ যে নাম হয়ে গেল হিন্দু ধর্ম তা আসলে বিদেশীদের দেয়া।তাই এ নামটি প্রকৃত না।তবে নামে কিছু আসে যায় না(জল কে যে নামেই ডাকা হোক না কেন তা তৃষ্ণা নিবারণ করে)। যে কোন মানুষের জন্মগত বা স্বভাবগত ধর্মকে আপনি ডাকতে পারেন বৈদিক ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা মানবধর্ম বা হিন্দু ধর্ম অথবা শুধুমাত্র ধর্ম।কারণ মানবের তো একটিই ধর্ম। আগুনের যেমন ধর্ম উত্তাপ বা দগ্ধ করার শক্তি তেমনি মানুষের জন্মগত বা স্বভাবগত বা স্বাভাবিক ধর্ম হল সনাতন বা হিন্দুত্ব। এজন্য ধর্ম কে রিলিজিয়ান(religion) বলা ঠিক না। সংস্কৃত ‘ধর্ম’(ধৃ+মন) শব্দের অর্থ ‘ধারণ করা’। যেমন অগ্নি ধারণ করে উত্তাপ তাই অগ্নির ধর্ম হল উত্তাপ যা কোন কিছুকে দহন করে বা পুড়িয়ে দেয়।এখন কেউ যদি বলে অগ্নির রিলিজিওন উত্তাপ।তা হলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায় ।তেমনি মানুষ যা ধারণ করে তাই হল মানুষের ধর্ম বা মানব ধর্ম বা সনাতন ধর্ম।যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার রিলিজিওন কি?আর আপনি যদি উত্তর দেন সনাতন বা হিন্দু তাহলে ব্যপারটা হাস্যকর হয়ে যায়। ধর্মের সমার্থক শব্দ কখনও রিলিজিওন হতে পারে নাযদি সমার্থক ইংরেজি শব্দ খুঁজতেই হয় তা হতে পারে properties। 

তাহলে religion কি? আসলে রিলিজিয়ন হল এক একটি মত বা মার্গ। বিভিন্ন মহাপুরুষ বিভিন্ন মত দিয়েছেন ঈশ্বরকে পাবার পথ হিসেবে। যেমন বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য,শঙ্করাচার্য ,হজরত মুহাম্মদ, যিশু বিভিন্নজন। অর্থাৎ বৈষ্ণব, শাক্ত, বৌদ্ধ,শৈব, গানপত্য,শিখ, মুসলমান, জৈন, খৃস্টান, দ্বৈত, অদ্বৈত ইত্যাদি হল রিলিজিওন। এ গুলো হল মত বা রিলিজিয়ান যা সবই হল মানব ধর্মের শাখা প্রশাখা।এ সব মার্গের বা পথের ভাল মন্দ থাকতে পারে,সুবিধা বা অসুবিধা থাকতে পারে,গ্রহনযোগ্যতা বা অগ্রহনযোগ্যতা থাকতে পারে, যা আলোচনা সাপেক্ষ।
এই দীর্ঘ আলোচনার শেষে বলতে চাই যখনই আপনি ধর্ম,হিন্দুত্ববাদ,রিলিজিওন সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন আপনি বাঙ্গালি হিন্দু পোস্টকে বুঝতে পারবেন।আর আপনার যদি মনে হয় ধর্ম,সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে যা ভাবছেন- আমরা সে কথাই বলছি তাহলে ছড়িয়ে দিন আমাদের এ বারতা সবখানে,সবপ্রাণে।দিন শেষে জয় আমাদের হবেই
জয় হিন্দুত্ববাদ,জয় ধর্ম ।

আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিন। সাথে থাকুন।