Pages

Friday, March 30, 2012

৪০ পরিবারের পৈতৃক জমি এখন অর্পিত সম্পত্তি!

দৈনিক প্রথম আলো


ফরিদপুরের মধুখালীতে বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ সংখ্যালঘু ৪০টি পরিবারের পৈতৃক ৩৭ একর জমি নতুন করে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কারণ্যপুর গ্রামের সংখ্যালঘুরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ফরিদপুর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলোক সেন বলেন, ‘এটি সংখ্যালঘুদের ওপর একরকম নির্যাতন। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা-পয়সা খেয়ে এ অন্যায় কাজ করেছেন, তাঁদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।’
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার সরকার প্রথম আলোকে জানান, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে মধুখালীর অর্পিত সম্পত্তির যে তালিকা গেজেট তৈরির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, তাতে কারণ্যপুর মৌজার ওই সম্পত্তিও অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির দায় থেকে মুক্ত হলেও সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে পুরোনো তালিকা পাঠানোর কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পরে আমাদের নজরে আসে। এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। তবে গেজেট প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে সেখানে আপিল করার সুযোগ থাকবে।’
কারণ্যপুর গ্রামের বাসিন্দা কাদেরদী উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক কানাইলাল গাঙ্গুলীর চার একর ৬৬ শতাংশ, অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা গুরুদাস চক্রবর্তীর পাঁচ একর ৩৪ শতাংশ জমি রয়েছে। বসতবাড়িসহ তাঁদের দুজনের জমিও অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় ফেলা হয়েছে।
শিক্ষক কানাইলাল গাঙ্গুলী বলেন, ‘১৯৮৪ সালে সরকার একটি আইন করেছিল। সে আইনবলে নতুন করে আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত (ভিপি) করা হবে না। কিন্তু ১৯৯০ সালে আমাদের এলাকার সব সংখ্যালঘুর সম্পত্তি ভিপি তালিকাভুক্ত করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই বছর মাঠজরিপের পর যখন জমির অ্যাটাসটেশন হয়, তখন আমরা জানতে পারলাম, আমাদের কারণ্যপুর মৌজার সব হিন্দু সম্পত্তি (৫৪ খতিয়ান) অর্পিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি ফরিদপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। পরে জেলা প্রশাসন তালিকা সংশোধন করে মূল তালিকা ও সংশোধিত তালিকাসহ ভূমিসচিবকে প্রতিবেদন পাঠায়। এরপর ওই জমি আমাদের এলাকার ৪০টি পরিবারের নামে রেকর্ড হয়।’ চলতি বাংলা ১৪১৮ সন পর্যন্ত সব জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই শিক্ষক গাঙ্গুলী। তিনি জানান, সমপ্রতি তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই সম্পত্তি আবার অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করে গেজেট তৈরি হচ্ছে।
মধুখালী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইউসুফ আলী মোল্লা জানান, গেজেটে ঠিকমতো সংশোধন হয়ে থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়।

No comments:

Post a Comment