Pages

Saturday, April 28, 2012

‘সম্পত্তি দখলের জন্যই বাঁশখালী হত্যাকাণ্ড’


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/এএইচ/জেকে/১০০৫ ঘ. 



বাঁশখালীতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। 


চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল হাশেমের নেতৃত্বে নয়জন আইনজীবী শনিবার বাঁশখালীর সাধনপুরের শীলপাড়ায় যান। নিহতদের স্বজনরা আইনজীবীদের কাছে সেই সময়ের ঘটনার কথা তুলে ধরেন। 

শীলপাড়ার নিহতদের স্বজন ও মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলার পর চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেছেন, “নিহতদের সম্পত্তি দখল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্যই ২০০৩ সালে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।” 

আলোচিত এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন শেষে আগামী ১৫ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা রয়েছে। চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার এ কার্যক্রম চলছে। 

২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। 

সাত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হ্লাচিং প্র“ গত বছরের ৯ জানুয়ারি ৩৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। 

তার ভিত্তিতে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুটতরাজের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। 

কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ চলতি বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি আগের অভিযোগ বাদ দিয়ে আসামি আমিনুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠনের আবেদন জানায়। 

এরপর ১৯ এপ্রিল এ হত্যা মামলায় ৩৭ আসামির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন করে আদালত। 

তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় এ মামলার আসামি বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান চৌধুরী ওরফে আমিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি। 

মামলার বাদি বিমল শীল শনিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ভিটে ও জমি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। ওইদিন রাতে ঘর থেকে লাফিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচেছিলাম।” 

“গত আট বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নি। সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এখন বিচার কাজ শুরু হচ্ছে। এতে আমরা আশাবাদী” বলেন তিনি। 

বিচারকাজ দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

ওই ঘটনায় তিন মেয়ে হারানো শচীন্দ্র লাল বলেন, “নতুন ঘরের কাজ চলায় আমার তিন মেয়ে বড়ভাইয়ের ঘরে ঘুমাচ্ছিল। বাড়ির চারপাশে সন্ত্রাসীরা আগুন দেয়। পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। চোখের সামনে সবাইকে মরতে দেখেছি।” 

ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সময় তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমার ভাই (তেজেন্দ্র লাল শীল) এলাকার বিচার- সালিশ করতেন। তাকে মেরে ফেললে এ পাড়ায় মুখ তুলে কথা বলার কেউ নেই। সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই সন্ত্রাসীরা এ কাজ করেছে।” 

মামলার সাক্ষী মনমোহন শীল ও মো. দেলোয়ার জানান, একটি পুকুরের জমি কেনা-বেচা নিয়ে ২০০৩ সালে আমিন চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী নুরুল ইসলাম হুমকি দেয়। তেজেন্দ্র শীল এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলে তারা তাতে বাধা দেয়। 

বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান চৌধুরী ওরফে আমিন চেয়ারম্যান সে সময় পার্শ্ববর্তী কালিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। 

মামলার সাক্ষী দেলোয়ার বলেন, গত বছরও আমিন চেয়ারম্যান স্থানীয় একটি সভায় প্রকাশ্যে এ মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিয়েছিলেন। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলার পর চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাশেম বলেন, “সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক। ১৫ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হচ্ছে। আশা করি দ্রুত বিচার শেষ হবে।” 

অতিরিক্ত পিপি জসিম উদ্দিন, চন্দন বিশ্বাস, প্রদীপ দত্ত, শামসুদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী টিপু, দীনমনি দে, খালেদ শাহনেওয়াজ, বিশেষ পিপি চন্দন তালুকদার ও নাসির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

No comments:

Post a Comment