আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরিয়ে দিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে সহযোগিতা করা অভিযোগে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনা হয় পাকিস্তানি চিকিত্সক শাকিল আফ্রিদির বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে অভিযুক্ত করে পাকিস্তানের খাইবার অঞ্চলের একটি উপজাতীয় আদালত গত ২৪ মে শাকিলকে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত এই গোপন বিচার শেষ করতে সময় লেগেছে মাত্র আড়াই মাস। অনেকের মতে, পাকিস্তানের আদালতের এসব রায় অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় হয়ে থাকে।
শাকিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওসামার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি অ্যাবোটাবাদে একটি ভুয়া টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
মূলধারার বিচারব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে সীমান্তবর্তী অপরাধ আইন অনুসারে খাইবার অঞ্চলের উপজাতীয় আদালত পরিচালিত হয়। এই আদালতের অবিশ্বাস্য দ্রুত এ রায়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়। পাকিস্তানের সুশীল সমাজের অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তানে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলার ইতিহাস রয়েছে। আবার কর্তৃপক্ষ চাইলে কোনো মামলার রায় বেশ দ্রুত হয়ে যায়—এমন নজিরও আছে। শাকিল আফ্রিদির ক্ষেত্রেও ঘটেছে তা-ই।
গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে লস্কর-ই-তাইয়্যেবার (এইটি) তিন সদস্যর বিচার চলছে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে ভারত। ওই হামলায় ১৬৬ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। মুজাফফরাবাদের একটি জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে আসামি জাকি-উর রেহমান লাখভি, জারার শাহ ও আবু আল-কামাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়।
জামাত-উদ দাওয়ার (জেইউডি) প্রধান হাফিজ সাঈদকে এই মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরের সন্ত্রাসবিরোধী একটি বিশেষ আদালত তাঁকে এই হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। পরে লাহোরের হাইকোর্টও তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ খারিজ করে তাঁকে মুক্তি দেন। একই সঙ্গে আদালত রুল দিয়ে বলেন, জেইউডি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাই তারা পাকিস্তানে স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
সাঈদকে খালাস দেওয়ায় পাকিস্তানের সুশীল সমাজের অনেকেই হতাশ। জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা এ ঘটনাকে ব্যর্থতা হিসেবেই দেখেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেশোয়ার-ভিত্তিক এক আইনজীবী অভিযোগ করেন, জেইউডির প্রধানকে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ কারাগারে রাখতে চায়নি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে চলা মামলাটি কখনোই তারা গুরুত্বসহকারে নেয়নি। এ কারণেই তিনি মুক্তি পেতে সক্ষম হয়েছেন।
ওই আইনজীবী আরও বলেন, গত ২৪-২৫ মে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সাঈদের বিরুদ্ধে ভারত নতুন করে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছে। তবে পাকিস্তান পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অনীহার একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে সাঈদের মুক্তির বিষয়টি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৪ বছর কারা ভোগ করার আরেক ভয়ংকর জঙ্গি মালিক ইসহাককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও জঙ্গিবাদের ৪৪টি অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে ৩৪টি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে এবং বাকি ১০টি অভিযোগের মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। তাঁর মুক্তিও পাকিস্তানে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর হামলার মূল পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
জঙ্গিদের ব্যাপারে পাকিস্তানের আদালতের এমন নমনীয় মনোভাবের উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আসলে কর্তৃপক্ষ যেমনটা চায়, সে দেশের আদালত তেমনই রায় দেন। চিকিত্সক শাকিল আফ্রিদির মামলাটি এর জ্বলন্ত প্রমাণ। পেশোয়ারের ওই আইনজীবী বলেন, পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ শাকিলকে কারাগারেই রাখতে চেয়েছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত রায় হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে।
No comments:
Post a Comment