অরুন চন্দ্র মজুমদার
ইতিহাস জানা দরকার, কিন্ত ইতিহাসের নামে ভুল বা মিথ্যাচার শিখালে কী হয়? নিশ্চয় জাতি বধির হয় - আশাকরি অনেকেই আমার সাথে এ বিষয়ে একমত হবেন। আরো একমত হবেন, বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতীর ভুল বাল ইতিহাস নিয়ে আমরা বধির হয়ে আছি। এ বধিরতা এমনিতে তৈরী হয়নি, এটি একটি গোষ্ঠি কর্তৃক অত্যন্ত সচেতনভাবে তৈরী করা হয়েছে। যা শুরু করা হয়েছিল বৃটিশ পরবতী পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির মাধ্যমে এবং দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে স্বাধীনতা পরবতী বাংলাদেশের সব ক’টি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধারা অব্যাহত আছে । যাকে এক কথায় বলা যায় ইতিহাস বিকৃতির অব্যাহত ধারা। জ্ঞান পিপাসু শিক্ষাথীদের কাছে ইতিহাসের সত্যিকারের ঘটনা উপস্হাপন না করে আংশিক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করে উপস্হাপন করাটাই হলো ইতিহাস বিকৃতি। এর ফলে প্রকৃত ঘটনা হারিয়ে ইতিহাসের নতুন অবয়ব প্রকাশিত হয়। শিক্ষার্থীরা সে বিকৃত ইতিহাস পড়ে বিকৃত চিন্তা ধারন করে বিধায় কর্মক্ষেত্র সহ সামাজিক জীবনের সকল স্তরে এর প্রতিফলন দেখা যায়।
০১) এ উপমহাদেশের মধ্য যুগে ইতিহাস পড়ার সময় একটু খেয়াল করলে দেখবেন ক্ষুদ্র পরগনার মালিক থেকে মুসলিম রাজা বাদশাদের কিভাবে উপস্হাপন করা হয়েছে। মধ্য যুগের ইতিহাসে উপমহাদেশের বড় কিংবা ছোট যত কৃর্তিমান ও জনকল্যান মূলক স্হাপনা দেখবেন, এ স্হাপনা গুলোর নামের সাথে হিন্দু রাজা মহারাজাদের নাম জড়িত। অথচ ইতিহহাসের পাঠ্য বইয়ে এসব হিন্দু রাজা মহারাজাদের নাম খুঁজে পাবেন না। সামান্য যা পাবেন তাদেরকে সুশাসক হিসেবে দেখানো হয়নি। অথচ ইতিহহাসের পাঠ্য বইয়ে সুলতান মাহমুদ গোরীর মত দস্যুদেরকে বীর হিসেবে পড়ানো হয়, যে কিনা ১৭ বার এ বাংলায় আক্রমন করে লুটতরাজ করেছে, বিধর্মীদের জোর করে ধর্মান্তর, দাস হিসেবে বিক্রি, নারীত্বের অববমনাননা ও সম্পদ লুন্ঠন করেছে।।
০২) ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্ধৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে। বাংলার ইতিহাসে নবাব সিরাজুদ্ধৌলাকে দেশদেশ প্রেমিক নবাব এবং তার সেনাপতি মীর জাফর আলী খাকে বিশ্বাস বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে হিসেবে চিত্রায়ন করা হয়েছে এবং এটা আমরা সবাই জানি পাঠ্য বইয়ে লিখিত ইতিহাসের বদৌলতে। কিন্তু যেভাবে মীর মদন ও মোহন লালদের বীরত্ব, দেশ প্রেম ও যুদ্ধে যেভাবে বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছে পাঠ্য বইয়ে লিখিত ইতিহাসের পাতায় সেভাবে উপস্হাপন না করে অত্যন্ত দায় সারা ভাবে তাদের কে স্হান দেয়া হয়েছে। এর কারন মোহন লাল, মীর মদনরা হিন্দু, আর হিন্দুদেরকে ইতিহাসের পাতায় বীরে ভূমিকায় মানায় না।
০৩) ইষ্ট ইন্দিয়া কোম্পানী বাংলার শাসন ব্যবস্হা দখলে নেবার পর পর্যায়ক্রমে উপমহাদেশের বিভিন্ন রাজ্য বিভিন্ন কৌশলে দখল করে। বিভিন্ন রাজা মহারাজারা সহজে বৈশ্যতা স্বীকার করেনি, এক্ষেত্রে অনেকে যুদ্ধ করেও রাজ্য হারিয়েছেন, অনেকে যুদ্ধ করে বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের দেশ প্রেম ও বীরত্বের কথা বাংলাদেশের পাঠ্য বইয়ের ইতিহাসে স্হান পায়নি, যেভাবে স্হান দেয়া হয়েছে, টিপু সুলতানের মুসলিম শাসকদের। বরং কোথাও কোথাও এসব দেশোপ্রেমী বীর ও বীরগতি প্রাপ্ত রাজা মহারাজাদের উপস্হাপন করা হয়েছে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ভাবে, যাতে হিন্দু শিক্ষার্থীরা বিব্রতকর অবস্হায় পড়ে এবং নিজ ধর্ম, কৃষ্টির প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়।
০৪) ইংরেজ শাসনের ২০০ বছরের মধ্যে বিরোধী বা ইংরেজ বিতাড়ন আন্দোলনে নেতৃত্ব ও প্রান দিয়েছেন যারা, প্রথম দিগ থেকে শেষোব্দি শতভাগ স্বদেশী হিন্দু। এসব হতভাগ্য বীর স্বদেশী শহীদ হিন্দু যুবকদের নাম ঠাই পেয়েছে মুক্তি যুদ্ধ জাদুঘরের দেয়ালে। এদের বীরত্ব, দেশ প্রেম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস তেমন ভাবে ঠাঁই হয়নি শিক্ষার্থীদের পাঠ্য ইতিহাস বইয়ের পাতায়, যেমন ভাবে জোর দিয়ে পড়ানো হয় মুসুলিম ইতিহাস।
০৫) ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের জন্য হিন্দুদের দায়ী করা হয়। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়নি মুসলিগের নেতা কায়দা আযম জিন্নাহ্ একান্ত ব্যক্তিগত কারণে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছিলেন, আর তিনি পতিত অবস্হা থেকে উত্তোরণের জন্য টু নেশন থিওরী দিয়ে মুসলিম জনগনকে আকৃষ্ট করে সামপ্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে ভারত ভাগে সফল হয়েছন।
০৬) পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে বাংলা, অখন্ড পাকিস্তানের জাতীয় পার্লামেন্টে এ দাবী প্রথন উত্থাপন করেছিলেন জাতীয় পরিষদের সদস্য শ্রী ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে নাম সেভাবে লিখা হয়নি, আলোচিত হয়না টিভি কট শো গুলিতে ভাষা আন্দোলনে শ্রী ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভূমিকা ও প্রশ্নাতীত ভূমিকা নিয়ে। কেননা তিনি একজন হিন্দু, হিন্দুদের আবার ইতিহাস হয় নাকি?
০৭) ১৯৭১ সালে একটি হিন্দুও রাজাকার হিসেবে পাওয়া যাবে না। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যেখানে সার্চ করেছে সেখানেই বলেছে “মালাউন কাঁহা”? মানে মুক্তি মানে হিন্দু, আর হিন্দু মানে মুক্তি। সে মহান মুক্তি যুদ্ধে এদেশের শতভাগ হিন্দুর প্রত্যেকেই কিছু না কিছু হারিয়েছন। আপনারাই বলুন মহান মুক্তি যুদ্ধে বাংলাদেশের হিন্দুদের ভূমিকা কি সেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, যেভাবে হিন্দুরা আত্মত্যাগ করেছে?
বিশেষ করে ১৯৪৭ (পাকিস্তান) হতে আজ অবধি ডিগ্রীধারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত হয়েছেন কত জন? এর কারণ হলো ১৯৪৭ (পাকিস্তান) হতে আজ অবধি প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্হা। স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের সরকারগুলি একদিকে আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলছে, আর অন্য ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে এক পক্ষকে গোঁড়া ও সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। ফলাফল যা হচ্ছে ওদের কাছে অনেকটা ইতিহাস বিকৃতির সুফল!!
uff bhoyonkor bislashon dhormi lekha
ReplyDeletekuve volo korcen.........
ReplyDelete