Pages

Sunday, August 5, 2012

জামায়াত নেতার উস্কানিতে দিনাজপুরে হিন্দুদের ওপর হামলা, বাড়িতে আগুন:আহত ১৬, শ্লীলতাহানি ১ গ্রেফতার ৮, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি


জামায়াত নেতার উস্কানিতে দিনাজপুরে হিন্দুদের ওপর হামলা, বাড়িতে আগুন
আহত ১৬, শ্লীলতাহানি ১ গ্রেফতার ৮, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি



দৈনিক জনকণ্ঠ


সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে জামায়াতের ইন্ধনে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পল্লীতে শনিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মারপিট, লুটপাট, বাসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, শ্লীলতাহানীর ও ব্যাপক সহিংস্র ঘটনা ঘটেছেহামলায় আক্রান্তরা ঘটনাটিকে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর হামলার চেয়েও বর্বর ও নির্মম বলে উল্লেখ করেছেন১৪৪ ধারা জারি ও প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ, ২ প্লাটুন বিজিবি ও ২ গাড়ি র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করার পরও শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসতবাড়ির ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, মারপিট, লুটপাট, শ্লীলতাহানী ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়এসব ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছেনগ্রেফতার করা হয়েছে ৮ জনকেহামলার শিকার লোকজনদের অভিযোগ জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যানের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরই তাদের ও তাদের বসতবাড়ির ওপর হামলা হয়েছেতাদের অভিযোগ হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে জড়িতবিকেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে মসজিদ নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ থাকবেএছাড়া এখন থেকে সেখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছেএদিকে প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পরও এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছেএলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছেন চরম আতঙ্কে
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ জানান, চিরিরবন্দর উপজেলার ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বলাইবাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী মসজিদঘর ছিলওই মসজিদের জমির মালিক চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কলেজের প্রফেসর হামিদা খাতুন তাঁর নিজ অর্থায়নে তা পাকাকরণের জন্য উদ্যোগ নেনগত সপ্তাহে মসজিদ ঘরের স্থানে পাকা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়কিন্তু মসজিদঘর থেকে ২শগজ দূরে অনেক আগে থেকে একটি কালী মন্দির রয়েছেওই এলাকায় মুসলমানের চেয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতি অনেক বেশিএ কারণেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদ ঘরটি ৫শগজ দূরে নির্মাণ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলএলাকাবাসী জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১ সপ্তাহ থেকে ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়শুক্রবার এই মসজিদঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আফতাব উদ্দীন মোল্লা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি করেনফলে শনিবার ভোরে অসংখ্য লোক একত্রিত হয়এদের মধ্যে অধিকাংশ লোক বহিরাগত ও জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় কর্মীসকাল ১১টায় তারা রাজাবাজার গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি বাড়িতে সেøাগান দিয়ে হামলা চালায়তারা ১২টি বাড়ির লোকজনকে বেধড়ক মারপিট করেতারা শোভা রানী রায় (৩৫) নামে এক গৃহবধূর শ্লীলতাহানী ঘটায়এসব বাড়িতে লুটপাট শেষে তারা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়এতে ১২ জন আহত হয়মারাত্মক আহত ও অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ৫ জনকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেহামলার শিকার ভবেশ চন্দ্র রায় জানান, হামলাকারীরা সকলেই বহিরাগততাদের মধ্যে যে দুএকজনকে চেনা গেছে তারা সকলে জামায়াত অথবা শিবিরের কর্মীতিনি জানান, স্থানীয় জামায়াত নেতা তৈয়ব হাজীর নেতৃত্বে জামায়াতের কাদের, নিন্দালু, কামু, রফিকুল, রায়হান, লিয়াকত ও সুমনকে তিনি চিনতে পেরেছেনশ্লীলতাহানীর শিকার গৃহবধূ শোভা রানী রায় শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে কেঁদে প্রশ্ন তোলেনÑ ‘খান নাই, পাঞ্জাবী নাই, এখনও ক্যানে আমাগোরের ওপর অত্যাচার-জুলুম হবে? তোমহারা কি এই দেশে আমাগোরক থাকিবা দিবেন নাই বাহে?’ 
ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের রংপুর বিভাগীয় ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণবালা, দিনাজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মোঃ ময়নুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেনঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাৎক্ষণিক ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়দুপুর দেড়টায় মেজর রানার নেতৃত্বে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নের ১ প্লাটুন, ডিএডি মোঃ হাফিজের নেতৃত্বে বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়নের ১ প্লাটুন সদস্য ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেএরপর আসে র‌্যাব-৫-এর ২টি গাড়িআগে থেকে সেখানে প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা ছিলএরই মধ্যে ওই চিহ্নিত মহলের মদদে উচ্ছৃঙ্খল লোকজন আবার একই ইউনিয়নের ছোট হাসিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগ করেএতে আরও ৪ জন আহত হনস্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লিয়াকত আলী জানান, বিশেষ একটি মহলের ইন্ধনের কারণে পরিস্থিতি এখন তার আয়ত্বের বাইরে চলে গেছেদুপুর ৩টায় উচ্ছৃঙ্খল লোকজন আবার একই উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তাদের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয় 
পুলিশ সুপার মোঃ ময়নুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছেএকটি মহল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর অপচেষ্টা করেছিলএলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছেশান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে মসজিদ নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেতবে অপরাধী যেই হোক তাকে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানএ ব্যাপারে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা ধর্মীয় সম্প্রীতির জেলা দিনাজপুরে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছিলতিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান

No comments:

Post a Comment