Pages

Saturday, August 4, 2012

দিনাজপুরে দুটি হিন্দু গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিল উগ্রবাদীরা

হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের চিরির বন্দর উপজেলায় হিন্দুদের অন্তত ২০টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাংচুর হয়েছে আরো কয়েকটি ঘর। 


পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কায় প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার মধ্যেই শনিবার সকাল ১০টায় অমরপুর ইউনিয়নের রাজাপুর এবং পাশের আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাজপাড়া গ্রামে এই হামলা হয়। 


হামলা-ভাংচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রশিদুল মন্নাফ কবীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। 


ঘটনার সূত্রপাত হয় কয়েকদিন আগে উপজেলার বলাইবাজার নামে স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবীর সাংবাদিকদের বলেন, অমরপুর ইউনিয়নের বলাইবাজারে জনৈকা হামিদা বানু তার নিজস্ব জায়গায় ৩/৪ দিন আগে একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করলে এলাকার হিন্দু সম্ú্রদায় বাধা দেয়। 


এ নিয়ে উভয় পক্ষকে সমঝোতার আহবান জানিয়ে পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় শুক্রবার বিকাল থেকে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি এবং পুলিশ মোতায়েন করে স্থানীয় প্রশাসন। 


“কিন্তু আজ (শনিবার) সকাল ১০টার দিকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার লোক লাঠি-সোঁটা নিয়ে রাজাপুর গ্রামে আকস্মিক হামলা চালিয়ে হিন্দুয়ের ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে,” বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। 


তিনি জানান, বেলা ১টার দিকে আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাজাপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে হিন্দুদের ৬/৭টি বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। 


খবর পেয়ে দুটি স্থানে পুলিশ লাঠিপেটা ও রবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান। 


অমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুই গ্রামে প্রায় ২০/২২টি বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। 


“হামলাকারীরা সবাই ছিল অন্য এলাকার। পাশের পার্বতীপুর উপজেলার লোকও ছিল,” বলেন তিনি। 


মসজিদ নিয়ে স্থানীয় হিন্দুদের আপত্তির বিষয়ে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী উভয়ই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বলাইবাজার-রাজাপুর এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মুসলমানের বাস নেই। তাই এলাকার হিন্দুরা বলছিল, এখানে মসজিদ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 


মসজিদ নির্মাণকারী হামিদা বানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০০৬ সালে সেখানে তার নিজস্ব জমিতে নির্মিত মার্কেটের সঙ্গে মসজিদটি করা হয়। এখানে বাজারে আসা লোকজন নামাজ পড়েন। মুসল্লিদের অনুরোধে নামাজ ঘরটি নতুন করে পাকা করতে গেলে হিন্দুরা বাধা দেয়। 


“আমার নিজের জায়গায় মসজিদ করতে পারব না- এ কোন ধরনের দাবি,” বলেন তিনি। 


ওই এলাকায় মুসলমানদের বাস না থাকার বিষয়টি তুলে ধরলে হামিদা বলেন, “এলাকায় মুসলমান বসবাস করে না বলে মসজিদ করা যাবে না, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।” 


সকালে সহিংসতার পর বিকালে জেলা প্রশাসক আজিজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ময়নুল ইসলামসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এলাকাজুড়ে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউএনও গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বলাইবাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কিন্তু ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, বিরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে টেম্পো, রিকশাভ্যান, ট্রাক্টর, নছিমনসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে লোকজন এসে আজ সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে বলাইবাজারে সমবেত হন। এ সময় তাঁরা মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। এতে হিন্দুরা বাধা দিলে তাঁরা বাজারের পূর্ব পাশে রাজাপুর কবিরাজ পাড়ায় হামলা চালান। তাঁরা হিন্দুদের ২৫টি বাড়ি ও খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেন।
বাধা দিতে গিয়ে তাঁদের হামলায় নীরেন চন্দ্র, সুধীর চন্দ্র, যোগেন্দ্র, মোহিনী রায়, ধীরেন্দ্র, ক্ষীরেন্দ্র, মণিবালা, শোভা রানী, সরস্বতী দেবী, পুতুল রানীসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। গুরুতর আহত প্রকাশ রায়, তপন রায় ও ভবেশ রায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুর ১২টায় ৫ নং আবদুলপুর ইউনিয়নের মাঝাপাড়ায় তাঁরা দ্বিতীয় দফা হামলা চালান। তাঁরা প্রকাশ রায়, দেবীচরণ রায়, কৃষ্ণপদ রায়, চিকিত্সক দশরথ রায়, রায়চরণ রায় ও শিব রায়ের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
পরে দুপুর ১২টায় পুলিশের ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণ বালা ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি হিন্দুদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। এ সময় হিন্দুরা পুলিশের বিরুদ্ধে হামলাকারীদের রক্ষা ও সহায়তা করার অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন। 
হিন্দু নেতা প্রফুল্ল রায় ও ক্ষীতিশ রায় প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ঘরের ভেতর থেকে সোনা-দানা, টাকাপয়সাসহ দামি জিনিসপত্র লুট করা হয় ও শতাধিক গরু ছাগল নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে মসজিদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, অতীতে সেখানে মন্দির ছিল। এ কারণে মসজিদ নির্মাণে আপত্তি জানান হিন্দুরা। 
হিন্দুরা জানান, বলাইবাজারের রাস্তার পূর্ব পাশে একটি মার্কেটের মালিক অধ্যাপক হামিদা বানু চৌধুরী। তিনি ২০০৬ সালে মার্কেট নির্মাণের সময় কিছু জায়গা ফেলে রাখেন। পরে কতিপয় লোকের উসকানিতে তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেন।
হামিদা বানু চৌধুরী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, তিনি পৈতৃক সূত্রে ওই জমির মালিক। এলাকাবাসীর দাবির মুখে তিনি সেখানে স্থায়ী মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজিজুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মো. রশিদুল মোন্নাফ কবীরকে তাত্ক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাত্ক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা, দুটি শাড়ি, দুটি লুঙ্গি ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল মালেককে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 
পুলিশ সুপার মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে দুই প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ, বিজিবির সদস্য, র্যাব সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ ঘটনায় দিনাজপুরের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ইকবালুর রহিম, এ এইচ মাহমুদ আলী প্রমুখ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। 


কিন্তু আমার কথা হল বাংলাদেশী হিন্দুদের কি এত সাহস আছে মুসলিমদের মসজিদ তৈরিতে বাঁধা দিতে? এটা অবশ্যই হিন্দুদের উৎখাত করে পিউর ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা।





সম্পূরক কথাঃ


এলাকাবাসী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন জানায়, উপজেলা সদরের ঘুঘরাতলী জামে মসজিদের '' ''ইমাম মো. আল আমিন কয়েক দিন ধরে প্রচারপত্র বিলি করেনপ্রচারপত্রে বলা হয়, সংখ্যালঘুরা উপজেলার ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বলাইবাজারের মসজিদ ভেঙে ফেলেছেতিনি সেই মসজিদ নির্মাণের জন্য গতকাল সকাল সাতটায় জনতাকে বলাই বাজারে সমবেত হতে আহ্বান জানান''
উপরের খবরটি কোন পত্রিকায় আসেনি, শুধুমাত্র প্রথম আলো ছেপেছে, তাও মাঝখানের পাতায় ছোট করে দিনাজপুরে বিশটি হিন্দু পরিবারে আগুন দেওয়ার মূল কারণ খুজছিলাম, এখন জানলাম হিন্দুর উপর হামলার শুধু একটা বাহানা দরকার হয় , সাতক্ষীরা, হাটহাজারী, দিনাজপুর - একই চিত্রসবাই অপেক্ষা করুন ,
নিজেদের বাড়িতেও হতে সময় লাগবেনা !


1 comment:

  1. What is going on in Bangladesh!! Really, a sad tale of how people become monstrous, under the influence of faith.

    Down with such ideologies..........the government of Bangladesh should compensate, the victims.

    ReplyDelete