ব্রাহ্মণ
অরুন চন্দ্র মজুমদার
রবিঠাকুরের কবিতার অংশ থেকে থেকেঃ-
মহর্ষি গৌতম
কহিলেন, "বৎসগণ, ব্রহ্মবিদ্যা কহি,
অরুন চন্দ্র মজুমদার
রবিঠাকুরের কবিতার অংশ থেকে থেকেঃ-
মহর্ষি গৌতম
কহিলেন, "বৎসগণ, ব্রহ্মবিদ্যা কহি,
করো অবধান।'
হেনকালে অর্ঘ্য বহি
করপুট ভরি' পশিলা প্রাঙ্গণতলে
তরুণ বালক; বন্দী ফলফুলদলে
ঋষির চরণপদ্ম, নমি ভক্তিভরে
কহিলা কোকিলকণ্ঠে সুধাস্নিগ্ধস্বরে,
"ভগবন্, ব্রহ্মবিদ্যাশিক্ষা-অভিলাষী
আসিয়াছে দীক্ষাতরে কুশক্ষেত্রবাসী,
সত্যকাম নাম মোর।'
শুনি স্মিতহাসে
ব্রহ্মর্ষি কহিলা তারে স্নেহশান্ত ভাষে,
"কুশল হউক সৌম্য। গোত্র কী তোমার?
বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের কাছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যালাভে।'
বালক কহিলা ধীরে,
"ভগবন্, গোত্র নাহি জানি। জননীরে
শুধায়ে আসিব কল্য, করো অনুমতি।'
এত কহি ঋষিপদে করিয়া প্রণতি
গেল চলি সত্যকাম ঘন-অন্ধকার
বনবীথি দিয়া, পদব্রজে হয়ে পার
ক্ষীন স্বচ্ছ শান্ত সরস্বতী; বালুতীরে
সুপ্তিমৌন গ্রামপ্রান্তে জননীকুটিরে
করিলা প্রবেশ।
ঘরে সন্ধ্যাদীপ জ্বালা;
দাঁড়ায়ে দুয়ার ধরি জননী জবালা
পুত্রপথ চাহি; হেরি তারে বক্ষে টানি
আঘ্রাণ করিয়া শির কহিলেন বাণী
কল্যাণকুশল। শুধাইলা সত্যকাম,
"কহো গো জননী, মোর পিতার কী নাম,
কী বংশে জনম। গিয়াছিনু দীক্ষাতরে
গৌতমের কাছে, গুরু কহিলেন মোরে--
বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের কাছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যালাভে। মাতঃ, কী গোত্র আমার?'
শুনি কথা, মৃদুকণ্ঠে অবনতমুখে
কহিলা জননী, "যৌবনে দারিদ্র৻দুখে
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে,
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে,
গোত্র তব নাহি জানি তাত।'
পরদিন
তপোবনতরুশিরে প্রসন্ন নবীন
জাগিল প্রভাত। যত তাপসবালক
শিশিরসুস্নিগ্ধ যেন তরুণ আলোক,
ভক্ত-অশ্রু-ধৌত যেন নব পুণ্যচ্ছটা,
প্রাতঃস্নাত স্নিগ্ধচ্ছবি আর্দ্রসিক্তজটা,
শুচিশোভা সৌম্যমূর্তি সমুজ্জ্বলকায়ে
বসেছে বেষ্টন করি বৃদ্ধ বটচ্ছায়ে
গুরু গৌতমেরে। বিহঙ্গকাকলিগান,
মধুপগুঞ্জনগীতি, জলকলতান,
তারি সাথে উঠিতেছে গম্ভীর মধুর
বিচিত্র তরুণ কণ্ঠে সম্মিলিত সুর
শান্ত সামগীতি।
হেনকালে সত্যকাম
কাছে আসি ঋষিপদে করিলা প্রণাম--
মেলিয়া উদার আঁখি রহিলা নীরবে।
আচার্য আশিষ করি শুধাইলা তবে,
"কী গোত্র তোমার সৌম্য, প্রিয়দরশন?'
তুলি শির কহিলা বালক, "ভগবন্,
নাহি জানি কী গোত্র আমার। পুছিলাম
জননীরে, কহিলেন তিনি, সত্যকাম,
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে,
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে--
গোত্র তব নাহি জানি।'
শুনি সে বারতা
ছাত্রগণ মৃদুস্বরে আরম্ভিলা কথা
মধুচক্রে লোষ্ট্রপাতে বিক্ষিপ্ত চঞ্চল
পতঙ্গের মতো--সবে বিস্ময়বিকল,
কেহ বা হাসিল কেহ করিল ধিক্কার
লজ্জাহীন অনার্যের হেরি অহংকার।
উঠিলা গৌতম ঋষি ছাড়িয়া আসন,
বাহু মেলি বালকেরে করিয়া আলিঙ্গন
কহিলেন, "অব্রাহ্মণ নহ তুমি তাত।
তুমি দ্বিজোত্তম, তুমি সত্যকুলজাত।'
****** আমি ব্রাহ্মণের কথাই বলছি। বাহ্মণ হল হিন্দু বর্ণচতুষ্টয়ের প্রথম এবং উচ্চতম বর্ণ। হিন্দুধর্মানুসারে এই বর্ণজাত ব্যক্তিগণই সমাজে শিক্ষক, আধ্যাত্মিক গুরু, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এবং বিধানকর্তার ভূমিকা পালন করার অধিকারপ্রাপ্ত।. শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ বিপ্র (অর্থাৎ জ্ঞানী) এবং দ্বিজ (অর্থাৎ দু'বার জাত) হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন। দু'বার জাত মানে হল, একবার মাতৃগর্ভ থেকে জাতক জন্ম গ্রহন, দ্বিতীয়বার উপনয়নের মাধ্যমে শাস্ত্র অধ্যয়ন ও বেদোক্ত নিয়মানুসারে পূজার্চ্ছনা ও যজ্ঞের অধিকার লাভ করা। আজ জন্ম সূত্রে বংশ পরম্পরা ব্রাহ্মণ আছে।। কিন্তু আছে কি " দ্বিজোত্তম, সত্যকুলজাত ব্রাহ্মণ?'
হেনকালে অর্ঘ্য বহি
করপুট ভরি' পশিলা প্রাঙ্গণতলে
তরুণ বালক; বন্দী ফলফুলদলে
ঋষির চরণপদ্ম, নমি ভক্তিভরে
কহিলা কোকিলকণ্ঠে সুধাস্নিগ্ধস্বরে,
"ভগবন্, ব্রহ্মবিদ্যাশিক্ষা-অভিলাষী
আসিয়াছে দীক্ষাতরে কুশক্ষেত্রবাসী,
সত্যকাম নাম মোর।'
শুনি স্মিতহাসে
ব্রহ্মর্ষি কহিলা তারে স্নেহশান্ত ভাষে,
"কুশল হউক সৌম্য। গোত্র কী তোমার?
বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের কাছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যালাভে।'
বালক কহিলা ধীরে,
"ভগবন্, গোত্র নাহি জানি। জননীরে
শুধায়ে আসিব কল্য, করো অনুমতি।'
এত কহি ঋষিপদে করিয়া প্রণতি
গেল চলি সত্যকাম ঘন-অন্ধকার
বনবীথি দিয়া, পদব্রজে হয়ে পার
ক্ষীন স্বচ্ছ শান্ত সরস্বতী; বালুতীরে
সুপ্তিমৌন গ্রামপ্রান্তে জননীকুটিরে
করিলা প্রবেশ।
ঘরে সন্ধ্যাদীপ জ্বালা;
দাঁড়ায়ে দুয়ার ধরি জননী জবালা
পুত্রপথ চাহি; হেরি তারে বক্ষে টানি
আঘ্রাণ করিয়া শির কহিলেন বাণী
কল্যাণকুশল। শুধাইলা সত্যকাম,
"কহো গো জননী, মোর পিতার কী নাম,
কী বংশে জনম। গিয়াছিনু দীক্ষাতরে
গৌতমের কাছে, গুরু কহিলেন মোরে--
বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের কাছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যালাভে। মাতঃ, কী গোত্র আমার?'
শুনি কথা, মৃদুকণ্ঠে অবনতমুখে
কহিলা জননী, "যৌবনে দারিদ্র৻দুখে
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে,
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে,
গোত্র তব নাহি জানি তাত।'
পরদিন
তপোবনতরুশিরে প্রসন্ন নবীন
জাগিল প্রভাত। যত তাপসবালক
শিশিরসুস্নিগ্ধ যেন তরুণ আলোক,
ভক্ত-অশ্রু-ধৌত যেন নব পুণ্যচ্ছটা,
প্রাতঃস্নাত স্নিগ্ধচ্ছবি আর্দ্রসিক্তজটা,
শুচিশোভা সৌম্যমূর্তি সমুজ্জ্বলকায়ে
বসেছে বেষ্টন করি বৃদ্ধ বটচ্ছায়ে
গুরু গৌতমেরে। বিহঙ্গকাকলিগান,
মধুপগুঞ্জনগীতি, জলকলতান,
তারি সাথে উঠিতেছে গম্ভীর মধুর
বিচিত্র তরুণ কণ্ঠে সম্মিলিত সুর
শান্ত সামগীতি।
হেনকালে সত্যকাম
কাছে আসি ঋষিপদে করিলা প্রণাম--
মেলিয়া উদার আঁখি রহিলা নীরবে।
আচার্য আশিষ করি শুধাইলা তবে,
"কী গোত্র তোমার সৌম্য, প্রিয়দরশন?'
তুলি শির কহিলা বালক, "ভগবন্,
নাহি জানি কী গোত্র আমার। পুছিলাম
জননীরে, কহিলেন তিনি, সত্যকাম,
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে,
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে--
গোত্র তব নাহি জানি।'
শুনি সে বারতা
ছাত্রগণ মৃদুস্বরে আরম্ভিলা কথা
মধুচক্রে লোষ্ট্রপাতে বিক্ষিপ্ত চঞ্চল
পতঙ্গের মতো--সবে বিস্ময়বিকল,
কেহ বা হাসিল কেহ করিল ধিক্কার
লজ্জাহীন অনার্যের হেরি অহংকার।
উঠিলা গৌতম ঋষি ছাড়িয়া আসন,
বাহু মেলি বালকেরে করিয়া আলিঙ্গন
কহিলেন, "অব্রাহ্মণ নহ তুমি তাত।
তুমি দ্বিজোত্তম, তুমি সত্যকুলজাত।'
****** আমি ব্রাহ্মণের কথাই বলছি। বাহ্মণ হল হিন্দু বর্ণচতুষ্টয়ের প্রথম এবং উচ্চতম বর্ণ। হিন্দুধর্মানুসারে এই বর্ণজাত ব্যক্তিগণই সমাজে শিক্ষক, আধ্যাত্মিক গুরু, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এবং বিধানকর্তার ভূমিকা পালন করার অধিকারপ্রাপ্ত।. শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ বিপ্র (অর্থাৎ জ্ঞানী) এবং দ্বিজ (অর্থাৎ দু'বার জাত) হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন। দু'বার জাত মানে হল, একবার মাতৃগর্ভ থেকে জাতক জন্ম গ্রহন, দ্বিতীয়বার উপনয়নের মাধ্যমে শাস্ত্র অধ্যয়ন ও বেদোক্ত নিয়মানুসারে পূজার্চ্ছনা ও যজ্ঞের অধিকার লাভ করা। আজ জন্ম সূত্রে বংশ পরম্পরা ব্রাহ্মণ আছে।। কিন্তু আছে কি " দ্বিজোত্তম, সত্যকুলজাত ব্রাহ্মণ?'
কোথায় পাব
সেই বাহ্মণ? আমরা কম বেশী সকলেই জানি হিন্দু
বর্ণচতুষ্টয়ের প্রথম এবং উচ্চতম বর্ণ হল ব্রাহ্মণ । হিন্দুধর্মানুসারে এই বর্ণজাত ব্যক্তিগণই
সমাজে শিক্ষক, আধ্যাত্মিক গুরু, শাস্ত্রজ্ঞ
পণ্ডিত এবং বিধানকর্তার ভূমিকা পালন করার অধিকারপ্রাপ্ত।. শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ
বিপ্র (অর্থাৎ জ্ঞানী) এবং দ্বিজ (অর্থাৎ দু'বার জাত) হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন। দু'বার জাত মানে হল, একবার
মাতৃগর্ভ থেকে জাতক জন্ম গ্রহন, দ্বিতীয়বার উপনয়নের মাধ্যমে শাস্ত্র অধ্যয়ন
ও বেদোক্ত নিয়মানুসারে পূজার্চ্ছনা ও যজ্ঞের অধিকার লাভ করা। আমরা বৈদিক যুগের দিকে তাকলে দেখতে পাই
ক্ষত্রিয়রা রাজ্য শাসন করেছে (কিছু ব্যতীক্রম ব্যতীত)। কিন্তু সেই ক্ষত্রিয় রাজাদের শাসন করেছেন
দ্বিজোত্তম, সত্যকুলজাত ব্রাহ্মণরা এবং সেটা সম্ভব
হয়েছে
রাজ পুরোহিত কিংবা কূল গুরু নামক সর্বোচ্ছ পদটিতে আসীন থেকে।
ত্রেতা ঋষি বৈশিষ্ঠ ছিলেন সূর্য বংশের কূল গুরু। যে বংশে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে শ্রী রামের জন্ম হয়েছিল। দ্বাপরযুগে হস্তিনাপুরের রাজপুরোহিত ছিল কৃপাচার্য (অন্যায় যেনেও যিনি শুধু রাজ্য ও রাজ ভক্তির কারনে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রাজার পক্ষে পান্ডবদের বিপক্ষে অস্র ধরেছিলেন), স্বয়ম্ ভগবান যদুবংশে জন্ম গ্রহন করেছিলেন, আর ঐ বংশের ঋষি সান্ডোল্য। যুগে যুগে আমরা এমন কোন রাজা পাব না যাদের পুরোহিত ছিল না। পৌরানিক কাহিনী সমৃদ্ধ গ্রন্হ গুলোর বদৌলতে আমরা সকলে এ সকল ঋষিদের আধ্যাত্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিষয়ে কম-বেশী জানি। যুগে যুগে রাজা মহারাজারা তাঁদের রাজকায্য ও কীর্তির জন্য তার ছেয়েও অধিক গৌরবে টিকে আছে এবং থাকবে ঋষি বৈশিষ্ঠ, ঋষি সান্ডিল্যদের নাম। কেননা এরা সার্বক্ষনিক রাজা, রাজ্য আর প্রজা কল্যাণে চিন্তা করতো। রাজপুরোহিতগনের অনেক বড় সম্মান ছিল এই যে তাঁরা রাজকার্যে প্রত্যেক্ষ অংশ গ্রহন করতে পারতেন। মানে যে কোন বিচারিক কার্যে রাজা পুরোহিতের স্মরণাপন্ন হতেন, আর তিনি যে বিধান দিতেন, রাজা মহারাজারা সে বিধান কার্যকর করার আদেশ দিতেন। এতে বুঝা যায়, রাজা রাজ্য শাসন করলেও রাজা স্বাধীন ছিলেন না। বরং তিনি রাজপুরোহিতের অধীন ছিলেন। পুরানগুলো পর্যালোচনা করলে আরো দেখা যায়, কুলগুরু ছাড়াও অন্যান্য শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ বিপ্র এবং দ্বিজগন রাজা মহারাজাদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা পেতেন, মাসিক মাসোহারও উপটৌকন পেতেন।
লক্ষ্য করলে দেখবেন পরস্পর দু’দুটি শব্দ একত্র হয়ে পুরোহিত শব্দটি হয়েছে। পুর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো নগর বা নগরী। আর হিত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অন্যের মঙ্গল কামনা করা। অর্থাৎ যিনি পুর/নগরীর হিত/মঙ্গল কামনা করতেন, তাঁকেই পুরোহিত বলা হত। কিন্তু প্রশ্ন ছিল বাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য বর্ণের মানুষও তো ছিল, যারা নগর কিংবা রাজ্যের মঙ্গল/হিত কামনা করতো। সুতরাং রাজ পুরোহিত নামক উচ্চাশনের এ পদটিতে শুধু বাহ্মণ নিয়োগ দেয়া হতো কেন? এ সঙ্গতঃ কারনেই চলে আসে।
ক্রমশ চলবে.................................
ত্রেতা ঋষি বৈশিষ্ঠ ছিলেন সূর্য বংশের কূল গুরু। যে বংশে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে শ্রী রামের জন্ম হয়েছিল। দ্বাপরযুগে হস্তিনাপুরের রাজপুরোহিত ছিল কৃপাচার্য (অন্যায় যেনেও যিনি শুধু রাজ্য ও রাজ ভক্তির কারনে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রাজার পক্ষে পান্ডবদের বিপক্ষে অস্র ধরেছিলেন), স্বয়ম্ ভগবান যদুবংশে জন্ম গ্রহন করেছিলেন, আর ঐ বংশের ঋষি সান্ডোল্য। যুগে যুগে আমরা এমন কোন রাজা পাব না যাদের পুরোহিত ছিল না। পৌরানিক কাহিনী সমৃদ্ধ গ্রন্হ গুলোর বদৌলতে আমরা সকলে এ সকল ঋষিদের আধ্যাত্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিষয়ে কম-বেশী জানি। যুগে যুগে রাজা মহারাজারা তাঁদের রাজকায্য ও কীর্তির জন্য তার ছেয়েও অধিক গৌরবে টিকে আছে এবং থাকবে ঋষি বৈশিষ্ঠ, ঋষি সান্ডিল্যদের নাম। কেননা এরা সার্বক্ষনিক রাজা, রাজ্য আর প্রজা কল্যাণে চিন্তা করতো। রাজপুরোহিতগনের অনেক বড় সম্মান ছিল এই যে তাঁরা রাজকার্যে প্রত্যেক্ষ অংশ গ্রহন করতে পারতেন। মানে যে কোন বিচারিক কার্যে রাজা পুরোহিতের স্মরণাপন্ন হতেন, আর তিনি যে বিধান দিতেন, রাজা মহারাজারা সে বিধান কার্যকর করার আদেশ দিতেন। এতে বুঝা যায়, রাজা রাজ্য শাসন করলেও রাজা স্বাধীন ছিলেন না। বরং তিনি রাজপুরোহিতের অধীন ছিলেন। পুরানগুলো পর্যালোচনা করলে আরো দেখা যায়, কুলগুরু ছাড়াও অন্যান্য শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ বিপ্র এবং দ্বিজগন রাজা মহারাজাদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা পেতেন, মাসিক মাসোহারও উপটৌকন পেতেন।
লক্ষ্য করলে দেখবেন পরস্পর দু’দুটি শব্দ একত্র হয়ে পুরোহিত শব্দটি হয়েছে। পুর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো নগর বা নগরী। আর হিত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অন্যের মঙ্গল কামনা করা। অর্থাৎ যিনি পুর/নগরীর হিত/মঙ্গল কামনা করতেন, তাঁকেই পুরোহিত বলা হত। কিন্তু প্রশ্ন ছিল বাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য বর্ণের মানুষও তো ছিল, যারা নগর কিংবা রাজ্যের মঙ্গল/হিত কামনা করতো। সুতরাং রাজ পুরোহিত নামক উচ্চাশনের এ পদটিতে শুধু বাহ্মণ নিয়োগ দেয়া হতো কেন? এ সঙ্গতঃ কারনেই চলে আসে।
ক্রমশ চলবে.................................
No comments:
Post a Comment