Pages

Sunday, July 29, 2012

উলফার জন্য আনা ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক করায় পুলিশের সার্জেন্ট আলাউদ্দিনকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়


প্রথম আলো




১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় পুলিশের সার্জেন্ট আলাউদ্দিন গতকাল রোববার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে ন। তাতে অস্ত্র আটকের কারণে তৎকালীন সরকার আমলে তিনি কী ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন তার বিবরণ দেন। তাঁর ওপর র‌্যাবের নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্য দেন আলাউদ্দিন। সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় আজ সোমবার তিনি সাক্ষ্য দেবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) কামাল উদ্দিন আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটিঘাটে অস্ত্র খালাসের খবর পেয়ে প্রথম ঘটনাস্থলে যান সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ও সার্জেন্ট আলাউদ্দিন। তাঁরা অস্ত্র পরিবহনের জন্য আনা ১০টি ট্রাক ও খালাস হওয়া অস্ত্র আটক করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খবর দেন। এ কারণে তাঁদের ওপর তৎকালীন সরকারের ক্ষোভ ছিল। ঘটনার এক বছর পর এই দুই সার্জেন্টকে র‌্যাব আটক করে। তাঁদের দুটি একে-৪৭ রাইফেলসহ চালান দিয়ে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। নোয়াখালীর সুধারাম থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হয়েছিল। তিনি গতকাল দেওয়া আংশিক সাক্ষ্যে তাঁর ওপর তখন র‌্যাবের নির্যাতনের বিবরণ দেন।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সার্জেন্ট হেলাল বলেন, ২০০৫ সালের ১৯ আগস্ট তিনি ঢাকার বাংলামোটর মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় তাঁকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে র‌্যাবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমাকে ঢাকার উত্তরায় র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে নিয়ে যায়। সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গুলজার নিজের পরিচয় দেন এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকসংক্রান্ত অনেক তথ্য জানতে চান। এরপর সার্জেন্ট আলাউদ্দিনকে আমার সামনে হাজির করেন।’ 
সার্জেন্ট হেলাল বলেন, ওই দিন রাতে তাঁকে ও আলাউদ্দিনকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‌্যাব-৭-এর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘সকালে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমদাদের কক্ষে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি জানতে চান সার্জেন্ট হেলাল কে? আমি পরিচয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল এমদাদ আমাকে থাপড় মারেন। আমি মাটিতে পড়ে যাই। এরপর লোহার রড দিয়ে অনবরত পেটাতে থাকেন। আমার বাঁ পা ভেঙে যায়। তখনো আমি জানি না আমার অপরাধ কী।’ এটুকু বলেই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সার্জেন্ট হেলাল ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এত দিন কেউ আমার কথা শোনেনি।’ এ সময় তাঁকে সান্ত্বনা দেন বিচারক। 
হেলাল বলেন, ‘পা ভাঙার পর র‌্যাবের অধিনায়ক বললেন, ওকে ক্রসে (ক্রসফায়ার) দিয়ে দাও। তখন আমি চিৎকার করে জানতে চাই, আমার অপরাধ কী। তিনি বলেন, তোর জন্য দেশের আজ এই অবস্থা। জবাবে আমি বলি, স্যার, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করেছি মাত্র। যদি কোনো দোষ হয়ে থাকে সেটা আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের, আমার নয়। এরপর তিনি আমার কাছ থেকে বিস্তারিত শোনেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।’ ওই সময় তাঁর ভাঙা পায়ের এক্স-রে প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
সার্জেন্ট হেলাল আদালতকে জানান, চিকিৎসার পর সুধারাম থানার অস্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালী কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 
প্রসঙ্গত, আটক অবস্থায় ২০০৬ সালের ২২ ও ২৩ মে চট্টগ্রামের আদালতে জবানবন্দি দেন সার্জেন্ট হেলাল। অবশ্য পরে ওই অস্ত্র মামলা মিথ্যা প্রমাণ হয় এবং হেলাল ও আলাউদ্দিন খালাস পেয়ে আবার চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমান সরকারের আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার অধিকতর তদন্তের সময় এই দুই সার্জেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারা। তাঁরা আসামি শনাক্তকরণ মহড়ায় (টিআই প্যারেড) ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন অস্ত্র খালাসের সময় উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 
এদিকে সার্জেন্ট হেলালের সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আসামি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দারের আইনজীবী কামরুল ইসলাম আপত্তি তোলেন। তিনি আদালতে বলেন, ‘সাক্ষীকে পুনরায় সাক্ষ্য প্রদান করানোর জন্য আদালতে আবেদন করতে হয়। কিন্তু আবেদন ছাড়াই গত ১০ কার্যদিবস সাক্ষী তালিকায় তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় কেন আবার তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হবে তা পরিষ্কার নয়।’
জবাবে পিপি কামাল উদ্দিন আহম্মদ আদালতে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারায় আসামিকে রি-কল করার বিধান আছে। এ জন্য ২৬ জুলাই আদালতে আবেদন করেছি। আসামি পক্ষ যে আপত্তি তুলছেন তা বিধি সম্মত নয়।’ 
এর আগে গতকাল বেলা ১২টার দিকে আদালতে সাক্ষী সিআইডির সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ফররুখ আহমেদ চৌধুরীকে জেরা করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। জেরার শুরুতে ১০ জুলাই শুনানির নির্ধারিত দিনে আদালতে অনুপস্থিত থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেন ফররুখ আহমেদ। তিনি আদালতকে জানান, ৩ থেকে ৫ জুলাই আদালতে সাক্ষ্য ও জেরা শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

No comments:

Post a Comment