Pages

Tuesday, May 14, 2013

নিহত মানবতা : ইসলামী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জাতিগত নির্মূলকর


(মডারেট ইসলামী বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যলঘুদের দুর্ভোগ, নিপীড়ন ও জাতিগত নির্মূলকরণের ভয়ঙ্কর চিত্র।)“বলা হয় যে, মৃতরা তাদের কাহিনী শোনানোর জন্য বেঁচে থাকে না; কিন্তু জাতিগত নির্মূলকরণের বেলায় এটা সত্য নয়। এ ক্ষেত্রে মৃতরা তাদের কাহিনী বলে; বরং জীবিতরা কিছু বলতে চায় না।” - হরোউইৎস্, ২০০১, পৃঃ ২২৪]হ্যাঁ, হরোউইৎসের কথা অনুসারে, প্রতিটি মৃত মানুষের কথা সতর্কতার সঙ্গে শুনতে হবে। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে বলার মত মর্মান্তিক কাহিনী। তাদের দিকে মনোযোগ দিন, আপনি তাদের নীরবতার মাঝে এক অভ্রান্ত গুঞ্জন শুনতে পাবেন। এগুলো হচ্ছে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘু অবস্থানের কারণে তাদের উপর যে দুর্দশা আর অন্যায় হয়েছে তার কাহিনী। যারা আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার মত যথেষ্ট ভাগ্যবান তারা মানসিকভাবে এমন ভেঙ্গে পড়েছে যে, তাদের সবাইকে জীবন্মৃত বলা যায়। আজ শুধু ক্ষতিগ্রস্তরা নয় বরং মানবিকতাও নিজেই আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উচ্চস্বরে কাঁদছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ইসলামপন্থী পাকিস্তানী সরকার এবং তাদের বাঙ্গালী দাললেরা বিপুল সংখ্যক হিন্দুকে নির্মূলের জন্য টার্গেট করেছিল, যেমনটি ইহুদীদের করা হয়েছিল হিটলারের জার্মানীতে। ২ কোটি হিন্দুর অনেককে সে সময় অজ্ঞাত স্থানে গণকবরে স্থায়ী বিশ্রাম দেওয়া হয় অথবা কোন রকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসাবে পুড়িয়ে ফেলা হয় অথবা তাদের মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। অনেককে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। তাদের অনেক মহিলাকে নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করে পতিতায় পরিণত করা হয়। এবং তারপরও, মুসলমান গুণ্ডারা তাদের সবকিছু লুঠ করে কপর্দকহীন অবস্থায় তাদেরকে বাড়ীঘর ও জমি থেকে জোর করে বের করে দেওয়ায় তাদের অনেকে বাধ্য হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন।

দুঃখজনক হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব অত্যাচারের পিছনে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ছিল। তথাকথিত মুসলমান বুদ্ধিজীবী এবং ’ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজনীতিবিদরা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গীর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং সাধারণ বাংলাদেশী মুসলমানদের বিশ্বাস করাতে চাইছেন যে, জাতিগত সংখ্যলঘুরা অভিবাসী, তারা ভূমিপুত্র নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে হিন্দু সম্প্রদায়ের একাউন্ট হোল্ডারদের বেশী পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যাংক থেকে তোলার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে (সামাদ, ১৯৯৮)। বাংলাদেশে এটা একটা অলিখিত বিধান যে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে রাষ্ট্রপ্রধান, সশস্ত্র বাহিনীসমূহের প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, বিদেশে বাংলাদেশী মিশনে রাষ্ট্রদূত, অথবা প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মত সপর্শকাতর পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বেসামরিক ও সামরিক চাকুরীতে নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক ঋণ ও বাকী দেওয়ার ব্যাপারে সংখ্যালঘুদের প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে বৈষম্য করা হয়। (সাহা, ১৯৯৮, পৃঃ ৫]। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোও মেনে নিতে পারে না যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ তাদের নেতা হতে পারেন। বাংলাদেশে কোনও একটি ক্ষেত্রের শীর্ষে একজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু খুঁজে পাওয়া বিরল ঘটনা।

বাংলাদেশ সরকার কি এ সত্য অস্বীকার করতে পারে যে, সংখ্যলঘুরা তাদের স্বদেশভূমিতে ’আইনত চিহ্নিত শত্রু,’ যেখানে তারা বহু প্রজন্ম ধরে বাস করছে? এটা একটা লজ্জা! সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার সব সময় মিথ্যার ধূম্রজালের আড়ালে নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সমুদয় ঘটনা লুকানোর চেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশ সরকার প্রণোদনা দিয়ে ইসলাম ধর্মে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১৯৯১ সালের ২৮ নভেম্বর জারি করা ২/এ-৭/৯১-৯২ সার্কুলার মোতাবেক নও-মুসলিমদেরকে তথাকথিত পুনর্বাসনের নামে রাষ্ট্রীয় বাজেট বরাদ্দ থেকে নগদ অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। (প্রেস রিলিজ)এ নিবন্ধ লেখার জন্য নিবন্ধকার অনেক বাংলাদেশী উদ্বাস্তু ও উদার মুসলমানের সাক্ষ্যৎকার নিয়েছেন, তাদের ওয়েব সাইট সার্চ করেছেন, বহু সংবাদপত্র, বই ও নিবন্ধ পড়েছেন। এই নিবন্ধে এমন সব তথ্য তুলে ধরা হবে যেগুলো সম্পর্কে বিশ্ব সচেতন নয়।

রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কর্তৃক ইসলামের ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকীকরণের ফলে ধর্মীয় সংখ্যলঘুরা ভয় পাচ্ছেন যে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় বৈষম্য তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করবে এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়াবে।’ বাংলাদেশ ’তালেবানিস্তান’ হওয়ার পথে রয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, প্রকৃতি পূজারী নির্বিশেষে সংখ্যালঘুদেরকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করে এ প্রক্রিয়াকে সহায়তা যোগাচ্ছে। ইসলামী চরমপন্থীরা প্রায়শ সংখ্যলঘুদের সাংস্কৃতিক স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য তাদের মন্দির, গীর্জা ও লাইব্রেরীগুলিতে হামলা চালায়। ইসলামী চরমপন্থীরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে একটি ছায়া সরকার গঠন করেছে। ’আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ স্লোগানে বাংলাদেশের রাজপথগুলি এখন প্রকম্পিত। অনেক আগেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে এবং ইসলামী উন্মাদনার জয় হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান ১৯৪৬ সালে কুখ্যাত নোয়াখালী দাঙ্গার (১০ অক্টোবর ১৯৪৬) মধ্য দিয়ে শুরু হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার পূর্ণিমার রাতে ২১৮ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়, ১০ হাজারের বেশী হিন্দু বাড়ী লুট করা হয়, ২০০০-এর বেশী হিন্দুকে জোর করে মুসলমান বানানো হয়, কয়েক হাজার হিন্দু রমণী ধর্ষিতা হন এবং শত শত হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়। এসব ঘটনার দুঃখজনক দিক হচ্ছে তৎকালীন প্রাদেশিক গভর্ণর মিঃ বরোজ বলেছিলেন, এটা স্বাভাবিক যে হিন্দু মহিলারা শত শত মুসলমান কর্তৃক ধর্ষিতা হবেন, কারণ এরা মুসলমান রমণীদের চেয়ে বেশী সুন্দরী (রায়, ২০০৭, পৃঃ ১২০, ১৬৫)।তৎকালীন মুসলমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী পরিচালিত গণহত্যায় ৩০ লাখ বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়, এক কোটি হিন্দু শরণার্থী হয়ে ভারতে পালিয়ে যান (কেনেডী, ১৯৭১, পৃঃ ৬-৭) এবং ২ লাখ নারী ধর্ষিতা হন ( রায়, ২০০৭, পৃঃ ২৯৮)। ইহুদীদের বিরুদ্ধে হিটলার পরিচালিত গণহত্যার সময় যেমনটি ঘটেছিল তেমনভাবে হিন্দু পরিবারসমূহের প্রতিবেশী মুসলমানরা হিন্দুদের বাড়ীর গায়ে হিন্দু বুঝাতে হলুদ রঙে ইংরাজী ’এইচ’ চিহ্ন লিখে রাখত, যাতে ঘাতক পাকিস্তানী সৈন্যরা সহজে তাদের টার্গেট চিনতে পারে। (শ্যানবার্গ, ১৯৯৪)। ১৯৭১ সালে তৎকালের পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার গরিষ্ঠ সংখ্যক শিকার হচ্ছে হিন্দু, প্রায় ৮০%, এর পর রয়েছে মুসলমান (১৫%) এবং খ্রীষ্টান (৫%) রায়, ২০০৭, পৃঃ ৩১২)।

বাংলাদেশে ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। ইসলামপন্থী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তস্করেরা এবং তাদের ইসলামী মিত্র জামাআতে ইসলামী হিন্দু, খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধদের পিটুনি দিয়ে চলেছে। জাতীয়তাবাদী ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া ঘোরতরভাবে অপছন্দ করে। হিন্দুদেরকে ভয় দেখিয়ে অথবা ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয় ( দি ডেইলী স্টার, ৪ জানুয়ারী, ২০০৬)। প্রায়ই হিন্দুদেরকে ভয় দেখানো হয় যে তারা ভোট দিলে তাদের মহিলাদের সমভ্রমহানি ঘটবে, তাদেরকে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য করা হবে। হিন্দুদেরকে ভোট প্রদানে বিরত রাখার তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে শারীরিকভাবে বাধা দেওয়া। জাতীয়তাবাদী-ইসলামপন্থী দুর্বৃত্তরা পাহারা দেয় যাতে হিন্দুরা ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে। প্রধানত গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। (রায়, ২০০৭, পৃঃ ৩৫৯, ১৫২। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সরকার কিছুই করে না।

নারী ও শিশুদের অপহরণ ও ধর্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরকে জোর করে বিয়ে করা, জিজিয়া করের নামে টাকা আদায়, জোর করে ধর্মান্তর করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে হত্যা করা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই হিন্দু বিধবাদেরকে নিজ হাতে তাদের গরু হত্যা করে এবং তার মাংস রান্না করে সবার সামনে খেয়ে মুসলমান হতে বাধ্য করা হয় (রায়, ২০০৭, পৃঃ ১২০, ১২৫)।শারীরিক নিরাপত্তার জন্য অনেক পরিবার বহু আগে থেকে তাদের ’স্বদেশভূমি’ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ এই ’হিন্দু গণহত্যা’ পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত এবং প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে সরকার কর্তৃক সমর্থিত। এর লক্ষ্য হচ্ছে সকল সংখ্যালঘুকে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশকে খাঁটি ইসলামী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলা। পরিস্থিতি এতটা উদ্বেগজনক যে, বাংলাদেশে সংখ্যলঘুদের দুর্দশা বর্ণনা করে প্রকাশিত এক নিবন্ধের (২৯ নভেম্বর, ২০০৩) শিরোনাম ছিলঃ ’বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যলঘু ঃ কেবলমাত্র বহির্গমন লাউঞ্জই নিরাপদ।’ (উদ্ধৃতি, দত্ত, ২০০৫)। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর একটা তালিকা নীচে দেয়া হলঃ

হিন্দু মহিলারা (৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী) প্রায়ই গণধর্ষণের শিকার হন। প্রায় ২০০ হিন্দু মহিলা একই স্থানে এক রাতে ভোলার চরফ্যাশনে মুসলমানদের গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন (দি ডেইলী স্টার, ১৬ নভেম্বর, ২০০১)।ইসলামী সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘু খ্রীষ্টানদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করে বলেছে, কর দিতে না পারলে তাদের স্ত্রী, বোন ও কন্যাদেরকে মুসলমানদের হাতে তুলে দিতে হবে। (সূত্র ঃ ক্রিশ্চিয়ান সলিডারিটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড, ১৩ ডিসেম্বর, ২০০১)।মুসলমান সন্ত্রাসীরা মা ও মেয়েকে একত্রে একই বিছানায় ধর্ষণ করেছে, বাবা-মা এবং সন্তানদেরকে এ দৃশ্য দেখতে বাধ্য করেছে, তারা সন্তানদের সামনে মা’দেরকে ধর্ষণ করেছে। (দৈনিক জনকণ্ঠ, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২, ২২ এপ্রিল, ২০০২)।১৯৮৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী প্রতিবেশী গ্রামগুলোর প্রায় ৪০০ মুসলমান কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সোবাহান গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায়। মুসলমানরা তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ’সরকার ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করেছে। সুতরাং তোমাদের হয় মুসলমান হয়ে যেতে হবে নতুবা দেশত্যাগ করতে হবে।’ তারা লুটপাটের পর প্রতিটি হিন্দু বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। মন্দিরগুলো ধ্বংস করে এবং মহিলাদের উপর গণধর্ষণ চালায়। (সূত্র, বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়, মতিউর রহমান ও আজিজুল হক সম্পাদিত, ১৯৯০, উদ্ধৃতি দত্ত, ২০০৫)।প্রায়ই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চালান। যেমন, গোপালপুরে থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন ’মাঝরাতে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি ২টি আশ্রম, ১টি কালী মন্দির ও ৩টি বাড়ী ভাংচুর করে। এ সময় তাদের প্রহারে ৭/৮ জন আহত হয়’ (দি ডেইলী স্টার, ৩ জুন, ২০০৩।

পুলিশ সাধারণত সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের ধর্ষণের শিকার হওয়া কাউকে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে দেয় না। যদি ধর্ষণের শিকার কেউ থানায় গিয়ে অভিযোগ করে তাহলে পুলিশ নড়াচড়া করতে কয়েকদিন দেরী করে যাতে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। তারপর পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেরা ধর্ষিতাকে সাজা দেয়। মামলার চেষ্টা করলে ধর্ষিতাকে হত্যা অথবা অপহরণের হুমকি দেওয়া হয়। (দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০০২)।

২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের একই পরিবারের ১১ জন সদস্যকে (৪ দিনের এক শিশুসহ) জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় (বন্দো, ২০০৪, পৃঃ ১৩)।কয়েক হাজার হিন্দু মন্দির ইতিমধ্যে পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করা হয়েছে। (১৯৯২ সালেই ৩৫২)। জামায়াতে ইসলামী নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদী ঘোষণা করেছেন যে, মুসলমান সাধকদের ছাড়া বাকি সব মূর্তি ধ্বংস করে ফেলতে হবে। (বলডুইন, ২০০২)। ঢাকার সংস্কৃত ও হিন্দু ধর্মীয় বিশ্ববিদ্যালয় (সারস্বত সমাজ) দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বন্ধ। ১৯৭১-এর আগে পর্যন্ত এটা চালু ছিল। হিন্দু শিক্ষা ব্যবস্থা নির্মূল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এর জমি ও অন্যান্য সম্পদ বাজেয়াফত করে। পক্ষান্তরে মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়নের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। ( রায়, ২০০৮)।নিম্নোক্ত সারণীতে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার ও এ সবের পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে :
ক্রমিক নং সহিংসতার শ্রেণী সহিংসতার ধরণ তাৎক্ষণিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব১. রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য চাকুরী ও সমৃদ্ধি অর্জনে বাধা প্রদান এবং রাজনীতিতে জড়ানোকে নিরুৎসাহিত করা। সামাজিক মর্যাদাহানি, বেকারত্ব, সমৃদ্ধির কোন সুযোগ না থাকা। সামাজিক পশ্চাৎপদতা, দারিদ্র্য, রাজনৈতিক ক্ষমতা ধারণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক হয়ে যাওয়া।

২. আইনগত নিপীড়ন ১৯৭২-এর অর্পিত সম্পত্তি আইন, ন্যায়বিচার ও পুলিশ সুরক্ষা প্রায়ই পাওয়া যায় না। সম্পত্তি হানি, জবরদস্তি দ্বারা কৃষিজমি বেদখল হওয়া। দারিদ্র্য, গণ-দেশত্যাগ, বাধ্যতামূলক দেশান্তরী ও উদ্বাস্তু হওয়া।
৩. শারীরিক নিপীড়ন শারীরিক ভাবে হেনস্থা করা, নারী অপহরণ ও ধর্ষণ। ভয়, আত্ম-মর্যাদা হারিয়ে ফেলা। গণ দেশান্তর, বাধ্যতামূলক দেশত্যাগ, উদ্বাস্তু হওয়া।
৪. . মানসিক নির্যাতন ইসলামীদের পক্ষ থেকে মৃত্যুর হুমকি, ধর্ষণের হুমকি, লুটপাটের হুমকি। ভয়, নিরাপত্তহীনতা, মানসিক বৈকল্য। গণহারে দেশত্যাগ, বাধ্যতামূলক দেশান্তর।
৫. সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অবদমন মন্দির ধ্বংস করা, জোর করে ধর্মান্তরিত করা, জোর করে বিয়ে করা। সামাজিক ও ধর্মীয় গণহত্যা। ঐতিহ্যগত পরিচয় হারিয়ে ফেলা, ধর্মীয় স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলা, হতাশা।
৬. আর্থিক নিপীড়ন জিযিয়া কর হিসাবে অর্থ আদায়, মুক্তিপণের জন্য শিশু অপহরণ লুটপাট। ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, সম্পতি হারানো। দারিদ্র্য, গণ- দেশত্যাগ, বাধ্যতামূলক দেশান্তর, উদ্বাস্ত হওয়া।
৭. সংগঠিত গণ-অত্যাচার নৃশংস আচরণ, ইসলাম অনুমোদিত অত্যাচার, ধর্ষণ। ধর্মীয় হত্যকাণ্ড, নিষ্ঠুর দুর্ভোগ। জনসংখ্যা হ্রাস, গণ- দেশত্যাগ, বাধ্যতামূলক দেশান্তর, উদ্বাস্ত হওয়া।
৮. পূর্বনির্ধারিত গণ-হত্যা ১৯৭১-এর কুখ্যাত গণহত্যা, ১৯৪৬-এর নোয়াখালী গণহত্যা, ইসলাম অনুমোদি গণহত্যা। গণ-মৃত্যু, এতিমদের সংখ্যাবৃদ্ধি। সম্প্রদায় নিজেকে টেকসই হিসাবে পুনর্গঠিত করতে পারে না এবং অস্থিতিশীল হয়ে যায়, দারিদ্র্য বাড়ে, গণ- দেশত্যাগ ঘটে, উদ্বাস্তু ও ঘরছাড়া হয় জীবিতরা।৯. তথ্য গোপণ করা সৎ সাংবাদিক শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট লোকজনকে হত্যা করা হয়, মানবাধিকার তদন্তকারীদেরকে আটক করা হয়। বর্বরতা অপ্রকাশিত থাকে। গণমাধ্যমে নীরবতা বিরাজ করে, সেন্সরশীপ আরোপ করা হয় এবং ক্ষমতাসীনরা টাকা দিয়ে গণমাধ্যমকে বশ করে। বিশ্ব উদাসীন থাকে এবং জাতিগত নির্মূলকরণ নির্বিঘ্নে চলতে থাকে।


(নিবন্ধটি Sujid Das লিখিত Humanity Assassinated: Ethnic Cleansing of Minorities in Islamic Bangladsh -এর বাংলায় ভাষান্তর। সংক্ষেপিত:


ভাষান্তর ঃ সত্যজিত চৌধুরী ( সত্যজিত দার প্রতি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ এমন একটি লেখার অনুবাদ ও দৃষ্টি গোচরে দেয়ার জন্য

ছবি যখন কথা বলে

No comments:

Post a Comment