কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ভারতের একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। এটি উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসীতেঅবস্থিত। মন্দিরটি গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির "জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির" নামে পরিচিত শিবের বারোটি পবিত্রতম মন্দিরের অন্যতম। মন্দিরের প্রধান দেবতা শিব "বিশ্বনাথ" বা "বিশ্বেশ্বর" নামে পূজিত হন। বারাণসী শহরের অপর নাম "কাশী" এই কারণে মন্দিরটি "কাশী বিশ্বনাথ মন্দির" নামে পরিচিত। মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উঁচু চূড়াটি সোনায় মোড়া। তাই মন্দিরটিকে স্বর্ণমন্দিরও বলা হয়ে থাকে।
হিন্দু পুরাণে এই মন্দিরটির উল্লেখ পাওয়া যায়। মন্দিরটি শৈবধর্মের প্রধান কেন্দ্রগুলির অন্যতম। অতীতে বহুবার এই মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের পাশে জ্ঞানবাপী মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। আদি মন্দিরটি এই মসজিদের জায়গাটিতেই অবস্থিত ছিল।বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দেন।১৯৮৩ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মন্দিরটি পরিচালনা করে আসছেন।
স্কন্দ পুরাণের কাশীখণ্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অন্যান্য মন্দিরগুলির সঙ্গে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেন। এরপরেই আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। এরপর কুতুবুদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেন। আইবকের মৃত্যুর পর মন্দিরটি আবার নির্মিত হয়। ১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক মন্দিরটি আবার ধ্বংস করেন। ১৫৮৫ সালে আকবরের রাজস্বমন্ত্রীটোডরমল আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।এরপর ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করান। এই মসজিদটি আজও মন্দিরের পাশে অবস্থিত।মসজিদের পিছনে পুরনো মন্দিরের কিছু ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায়।আওরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন। মন্দিরের ভিত্তি, স্তম্ভ ও সম্মুখভাগের দেওয়ালে আদি হিন্দু মন্দিরটির কিছু কিছু নিদর্শন স্পষ্ট দেখা যায়। পুরনো মন্দিরের পাঁচিলটি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয়। মন্দিরের কিছু কিছু অংশকে স্পষ্টভাবে মসজিদের গায়ে রাখা হয়েছিল “সতর্কবার্তা ও হিন্দু মানসের প্রতি অপমান” হিসেবে।মসজিদটি এখনও চালু আছে। এটি ধর্মস্থান (বিশেষ সুবিধা) আইন, ১৯৯১ অনুসারে বিশেষ সুরক্ষা পেয়ে থাকে।
জ্ঞানবাপী বা আলমগিরি মসজিদ
১৭৮০ সালে হিন্দু মারাঠা রানি অহল্যা বাই হোলকার কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। নবনির্মিত মন্দিরটি মসজিদের পাশেই নির্মিত হয়। সেই সময় থেকে মন্দির ও মসজিদ দুটি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। দুইয়ের মাঝে লোহা ও কাঁটাতারের বেড়া আছে। দুইয়ের মাঝে জ্ঞানবাপি নামে কুয়োটিও আছে। আওরঙ্গজেব মন্দির আক্রমণ করলে মন্দিরের শিবলিঙ্গটিকে এখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ।১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহ মন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন।
মন্দির চত্বরটি অনেকগুলি ছোটো ছোটো মন্দির নিয়ে গঠিত। এই মন্দিরগুলি গঙ্গার তীরে "বিশ্বনাথ গলি" নামে একটি গলিতে অবস্থিত। প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদির উপর স্থাপিত। ছোটো মন্দিরগুলির নাম কালভৈরব, দণ্ডপাণি, অবিমুক্তেশ্বর, বিষ্ণু, বিনায়ক, শনীশ্বর, বিরূপাক্ষ ও বিরূপাক্ষ গৌরী মন্দির। মন্দিরের মধ্যে জ্ঞানবাপী নামে একটি ছোটো কুয়ো আছে। কথিত আছে, মুসলমান আক্রমণের সময় প্রধান পুরোহিত স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গটি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সেটি নিয়ে এই কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
জ্ঞানবাপী কুয়া
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্রতম মন্দিরগুলির অন্যতম। আদি শঙ্করাচার্য, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, গোস্বামী তুলসীদাস, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী,গুরু নানক প্রমুখ ধর্মনেতারা এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন।হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।
No comments:
Post a Comment