মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এক লাখ হিন্দু নিধন
আমেরিকায় প্রকাশিত
একটি বই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড়সড় বিতর্কের ঝড় তোলে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যলয়ের রাজনীতি এবং
আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক গ্যারি জে বাস তার প্রকাশিত “ দি ব্ল্যাড
টেলিগ্রাম : নিক্সন কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটন জেনোসাইড ” বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের
প্রায় এক লাখ হিন্দুকে নির্বিচারে খুন করেছিল।
তৎকলীন পূর্ব
পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। অসহায় ভাবে তখন খুন হয় বিপুল সংখ্যক হিন্দু।
নিজেদের স্বার্থের জন্য তখন ভারত ও মার্কিন সরকার চোখ বন্ধ করেছিল বলেও ঐ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলদেশে যখন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলে তখনই
গ্যারি জে বাসের এই বই তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সাইক্লোন বইয়ে দেয় আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে।
আমেরিকায় এ
সপ্তাহের শুরুতে বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৪০ বছর আগের বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধ এবং তাকে ঘিরে একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। খবর বর্তমান , পিটিআই ও ওয়াশিংটনের।
জে বাস তার
বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ
শুরুর আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থেই গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সর্বত্রই টার্গেট করা হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত বাঙালীদের । যুদ্ধের শুরুতেই অসহায়
অবস্থায় খুন হয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ হিন্দু ।
অথচ
আশ্চার্যজনকভাবে বিষয়টিকে ছোট করে দেখিয়েছিল সেই সময়ে ভারতের ক্ষমতায় থাকা ইন্দ্রিরা গান্ধির
কংগ্রেস সরকার। শুধু তাই নয়, অদ্ভুতভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। এই নিরবতা কেন ? এমন প্রশ্ন তুলেছেন জে বাস তার বইতে।
শুধু মার্কিন
প্রশাসন নয়, তখনকার ভারত সরকারের তীব্র সমলোচনা
করেছেন লেখক জে বাস। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে যখন প্রত্যেকদিন নিয়ম করে হিন্দু নিধন চলছিল তখন ভারত সরকার বিষয়টির
আসল গুরুত্ব প্রকাশে রাজি ছিলনা। কারণ, ইন্দিরা গান্ধি সরকার চায়নি তখনকার বিরোধী দল জনসংঘ তথা আজকের বিজেপি এই নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পাক।
পাক সেনারা যখন
নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে তখন ভারতের সংসদ সদস্যরা গোলাবারুদ দিয়ে হিন্দুদের সাহায্য করেনি। কারণ সেই একটাই, যদি গোলাবারুদ দেওয়া হয় , তাহলে গোটা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে
চলে আসবে। আর তা নিয়ে রাজনীতি করবে
জনসংঘ বা বিজেপি।
বইয়ে তিনি আরো
লিখেছেন, তখন পাকিস্তানী জেনরেল ইয়াহিয়ার
হিন্দু নিধনের পক্ষে যুক্তি ছিল যে, পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ বাঙালি হিন্দু। এরা ইসলাম বিরোধী। এরা
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় তারা পরাজিত হয়েছেন।
“ভবিষ্যতে শাসন কায়েম রাখতে
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে থাকা হিন্দু বাঙালিদের স্রেফ ছেঁটে ফেলা দরকার” বলে মন্তব্য করেন ইয়াহিয়া।
বইতে উল্লেখ
করা হয়েছে, অভিযনে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট
জেনারেল টিক্কা খানের যুক্তি ছিল যে, “পূর্ব পাকিস্তান ভারতের দাসত্ব করছে। বহু ত্যাগের পর যে স্বাধীনতা এসেছে তাকে
এবং দেশটাকেই আওয়ামীলীগ ধ্বংস করে দেবে।”
তখন পাক সেনারা
একে অপরের সঙ্গে মজা করে বলত,“আজ কত হিন্দু
মেরেছ ?”
জে বাস লিখেছেন, সশস্ত্র পাক সেনাদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় এক কোটি নিরস্ত্র হিন্দুর অসম লড়াই হয়েছিল। ভারতের সহযোগিতার কলঙ্ক এবং নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য সাধনের অভিযোগের তকমা লাগানো হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের গায়ে। যে কারণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হিন্দুদের ওপর চালিয়েছিল মর্মান্তিক গণহত্যা।
জে বাস লিখেছেন, সশস্ত্র পাক সেনাদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় এক কোটি নিরস্ত্র হিন্দুর অসম লড়াই হয়েছিল। ভারতের সহযোগিতার কলঙ্ক এবং নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য সাধনের অভিযোগের তকমা লাগানো হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের গায়ে। যে কারণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হিন্দুদের ওপর চালিয়েছিল মর্মান্তিক গণহত্যা।
বাংলাদেশের
হিন্দু সংগঠনগুলোর হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধে
২২ লাখের বেশি হিন্দু শহীদ হয়েছেন। এছাড়া ওই সময়
প্রায় ১ কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে।
দি ব্ল্যাড
টেলিগ্রাম : নিক্সন কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটন জেনোসাইড বইতে গ্যারি জে বাস আরো লিখেছেন, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্চার ব¬াড ভেবেছিলেন, হিন্দুদের নিধন বা তাড়নো নিয়ে বেশি হইচই করার প্রয়োজন নেই।
বইতে সে সময়
ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যও স্পষ্ট উলে¬খ করা হয়েছে। তিনি এক বৈঠকে রিচার্ড নিক্সনকে স্বয়ং জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। আতঙ্কে প্রতিদিন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য এক সময় কিসিঞ্জার নাকি বলেছিলেন, ইয়াহিয়া খান আবার একটা মূর্খের মতো ভুল করলো হিন্দুদের তাড়িয়ে। যদিও সেই বৈঠকে
রাষ্ট্রদূতের কথার কোন উত্তর দেননি কিসিঞ্জার।
জবাব মেলেনি
নিক্সনের পক্ষ থেকেও।
ভারত এবং আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থ এবং নিরবতার কারণেই বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র হিন্দুদের নির্বিচারে খুন করতে উৎসাহ পেয়েছিল বলে মনে করেন জে বাস। এত বছর পর এই তথ্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করলো।
ভারত এবং আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থ এবং নিরবতার কারণেই বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র হিন্দুদের নির্বিচারে খুন করতে উৎসাহ পেয়েছিল বলে মনে করেন জে বাস। এত বছর পর এই তথ্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করলো।
আমাজন সাইট
থেকে বইটি কিনতে পারবেন http://www.amazon.com/The-Blood-Telegram-Kissinger-Forgotten/dp/0307700208
বইটি সম্পর্কিত
একটি রিভিউ পড়ুন http://online.wsj.com/news/articles/SB10001424127887323846504579073510606727756
No comments:
Post a Comment