Pages

Sunday, May 6, 2012

বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের ২০ কোটি ডলার মওকুফ করবে ভারত



বাংলাদেশকে দেওয়া ১০০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধার মধ্যে ২০ কোটি ডলার ভারত মঞ্জুরি হিসাবে গণ্য করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি এই ঋণের সুদ হারও কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 


বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় তিনি বলেন, “ভারত ওই অর্থ সহায়তা হিসাবে বিবেচনা করবে, ঋণ হিসাবে নয়।” 

এই ২০ কোটি ডলার বাংলাদেশ নিজেদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

২০১০ সালের অগাস্টে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের এই ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে এই ঋণের আওতায় যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। 

চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এ ঋণের জন্য বাংলাদেশকে বছরে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। 

প্রণব জানান, ২০ কোটি ডলার মঞ্জুরি হিসাবে গণ্য করার পর বাংলাদেশকে বাকি ৮০ কোটি ডলারের জন্য ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। 

ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ওই ঋণের অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ মানবসম্পদ ও যন্ত্রাংশ ভারত থেকে নেওয়ার যে শর্ত ছিল, তা ইতোমধ্যে শিথিল করা হয়েছে। আরো শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। 

গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকাসহ বেশ কিছু ‘বাস্তব সমস্যার’ কথা তুলে ধরেন ভারতীয় কংগ্রেস নেতা প্রণব, যার নাম ভারতের আগামী রাষ্ট্রপতি হিসাবে আলোচনায় রয়েছে। 

তিনি বলেন, “আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কখনো কখনো প্রক্রিয়াগুলো খুবই সময় সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।” 

তিস্তা চুক্তির বিষয়টিকে খুবই ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে প্রণব বলেন, এর সঙ্গে এমন কিছু বিষয় জড়িত, যার মীমাংসা করতে হবে। 

ঋণের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে বিলম্বের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ওই ঋণের আওতায় ইতোমধ্যে ২১ দশমিক ৪ কোটি ডলারের পাঁচটি চুক্তি হয়েছে, বেশ কিছু বাস ও ট্রেনের বগি বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। 

পালটানায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে সেখান থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রতিশ্র“তির কথাও আবার উল্লেখ করেন তিনি। 

বরাক নদীর উজানে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রণব বলেন, একটি দল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সব দিক খতিয়ে দেখবে। 

“ভারত এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে”, আবারো বলেন তিনি। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অনুষ্ঠানমালার সমাপনী উপলক্ষে শনিবার ঢাকায় আসেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রোববার বিকালেই তিনি দেশে ফিরে যান। 

প্রণব বলেন, “আমাদের দুই দেশ যেভাবে এই বর্ষপূতি পালন করেছে তা একটি দৃষ্টান্ত।” 

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের সময় যৌথভাবে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এ উপলক্ষে এক দেশের শিল্পীরা অন্য দেশে গিয়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠান করেন। 

এই অনুষ্ঠানমালার ভারতীয় অংশের সমাপনী অধিবেশন সোমবার নয়া দিল্লিতে আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। 

কাজী নজরুল ইসলামের অমর কবিতা ‘বিদ্রোহী’ রচনার ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষেও একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

দুপুরে সম্পাদকদের সঙ্গে মত বিনিময় সভার আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রণব। 

প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ‘বিভিন্ন বিষয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ’ আলোচনা হয়েছে। 

বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন তিনি। 

সফর শেষে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে তিনি গুলশানে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। 

ভারতের রাষ্ট্রপতি হলে পশ্চিম বঙ্গের সন্তান প্রণব মুখোপাধ্যায় হবেন দেশটির প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। 

সদা হাস্যময় প্রণব বলেন, ঘটার আগে ‘কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়।’ 

No comments:

Post a Comment