Pages

Saturday, May 5, 2012

গৌতম বুদ্ধ- শান্তির অবতার




আজ রোববার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উত্সব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা
ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ উত্সব উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন


বৌদ্ধ ধর্মমতে, আজ থেকে ২ হাজার ৫৫৫ বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেনতার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা


সিদ্ধার্থ গৌতম (Sanskrit: सिद्धार्थ गौतम; Pali: Siddhattha Gotama, সিদ্ধাত্থ গোতম) ছিলেন প্রাচীন ভারতের এক ধর্মগুরু এবং বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতাঅধিকাংশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মতে, তিনিই আমাদের যুগের সর্বোচ্চ বুদ্ধ (পালি: সম্মাসম্বুদ্ধ, সংস্কৃত: সম্যকসম্বুদ্ধ)বুদ্ধ শব্দের অর্থ আলোকপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা দিব্যজ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তিতাঁর জন্মের ও মৃত্যুর সঠিক সময়কাল অজ্ঞাতপ্রাক-বিংশ শতাব্দী ঐতিহাসিকেরা তাঁর জীবৎকালকে সীমাবদ্ধ করেছেন ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যেতবে কোনো কোনো আধুনিক ঐতিহাসিকের মতে, গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু ঘটে ৪৮৬ থেকে ৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে; আবার কোনো কোনো মতে, ৪১১ থেকে ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে 
গৌতম বুদ্ধের অপর নাম "শাক্যমুনি"তিনি বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বঅনুমিত হয়, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা তাঁর জীবনকথা, শিক্ষা ও বৌদ্ধ সংঘের সন্ন্যাস-বিধি লিপিবদ্ধ করেনতাঁর শিক্ষাগুলি প্রথম দিকে মুখে মুখে প্রচলিত ছিলবুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় চারশো বছর পর এগুলি লিপিবদ্ধ করা হয় 

বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি হিন্দুধর্ম, আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায় ও বাহাই ধর্মমতের মতো বিশ্বধর্মেও তাঁকে দেবতা বা মহামানব বলে উল্লেখ করা হয়েছে

সিদ্ধার্থের পিতা ছিলেন শাক্য বংশীয় রাজা শুদ্ধোদনমাতামায়াদেবীমায়াদেবী কপিলাবস্তু থেকে পিতার রাজ্যে যাবার পথে লুম্বিনি গ্রামে (অধুনা নেপালের অন্তর্গত) সিদ্ধার্থের জন্ম দেনতাঁর জন্মের সপ্তম দিনে মায়াদেবীর জীবনাবসান হয়পরে তিনি বিমাতা গৌতমী কতৃক লালিত হনধারণা করা হয় তাঁর নামের "গৌতম" অংশটি বিমাতার নাম থেকেই এসেছেআবার কারও কারও মতে এটি তাঁর পারিবারিক নামজন্মের পঞ্চম দিনে রাজা
 
৮ জন জ্ঞানী ব্যক্তিকে সদ্যোজাত শিশুর নামকরণ ও ভবিষ্যৎ বলার জন্য ডাকেনতাঁর নাম দেওয়া হয় সিদ্ধার্থ - "যে সিদ্ধিলাভ করেছে, বা যার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে"তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, রাজকুমার একদিন সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে যাবেন এবং বোধিপ্রাপ্তহবেনএকজন রাজপুত্র হিসেবে সিদ্ধার্থ বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা লাভ করেন
সিদ্ধার্থ গৌতমের বিবাহ সম্বন্ধে দুধরনের মত আছেপ্রথম মত অনুসারে ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর স্ত্রীকে লাভ করেনঅতঃপর পুত্র রাহুল জন্মগ্রহণ করেআর একটি মত অনুসারে ২৮ বছর বয়সে তাঁকে সংসারের প্রতি মনোযোগী করার জন্য তাঁর পিতামাতা তাঁকে রাজকন্যা যশোধরার সাথে বিবাহ দেনপরবর্তী বছরে জন্ম নেয় পুত্র রাহুল
মহানিষ্ক্রমণ
কথিত আছে, একদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থ বেড়াতে বের হলে ৪ জন ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়প্রথমে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, অতঃপর একজন অসুস্থ মানুষ এবং শেষে একজন মৃত মানুষকে দেখতে পানতিনি তাঁর সহিস চন্নকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, চন্ন তাঁকে বুঝিয়ে বলেন যে এটিই সকল মানুষের নিয়তিআবার একদিন (কারও কারও মতে সেদিনই) তিনি চন্নকে নিয়ে বের হলেনএবারে তিনি দেখা পেলেন একজন সাধুর, যিনি মুণ্ডিতমস্তক এবং পীতবর্ণের জীর্ণ বাস পরিহিতচন্নকে এঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন উনি একজন সন্ন্যাসী, যিনি নিজ জীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের দুঃখের জন্যরাজকুমার সিদ্ধার্থ সেই রাত্রেই ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করেনসাথে নিলেন চন্নকেপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বনের শেষ প্রান্তে পৌঁছিয়ে তিনি থামলেনতলোয়ার দিয়ে কেটে ফেললেন তার লম্বা চুলঅতঃপর চন্নকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করলেন জ্ঞানান্বেষণে, মাত্র ২৯ বছর বয়সেসিদ্ধার্থের এই যাত্রাকেই বলা হয় মহানিষ্ক্রমণ


বোধিলাভ



দুঃখ ও দুঃখের কারণ সম্বন্ধে জানতে সিদ্ধার্থ যাত্রা অব্যাহত রাখেনপ্রথমে তিনি আলারা নামক একজন সন্ন্যাসীর কাছে যানতাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি যান উদ্দক নামক আর একজনের কাছেকিন্তু এখানেও কোনও ফল পেলেন নাএভাবে কিছু দিন যাবার পর তিনি মগধের উরুবিল্ব নামক স্থানে গমন করেনসেখানে প্রথমে একটি উত্তর-পূর্বমুখি শিলাখণ্ডের উপর বোধিসত্ত্ব জানু পেতে বসে আপন মনেই বলেছিলেন যে, "যদি আমাকে বুদ্ধত্বলাভ করতে হয় তা হলে বুদ্ধের একটি প্রতিচ্ছায়া আমার সম্মুখে দৃশ্যমান হোক।" এই কথা উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শিলাখণ্ডের গায়ে তিন ফিট উঁচু একটি বুদ্ধের প্রতিচ্ছায়া প্রতিফলিত হলবোধিসত্ত্ব তপস্যায় বসার পূর্বে দৈববাণী হয় যে, "বুদ্ধত্ব লাভ করতে গেলে এখানে বসলে চলবে না; এখান থেকে অর্ধযোজন দূরে পত্রবৃক্ষতলে তপস্যায় বসতে হবে।" এরপর দেবগণ বোধিসত্ত্বকে সঙ্গে করে এগিয়ে নিয়ে যানমধ্যপথে একজন দেবতা ভূমি থেকে একগাছা কুশ ছিঁড়ে নিয়ে বোধিসত্ত্বকে দিয়ে বলেন যে, এই কুশই সফলতার নিদর্শন স্বরূপবোধিসত্ত্ব কুশগ্রহণের পর প্রায় পাঁচ শত হাত অগ্রসর হন এবং পত্রবৃক্ষতলে ভূমিতে কুশগাছটি রেখে পূর্বমুখি হয়ে তপস্যায় বসেনকঠোর সাধনার ফলে তাঁর শরীর ক্ষয়ে যায়কিন্তু এ তপস্যায় তিনি ভয়, লোভ ও লালসাকে অতিক্রম করে নিজের মনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সক্ষম হলেনসহসা তিনি বুঝতে পারলেন এভাবে বোধিলাভ হবে নাতিনি তাই আবার খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেনসুজাতা নাম্নী এক নারীর কাছ থেকে তিনি এক পাত্র পরমান্ন আহার করলেনঅতঃপর তিনি নদীতে স্নান করে পুনরায় ধ্যানরত হনঅবশেষে কঠোর তপস্যার পর তিনি বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হলেনশাক্যমুনি বোধিলাভের পর সাতদিন ধরে বোধিবৃক্ষের দিকে তাকিয়ে থেকে বিমুক্তিলাভের আনন্দ উপভোগ করেনতিনি দুঃখ, দুঃখের কারণ, প্রতিকার প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করলেনএ ঘটনাটিই বোধিলাভ নামে পরিচিত
মহাপরিনির্বাণলাভ
সমস্ত জীবন ধরে তাঁর দর্শন এবং বাণী প্রচার করে অবশেষে আনুমানিক ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে কুশীনগরে ভগবান তথাগত মহাপরিনির্বাণলাভ করেন




এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছেউত্সব উপলক্ষে রাষ্ট্র্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গতকাল পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেনবাণীতে তারা বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে পারস্পরিক সহাবস্থান, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশ ও জাতিগঠনে যথাযথ অবদান রাখতে সব ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেনবুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা 


ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধ শান্তি ও মানবতার মূর্তপ্রতীকতার সাধনা ছিল এ পৃথিবীকে মানবসমাজের জন্য শান্তির আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তোলান্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা, পবিত্রতা, আত্মসংযম, শিষ্টাচার, সারল্য, ক্ষমা, দয়া-দাক্ষিণ্য ইত্যাদি গুণাবলি তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছেনদুস্থ এবং পরোপকারের সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেনরাষ্ট্রপতি বলেন, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও জীবের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ আজও মানবসমাজকে অনুপ্রাণিত করেসবার সুখ কামনায় তিনি নিজের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেনভোগ নয়, ত্যাগই মানুষের জীবনকে মহীয়ান-গরীয়ান করে তোলে, মহামতি বুদ্ধের জীবন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য গৌতম বুদ্ধ যে আদর্শ রেখে গেছেন, তা লালন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবেবাণীতে শেখ হাসিনা মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ এবং মহাপ্রয়াণের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানানপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয়, লোভ, লালসাকে অতিক্রম করে গৌতম বুদ্ধ আজীবন সাম্য, মৈত্রী, ত্যাগ, করুণা ও অহিংসা লালন করেছেনসারা বিশ্বে তিনি শান্তির অমিয় বাণী প্রচার করেছেনবাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশএদেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ মুক্ত পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে প্রতিপালন করে থাকেন
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, যুগে যুগে মহামানবরা পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্যের আলো দেখিয়েছেন, চিনিয়েছেন কল্যাণের পথসব প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে আহ্বান করেছেনহিংসা দিয়ে হিংসার ধ্বংস নয়সে কারণেই স্মরণ করতে হয় অহিংসার মহামতি বুদ্ধের এ বাণী চিরকালীন, আজও মানবজাতির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্যজাতিতে জাতিতে ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতায় মানবজাতি আজ যখন ছিন্নভিন্ন তখন মহামতি গৌতম বুদ্ধের অহিংসা, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী বিশ্ববাসীকে দেখাতে পারে মহামিলনের পথবাণীতে বেগম জিয়া বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশবাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনেই এদেশের সব বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীগুলোর সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার স্ফূরণ ঘটেবাংলাদেশে সব ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধআমরা ধর্মীয় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বিভাজনে বিশ্বাস করি নাআমরা সবাই বাংলাদেশী
এছাড়া বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেনআজ সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে এ দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হবেপরে বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাদি পালিত হবেরাজধানীসহ সারাদেশের বৌদ্ধবিহারে এ উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হবেকর্মসূচির মধ্যে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে


আরও জানতে  এখানে ক্লিক করুন  

No comments:

Post a Comment