Pages

Monday, May 7, 2012

শিশুপাল বধ





বৃষ্ণিবংশীয় চেদি দেশের রাজা ছিলেন
 এঁর পিতার নাম দমঘোষ ও মায়ের নাম শ্রুতশ্রবা বিষ্ণু পুরাণের মতে পূর্ব জন্মে ইনি হিরণ্যকশিপু ও রাবণরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন
ইনি তিনটি চক্ষু ও চারটি হাত নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন জন্মের সময় ইনি গাধার মত চিত্কার করতে থাকলে সকলে একে পরিত্যাগ করেনপরে দৈববাণী হয় যে- একে যেন ত্যাগ না করা হয় কারণ এঁর মৃত্যুকাল এখনো উপস্থিত হয় নি তবে যাঁর হাতে নিহত হবেন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন পরে শিশুপালের মা দৈববাণীর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করেন যে- এই শিশুর হত্যাকারী কে হবেন দৈববাণী হয়- যাঁর স্পর্শে এঁর দুটি হাত ও তৃতীয় চোখ খসে পড়বেতাঁর হাতে এর মৃত্যু হবে এরপর এই শিশুকে বিভিন্ন রাজার কোলে তুলে দেওয়া হয় কিন্তু তাতে শিশুপালের হাত ও চোখের কোন পরিবর্তন হয় নি একবার কৃষ্ণ চেদিরাজের দরবারে গিয়ে শিশুপালকে কোলে নিলে এঁর চার হাতের মধ্যে দুটি খসে পড়ে এবং তৃতীয় চোখ মিলিয়ে যায় এরপর শিশুপালের মা কৃষ্ণকেই তাঁর সন্তানের হত্যাকারী হিসাবে চিনতে পেরে- কৃষ্ণকে অনুরোধ করেন যে- তিনি যেন শিশুপালের সকল অপরাধ ক্ষমা করেন উত্তরে কৃষ্ণ শিশুপালের ১০০টি অপরাধ ক্ষমা করবেন বলে অঙ্গীকার করেন
শিশুপাল বড় হয়ে জরাসন্ধের কাছে প্রতিপালিত হন উভয় মিলে কৃষ্ণের বিরোধিতা শুরু করেন ভোজ দেশের রাজকন্যা রুক্মিণী'কে,জরাসন্ধ শিশুপালের জন্য দাবী করেন কিন্তু রুক্মিণী কৃষ্ণকে মনে মনে পতিত্ব বরণ করে চরমুখে কৃষ্ণের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয় কৃষ্ণ সে প্রস্তাব অনুসারে প্রথমে রুক্মিণীর পিতা ভীষ্মকের কাছে উপস্থিত হয়ে এই বিবাহে সম্মতি প্রার্থনা করলেভীষ্মক তাতে অসম্মতি জানানরুক্মিণী'র ভাই রুক্মী শিশুপালের সাথে বিবাহের আয়োজন করেন কোন কোন মতে ভীষ্মক রুক্মিণীর জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করেনকৃষ্ণ-বলরাম রুক্মিণীকে হরণ করেন পরে কৃষ্ণ রুক্মিণীকে বিবাহ করেন অপহরণের সময় জরাসন্ধশিশুপাল সহ অন্যান্য রাজারা তাঁকে বাধা দিলে- তাঁরা কৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে স্বদেশে পলায়ন করে যুধিষ্ঠির ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী স্থাপন করে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন যজ্ঞ শেষে রাজন্যবর্গের মধ্যে কাকে প্রথম অর্ঘ প্রদান করা যায় এমন আলোচনা উঠলে- ভীষ্মের পরামর্শে কৃষ্ণকে প্রথম অর্ঘ দেওয়া হয় ফলে শিশুপাল একে অসমীচীন বিবেচনা করে কৃষ্ণকে কুত্সিত ভাষায় আক্রমণ করেন ইতোমধ্যে কৃষ্ণ তাঁর একশত অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন সে কারণেএবারের এই অপরাধের জন্য কৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দ্বারা শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেন



একথা জানা দরকার
বৈকুন্ঠের দ্বারী ছিলেন জয় এবং বিজয়একবার ব্রাহ্মণরা জয় এবং বিজয়কে তাদের ঔদ্ধত্যৈর জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, মর্ত্যলোকে তিন জন্ম নাস্তিক আর নিষ্ঠুর হয়ে কাটাতে হবেএই তিনটি জন্মই তাদের কাটাতে হবে প্রচন্ড দেব- বিরোধিতা করে, অসুর মনোভাব নিয়ে অত্যাচার করেভগবান এই দুই দ্বারীকে খুবই ভালবাসতেনতবে ঔদ্ধত্যৈর শাস্তি পাওয়া উচিত বিবেচনা করে ব্রাহ্মণের সেই অভিশাপ তিনি অনুমোদন করেছিলেন তবে ভগবান তাদের অশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি স্বয়ং নিজে মর্ত্যে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনবেন

জয় প্রথমে মর্ত্যে জন্ম নিয়েছিলেন হিরণ্যকশিপু হয়েশ্রীশ্রী নৃসিংহ দেব হিরণ্যকশিপুকে সংহার করে প্রথম জন্ম থেকে মুক্তি দেনদ্বিতীয়বার জয়কে জন্মাতে হয়েছিল রাবন হয়েশ্রীরামচন্দ্র রাবনকে বধ করে দ্বিতীয় জন্ম থেকে মুক্তি দেনশেষে জন্মাতে হয়েছিল শিশুপাল হয়েপরমেশ্বর স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালের মাথা বিছিন্ন করে তৃতীয় জন্ম থেকে মুক্তি দেনএভাবে পরমেশ্বর স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে এসে স্বর্গের দ্বারী জয়কে শাপ মুক্ত করেন মুক্তি পেয়ে বৈকুন্ঠের দ্বারী জয় আবার বৈকুন্ঠে ফিরে যায়
শিশুপাল বধ হয়েছে ঠিকই কিন্তু অসংখ্য শিশুপাল আজও বিরাজ করছে এই ধরণীর বুকে। এরাই অধর্মের ধারক ও বাহক। এদের বিনাশ জরুরী।

No comments:

Post a Comment