Pages

Wednesday, May 16, 2012

বিএনপি জামাতের নির্যাতন ২০০১-২০০৬ : কেউ ভোলে কেউ ভোলে না উত্সর্গ আমি নিরপেক্ষ নই সত্যের পক্ষে





খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো সেদিন ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ১৯৭১ সালের বর্বর দিনগুলোর স্মৃতি যজ্ঞে। একটা দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন সাধারন প্রক্রিয়া। যুগে যুগে কালে কালে দেশে দেশে তাই হয়ে আসছে অনাদিকাল ব্যাপী। বাংলাদেশে ও তাই হচ্ছিল। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে, হয়েছে ১৯৯৬ সালে। এক দল ক্ষমতায় গেছে তো অন্যদল বিরোধিদলে। কিন্তু যা হয়ে আসছে তা যেন না হবার বছর ২০০১ সাল।
২০০১ সালের অক্টোবরের ১ তারিখ। কতিপয় স্থানে সংখ্যালঘুদের হুমকি ও নির্যাতনের ঘটনা বাদে শান্তিপূর্ণই ছিল দিনটি। কিন্তু সকালের সূর্য্যে সেদিন প্রতিধ্বনিত হয়নি অন্ধকারের জীবেরা বাকিটা সময়ের জন্যে কি ভয়াবহ বীভত্স চেহারা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। সেদিনের নির্বাচনে শতকরা ৪১ ভাগ ভোট পেয়েও মাত্র ৫৬ টি আসন নিয়ে বিরোধি দলের আসনে বসে আওয়ামীলীগ। আর যেন যুদ্ধজয়ী রুপ নিযে নির্বাচনে পরাজিতের বিপক্ষে ঝাপিয়ে পড়েছিল বিজয়ী চারদলীয় জোট।

আসুন ফিরে দেখি দুঃসময়। শত বছর ধরে মনে রাখার মতো পুর্ণিমা ধর্ষনের খবর জেনেছে, শুনেছে আতংকিত মায়ের উক্তি “বাবারা আমার মেয়েটা ছোট, তোমরা একজন একজন করে যেও”, দেখেছে শুধুমাত্র বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দল করার কারনে নগর থেকে শান্ত গ্রাম অবধি লাশের মিছিল, গ্রেনেড হামলায় ঝরে যাওয়া মুখগুলোকে কিভাবে ভুলে যাওয়া যাবে? সেই শাহ এ এম এস কিবরিয়া’র মতো সজ্জন, আইভী রহমানের প্রতিবাদি মুখ, গাজীপুরের প্রেম আহসানউল্লাহ মাষ্টার, খুলনার বিদ্রোহী মঞ্জুরুল ইমাম, সাহসী কলম যোদ্ধা হুমায়ুন কবির বালু... কত শত মুখ, লাশের দীর্ঘ সারি! 

বাংলা ভাই কে ভুলে যেতে বলবেন? মহান নবী নিজামী তো বলেইছিলেন বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। সারা দেশ জুড়ে বোমা হামলা, দশট্রাক অস্ত্র, দুই ট্রাক গুলি... প্রিয় মাতৃভুমির ভারতীয় উলফা আর কাশ্মিরী জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠা! আজ সেই আতকে উঠা কিছু সময়ের গল্প নিয়ে এসেছি। দেখে নিন নির্যাতনের দু একটা স্কীনশট। ২০০১ সালের নির্বাচনপরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে নির্মম বর্বরতা চালায়। ওই বছর অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সুপরিকল্পিতভাবে দেশের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন শুরু করে। লুন্ঠন, অুগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ এমন কোন নির্যাতন নেই, যা ওই সময়ে করা হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের ২৬ হাজার ঘটনা রেকর্ড করেছে। যার মধ্যে ৫০০ ঘটনা ছিল স্পর্শকাতর। বিষয়টি বিশ্বব্যপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলে জোট সরকার বিষয়টি ভারতীয় ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেয়। গ্রেফতার করে শাহরিয়ার কবিরকে। বিদেশী সাংবাদিকদের আটকে দেয়া হয় ইমিগ্রেশনে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ ও রোমহর্ষক ঘটনাগুলো ঘটে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায়। সেই দুঃসহ নির্যাতনের ঘটনার কথা স্মরণ করে এখনও চমকে ওঠেন ওই অঞ্চলের সংখ্যালঘুরা। দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ওই বছরের ৬ ডিসেম্বরের সংখ্যার রিপোর্টে বলা হয়, ২ ডিসেম্বর রাতে টরকী বন্দরের বার্ষিক কীর্তন শুনে বাড়ি ফেরার পথে আগৈলঝাড়ার বারপাইকা গ্রামের দিনমজুর জগদীশ বৈরাগীর পত্নী সুনিত্রী বৈরাগী (২৫)কে কাঞ্চন বেপারী ও ফিরোজ শিকদারের নেতৃত্বে একদল দৃর্বত্ত গণধর্ষণ করে। পরদিন ৩ ডিসেম্বর রাতে বিএনপি ক্যাডার রফিক চোকদার সংখ্যালঘু পলিন চন্দ্র বাড়ৈয়ের সম্মুখে তার কন্যা শোভা (১৪) কে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ক্যাবল ব্যবসায়ী বলাই কুন্ডুর বাড়িত দুর্বত্তরা ৪ ডিসেম্বর অগ্নিসংযোগ করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের রাত থেকে বিএনপি ক্যাডাররা ভোলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে গণলুট নির্যাতন চালায়। ওই রাতের তান্ডবে ২৮৭টি সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়। ২১ জন নারী লাঞ্ছনার শিকার হয়।
ইংরেজি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রায় এক হাজার নরনারী ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয় (ডেইলি স্টার, এপ্রিল ১৭)। বিএসএস সংবাদদাতার কাছে দেয়া বিবৃতিতে নির্যাতিতদের মধ্যে অনেকেই জানান, কীভাবে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির স্থানীয় নেতা এবং ক্যাডাররা তাদের নানাভাবে নির্যাতন করে। তারা অনেক হত্যার ঘটনাও উল্লেখ করেন। অভিযোগকারীরা সরকারের কাছে বিচারের জন্য আবেদন জানান।২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পরদিন ২ অক্টোবর সকাল অনুমান ৭টায় বিএনপির ২০/২৫ জন সশস্ত্র ক্যাডার বিদেশ হাজারীর বাড়ি আক্রমণ করে। লাঠি-সোঁটা, গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়ী পেটাতে থাকে বিদেশ হাজারীদের ওপর। উজিরপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি লিখন নিজ হাতে গুলি করে বিদেশ হাজারীর বাম হাতের কনুইতে। সন্ত্রাসী হায়েনার দল বিদেশ হাজারীর মোটরসাইকেল লুট করে। গুরুতর আহতাবস্থায় বিদেশ হাজারী উজিরপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে যান। কিন্তু বিএনপি ক্যাডারদের ইশারা ও নির্দেশে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করেনি। চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে বিদেশ হাজারী চলে যান ঢাকায়। একই সালের ৫ অক্টোবর বিএনপি ক্যাডাররা বিদেশ হাজারীর বাড়ি-ঘর লুট করে। ২০০৭ সালের ৪ জুলাই হতে এখন পর্যন্ত আউয়াল শিকদার ও রাজ্জাক বালী গং বিদেশ হাজারী, তার দুই ভাই দীনেশ হাজারী ও বিক্রম হাজারীর নামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে অন্তত: ৯টি মামলা করে। এসব মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বিদেশ হাজারীরা আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিদেশ হাজারীর ওপর গুলি ও বাড়ি লুটের মামলা নেয়নি পুলিশ। বিদেশ হাজারী আয়েশা বেগম, রাজ্জাক বালী, আউয়াল শিকদারের শ্বশুর খালেক শিকদার গংদের বিরুদ্ধে জমির মালিকানা স্বত্ত¡ দাবি করে উজিরপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন (মামলা নং-৬৯/২০০৭)।বাগেরহাট, এপ্রিল ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)ঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কর্মীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবার কাঁদলেন বাগেরহাটের রামপালের নির্যাতিত এক নারী।

২০০২ সালের ২১ আগস্ট তখনকার ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোটের কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী (৩৫)।২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী খুন, ধর্ষণ, হামলা, লুটপাটসহ সহিংসতা এবং সংখ্যালঘু ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনে শুক্রবার জবানবন্দি দেন ওই নারী। বাগেরহাট সার্কিট হাউসে এই নারীসহ আরো কয়েকজনের জবানবন্দি নেন তদন্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

গত বছরের ৬ মে একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী খুন, ধর্ষণ, হামলা, লুটপাটসহ সহিংসতা এবং সংখ্যালঘু ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে দুই মাসের মধ্যে সরকারকে তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইর্কোটের এমন নির্দেশের পর গত বছরের শেষের দিকে ওই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার।

তদন্ত কমিশনের সদস্য, উপস্থিত নির্যাতিত অন্যান্য নারী-পুরুষ ও সাংবাদিকদের সামনে নিজের ওপর নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেন ওই নারী। তিনি বলেন, বিএনপি সাবেক রামপাল উপজেলা সভাপতি মল্লিক মিজানুর রহমান মজনু ও সদস্য বাশার কাজীর নির্দেশে সন্ত্রাসীরা তাকে রামপাল বাসস্ট্যাণ্ড থেকে ধরে মারধরের পর বিবস্ত্র করে ফেলে। এরপর স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ে নিয়ে বেদম মারধর করে তার চুল কেটে দেয়। ওই সময় রামপাল থানা থেকে পুলিশ এলে ওই দুই নেতা পুলিশদের নিয়ে পাশের চায়ের দোকানে চলে যান। এরপর সন্ত্রাসীরা বিএনপি কার্যালয়েই তাকে সন্ত্রাসীরা ধর্ষণ করে। তিনি কমিশনকে জানান, বাগেরহাট আদালতে এই মামলা চলাকালে জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম ওরফে সিলভার সেলিম তার বাগেরহাটের বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোর করে মীমাংসাপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে আদালতে মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে না পারায় তিনি মামলাটি প্রথমে ঢাকা এবং পরে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন।ওখানে এখন মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।এরপরই বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাগেরহাট-৪ আসনের সাংসদ মোজাম্মেল হোসেন সার্কিট হাউজে এসে তার ওপর হামলার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালের ১১ নভেম্বর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান টুটুলের নেতৃত্বে কশাই আব্দুল হক, সোহেল, শাহনেওয়াজ, ডলারসহ অস্ত্রধারী তাদের একটি সংবাদ সম্মেলনে হামলা চালায়। জোট সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে ওইদিন শহরের আমলা পাড়ায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির মনসুর আলীর বাসায় দলের জেলা কমিটি সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করেছিল। এ সময় তিনিসহ দলের ছয়/সাত জন নেতাকর্মী রক্তাক্ত জখম হন। ছয়জন সাংবাদিকও আহত হন। কমিশনের সামনে মোজাম্মেল হোসেন তার শরীরের ক্ষতস্থান দেখান।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে বাগেরহাটের একটি আদালত মামলাটি খারিজ করে বলে তিনি জবানবন্দিতে জানান।


২০০১ সালের ৭ অক্টোবর রামপালের বর্ণি গ্রামে জোটকর্মীদের মারধরে নিহত গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নূর মোহম্মদ মল্লিকের স্ত্রী হেনা মল্লিকও ঘটনার বর্ণনা দেন। কমিশনের সামনে তিনি বলেন, ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তার স্বামীকে ধরে তার সামনে পিটিয়ে খুন করে। তিনি বাধা দিতে গেলে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে তারা। স্বামীর লাশ দাফনের জন্য খাটিয়া আনতে গেলে স্থানীয় মসজিদ থেকে তাকে খাটিয়া দেওয়া হয়নি বলেও জানান।

জবানবন্দি নেওয়ার সময় বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মংলা) আসনের সাংসদ সৈয়দা হাবিবুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।

তিন সদস্যের কমিশনের অপর দু'জন হলেন- সদস্য সচিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ এবং সদস্য গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক মীর শহীদুল ইসলাম।

তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ বলেন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাগেরহাটে নির্যাতনের চিত্র ছিল ভয়ঙ্কর।

তারা মোট ৭২টি পৃথক ঘটনার লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন তারা। এর মধ্যে ১২টি গণধর্ষণ এবং আটটি হত্যার ঘটনা রয়েছে।

এছাড়া ঢাকায় থেকেও তারা বাগেরহাটের বেশ কিছু ঘটনার কথা জেনেছেন এবং জবানবন্দি নিয়েছেন। যারা কমিশনের সামনে আসতে পারেনি তাদের লিখিত বক্তব্য ডাকযোগে পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি। কমিশনের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাতে পিরোজপুর থেকে বাগেরহাট সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছেন। সকাল ১০টা থেকে তারা নির্যাতিতদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে বিকাল ৪টায় শেষ করেন।


নূর মোহাম্মদ মল্লিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে প্রকাশ্য রাস্তার ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এক দল টানছিল অন্য দল পেটাচ্ছিল। শিশু সোহাগ ও সাজ্জাদকে নিয়ে স্বামীর প্রাণভিক্ষার জন্য পিছু পিছু ছুটছেন হেনা মলি্লক। ক্যাডারদের হাতে-পায়ে ধরে সব সম্পদের বিনিময়ে স্বামীকে বাঁচানোর আর্তি জানিয়ে চলেছেন তিনি। কিন্তু হেনার আর্তিতে মন গলেনি সন্ত্রাসীদের। মৃত্যুর আগে পানি খেতে চেয়েছিলেন নূর মোহাম্মদ। পানির বদলে ক্যাডাররা প্রস্রাব করে দেয় তাঁর মুখে। ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত দেহে স্ত্রী-সন্তানদের সামনেই মারা যান তিনি। এতেও ক্ষান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। তারা একপর্যায়ে হেনাকেও বিবস্ত্র করে ফেলে।... এর পর আর বলতে পারেননি নিহত নূর মোহাম্মদের স্ত্রী। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর সহিংসতার শিকার হেনা মল্লিক গতকাল শুক্রবার বাগেরহাট সার্কিট হাউসে সেদিনের শিশু-কিশোর আজকের তরুণ দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন জবানবন্দি দিতে। ২০০১ সালের নির্বাচনের ছয় দিন পর ৭ অক্টোবর তাঁর স্বামী নূর মোহাম্মদকে হত্যা করা হয়। পুলিশ প্রথমে মামলাটি নিতে রাজি হয়নি। নির্যাতিত পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে রামপাল থানায় মামলা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সে সময়ের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক থানার সামনেই জামায়াত-বিএনপি ক্যাডারদের হামলায় লাঞ্ছিত হন। অবশেষে বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবে মামলা হয়। যা আজও বিচারাধীন।

আর এক আওয়ামী লীগ নেত্রী ছবি রানী তাঁর ওপর পৈশাচিক বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে শুরুতেই কান্না জুড়ে দেন। নির্যাতনের সময় জামায়াত-বিএনপি ক্যাডারদের তোলা ছবি (যা পরে পুলিশ উদ্ধার করে) ও নিজের সারা শরীরে ক্ষতের চিহ্ন দেখিয়ে সাত বছর পরেও তিনি কেবলই কাঁদতে থাকেন। বাড়ি ফেরার পথে প্রকাশ্যে বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁকে স্থানীয় বিএনপি অফিসে ধরে নিয়ে বিবস্ত্র করে মাথার চুল কেটে দিয়ে গোপনাঙ্গে লাঠি-বালি-মাটি ঢুকিয়ে দিয়ে উল্লাস আর ছবি তুলতে থাকে। একপর্যায়ে মৃত ভেবে রাস্তার ওপর তাঁকে ফেলে দিলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ২০০২ সালের ২১ আগস্টের এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা আজও চলছে। আসামিদের প্রায় সবাই এখন জামিনে। তাদের হম্বিতম্বির মুখে নির্যাতিত ছবি রানী আজও শঙ্কিত।

আর কোমরপুরের ঠাকুরবাড়ির অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার শিকার স্বামীহারা-সম্ভ্রমহারা অনিমা ভট্টাচার্য আজও ঠিক করে কথা বলতে পারেন না। তাঁকে একটি চাকরি দেওয়ার কথা সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বললেও সাত বছর পর আজও তা হয়নি। নিদারুণ কষ্টে পঙ্গু পিতাকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনিমা বাগেরহাট সার্কিট হাউসে জবানবন্দি দিতে আসা শত শত মানুষের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন, তাদের কথা শুনছিলেন। নিজের কোনো কথা বলতে পারেননি।

মোরেলগঞ্জের বৃদ্ধ কাঠমিস্ত্রি রতিকান্তকে ওই নির্বাচনের পরদিন প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে হত্যার পর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করে জামায়াত-বিএনপির জয়ধ্বনি দিয়েছিল ক্যাডাররা। সে কথা বলতে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি বলে ওঠেন, সে ঘটনার বর্ণনা করা যায় না। তিনি নিজে সংবাদ সম্মেলনে বর্বর হামলার শিকার হন। যেখানে সাত সাংবাদিক ও পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতাও জখম হন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনাগুলোর সরেজমিনে তদন্তে সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন নির্যাতিতদের জবানবন্দি শুক্রবার নিতে বাগেরহাট সার্কিট হাউসে আসেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ সময় কমিশনের অপর দুই সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন এবং মীর শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বাগেরহাট সদর আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা ও বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার হাবিবুন নাহার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান খানসহ নির্যাতিত শত শত মানুষ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাগেরহাটের সেই ভয়াবহ নির্যাতনের কাহিনী সে সময় দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়।

2 comments:

  1. WHo has given u permission to use his Image? He is my father. Don't use this kind of image to gain some public attention. Delete this image or we will take legal action regarding this if you don't do so.

    Sudipa Muhury
    Daughter of principle Gopal Krishna Muhury

    ReplyDelete