Pages

Wednesday, May 16, 2012

স্বজনদের মৃত্যুদৃশ্যের বর্ণনা দিলেন বিমল শীল

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা বেগমের আদালতে প্রথম দিনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গতকাল দুপুর ১২টা ২৫ মিনিট থেকে বেলা একটা পর্যন্ত আংশিক সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী বিমল শীল। এ সময় তিনি হামলার বিবরণ দেন এবং স্বজনদের মৃত্যুদৃশ্যের বর্ণনা করেন। সাক্ষ্য অসমাপ্ত রেখেই দিনের কার্যক্রম শেষ হয়। ২৩ মে সাক্ষ্যের পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত তেজেন্দ্র লাল শীলের ছেলে বিমল শীল সাক্ষ্যে বলেন, ‘২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে ঘটনাস্থল বাঁশখালীর সাধনপুরের শীলপাড়া গ্রামের বসতভিটায় আমিসহ মোট ১২ জন ছিলাম। ঘরটি মাটির দেয়ালঘেরা, টিনের ছাউনি ও দুই তলাবিশিষ্ট।’ সাক্ষ্যে বিমল শীল জানান, ঘটনার রাতে ঘরের নিচতলায় পাঁচজন ও দ্বিতীয় তলায় তিনিসহ সাতজন ছিলেন। সাক্ষ্যে তিনি বলেন, রাতের খাওয়া শেষে পরিবারের সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে আনুমানিক ৪০ জনের একটি দল দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। দরজা ভাঙার সময় আমার বাবা নিচের তলায় থাকা সবাইকে নিয়ে দুই তলায় উঠে যান এবং ঝাঁপ ফেলে দেন। সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকলেও দুই তলায় ওঠার চেষ্টা করেনি।’ বিমল শীল বলেন, ‘আমি ওপর (দ্বিতীয় তলা) থেকে সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী বলে চিৎকার করলে পাড়ার কিছু লোক এগিয়ে আসে। তখন সন্ত্রাসীরা দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং এতে প্রতিবেশীরা ভয়ে চুপ হয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসী ও প্রতিবেশী কারও কোনো আওয়াজ পাচ্ছিলাম না।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে দাহ্য পদার্থ দিয়ে সন্ত্রাসীরা ঘরের ভেতর নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে আমরা টের পাইনি। এরপর সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে গিয়ে নিচতলার সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।’ 
আগুন থেকে নিজের রক্ষা পাওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিমল শীল সাক্ষ্যে বলেন, ‘মাটির দোতলার ছাদ নিচে ধসে পড়ল। আমার মা, বাবা, ভাই, বোনসহ ১১ জন অগ্নিদগ্ধ হচ্ছিল। আমি ছোট একটা জানালা দিয়ে বাইরে লাফিয়ে পড়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাই। এতে আমার ডান পা ভেঙে যায়। ভাঙা পা টেনে নিয়ে ধানখেতে ঢুকে পড়ি। পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাকে এক ঘণ্টা পর ধানখেত থেকে উদ্ধার করে।’ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আগে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষ্য স্থগিত রাখার আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে দেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় হাজতে থাকা তিনজন এবং জামিনে থাকা ১৬ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। প্রসঙ্গত, ঘটনার আট বছর পর ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির এএসপি হ্লা চিং প্রু আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালত ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ আগের ধারা বাদ দিয়ে নতুন ধারায় অভিযোগ গঠনের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এরপর গত ১৯ এপ্রিল ৩৭ জন আসামির বিরুদ্ধে ‘সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে খুন’—এর অভিযোগ আনা হয়। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় ঘটনার অন্যতম আসামি বিএনপির নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি।

No comments:

Post a Comment