Pages

Wednesday, May 16, 2012

ফিরে আসার ঘোষণা সুরঞ্জিতের




তদন্ত কমিটি কোনো ‘দোষ’ খুঁজে না পাওয়ায় ‘যাত্রাবিরতি’ কাটিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আবারো রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলে তিনি তা নেবেন। 


বুধবার সকালে রাজধানীর ঝিগাতলায় নিজের বাসার আঙিনায় এক সংবাদ সম্মেলনে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত বলেন, “আমি নির্দোষ। নিরপক্ষে ও সুষ্ঠু তদন্তে তা স্পষ্ট হয়েছে। এক মাস এক দিন পর এখন আমি আবার রাজনীতিতে ফিরে যাব, জনসেবায় ফিরে যাব।” 

রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে আবার ফিরে যাবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “মন্ত্রিত্ব দেওয়ার এখতিয়ার তো সরকারের। প্রধানমন্ত্রী যদি আবার এ দায়িত্ব দেন; অতীতে যেমন পিছপা হইনি, এখনো পিছ পা হবো না।” 

ব্রিফিং শেষ করে বেলা ১১ টার দিকে পতাকাবাহী গাড়িতে করে সিলেটে নিজের নির্বাচনী এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। 

গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে পিলখানায় সুরঞ্জিতের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাওয়ার পর এটি ছিল সাবেক রেলমন্ত্রীর তৃতীয় সংবাদ সম্মেলন। 

গত ১৬ এপ্রিল রেলভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এপিএসের কেলেঙ্কারির দায় নিজের কাঁধে নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন সুরঞ্জিত। সে সময় তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিতে এটা তার ‘যাত্রাবিরতি’। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবার ফিরে আসবেন তিনি। 

সুরঞ্জিত পদত্যাগপত্র দেওয়ার পরদিন সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। আর রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাঁধে। গত বছরের ২৮ নভেম্বর একইসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন তারা। 

ওমর ফারুকের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ১৩ মে সচিবের কাছে প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, কেলেঙ্কারির ঘটনায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোনো সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি। 

সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত দাবি করেন, নির্দোষ হওয়ার পরও গণতন্ত্রের ইতিহাস ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ‘ইতিবাচক ধারা ফিরিয়ে আনতে’ সে সময় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। 

“আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন ইতিহাস নেই। ভোগ ছাড়া ত্যাগের রাজনীতি নেই। আমি সেদিন এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম গণতন্ত্রকে সুসংহত করতেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারেই এটা সম্ভব হয়েছে।” 

আগামীতে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাদেরও একই পথে হাঁটা উচিত বলে মনে করেন সাত বার নির্বাচিত হওয়া এই প্রবীণ সাংসদ। 

সুরঞ্জিত বলেন, “আমি পদত্যাগ করেছিলাম যাতে তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। বলেছিলাম- যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত না হব, ততোক্ষণ এ দায়িত্ব নয়।” 

“পদত্যাগ করার পর দীর্ঘ এক মাস কোনো রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যাইনি। বাসায় ছিলাম আমি, এক নিভৃতচারী।” 

রেলের এই তদন্ত অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্যা। 

“তদন্ত কমিটি বলেছে- ওই ঘটনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা ছিল না। মন্ত্রী হিসেবে আমি নির্দোষ।” 

সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তকে নিয়েও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। 

তিনি বলেন, একটি ইংরেজি দৈনিক সৌমেনের গেটওয়ে লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে বিতর্ক তোলার পর অন্যরা তা যাচাই না করেই সংবাদ পরিবেশন করেছে। 

“আমার ছেলে শুধু মন্ত্রীপুত্র বলে নয়; অনেকেই রয়েছেন যারা এ লাইসেন্স পেয়েছেন। ওই পত্রিকাটি যা করেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আমার ছেলে রাজনীতি করেনি, আগামীতেও করবে না। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য, আমার রাজনৈতিক সুনাম নষ্টের জন্য এটা (প্রতিবেদন) করা হয়েছে।” 

যারা মানিলন্ডারিং মামলায় জড়িত, যারা কালো টাকা সাদা করে দায়িত্বশীল পদে থাকেন- তাদের নিয়ে সমালোচনা ‘না করায়’ সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোর নৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুরঞ্জিত। 

৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে সুরঞ্জিত বলেন, জনগণ তাকে ‘মাথা খাঁড়া করে সোজা কথা বলার লোক’ হিসাবেই চেনে। তিনি জনগণের জন্য কাজ করেন বলেই সাতবার নির্বাচিত হয়েছেন। মাত্র ৫৫ সেকেন্ডেই এ অর্জন শেষ হওয়ার নয়। 

এই দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাকে ঝুঁকি নিতেও পারঙ্গম করে তুলেছে বলে উল্লেখ করেন সুরঞ্জিত। 

“আমি জানতাম, নিজেদের বিবেকের কাছে আমি অত্যন্ত পরিষ্কার। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে দিলে তো হবে না। আমি একেবারেই নির্দোষ। 

“সাময়িকভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এখন আমি জনগণের মাঝে ফিরে যাচ্ছি”, যোগ করেন তিনি। 

এই সময়ে অনেকে ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নির্দয়ভাবে’ তাকে আঘাত করেছেন বলেও উল্লেখ করেন সাবেক রেলমন্ত্রী। 

No comments:

Post a Comment