জরাসন্ধ চন্দ্রবংশীয় মগধরাজ বৃহদ্রথের পুত্র। বিপ্রচিত্তি নামক দানব পৃথিবীতে জরাসন্ধ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি কাশীরাজের দুই যমজ মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর যৌবন গত হওয়ার কারণে, ইনি সন্তান লাভে বঞ্চিত হন।পরে সন্তান কামনায় ইনি চণ্ডকৌশিককে আরাধনা করেন। আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে চণ্ডকৌশিক রাণীদের দুটি মন্ত্রপূত আম উপহার দেন।বৃহদ্রথ এই ফলটি সমান দুইভাগে ভাগ করে উভয় স্ত্রীকে দান করেন। যথাসময়ে রানীরা দুটি অর্ধাঙ্গের সন্তান প্রসব করেন। এইরূপ সন্তান দেখে রানীরা ভীত ও দুঃখিত হয়ে তাঁদের দাসীর সাহায্যে এই সন্তানের অংশ দুটি শ্মশানে রেখে আসেন। এই সময় জরা নামক এক রাক্ষসী এই দুটি খণ্ডকে কৌতুহলবশত একত্রিত করলে। খণ্ড দুটি একত্রিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে এবং জীবিত হয়ে উঠে। এরপর শিশুটি কাঁদতে শুরু করলে রাজা ও রানীরা শ্মশানে এলে- জরা নারী মূর্তি ধরে বৃহদ্রথের হতে সন্তানটি তুলে দেন। এই সময় জরা ভবিষ্যৎ বাণীতে বলেন যে- এই শিশুকে জন্মের মতো দ্বিবিভক্ত করলেই এর মৃত্যু হবে। জরা রাক্ষসী এই শিশুর দেহ যুক্ত করেছিল বলে- এঁর নাম রাখা হয় জরাসন্ধ।
জরাসন্ধ বড় হলে, বৃহদ্রথ এঁর হাতে রাজ্য সমর্পণ
করে রানীদের নিয়ে বনে চলে যান। জরাসন্ধ
তাঁর দুই মেয়ে অস্তি ও প্রাপ্তিকে কংসের সাথে বিবাহ দেন। শ্রীকৃষ্ণের
হাতে কংস নিহত হলে- ইনি এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মোট আঠারবার মথুরা আক্রমণ করেন
এবং একবার কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য গিরিবজ্র থেকে একটি গদা উনিশবার ঘুরিয়ে মথুরার
উদ্দেশে নিক্ষেপ করলে তা উনিশশত যোজন দূরে পতিত হয়।এইভাবে বার
বার জরাসন্ধের আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ জরাসন্ধকে হত্যা করার জন্য ভীম ও অর্জুনকে
সাথে নিয়ে জরাসন্ধের কাছে আসেন। উল্লেখ্য, এই সময় তিনজনই ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ
নিয়েছিলেন। জরাসন্ধ এই তিনজনের হাতে অস্ত্রব্যবহারের চিহ্ন
দেখে প্রকৃত পরিচয় জানতে ইচ্ছা করলে, কৃষ্ণ
তাঁদের প্রকৃত পরিচয় দেন। এরপর জরাসন্ধের সাথে ভীমের মল্লযুদ্ধ হয়। ভীম
একধিকবার জরাসন্ধকে পরাজিত করে শরীর বিচ্ছিন্ন করেন, কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে
উক্ত শরীর জোড়া লেগে জরাসন্ধ জীবিত হয়ে উঠতে থাকেন। এরপর
কৃষ্ণের ইশারায় ভীম বিচ্ছিন্ন হওয়া দেহকে মিলিত হওয়ায় বাধা সৃষ্টি করলে- জরাসন্ধের
প্রকৃত মৃত্যু ঘটে।
No comments:
Post a Comment