রাম জন্মস্থান অযোধ্যাতে অবস্থিত বাবরী মসজিদের কথা আমরা কে না জানি।যে মসজিদ নিয়ে রাজনীতি করা যায় সেটা সবাইকে জানানো হয় কিন্তু উত্তর প্রদেশের মথুরাতে অবস্থিত কৃষ্ণ জন্মস্থানে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে নির্মিত কেশব দেও মন্দিরটি কি অবস্থায় আছে আপনারা জানেন কি। গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের মত এই মন্দিরটি নিয়েও রাজনীতি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেকুলার সাজা রাজনীতিবিদগণ। তাই সোমনাথ মন্দিরের মত এই মন্দিরটিরও রক্তাক্ত কান্নাচাপা দীর্ঘশ্বাসে বিষাক্ত ইতিহাস আমাদের কে শোনায় না সেকুলার দাবীকৃত মিডিয়া। এই ইতিহাস জানালে যে ধর্মনিরেপক্ষ সেজে থাকা তোষণবাজ রাজনীতিবিদগনের গদি নিয়ে টান পড়বে।এর আগে অযোধ্যার বাবরী মসজিদ নিয়ে করা রাজনীতির গুমোর ফাস করেছিলাম আর আজ শোনাব শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান মথুরার কেশব দেও মন্দিরের রক্তচাপা ইতিহাস।
ভারতের মথুরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে নির্মিত কেশব দেও মন্দিরটি সারা বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান।কিন্তু মজার ব্যপার হল কেশব দেও বা কেশব দেব মন্দিরটি মথুরার আদি কেশব দেও মন্দিরের পাশে অবস্থিত।কেশব দেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেকটি নাম।
জনপ্রিয় ধারনা হল, ৫০০০ হাজার বছর আগে এখানে মন্দির স্থাপন করেন শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র শ্রীবজ্রনাভ।পাথরে খোদিত ব্রাহ্মীলিপি থেকেও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় ।পরবর্তীতে ৪০০ সালে গুপ্ত সম্রাজ্যের দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত একটি সুবিশাল মন্দির নির্মাণ করেন। বলা হয়ে থাকে এই মন্দিরের সৌন্দর্য আর মহত্ব কোন হাতে আঁকা ছবি বা লিখিত বর্ণনার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
মন্দিরটি গজনির সুলতান মাহমুদ ১০১৭ সালে প্রথম ধ্বংস করে।এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীতে হতবাক ছিল মুসলিমরাও এবং এই মন্দিরকে তারা দেবতাদের নির্মাণ বলে সন্দেহ করত। যেমন - ১০১৭ সালে মুহম্মদ গজনবীর লিখিত রের্কড থেকে বহু তথ্য জানা যায় । তিনি লিখেছিলেন , "শহরের প্রান্তে অবস্থিত অভূতপূর্ব মন্দির নিশ্চয়ই কোন মানুষ নির্মাণ করেননি । এটি নিশ্চয় (দেবতারা বা ফেরেস্তারা ) নির্মাণ করেছেন ।" লাল পাথরের জুমা মসজিদ, বিশালাকার মন্দির পাশাপাশি। মন্দিরের সিলিং ও দেয়ালে দেখএ যাবে এখনো ক্ষত বিক্ষত হিন্দুপুরাণের নানান আখ্যান।’
পাথরে খোদিত লিপি থেকে জানা যায়,তৃতীয়বারের মত এই মন্দিরটি আবার তৈরি করেন জাজ্জা বিক্রম সাম্ভাত ১২০৭ সালে রাজা বিজয়পাল দেবের শাসন আমলে এবং মন্দিরটি আবারও ধ্বংস হয় সিকান্দার লোদীর হাতে।যেন এক পক্ষের কাজ শুধু ধ্বংস করা আরেক পক্ষের কাজ ধংসের মাঝে সৃষ্টির মহত্ব জানানো। বলা হয়ে থাকে, লোদীর হাতে ধ্বংসের পূর্বে ১৬ শতকে শ্রীচৈতন্য এই মন্দিরটি পরিদর্শন করেন।
রাজা বীরসিং দেও তৎকালীন ৩৩ লাখ টাকা খরচ করে মন্দিরটি চতুর্থবারের মত গড়ে তোলেন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসন কালে।কথিত আছে,এটি ছিল তৎকালীন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দর মন্দির। সমগ্র ভারতবর্ষের সকল হিন্দু অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন মন্দিরটিকে। জন মানসে পরবর্তী মুঘল সম্রাট বলে যাকে বিবেচনা করা হত সেই দারা শিকোহএকটি খোঁদাই করা বেড়া সদৃশ পাথর উপহার দিয়েছিলেন যেটি প্রকটিত মূর্তির কাছেই স্থাপন করা হয়েছিল। দর্শনার্থীরা এই বেড়া সদৃশ পাথর পর্যন্ত যেতে পারতেন এবং তাদের দর্শন সম্পন্ন করতেন।
কিন্তু ১৬৬৯ সালে এই মন্দির ধ্বংস করার নির্দেশ দেয় হাজার হাজার মন্দির ধ্বংসকারী ইতিহাসের নিন্দিত-ঘৃণিত আওরঙ্গজেব।শুধু ধ্বংস করেই রক্ত পিয়াসা মেটেনি তার। ১৬৬৯ সালে কেশব দেও মন্দিরের স্থানে একটি ঈদগাহ নির্মাণ করে ভেবেছিল ভারতবর্ষ থেকে হিন্দুর নাম নিশানা মুছে ফেলা হবে।
ব্রিটিশ শাসনামলে এই স্থানটি ছিল ব্রিটিশ অধিভুক্ত। ১৮১৫ সালেইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি একটি নিলাম অনুষ্ঠান আয়োজন করে। নিলাম থেকে কাশীর রাজা পান্তিমল এই স্থানটি কিনে নেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল এই স্থানে একটি সুবিশাল মন্দির স্থাপনের। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়।পরিহাসের বিষয় এই স্থানের মালিকানা নিয়ে মথুরার স্থানীয় মুসলিমদের সাথে তিনি বিবাদে জড়িয়ে পরেন এবং তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যদিও আদালত শেষ পর্যন্ত কাশীর রাজার পক্ষেই রায় দেন। ১৯৪৪ সালে মদন মোহন মালভ্য নামে এক সজ্জন ব্যক্তি কাশীর রাজার উত্তরাধিকারের কাছ থেকে মাত্র ১৩ হাজার টাকায় এই স্থান কিনে নেন। পূর্বের মালিক এই টাকা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন আদালতের খরচ নির্বাহের জন্য।
মালভ্যজি এই মন্দিরের শুরু দেখে যেতে পারেননি। ১৯৫১ সালে তিনি একটি ট্রাস্ট স্থাপন করেন এবং ট্রাস্টের নিকট জমি হস্তানর করেন। তাঁর মারা যাবার পরে বিখ্যাত বিড়লা কোম্পানির যুগল কিশোর বিড়লা মন্দির নির্মাণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও আরেক বিখ্যাত ডালমিয়া গ্রুপের জয়দয়াল ডালমিয়ার ভূমিকাও স্মরনযোগ্য।এই দুই পরিবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১৫ মিলিয়ন রুপী ব্যয়ে অনেক সংগ্রামের পর ১৯৬৫ সালে ঐতিহাসিক এই মন্দিরের কাজ সম্পন্ন হয় কৃষ্ণ জন্মস্থান মথুরাতে।
মন্দিরের পাশেই নির্মাণ করা হয় একটি একটি ছোট ঘর যার আদল অনেকটা সেই জেল কুঠরির মত যেখানে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহন করেন। এটি নির্মাণের জন্য ১৯৫৩ সাল থেকে স্বামী অখণ্ডনন্দের তত্বাবধানে খনন কাজ শুরু করা হয়। ১৯৮২ সালে এই প্রতীকী জেল গৃহের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
এই মন্দির নির্মিত হলেও আওরঙ্গজেব নির্মিত ঈদগাহ এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদ এখনও টিকে আছে আদি কেশব দেও মন্দিরের স্থানে।এখনও সেখানে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা নামাজ পড়েন ঈদ উতসব পালন করেন। সেখানে একটি আচরও লাগতে দেয়নি ভারতের হিন্দুরা।বিশ্বের বুকে এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন আর একটিও নেই- একথা হলফ করে বলা যায়। যে উগ্র মতাদর্শের অনুসারীরা বারেবারে আমাদের পবিত্র স্থান ভূলুণ্ঠিত করেছে তাদের মসজিদ সেই আমরাই আবার রক্ষা করে চলেছি।কিন্তু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, দুনিয়ার অন্যকোন জাতি বা খোদ মুসলিমদের সাথে এমন করা হলে তারা কি করতেন ওই ধ্বংসকারীদের সাথে।
আরও জানার জন্য পড়তে পারেন https://en.wikipedia.org/wiki/Kesava_Deo_Temple
No comments:
Post a Comment