Pages

Saturday, September 7, 2013

বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকঃ ইতিহাসের সংগে প্রতারণা



বাংলাদেশি হিন্দুর ইতিহাস শিক্ষার পরিবেশপরিচিতি সমাজ’ বা অন্যান্য বোর্ড বইয়ে হিন্দুদের যেভাবে উপস্থাপনা করা হয় তাতে যেকোন হিন্দু শিশু পূর্ব পুরুষের লজ্জায় লজ্জিত হয়ে জীবনের প্রথমেই বিশাল ধাক্কা খায় আর পশ্চিম বঙ্গের বাম সরকার তো ভোট ব্যাঙ্করক্ষায় সারকুলার ই দিয়ে দিয়েছে,’Muslim rule should not attract any criticism. Destruction of temples by muslim invaders and rulers should not be mentioned’.Circular no.syl/89/1;Dated 28.04.1989).Ministry of education,west Bengal.

অগত্যা ভরসা উইকিপিডিয়া,encyclopedia তথাইন্টারনেট এবং নিরপেক্ষ বই কিন্তু এ ব্যস্ত যুগে অতো মনোযোগী পাঠক হওয়া কঠিন তাই কজন বাঙ্গালি হিন্দু আজ জানে যে ইংরেজ দের আগে প্রায় পুরো ভারত বর্ষ ছিল হিন্দু মারাঠাদের অধীনে আমার এ লেখায় আমি চেষ্টা করব সব তথ্যের লিংক দিতেলেখাটা দুই ভাগে বিভক্ত  একভাগে খুব সংক্ষেপে ইতিহাস বর্ণনা আর আরেক ভাগে হিন্দু জাতিগুলর সামরিক পরিচয় দান

হিন্দুর সামরিক ইতিহাস বলা শুরু করতে চাই তখন থেকে যখন থেকে তা বাইরের সভ্যতার সাথে দীর্ঘ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেতাই শক,হুন,গ্রীকদের সাথে সংঘর্ষ এ ক্ষেত্রে বাদ(শক,হুনরা আস্তে আস্তে ভারতে মিশে গিয়েছে) ৬৩৪ সালে ইরান বিজয় এর পর ৬৩৮ সাল থেকে হযরত উমার এর নির্দেশে আরবরা বেশ কয়েক বার সিন্ধু আক্রমন করে পরাজিত হয়
অবশেষে প্রায় আশি বছর পর ৭১৫ সালে তারা সফল হয়,কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে মুস্লিম দের সাথে দীর্ঘ সংঘর্ষ শুরু হয় হিন্দুদেরসিন্ধুর পর একে একে আরবরা আক্রমন করে পাঞ্জাব,রাজপুতানা,গুজ্রাটএবং যথারীতি আরবরাই পরাজিত হয়এরা উপমহাদেশে সামরিক ভাবে মোটামুটি ব্যর্থতারপর প্রায় আরাইশ’ বছর কেটে গেলোমুসলিমদের প্রতিনিধি হয়ে আসে তুর্কীরা৯৮০ সাল থেকে আসা শুরু করে তারাএদের হাতে হিন্দুরা হারায় আফগানিস্তান,পাঞ্জাব

এসব যুদ্ধে পরাজয়ের চেয়ে বড় যে ঘটনা ঘটে তা হল হিন্দুদের অদ্ভুত কিছু সামরিক নিয়ম মধ্যপ্রাচ্যের মানুষরা লক্ষ্য করেযেমন সূর্যাস্তের পর যুদ্ধ না করা,যুদ্ধে জয় এর চেয়েও fair policy এর উপর বেশি জোর দেয়া আজকাল চিন্তারও বাইরেএ দুইটি বিষয়কে ব্যবহার করে পরপর দুটো বড় জয় পায় তুর্কীরা ৯৮০ সালে রাতের বেলাই অতর্কিতে ঘুমন্ত আফগান হিন্দুদের হত্যা করে তুরকিরা হিন্দুরা হারায় আফগানিস্তান ও পাঞ্জাবএরপর আরও কিছু জায়গা আক্রমন করে তুর্কিরা পরাজিত হয়আবার দুইশ’ বছরের বিরতি১১৮৭ সালের দিকে এক সাবেক হিন্দু মুহাম্মাদ গৌরি(বাংলাদেশে লেখে ঘুরি) গুজ্রাট আক্রমন এর মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠে এই লোক যোদ্ধা হিসেবে ছিল তৃতীয় শ্রেণীর গুজরাটে পরাজিত হয়ে ইনি আবার পরাজিত হন বিখ্যাত রাজপুত বীর পৃথ্বীরাজ চৌহানের হাতে

কিন্তু এ সময় পৃথ্বীরাজ একটি ভয়াবহ ভুল করা বসেন আর তা হল পরাজিত গৌরিকেপ্রানভিক্ষা দেয়া ও নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে দেয়াএর উপযুক্ত মূল্য তিনি পান যখন গৌরি আবার পরের বছর দুশ’ বছর আগের তুর্কিদের মত রাতের বেলাই আক্রমন করেনকিন্তু রাজপুতরা যোদ্ধা হিসেবে ছিলো মারাত্মক তাই সে অবস্থায় যুদ্ধ করেই তারা চলে যায় জয়ের কাছেতখন দ্বিতীয় ভুলটী করেন পৃথ্বীরাজএ সময় গৌরি তাকে প্রস্তাব দেন তার সেরা যোদ্ধা কুতুব আইবাক এর সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধেরপৃথ্বী রাজী হনএবারও পৃথ্বীই জয় এর পথেকিন্তু তখন কৌশলেকুতুব নিয়ম ভঙ্গ করে অন্য সৈন্যদের দ্বারা পৃথ্বীরাজকে গ্রেফতার করেনতাকে অন্ধ করে দেয়া হয়জীবনের শেষ পর্যায়ে গিয়ে প্রতিশোধ নেন এই যোদ্ধাঅন্ধ পৃথ্বী চালাকি করে তীর চালিয়ে হত্যা করেন গৌরিকে চির প্রতারিত এই যোদ্ধা আজো তাই ভারতের মহান বীরদের অন্যতমযাই হোক এর পরে সময় গেছে খুব দ্রুতএই প্রায় চারশ’ বছর উত্তর ভারতে হিন্দুরা আর খুব বেশি মাথা তুলে দাড়াতে পারে নি গজনীর সুলতানের আল্ক্রামন,হিন্দুদের উপর গনহত্যা,সোমনাথ মন্দির ধ্বংস এসবের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি তারা

বাংলার জনগন দেখে লক্ষ্মণ সন এর কুৎসিত পলায়ন কিন্তু এ সময় ভারতের অন্যান্য জায়গায় ছিল ভিন্ন পরিস্থিতিপ্রতিবেশি উড়িয়া রাজা নর সিংহ ছিন্নভিন্ন করে দেন মুসলিমআক্রমনআর দক্ষিন ভারতে ছিলো বিজয় নগর সাম্রাজ্যএদের বিশিষ্টতা হল প্রথম তারাই যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছুঁড়ে ফেলেন সমস্ত sentiment শত্রুপক্ষের রসদ দেয়া বেসামরিক লোকদের আক্রমন থেকে শুরু করে সামরিক কৌশলে এরা ছিল তুর্কিদের(অটোমানদের) বা European crusader দের সমকক্ষএর ফলে তারা প্রায় আড়াইশ’ বছর স্বাধীন থাকেতবে ১৫৬৫ সালে পরাজিত হওয়ার পর তারা প্রত্যক্ষ করে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা এ দিকে ১৫২৬ সালে ভারতে আসে মুঘালরাতাদের শুরুর দিককার যুদ্ধ গুলো ছিলো মুসলিমদের সাথেই তারা প্রথম যে হিন্দুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন তিনি হিমু,যদিও তার বাহিনি ছিল আফগানদের নিয়ে যাই হোক তাৎপর্যপুর্ন ভাবে মুঘালদের প্রথম বাধা দেন রাজপুতরা নিজেদের এলাকা রাজস্থানে তারা ছিল চির স্বাধীনরাজপুতরা অসাধারণ যোদ্ধা তা আগেও বলেছিতবে তাদের সমস্যা ছিলো যে তারা কখনই এক হয়ে লড়াই করেনি বলা হয়ে থাকে রাজপুতরা এক থাকলে ভারত ত ভারত পুরো পৃথিবী জয় করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হতো

আর তাই মুঘালরা রাজপুতদের জন্য নিয়েছিল ‘divide and rule policy’. মুঘালদের সাথে লড়াই এর সময় প্রায় সব সময় তাদের সৈন্য সংখ্যার অনুপাত থাকত ৫:১ যাই হোক মুঘালদের সাথে রাজপুতদের সখ্যতাই ছিলো বেশি মুঘাল আমল ই ছিলো ভারতে মু্সলমানদের শ্রেষ্ঠ সময়তবে এখন উত্তর ভারতের কিছু রাজ্যের কথা বলা দরকার কয়েকটি জায়গা যেমন আজকের নেপাল,হিমাচল প্রদেশ,উত্তরাখণ্ড এ মোটামুটি বিশাল এলাকা ছিলো চির স্বাধীনঅসংখ্য বার মুঘাল,আফগান,তুর্কিদের পরাজিত করে তারাচির যোদ্ধা এখান কার মানুষরা এখনও যুদ্ধেপারদর্শী(গুর্খা,জাঠ ইত্যাদি)  এ ছাড়া উত্তরপূর্ব ভারতের বিশাল অহোম রাজশক্তি ও কখনই মুসলিম রাজত্বের অধীনে আসে নি যাই হোক শাহজাহান এর পর সিংহাসনে তখন আওরঙজেব
এ সময় ভারতে উথান ঘটে এমন এক জাতির যা হয়ে উঠেছিলো হিন্দুদের পুনরুথনের মূল শক্তি জাতিটির নাম মারাঠা জাতিটির অধিনায়ক ছিলেন খাটো কিন্তু শক্তিশালী একজন মানুষ প্রচণ্ড মেধাবী এই মানুষটি নিয়ে আসেন নতুন নতুন সামরিক কলা-কৌশলআধুনিক যুগে পুরো পৃথিবীতে প্রথম সূচনা করেন গেরিলা পদ্ধতিরমারাঠা স্বাধীনতা আন্দোলন(১৬৮১-১৭০৭)শুরু হয়ে যায় ঘুম চলে যায় মুঘালদেরতবে শিবাজীর মূল কৃতিত্ব আরেক জায়গায়আন্দোলন কে তিনি শুধু মারাঠাদের জন্য না রেখে ঘোষণা করেন সমস্ত হিন্দুদের জন্য হিন্দু স্বরাজ্যপ্রতিষ্ঠার স্বল্পায়ু শিবাজী জীবিত থাকাকালীন জয় করেন দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের অনেক্টাতার মৃত্যুর পর দিন দিন মারাঠা সাম্রাজ্য বাড়তেই থাকে১৭০৭ সালে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয় মুঘালরা যা ছিল ভারতে একটি প্রক্রিয়ার শুরু আর তা হলো চূড়ান্ত ভাবে মুসলিমদের ক্ষমতা চ্যুত করা এরপর একে একে মারাঠি গ্রেট ছত্রপতি শাহু,ধানাজীযাদব,ঘোড়পারে,বাজি রাও ক্রমশ পুরো ভারতের(india,Pakistan,bangladesh)প্রায় ৮০ ভাগ মারাঠিদের অধীনে এনে দেনউত্তরে পেশাওয়ার থেকে দক্ষিনে তামিলনাড়ু পর্যন্ত ছিলো সাম্রাজ্যএ সময়ই ভারতে মুস্লিদের অন্তিম সময় বলা হয় এ সময় মুঘাল শাসন ছিলো শুধু মাত্র দিল্লি শহরে আর সেখানেও তিনি ছিলেন মারাঠা অধীনে

১৭৫৬ সালে পাঞ্জাবকে স্বাধীন করে মারাঠারা১৭৩৮ থেকে ১৭৪৬ পর্যন্ত ছয় বার বাংলা আক্রমন করে নবাবকে পরাস্থ করে তারাযার ফলে বাংলার নবাব ও আর স্বাধীন ছিলো নাবাংলা পরিনত হয় মারাঠাদের vessel উপনিবেশে ১৭৫১ সালে নবাব আলিবর্দির সাথে চুক্তি হয় মারাঠাদের যে নবাব বছরে ১২ লাখ টাকা মারাঠাদের দেবেন এ ছাড়া উড়িষ্যা ও মারাঠাদের দিয়ে দিতে হয়বিনিময় আর বাংলা আক্রমন করে নি তারাএ সময় থেকে বিশাল ভারতবর্ষে মুসলিমরা ক্ষমতায় ছিল মাত্র দশ ভাগ জায়গায়তার মধ্যেও প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন নবাব ছিলেন কেবল হায়দ্রাবাদের নিজাম এভাবে আসে ১৭৬১ সালআগের দুই বার আফগান সেনাপতিআব্দালি ও রোহিলা নবাবকে পরাজিত করলেও পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধে সাহায্য হীন(জাঠ,রাজপুত কেউ সাহায্য করে নি তাদের)মারাঠারা হেরে যায়রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের সৌজন্যে এ কথা আমরা সবাই জানিকিন্তু যা জানিনা তা হল এ যুদ্ধের ফলাফল ও পরবর্তী ইতিহাস

এ যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হলে মারাঠা সাম্রাজের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়দীল্লির উপর অধিকার হারায় মারাঠারাযুদ্ধে আফগানরা জিতলেও তাদের এত বেশি ক্ষতি হয় যে তারা দীল্লি ছেড়ে পালায় শুধু তাই নয় সেনা বাহিনি ভেঙ্গে পড়ায় আফগান সাম্রাজ্য এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে অল্প কিছুদিন পর শিখ আক্রমনে তা চুড়ান্ত পরিণতি বরণ করে দশ বছর পর মাধব রাও পেশওয়ার নেতৃত্বে আবার উত্তর ভারত দখল করে মারাঠারা পানি পথের যুদ্ধের ক্ষতি সুদে আসলে উসুল করে নেয় মারাঠাএ সময় আরেক জন মারাঠি গ্রেট ছিলেন মহতজী সিন্ধেপানি পথের দুই চরিত্র রোহিলা নবাবকে ও অযোধ্যার নবাবকে তিনি পরাজিত করেন এ ছাড়া এ সময় মারাঠিদের সাথে যুদ্ধ হয় টিপু সুলতানের যিনি প্রতিবারই পরাজিত হন

এ সময় ব্রিটিশদের সাথে তিনটি যুদ্ধে জড়ায় মারাঠারা যার প্রথম দুইটিতে জিতলেও শেষ যুদ্ধে মারাঠারা হেরে যায়১৮১৮ সালে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মারাঠিরা ছিল ভারতের এক মাত্র প্রধান শক্তিহিন্দুদের সামরিক ইতিহাসে একটা বিষয় দেখা দরকার ,তা হল এই যে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের লড়াই কখনই সাধারন মুস্লিম জনগণের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে ছিল নাছিল অত্যাচারি শাসকদের বিরুদ্ধে যারা নিজদেশে পরবাসী করে তুলেছিল হিন্দুদেরতাদের উপর আরোপ করেছিল জিজিয়া ইত্যাদি উদ্ভট করঅসংখ্য হিন্দু মন্দির(>১০০০০) ভেঙ্গে হিন্দুদের ধরমান্তকরনে বাধ্য করেছিলকিন্তু সর্বভূতে ঈশ্বরদর্শী হিন্দুকখনই নিজেদের সংগ্রামকে পরের উপর অত্যাচারে পরিণত করে নিএখানেই হিন্দুত্বের জয়

## 
লিখেছেন নচিকেত প্রপাঠক


No comments:

Post a Comment