Pages

Friday, April 11, 2014

সনাতন ধর্ম ও পাকিস্তান





একদিন যে সিন্ধু নদীর তীরে শুরু হয়েছিলো আর্যদের আদি সিন্ধু সভ্যতা সেই স্থানটি আজ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্থানের নাম শুনলে আমাদের মনে একরাশ ঘৃণা ছাড়া হয়ত আর কোন অনুভুতি আসে না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী নিরীহ মানুষের উপর তাদের কাপুরুষোচিত অত্যাচার আমরা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না, আর ভারতের উপর ১৯৪৭ সালের পর থেকে পাকিস্তানের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময়ে যেসব সন্ত্রাসী হামলা সেখানে চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে তা সবার জানা। যাই হোক, উগ্র-সন্ত্রাসবাদী এই মুসলিম দেশটিতেও বেশ কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে, যাদের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়।


যদিও পাকিস্তানের সৃষ্টির মূলনীতিতেই দেশটি অমুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একরকম নিষিদ্ধকরা হয়েছিলো, তবুও ১৯৪৭ এ দেশ ভাগাভাগির সময় অনেক মুসলিম যেমন ভারতেই থেকে গিয়েছিলো, তেমন কিছুহিন্দু তাদের আদি পূর্বপুরুষের জন্মস্থানের মায়ায় পাকিস্থান ত্যাগ করেনি। হয়ত সে সিদ্ধান্তের জন্য তাদের পরের প্রজন্ম হয়ত আজও তাদের অভিশাপ দিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত কারণ তারাই যে আজ বড় ভিকটিম পাকিস্তানের সমাজে।
পাকিস্থানে হিন্দুদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানা কঠিন, কারণ পাকিস্থান সরকার সবসময়ই তা অনেক কম হারে সরকারীভাবে প্রকাশ করে আসছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে বর্তমানে বসবাসরত হিন্দুর সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ যাতাদের মোট জনসংখ্যার ১.৬ শতাংশ। যদিও বিভিন্ন স্বাধীন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী পাকিস্থানে এখনও প্রায় ৬০ লক্ষ হিন্দুর বসবাস। তবে হিন্দু জনসংখ্যা গত কয়েক দশকে ব্যাপক হারে কমেছে যার কারণপ্রতিনিয়ত সংখালঘু সম্প্রদায়ের উপর পাকিস্তানী সরকার, সেনাবাহিনী, আর উগ্রবাদী জনগনের পরিকল্পিত আগ্রাসন। সেখানে হিন্দু মেয়েরা এর সবচেয়ে বেশী শিকার , মুসলিম মেয়েদের মত নাম, পর্দা ব্যবহার করেও তাদের নিস্তার মিলছে না।


The Human Rights Commission of Pakistan এর ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতিমাসে সেখানে ২৫ জন হিন্দু মেয়ে অপহনের স্বীকার হয় যার প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশী। ২০১২ সালে পাকিস্থানে "রিংকেল কুমারী" নামে একটি হিন্দু মেয়ের পরিণতি বেশ ঝড় তোলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে। মেয়েটিকে অপহরনের পর জোর পূর্বক ধর্মান্তর করে বিয়ে করে এক প্রভাবশালী পাকিস্তানি লোক , মেয়েটির পরিবার মামলা করায় অপহরণকারীরা মেয়েটির বাড়ীতে গিয়ে তার পিতামহকে গুলি করে হত্যা করে, যার ফলশ্রুতিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের বাচাতে মেয়েটিকে সবার সামনে বলতে হয় সে স্বেচ্ছায় পালিয়ে এসেছে। এমন আর একটি আলোচিত ঘটনা ঘটে ২০১০ সালে, যখন করাচিতে একজন হিন্দু তরুণ একটি মসজিদের নিকটবর্তী জলের ট্যাঁপ থেকে জল পান করার অপরাধে সে এলাকার কমপক্ষে ৬০ জন হিন্দুকে খুন, গুম, ঘরছাড়া যাকে ইংরেজিতে বলে, "Ethnic cleansing" এর স্বীকার হতে হয়। হিন্দুদের উপর এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে পাকিস্তানের আনাচে-কানাচে যার অধিকাংশই আমাদের কানে আসে না।


পাকিস্তানের মোট হিন্দু জনসংখ্যার ৯৫ ভাগই বাস করে সিন্ধু প্রদেশে, করাচীতে কিছু হিন্দুদের আনাগোনা চোখে পড়ে যদিও পাকিস্তানের রাজনিতিতে তাদের কোন ভুমিকা রাখার সুযোগ নেই। পাকিস্তানের শিক্ষা কারিকুলামেও ভারত ও হিন্দুদের যত সম্ভব নিচু করে উপস্থাপন করা যায় সেভাবেই দেখানো হয়েছে, উচু কোন পর্যায়ে হিন্দুদের কোন উপস্থিতি নেই বললেই চলে, তবু তার মাঝেও পাকিস্তানের কয়েকজন আলোচিত হিন্দু বাক্তিত্ত হচ্ছেন, সাবেক ক্রিকেটার দানিশ কনেরিয়া, আন্তর্জাতিকভাবেপরিচিত ফ্যাশন ডিজাইনার "দিপক পের্বানি" যার তৈরিকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুর্তা পোশাকটি ঠাই পেয়েছে গ্রিনেচ বুক অফ রেকর্ডস এ, এবং পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি Rana Bhagwandas।







"পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিল " পাকিস্তানে হিন্দুদের সবচেয়ে বড়সংগঠন যা রাষ্ট্র ও সামাজিকভাবে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করে। এটির প্রধান কার্যালয় করাচিতে। একসময় পাকিস্তানে অসংখ্য মন্দির থাকলেও বর্তমানে মন্দিরের সংখ্যা অনেক কম। করাচি শহরে বেশ কিছু মন্দির আছে যার মধ্যে " শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দির, করাচি" অন্যতম। এটি শুধু মন্দিরই না, বলা যায়, পাকিস্তানে হিন্দুদের একসাথে মিলিত হবার একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কিতিক অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে পালন করা হয়ে থাকে।




পাকিস্থানের হিন্দুদের পরিণতি দেখে হয়ত আমাদের দুঃখ প্রকাশ করাছাড়া আর কিছু করার নেই। তবে ভগবানের বিচার আছে সর্বত্র। যেজন্য বর্হিবিশ্বে আজকে পাকিস্থান এর পরিচিতি একটি ব্যর্থ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্ হিসেবে............... যেখানে শিক্ষা আর মানবতার বানীর প্রতিদানে মালালাদের বুলেটবিদ্ধ হয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়...............

No comments:

Post a Comment