Pages

Saturday, May 5, 2012

বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১০১তম জন্মশত বার্ষিকী আজ





শ্রদ্ধাঞ্জলি

' উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই'

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১০১তম জন্মশত বার্ষিকী শনিবার। এদিন ভোর থেকেই নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করছে বিভিন্ন সংগঠন।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা আয়োজনে শনিবার পালন করছে প্রীতিলতার জন্মবার্ষিকী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলেও নানা আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে এ বীরকন্যাকে।

তবে প্রীতিলতা স্মরণে কোনো কর্মসূচী নেই তারই শৈশবের স্কুল ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তার কর্মস্থল নগরীর অপর্ণাচরণ সরকারি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়েও তেমন কোনো আয়োজন নেই।

পরীক্ষার অজুহাতে বীরকন্যার স্মৃতিবিজড়িত এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রীতিলতার আত্মত্যাগকে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা থেকে বিরত আছে।

অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতা বেগমের স্মরণেই ছিল না শনিবার প্রীতিলতার জন্মদিন।


এদিকে শনিবারে ভোরে বিপ্লবীর আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে ১০১তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু করে প্রীতিলতার জন্মস্থান চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামের প্রীতিলতা ট্রাস্ট।

সংগঠনটি দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে। এর মধ্যে হিন্দু নারীদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন বাধ্যতামূলক করার দাবিতে সমাবেশ, কবিগান ও আলোচনা সভা অন্যতম।

এছাড়া নগরীর পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবের (বর্তমানে রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়) সামনে প্রীতিলতার ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, চারণ এবং রেলওয়ে পাবলিক স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (ইংরেজি: Pritilata Waddedar) (জন্ম: মে ৫, ১৯১১; মৃত্যু সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৩২), ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ ব্যক্তিত্ব।[১]

ডাঃ খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৮ সালে তিনি এ স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন।[৭] প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য তিনি সব শিক্ষকের খুব প্রিয় ছিলেন। সেই শিক্ষকের একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি। তিনি প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানী লক্ষীবাই এর ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন।[৮

চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক ও ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর প্রীতিলতা দর্শন শাস্ত্র নিয়ে কলকাতার বেথুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৩২ সালে ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বি.এ. পাশ করেন।[২০][২১][২২] কিন্তু, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও তিনি এবং তাঁর সঙ্গী বীণা দাসগুপ্তের পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়। অবশেষে তাঁদেরকে ২২ মার্চ, ২০১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়।[২৩] তিনি চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকানন এলাকায় অপর্ণাচরণ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাস্টারদা সূর্য সেনের সংস্পর্শে আসেন বিপ্লবী প্রীতিলতা। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মাস্টারদার নির্দেশে প্রীতিলতা সামরিক পোশাক পরে আরও কয়েকজন বিপ্লবীসহ চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন।

সফল অপারেশনের শেষে ফেরার পথে হঠাৎ একটি গুলি তার পায়ে এসে বিঁধে। ইংরেজ সৈনিকদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় এসময় প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানইড পান করে আত্মাহুতি দেন।
পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন। কালীকিংকর দে’র কাছে তিনি তাঁর রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে, কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন।[১২২][১২৩][১২৪][১২৫]

বাংলা ভাষার উইকিসোর্স বা উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে:
মায়ের কাছে প্রীতিলতার শেষ পত্র
ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে অংশ নেয়া অন্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রীতিলতা। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করে। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন। তাঁর মৃতদেহ তল্লাশীর পর বিপ্লবী লিফলেট, অপারেশনের পরিকল্পনা, বিভলবারের গুলি, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটা হুইসেল পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।
বেঙ্গল চিফ সেক্রেটারী প্রীতিলতার মৃত্যুর পর লন্ডনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো একটা রিপোর্টে লেখে
প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অবস্থা নিয়ে কল্পনা দত্ত লিখেছেনঃ[১২৭] “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে'। তাঁদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখেকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে নিয়েছেন, আজো তাঁদের সেভাবে চলছে। প্রীতির বাবা প্রীতির দুঃখ ভুলতে পারেননি। আমাকে দেখলেই তাঁর প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন”।
কল্পনা দত্ত ১৯৩০ সালে প্রীতিলতার বাড়িতে এক আলাপচারিতা প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ[১২৮] “কথা হচ্ছিল, পাঁঠা কাটতে পারব কি না। আমি বলেছিলাম, ‘নিশ্চয় পারব, আমার মোটেই ভয় করে না’। প্রীতি উত্তর দিয়েছিল ‘ভয়ের প্রশ্ন না, কিন্তু আমি পারব না নিরীহ একটা জীবকে হত্যা করতে’। একজন তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করল ‘কী, দেশের স্বাধীনতার জন্যও তুমি অহিংস উপায়ে সংগ্রাম করতে চাও?’ আমার মনে পড়ে প্রীতির স্পষ্ট জবাব, ‘স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতেও পারব, প্রাণ নিতে মোটেই মায়া হবে না। কিন্তু নিরীহ জীব হত্যা করতে সত্যি মায়া হয়, পারব না।’”
প্রিতি লতা আমাদের মা। আজ এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে তিনি হতে পারেন সব ছেলে মেয়ের আদর্শ। যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন দেশ ও জাতির তরে। অথচ এই দেশ ও জাতি আজ তাঁকে কি স্মরন করে??? হায় এ দেশ। হায় এ জাতি। কিন্তু আমাদের হ্রিদয়বেদিতে তিনি থাকবেন ভালবাসা আর স্রদ্ধায় সিক্ত। আজ জন্ম দিনে মহীয়সী এই নারীকে প্রনাম।

"মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রান হল বলিদান
লেখা আছে অশ্রু জলে"

এই মহিয়শি নারী সম্পর্কে আরও জানতে http://bn.wikipedia.org/wiki/Pritilata_Waddedar
 

No comments:

Post a Comment