প্রথম আলো
আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদার (একিউএপি) ভেতরে পশ্চিমা গোয়েন্দার অনুপ্রবেশ সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। সম্ভবত, দুই পক্ষের হয়েই কাজ করা ওই কথিত ‘ডাবল এজেন্টের’ কারণেই সম্ভাব্য অন্তর্বাস বোমা হামলা থেকে বেঁচে যায় একটি মার্কিন যাত্রীবাহী বিমান। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের আলো-আঁধারির জগতের একটি বিরল ছবি তুলে ধরে এই ঘটনা। একই সঙ্গে পশ্চিমাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আল-কায়েদা উভয়েই যে অভিন্ন এক সমস্যার মুখোমুখি, তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে আরেকবার। এটি হলো কাকে বিশ্বাস করা যায় আর কাকে করা যায় না সেই সমস্যা।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ইয়েমেনের গোয়েন্দা অভিযানটি চালানো হয় সর্বোচ্চ মাত্রার গোপনীয়তার মধ্যে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খুঁটিনাটি তথ্য এখন পর্যন্ত সব স্পষ্ট নয়।
তবে প্রাথমিকভাবে যেটুকু প্রকাশ পেয়েছে সে অনুযায়ী সৌদি গোয়েন্দারাই মার্কিন বৈদেশিক গোয়েন্দা সিআইএর সঙ্গে মিলে তাঁকে কাজে লাগিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারাও ঘনিষ্ঠভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র এই অভিযানের জন্যই সৌদি ওই গোয়েন্দাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পর্যন্ত দেওয়া হয়।
বোমা হামলার পরিকল্পনা ফাঁস করে দেওয়া ব্যক্তিকে কেউ কেউ বলেছেন ‘ডাবল এজেন্ট’ যে কি না উভয় পক্ষের হয়ে কাজ করে। তবে এর সম্ভাবনা আসলে কম। খুব সম্ভবত তিনি স্রেফ একজন গোয়েন্দা, যিনি কিনা পরিচয় ভাঁড়িয়ে আল-কায়েদার ভেতরে ঢুকেছিলেন। ওই গোয়েন্দা ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদা গোষ্ঠীকে এ কথা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে তিনি একটা আত্মঘাতী হামলা চালাতে চান। কিন্তু তাঁকে যে অত্যাধুনিক বোমাটি দেওয়া হয় তা ব্যবহারের বদলে, যাদের ওপর হামলা করার কথা সেই মার্কিনিদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। অন্তর্বাস বোমা নামে পরিচিত এ বোমাটি এতই দক্ষতার সঙ্গে তৈরি যে বেশির ভাগ বিমানবন্দরে তা শনাক্ত করার মতো যন্ত্র নেই। এটি আগে তৈরি অন্তর্বাস বোমার উন্নত সংস্করণ।
একটি খবরে বলা হয়েছে যে ওই গোয়েন্দা এখন সৌদি আরবে রয়েছেন। খবরটি চাউর হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এটা ভেবে উদ্বিগ্ন যে করিৎকর্মা গোয়েন্দা বা তাঁর পরিচিতেরা এখন বিপদে পড়বেন কি না।
উদ্ধার হওয়া অন্তর্বাস বোমাটি এখন মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর হেফাজতে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা তাঁদের গবেষণাগারে এটি পরীক্ষা করে দেখছেন। তাঁরা এ থেকে যেমন বোমাটির কারিগরি দিক সম্পর্কে ধারণা পাবেন, তেমনি জানতে পারবেন ২০০৯ সালের সংস্করণের চেয়ে এর কতটা উন্নতি করা হয়েছে। আগের ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হতে ব্যর্থ হয়েছিল। খুব গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হচ্ছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার পক্ষে এটি চিহ্নিত করার কোনো উপায় আছে কি না সেটি বোঝা। এ বোমার মধ্যে কোনো ধাতব অংশ না থাকায় তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ধরা যায় না। আর খুব ভালো করে আড়াল করা গেলে শরীর স্ক্যান করা মেশিনও একে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হতে পারে।
অন্তর্বাস বোমা এনে দেওয়া ছাড়াও গোয়েন্দা নাকি গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছু তথ্যও দিয়েছেন। সম্ভবত এর মধ্যে থাকবে আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদার বিভিন্ন নেতা ও দলটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ তথ্য। মনে করা হয়, এ মুহূর্তে একিউএপিই আল-কায়েদার সবচেয়ে সক্ষম শাখা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওই গোয়েন্দার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যই হয়তো ইয়েমেনে গত সপ্তাহের মার্কিন ড্রোন হামলায় সহায়তা করেছে। ওই হামলায় নিহত ফাহদ আল-কুসো ২০০০ সালে মার্কিন রণতরী ইউএসএস কোলে বোমা হামলায় জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আল-কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হয়ে উঠেছিলেন আল-কুসো।
নতুন এই অভিনব গোয়েন্দা অভিযানের অনেক বিশদ তথ্য মার্কিন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কখনোই তাদের গোপন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়া পছন্দ করে না। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দার বিপদ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও উদ্বেগের বড় একটি কারণ হচ্ছে, এতে করে ভবিষ্যতে আবার এ ধরনের অভিযান চালানো আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। তবে তাদের ভেতরে কৌশলে ঢোকার জন্য প্রতিপক্ষের গোয়েন্দারা যে চেষ্টা করতে পারে অনেক আগে থেকেই সে বিষয়ে সচেতন আল-কায়েদা। অতীতে দেখা গেছে, ঝুঁকি এড়াতে আল-কায়েদা নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানোর আগে নির্ভরযোগ্য সুপারিশ ও পরিচিতি যাচাই-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এখন নিশ্চয়ই ওই প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
ছদ্মপরিচয়ে কাজ করা গোয়েন্দার শারীরিক বিপদ ও মানসিক চাপ বিশাল। এর জন্য স্নায়ুর চাপ সামলানোয় প্রায় অমানুষিক দক্ষতা প্রয়োজন। একটা মাত্র ভুল শব্দ উচ্চারণে ফাঁস হয়ে যেতে পারে পরিচয়, যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু।
এফবিআই ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেমন ধরা যাক, জঙ্গিবাদী ‘জিহাদে’ যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহী তরুণ-যুবকেরা স্থানীয় কোনো আল-কায়েদাপন্থী দলে যোগ দিল। তাদের তখন বোমা বা অস্ত্র দেওয়া হয়। ওই তরুণ-যুবকেরা তো আল-কায়েদায় যোগ দিতে পেরে খুশি। বাস্তবে ওই আল-কায়েদাপন্থী দলগুলো সরকারের লোক। তাদের সরবরাহ করা বোমা বা বন্দুকও অচল। এভাবে তারা ফাঁদে পড়ে। তবে ইয়েমেনের ঘটনার ক্ষেত্রে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত একজন গোয়েন্দা একটি সত্যিকারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে দেওয়া বোমাটিও ছিল সত্যিকারের।
এত কিছুর পরও আলোচ্য গোয়েন্দাটি সত্যিই কোন পক্ষের লোক তা নিয়ে দৃশ্যত কিছু সংশয় রয়ে গেছে। এ কারণেই হয়তো তিনি অন্তর্বাস বোমা সিআইএর হাতে তুলে দেওয়ার পরও কেউ পুরোপুরি নিরুদ্বিগ্ন হননি। বরং সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গোয়েন্দাগিরির লড়াইয়ে কাকে সত্যিই বিশ্বাস করা যায়, সেটা জানাটা সহজ নয়। এর জন্য খুব চরম মূল্যও দিতে হতে পারে। সিআইএ কর্তৃপক্ষের এ রকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এক গোয়েন্দা সিআইএকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের সন্ধান দেবেন। সিআইএ তাঁর সঙ্গে লেগে ছিল বেশ কিছুদিন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ওই গোয়েন্দা প্রথম থেকেই বরাবর আল-কায়েদার হয়ে কাজ করে গেছেন। তাঁরই আত্মঘাতী হামলায় আফগানিস্তানের খোস্তে সিআইএর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন। সেবারেরটি এবং সাম্প্রতিকতম ঘটনা গোয়েন্দাগিরি আর শত্রুমিত্র চিহ্নিত করার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাফল্যের সম্ভাবনা ও বিপদের মাত্রা দুটোই ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে।
আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদার (একিউএপি) ভেতরে পশ্চিমা গোয়েন্দার অনুপ্রবেশ সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। সম্ভবত, দুই পক্ষের হয়েই কাজ করা ওই কথিত ‘ডাবল এজেন্টের’ কারণেই সম্ভাব্য অন্তর্বাস বোমা হামলা থেকে বেঁচে যায় একটি মার্কিন যাত্রীবাহী বিমান। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের আলো-আঁধারির জগতের একটি বিরল ছবি তুলে ধরে এই ঘটনা। একই সঙ্গে পশ্চিমাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আল-কায়েদা উভয়েই যে অভিন্ন এক সমস্যার মুখোমুখি, তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে আরেকবার। এটি হলো কাকে বিশ্বাস করা যায় আর কাকে করা যায় না সেই সমস্যা।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ইয়েমেনের গোয়েন্দা অভিযানটি চালানো হয় সর্বোচ্চ মাত্রার গোপনীয়তার মধ্যে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খুঁটিনাটি তথ্য এখন পর্যন্ত সব স্পষ্ট নয়।
তবে প্রাথমিকভাবে যেটুকু প্রকাশ পেয়েছে সে অনুযায়ী সৌদি গোয়েন্দারাই মার্কিন বৈদেশিক গোয়েন্দা সিআইএর সঙ্গে মিলে তাঁকে কাজে লাগিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারাও ঘনিষ্ঠভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র এই অভিযানের জন্যই সৌদি ওই গোয়েন্দাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পর্যন্ত দেওয়া হয়।
বোমা হামলার পরিকল্পনা ফাঁস করে দেওয়া ব্যক্তিকে কেউ কেউ বলেছেন ‘ডাবল এজেন্ট’ যে কি না উভয় পক্ষের হয়ে কাজ করে। তবে এর সম্ভাবনা আসলে কম। খুব সম্ভবত তিনি স্রেফ একজন গোয়েন্দা, যিনি কিনা পরিচয় ভাঁড়িয়ে আল-কায়েদার ভেতরে ঢুকেছিলেন। ওই গোয়েন্দা ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদা গোষ্ঠীকে এ কথা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে তিনি একটা আত্মঘাতী হামলা চালাতে চান। কিন্তু তাঁকে যে অত্যাধুনিক বোমাটি দেওয়া হয় তা ব্যবহারের বদলে, যাদের ওপর হামলা করার কথা সেই মার্কিনিদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। অন্তর্বাস বোমা নামে পরিচিত এ বোমাটি এতই দক্ষতার সঙ্গে তৈরি যে বেশির ভাগ বিমানবন্দরে তা শনাক্ত করার মতো যন্ত্র নেই। এটি আগে তৈরি অন্তর্বাস বোমার উন্নত সংস্করণ।
একটি খবরে বলা হয়েছে যে ওই গোয়েন্দা এখন সৌদি আরবে রয়েছেন। খবরটি চাউর হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এটা ভেবে উদ্বিগ্ন যে করিৎকর্মা গোয়েন্দা বা তাঁর পরিচিতেরা এখন বিপদে পড়বেন কি না।
উদ্ধার হওয়া অন্তর্বাস বোমাটি এখন মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর হেফাজতে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা তাঁদের গবেষণাগারে এটি পরীক্ষা করে দেখছেন। তাঁরা এ থেকে যেমন বোমাটির কারিগরি দিক সম্পর্কে ধারণা পাবেন, তেমনি জানতে পারবেন ২০০৯ সালের সংস্করণের চেয়ে এর কতটা উন্নতি করা হয়েছে। আগের ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হতে ব্যর্থ হয়েছিল। খুব গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হচ্ছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার পক্ষে এটি চিহ্নিত করার কোনো উপায় আছে কি না সেটি বোঝা। এ বোমার মধ্যে কোনো ধাতব অংশ না থাকায় তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ধরা যায় না। আর খুব ভালো করে আড়াল করা গেলে শরীর স্ক্যান করা মেশিনও একে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হতে পারে।
অন্তর্বাস বোমা এনে দেওয়া ছাড়াও গোয়েন্দা নাকি গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছু তথ্যও দিয়েছেন। সম্ভবত এর মধ্যে থাকবে আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদার বিভিন্ন নেতা ও দলটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ তথ্য। মনে করা হয়, এ মুহূর্তে একিউএপিই আল-কায়েদার সবচেয়ে সক্ষম শাখা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওই গোয়েন্দার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যই হয়তো ইয়েমেনে গত সপ্তাহের মার্কিন ড্রোন হামলায় সহায়তা করেছে। ওই হামলায় নিহত ফাহদ আল-কুসো ২০০০ সালে মার্কিন রণতরী ইউএসএস কোলে বোমা হামলায় জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আল-কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হয়ে উঠেছিলেন আল-কুসো।
নতুন এই অভিনব গোয়েন্দা অভিযানের অনেক বিশদ তথ্য মার্কিন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কখনোই তাদের গোপন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়া পছন্দ করে না। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দার বিপদ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও উদ্বেগের বড় একটি কারণ হচ্ছে, এতে করে ভবিষ্যতে আবার এ ধরনের অভিযান চালানো আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। তবে তাদের ভেতরে কৌশলে ঢোকার জন্য প্রতিপক্ষের গোয়েন্দারা যে চেষ্টা করতে পারে অনেক আগে থেকেই সে বিষয়ে সচেতন আল-কায়েদা। অতীতে দেখা গেছে, ঝুঁকি এড়াতে আল-কায়েদা নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানোর আগে নির্ভরযোগ্য সুপারিশ ও পরিচিতি যাচাই-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এখন নিশ্চয়ই ওই প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
ছদ্মপরিচয়ে কাজ করা গোয়েন্দার শারীরিক বিপদ ও মানসিক চাপ বিশাল। এর জন্য স্নায়ুর চাপ সামলানোয় প্রায় অমানুষিক দক্ষতা প্রয়োজন। একটা মাত্র ভুল শব্দ উচ্চারণে ফাঁস হয়ে যেতে পারে পরিচয়, যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু।
এফবিআই ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেমন ধরা যাক, জঙ্গিবাদী ‘জিহাদে’ যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহী তরুণ-যুবকেরা স্থানীয় কোনো আল-কায়েদাপন্থী দলে যোগ দিল। তাদের তখন বোমা বা অস্ত্র দেওয়া হয়। ওই তরুণ-যুবকেরা তো আল-কায়েদায় যোগ দিতে পেরে খুশি। বাস্তবে ওই আল-কায়েদাপন্থী দলগুলো সরকারের লোক। তাদের সরবরাহ করা বোমা বা বন্দুকও অচল। এভাবে তারা ফাঁদে পড়ে। তবে ইয়েমেনের ঘটনার ক্ষেত্রে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত একজন গোয়েন্দা একটি সত্যিকারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে দেওয়া বোমাটিও ছিল সত্যিকারের।
এত কিছুর পরও আলোচ্য গোয়েন্দাটি সত্যিই কোন পক্ষের লোক তা নিয়ে দৃশ্যত কিছু সংশয় রয়ে গেছে। এ কারণেই হয়তো তিনি অন্তর্বাস বোমা সিআইএর হাতে তুলে দেওয়ার পরও কেউ পুরোপুরি নিরুদ্বিগ্ন হননি। বরং সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গোয়েন্দাগিরির লড়াইয়ে কাকে সত্যিই বিশ্বাস করা যায়, সেটা জানাটা সহজ নয়। এর জন্য খুব চরম মূল্যও দিতে হতে পারে। সিআইএ কর্তৃপক্ষের এ রকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এক গোয়েন্দা সিআইএকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের সন্ধান দেবেন। সিআইএ তাঁর সঙ্গে লেগে ছিল বেশ কিছুদিন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ওই গোয়েন্দা প্রথম থেকেই বরাবর আল-কায়েদার হয়ে কাজ করে গেছেন। তাঁরই আত্মঘাতী হামলায় আফগানিস্তানের খোস্তে সিআইএর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন। সেবারেরটি এবং সাম্প্রতিকতম ঘটনা গোয়েন্দাগিরি আর শত্রুমিত্র চিহ্নিত করার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাফল্যের সম্ভাবনা ও বিপদের মাত্রা দুটোই ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment