Pages

Friday, July 13, 2012

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববর্ণে দশাশৌচ পালন বিধি ও শাস্ত্রসম্মত








জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ- ব্রাহ্মণ নয়। মনুস্মৃতিতে বলা আছে- ‘যে ব্রাহ্মণ
ব্রহ্মজ্ঞ, তিনিই ব্রাহ্মণ’। সেই ব্রাহ্মণ যে কোন বর্ণ থেকে হতে পারেন। ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, স্বামী বিবেকানন্দ জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ ছিলেন না কিন্তু আজ সারাবিশ্বে তাদের পূজা হয়। ব্রাহ্মণগণ তাদের পূজা করে থাকেন । 

কিছুদিন পূর্বে শহরতলীর রামপুর মহাদেব মন্দির প্রাঙ্গণে সূত্রধর সম্প্রদায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যক্ষ নিখিল রঞ্জন ভট্টাচার্য্যসহ বিভিন্ন শাস্ত্রকার জ্ঞানী, গুণী ও বিশিষ্ট পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সূত্রধর সম্প্রদায়গণ দশ দিনে অশৌচ পালনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এ সংবাদটি হবিগঞ্জের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিতও হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ওই সিদ্ধান্ত গুটিকয়েক ব্যক্তি সহ্য করতে পারেননি। তারা গত ২ মার্চ হবিগঞ্জের একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবাদ জানান। কথায় বলে- ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ’। পাঠকগণ শাস্ত্র সম্পর্কে আমি অত্যন্ত অনভিজ্ঞ এবং লেখালেখির তেমন অভ্যাস আমার নেই। যারা বক্তব্যটি দিয়েছেন তারা ব্রাহ্মণ কে এবং শুদ্র কে তার কতটুকু জানেন আমার জানা নেই। জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণ নয়। মনুস্মৃতিতে বলা আছে- ‘যে ব্রাহ্মণ ব্রহ্মাজ্ঞ তিনিই ব্রাহ্মণ’। সেই ব্রাহ্মণ যে কোন বর্ণ থেকে হতে পারেন। ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, স্বামী বিবেকানন্দ জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ ছিলেন না কিন্তু আজ সারাবিশ্বে তাদের পূজা হয়। ব্রাহ্মণগণ তাদের পূজা করে থাকেন। শূদ্রদের বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করার কিংবা পড়ার অধিকারী নাই, যারা এই জাতীয় কথাবার্তা বলে পত্রিকায় প্রকাশ করেন তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করবেন তার বিচার পাঠকগণের উপর ছেড়েদিলাম। ওই গোষ্ঠীটি গত ১৯ মার্চ শ্রীশ্রী শনিদেব মন্দির প্রাঙ্গনে এক সভা করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শান্তিপ্রিয় সূত্রধর সম্প্রদায় এবং কুল পুরোহিত আচার্য্য সম্প্রদায়কে দশাশৌচ পালন না করার জন্য অনুরোধ কোথাও কোথাও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন। ফলে শান্তিপ্রিয় সূত্রধর সম্প্রদায়ের কেউ কেউ পুরোহিত পাবেন না, এই ভয়ে দশাশৌচ পালন করবেন কিভাবে এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। রামপুর মন্দির মাঠে এ কথাও বলা হয়েছিল ‘কেউ যদি তার মনের শান্তির জন্য ৩০ দিন অশৌচ পালন করে তারও অনুষ্ঠান সুন্দর ও সার্থক হোক এই বাসনা আমাদের থাকবে। সর্ববর্ণে দশাশৌচ পালন করা শাস্ত্র সম্মত এবং বিধি সম্মত। সম্মানিত পাঠকগণ এবার আমি সর্ববর্ণে দশাশৌধ পালন শাস্ত্রসম্মত এবং বিধি সম্মত কিনা তা শাস্ত্রের কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। মনুসংহিতায় ঋষি মনু বলেন, ‘সপিন্ডের মৃত্যু হলে দশদিন অশৌচ হবে এবং গুণের তারতম্য অনুসারে চার দিন অথবা তিন দিন বা এক অহোরাত্র মাত্র অশৌচ বিহিত’ (৫/৫৯)। ‘মৃত্যুশৌচ অস্পৃশ্যাত্ব রূপ অশৌচ সকলেই সমান। কিন্ত জনানশৌচ কেবল মাতা পিতারই অস্পৃশ্যত্ব হয়। এ অশৌচ সাতার দশরাত্রি কিন্তু পিতা স্নান করলেই স্পর্শনীয় হন’ (৫/৬২)। ‘বিদেশস্থ সপিণ্ডের মৃত্যু সংবাদ যদি দশাহের মধ্যে শুনতে পাওয়া যায় তাহলে দশাহের যে কয়দিন অবশিষ্ট থাকে সে কয়দিন মাত্র অশৌচ থাকে’ (৫/৭৫)। ‘দশদিন অতিক্রান্ত হইবার পর যদি ঐ মৃত্যু সংবাদ শোনা যায় তবে শোনার পর তিন রাত্র পর্যন্ত অশৌচ হয়। বৎসর অতীত হয়ে গেলে যদি মৃত্যু সংবাদ শুনা যায় তবে কেবল স্নান করেই শুদ্ধ হওয়া যায়’ (৫/৭৬)। মনুসংহিতায় শুধুমাত্র একটি স্লোকেই চারিবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। তা হলো- ‘সপিণ্ডের মৃত্যু অথবা জন্মে বেদপাঠ রহিত ব্রাহ্মন দশদিনে, ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিনে, বৈশ্য পঞ্চদশ দিনে এবং শুদ্র এক মাসে শুদ্ধ হন’ (৫/৮৩)। কিন্তু পরের স্লোকেই বলেছেন ‘অশৌচের দিন সংখ্যা বৃদ্ধি করা মোটেই উচিৎ নয়’। (কুলুক ভট্টের সংযোজিত টিকা) এবার আসা যাক গরুড় পুরাণে। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘সপিণ্ডদিগের মরণাশৌচ দশাহ। যারা নিপুরভাবে শুদ্ধি কামনা করেন, তারা পুত্রাদির্জনানেও দশাহ অশৌচই পালন করা’ (৬/১০)। ২) ‘সর্ববর্ণের মরণে জননে দশদিন অশৌচ পালন কলিযুগের বিধি’। এই মন্ত্রগুলোতে সর্ববর্ণের মরণে ও জননে দশদিন অশৌচ পালন করে শুদ্ধ হবার কথা বলেছেন। এবার শ্রীকৃষ্ণ বাক্যরবাহ পুরাণে কি বলেন শোনা যাক। বরাহপুরাণের ১৮৮/৬ ও ৭নং শ্লোকে বলা হয়েছে, ‘একাদশ দিনে যথাবিধি একোদ্দিষ্ট বিধিক পিন্ডদান করিবে। অনন্তর স্নানার্থে শুচি হয়ে সেই প্রেতদেহ বিপ্রদেহে যোজনা করিবে। হে বসুধেংমনুষ্যগণের মধ্যে বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শুদ্র এই চারি বর্ণের একোদ্দিষ্ট একইরূপ।’ সর্ববর্ণের দশাশৌচের পক্ষে আরও একটি জোরালো যুক্তি আছে। যেমন শ্রাদ্ধের মন্ত্রে আছে, ‘হে প্রেত আত্মা তুমি আকাশে অবলম্বনহীন অবস্থায় ও বায়ূতে নিরাশ্রয় অবস্থায় আছো। এ জল ও ক্ষীর দিলাম স্নান আহার করে সুখী হও।’ তাই সপিন্ডকরণের পূর্ব পর্যন্ত প্রেত আত্মাকে প্রতিদিন এক একটি করে দশটি পূরক পিণ্ডদান করতে হয়। নতুবা প্রেতাত্মা অভূক্ত থেকে কষ্ট পান। তাই দশদিনে দশটি পূরক পিন্ড দিয়ে একাদশ দিনে শ্রাদ্ধ করাই সর্ববর্ণের বিধি সম্মত। ফলে একত্রিশ দিনে শ্রাদ্ধ করলে বিশদিন প্রেতাত্মা ক্ষুধায় নিশ্চয়ই কষ্ট পান। মাতা পিতার প্রেতাত্মাকে কষ্ট দেয়া সন্তানের উচিত নয়। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এবং শাস্ত্রীয় যে শ্লোকগুলি তুলে ধরেছি, সেগুলি শাস্ত্রসম্মত। ওই শ্লোকগুলি শ্র“তি, স্মৃতি পুরাণ বা কোনও শাস্ত্রের দ্বারা বাতিল করা হয়নি। আইনে আছে, আইন কোন বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা দেশের স্বার্থে সংশোধন করা হয়ে থাকে বা সংশোধন করা যায়। কিন্তু শাস্ত্রের ঐ শ্লোকগুলি যদি পরিবর্তন বা বাতিল না হয়ে থাকে তাহলে সর্ববর্ণে দর্শাশৌচ পালনে বাধা কোথায়? আপনারা তো শাস্ত্রের একটি শ্লোকও দেখতে পারবেন না যে সর্ববর্ণে দর্শাশৌচ নিষেধ। পাঠকগণ অনেক লিখা হয়ে গেছে। সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৭৫ সনে নারায়নগঞ্জে অনুষ্ঠিত সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলনে মহান পুরুষ ডঃ মহানমব্রত ব্রহ্মচারিজীর পৌরহিত্যে ও সভাপতিত্বে শাস্ত্রবিশারদ পন্ডিত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে সর্ববর্ণে দশাশৌচ পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অতঃপর এই শ্লোগানের ভিত্তিতে ১৯৭৮ইং সনে শ্রদ্ধেয় শিব শংকর চক্রবর্তী সমাজ দর্পণের সম্পাদক (সংস্কৃতিসহ তিনটি বিষয়ে এম.এ) আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, সর্ববর্ণে দশাশৌচ শাস্ত্রসম্মত। কিন্তু পূর্বে একটি বর্ণের উপর জোর করে ৩০ দিনের শ্রাদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ইতিপূর্বেও তৎপর হতে সর্ববর্ণে দশাশৌচ পালন হয়ে আসছে। আমাদের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে সূত্রধর সম্প্রদায়ের দশাশৌচ পালন করে আসছেন এবং হবিগঞ্জে ৩০ দিন এবং দশদিন অশৌচ পালন করে আসছেন। এমতাবস্থায় হবিগঞ্জে দশাশৌচ পালনের ব্যাপারে গত ১৯ ফেব্র“য়ারি রামপুর মন্দির প্রাঙ্গণে এক সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরিশেষে পুরোহিত মহাশয়গণের প্রতি অনুরোধ, ৩০ দিনের শ্রাদ্ধে যেমন যজমানের বাড়িতে গেছেন, ১০ দিনের শ্রাদ্ধেও যজমানের বাড়িতে যান। আর যজমানদের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ, হিংসা নয় বিদ্বেষ নয় সর্ববর্ণে দশাশৌচ সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় বিধি সম্মত। আমার লেখায় যদি কোন ভুল ভ্রান্তি পান নিজগুণে ক্ষমা করবেন। কেউ যদি দুঃখ পান ক্ষমাপ্রার্থী। জয় হোক সনাতন ধর্মের, জয় কোন সূত্রধর সম্প্রদায়ের। বিশ্বের কল্যাণ হোক। এডভোকেট সুধাংশু সূত্রধর আহবায়ক, সূত্রধর সমাজ কল্যাণ পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখা সদস্য সচিব, দশাশৌচ পালন কমিটি, হবিগঞ্জ 

3 comments:

  1. এটি ভূল তথ্য, সর্ব্ববর্নের একরকম অশৌচ হতে পারে না।

    ReplyDelete
  2. ## এ সম্পর্কে আরো বলা আছেঃ
    দশদ্বাদশমাসার্দ্ধ-মাসসংখৈর্দিনৈগতৈঃ |
    স্বাঃ স্বাঃ কর্ম্মক্রিয়াঃ কুর্য্যুঃ সর্বে বর্ণা
    যথাবিধি || (মার্কন্ডেয় পুরাণ ৩৫|৫১)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণাদি যাবতীয় বর্ণই বিধান
    অনুসারে দশদিন,দ্বাদশদিন,পক্ষ ও একমাস অবলম্বন
    পূর্বক নিজ নিজ বর্ণ বিহিত কার্য্যাদি সমাধা
    করিবে।
    || বিষ্ণু পুরাণ ||
    বিপ্রস্যৈতদ্ দ্বাদশাহং রাজন্যস্যপ্যশৌচকম্ |
    অর্দ্ধমাসশ্চ বৈশ্যস্য মাসঃ শূদ্রস্য শুদ্ধয়ে ||
    (বিষ্ণু পুরাণ,তৃতীয়াংশ ১৩|১৯)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণের অশৌচ দশদিন,ক্ষত্রিয়ের
    দ্বাদশ,বৈশ্যের পঞ্চদশ এবং শূদ্রের অশৌচ
    একমাস।
    পাঠককুল এবার আসুন গরুড় পুরাণে।দেখা যাক গরুড়
    পুরাণ কি বলে।
    || গরুড় পুরাণ ||
    সোজাভাবে বলছেঃ শুচির্বিপ্রো দশাহেন
    ক্ষত্রিয় দ্বাদশাহত |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি || (গরুড়
    পুরাণ,পূর্ব্বখন্ড ২২৬|৩৮)
    অর্থঃ জননাশৌচ ও মরণাশৌচ উপস্থিত হইলে
    ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিন,বৈশ্য
    পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ দিনে শুদ্ধ হয়।
    আবার বলছেঃ
    জাতিবিপ্রো দশহাত্তু ক্ষত্রো দ্বাদশকাদ্
    দিনাৎ |
    পঞ্চদশাহাদ্বৈশ্যস্ত্তু শূদ্র মাসেন শুধ্যতি || (গরুড়
    পুরাণ,পূর্ব্বখন্ড ১০৭|১১)
    অর্থঃ যিনি জাতি মাত্রে বিপ্র তিনি
    দশদিন,যিনি জাতি মাত্রে ক্ষত্রিয় তিনি
    দ্বাদশ,যিনি জাতি মাত্রে বৈশ্য পঞ্চদশ এবং
    যিনি জাতি মাত্রে শূদ্র তিনি একমাসে শুদ্ধ হন।
    আরো দেখুনঃ
    দশাহং প্রাহুরাশৌচং সপিন্ডেষু বিপশ্চিতঃ |
    মৃতেষু বাথ জাতেষু ব্রাহ্মণানাং দ্বিজোত্তমা ||
    ক্ষত্রিয়ো দ্বাদশাহেন দশভিঃ পঞ্চভভির্বিশঃ |
    শুধ্যেন্মাসেন বৈ শূদ্রো যতীনাং নাস্তি
    পাতকম্ || (গরুড় পুরাণ,পূর্ব্বখন্ড ৫০|৮১,৮৩)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণের জন্ম-মরণে জ্ঞাতিবর্গের দশাহ
    অশৌচ হয়।প্রাচীন পন্ডিতগণ ইহা বলিয়া
    থাকেন।ক্ষত্রিয়ের জন্ম-মরণে জ্ঞাতিবর্গের
    দ্বাদশাহে;বৈশ্যের পঞ্চদশাহ ও শূদ্রের একমাস
    অশৌচ হয়।
    || পদ্ম পুরাণ ||
    দশাহং শাবমাশৌচং ব্রাহ্মণস্য বিধিয়তে |
    ক্ষত্রিয়েষু দশ দ্বে চ পক্ষং বৈশ্যেষু চৈব হি ||
    শূদ্রেষু মাসামাশৌচং সপিন্ডেষু বিধিয়তে ||
    (পদ্ম পুরাণ,সৃষ্টি খন্ড ১০|২,৩)
    অর্থঃ শাবাশৌচ ব্রাহ্মণের অশৌচ
    দশদিন;ক্ষত্রিয়ের দ্বাদশদিন;বৈশ্যের পঞ্চদশ
    এবং শূদ্রের একমাস হইবে।
    || ব্রহ্ম পুরাণ ||
    দশাহং ব্রাহ্মণস্তিষ্ঠেদ্দানহোমবিবর্জ্জিতঃ |
    ক্ষত্রিয়ো দ্বাদশাহঞ্চ বৈশ্য মাসার্দ্ধমেব চ ||
    শূদ্রশ্চ মাসামাসীত নিজকর্ম্মবিবর্জ্জিত ||
    (ব্রহ্ম পুরাণ ২২১|১৪৭,১৪৮)
    অর্থঃ জন্ম ও মরণ উপলক্ষে ব্রাহ্মণ
    দশদিন;ক্ষত্রিয় দ্বাদশদিন;বৈশ্য মাসার্দ্ধ যাবৎ
    দান হোম বর্জ্জনপূর্ব্বক থাকিবে।শূদ্র একমাস
    নিজ কর্তব্য বর্জ্জন করিবে।
    || অগ্নি পুরাণ ||
    দশা হাচ্ছদ্ধ্যতে বিপ্রো দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি ||
    ( অগ্নি পুরাণ ১৫৮|১২ )
    এরকম আরো বহু শ্লোক উদ্ধৃত করে অশৌচকাল
    সম্পর্কে ঋষিগণের কি অভিমত তা সুস্পষ্টভাবে
    দেখানো সম্ভব।পূর্বেই উল্লেখ করেছি সনাতন
    শাস্ত্রের কোথাও বলা নেই “সর্ববর্ণে দশাহ
    অশৌচ হইবে”।সমাজ দর্পণে যে ৩ টি শ্লোক উদ্ধৃত
    করা হয়েছে তাতেও সরাসরি এমন কথা বলা হয়
    নাই।এবং আমি দেখিয়েছি মনু সংহিতায় এবং
    গরুড় পুরাণে কিভাবে অশৌচ বিধি বলা হয়েছে।
    কাজেই বর্ণভেদে অশৌচকালের পার্থক্য হয় এটাই
    শাস্ত্র সিদ্ধান্ত।আর আমরা বিশ্বাস করি
    ঋষিপ্রণিত বিধান মানাই সর্বৈব বিধেয়।আর তা
    না করে কেউ নিজেদের খেয়াল মতো চললে তা
    অনুসরণ না করাই শ্রেয়।লেখার শিরোনামটার
    জবাব এবার আপনারাই বিচার করুন।ঈশ্বর সকলের
    মঙ্গল করুন।

    ReplyDelete
  3. পার্ট ১""""

    || মনু সংহিতার বিধান ||
    শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি ||
    (মনুসংহিতা ৫|৮৩)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিন,বৈশ্য
    পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ দিনে শুদ্ধ হয়।
    || অত্রি সংহিতা ||
    ব্রাহ্মণো দশরাত্রেণ দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি ||
    (অত্রি সংহিতা,৮৫ নং শ্লোক)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণ দশদিনের পর,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ
    দিনের পর,বৈশ্য পঞ্চদশ দিনের পর ও শূদ্র
    একমাসের পর শুদ্ধ হয়।
    || বিষ্ণু সংহিতা ||
    ব্রাহ্মণস্য সপিন্ডানাং জননমরণয়োর্দ্দশা
    হমাশৌচম ||
    দ্বাদশাহং রাজন্যস্য || মাস শূদ্রস্য || (বিষ্ণু
    সংহিতা ২২|১-৩)
    অর্থঃ সপিন্ডদিগের জন্ম মরণে ব্রাহ্মণের
    দশদিন,ক্ষত্রিয়ের দ্বাদশাহ,বৈশ্যের পঞ্চদশাহ
    এবং শূদ্রের একমাস অশৌচ কাল।
    || যাজ্ঞবাল্ক্য সংহিতা ||
    ক্ষত্রস্য দ্বাদশাহানি বিশঃ পষ্ণদশৈব তু |
    ত্রিংশদ্দিনানি শূদ্রস্য তদর্দ্ধং ন্যায়বর্ত্তিনঃ
    || (যাজ্ঞবাল্ক্য সংহিতা ৩|২২)
    অর্থঃ ক্ষত্রিয়ের পূর্ণাশৌচ বার দিন,বৈশ্যের
    পনের দিন এবং শূদ্রের একমাস।
    || উশনঃ সংহিতা ||
    শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূপতিঃ |
    বৈশ্য পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি ||
    (উশনঃ সংহিতা ৬|৩৪)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিন,বৈশ্য
    পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ দিনে শুদ্ধ হয়।
    || অঙ্গিরা সংহিতা ||
    দশাহাচ্ছুধ্যতে বিপ্রো দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    পাক্ষিকং বৈশ্য এবাহ শূদ্র মাসেন শুধ্যতি ||
    (অঙ্গিরা সংহিতা ৫১ নং শ্লোক)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিন,বৈশ্য
    পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ দিনে শুদ্ধ হয়।
    || সংবর্ত্ত সংহিতা ||
    বিপ্রো দশহমাসীত দানধ্যায়নবর্জ্জিতঃ |
    ক্ষত্রিয় দ্বাদশাহেন বৈশ্য পঞ্চদশৈব তু ||
    শূদ্রঃ শুধ্যতি মাসেন সাংবর্ত্তবচং যথা ||
    (সংবর্ত্ত সংহিতা ৩৮ নং শ্লোক)
    অর্থঃ জনন বা মরণে ব্রাহ্মণ দান অধ্যয়ণ
    বর্জ্জনপূর্বক,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিন,বৈশ্য পঞ্চদশদিন
    এবং শূদ্রর ত্রিশ দিনে শুদ্ধ হইবে;ইহাই সংবর্ত্ত
    মুনির অনুজ্ঞা জানিবে।
    || পরাশর সংহিতা ||
    জাতো বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি ||
    (পরাশর সংহিতা ৩|৪)
    অর্থঃ জনন বা মরণ হইলে ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয়
    দ্বাদশ দিন,বৈশ্য পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ
    দিনে শুদ্ধ হয়।
    || শঙ্খ সংহিতা ||
    সপিন্ডতা তু পুরুষে সপ্তমে বিনিবর্ত্ততে |
    জননে মরণে বিপ্রো দশাহেন বিশুধ্যতি ||
    ক্ষত্রিয় দ্বাদশাহেন বৈশ্য পক্ষেণ শুদ্ধতি |
    মাসেন তু তথা শূদ্রঃ শুদ্ধিমাপ্নোতি নান্তরা ||
    (শঙ্খ সংহিতা ১৫|২-৩)
    অর্থঃ সপিন্ড জ্ঞাতির জননে বা মরণে ব্রাহ্মণ
    দশাহ অশৌচ ভোগ করিয়া শুদ্ধ হয়;ক্ষত্রিয়
    দ্বাদশাহ;বৈশ্য পঞ্চদশাহ এবং শূদ্র একমাস
    অশৌচ ভোগ করিয়া শুদ্ধ হয়।
    || দক্ষ সংহিতা ||
    জাতিবিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি || (দক্ষ
    সংহিতা ৬|৭)
    অর্থঃ জনন বা মরণ হইলে ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয়
    দ্বাদশ দিন,বৈশ্য পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ
    দিনে শুদ্ধ হয়।
    || গৌতম সংহিতা ||
    ……… ক্ষত্রিয়স্য দ্বাদশ রাত্রং বৈশ্যস্যার্দ্ধম
    াসমেকং শূদ্রস্য ||গৌতম সংহিতা ১৪ অধ্যায়)
    অর্থঃ ক্ষত্রিয়ের দ্বাদশ রাত্র;বৈশ্যের পঞ্চদশ
    এবং শূদ্রের একমাস অশৌচ হয়।
    || কূর্ম্ম পুরাণ ||
    শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ |
    বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি ||
    (কূর্ম্ম পুরাণ,উপরিভাগ ২৩|৩৮)
    অর্থঃ ব্রাহ্মণ দশদিন,ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিন,বৈশ্য
    পঞ্চদশদিন এবং শূদ্রর ত্রিশ দিনে শুদ্ধ হয়।
    || লিঙ্গ পুরাণ ||
    অনন্তর ব্রাহ্মণের দশাহে শুদ্ধি হয়………….।ক্ষত্রি
    য়ের দ্বাদশ দিন সম্পূর্ণাশৌচ……….
    ………।………বৈশ্যের পঞ্চদশ দিনে ও শূদ্রের একমাস
    সম্পূর্ণাশৌচ।(লিঙ্গ পুরাণ,পূর্বভাগ ৮৯ অধ্যায়)
    || মার্কন্ডেয় পুরাণ ||
    দশাহং ব্রাহ্মণস্তিষ্ঠেদ্দানহোমাদিবর্জ্জিতঃ
    |
    ক্ষত্রিয় দ্বাদশাহঞ্চ বৈশ্য মাসার্দ্ধমেব চ ||
    শূদ্রস্ত্ত মাসামাসীত নিজকর্ম্মবিবর্জ্জিত |
    ততঃ পরং নিজ কর্ম্ম কুর্য্যুঃ সর্ব্বে যথেস্পিতম ||
    (মার্কন্ডেয় পুরাণ ৩৫|৪০,৪১)
    অর্থঃ জননাশৌচ ও মরণাশৌচে বিপ্রগণ দশদিন
    যাবৎ দান হোমাদি নিজ কর্ম্ম-বর্জ্জিত
    অবস্থিতি করিবেন এবং ক্ষত্রিয় দ্বাদশ
    দিন,বৈশ্যেরা পঞ্চদশ দিন ও শূদ্রগণ একমাস যাবৎ
    ঐ রূপ আচরণে থাকিবে।তৎপরে সকলেই
    শাস্ত্রোক্ত বিধানে স্ব স্ব কর্ম্মের অনুষ্ঠান
    করিবে।

    ReplyDelete