ভারতে সবচেয়ে বহুল আলোচিত ঘটনা হল রামজন্মভূমি অযোধ্যার তথাকথিত বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির পুনঃস্থাপনের চেষ্টার ঘটনা। ওটা কি সত্যিই মসজিদ ছিল? লেখা শুরুর আগে বলে দিতে চাই, ব্যক্তিগত ভাবে বাবরী মসজিদকে আমি ঐতিহাসিক স্থাপনা তথা প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করি, এবং এটা ভাঙ্গা মোটেই সমর্থন যোগ্য নয়। কিন্তু এই ঘটনাকে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে যে রাজনীতি করা হয়, রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় তার জবাব হিসেবে এই লেখা।
আমাদের সাধারন দৃষ্টিতে যেখানে নামাজ পড়া হয় না, তা কখনও মসজিদ পদবাচ্য হতে পারে না। পরিত্যক্ত 'বাবরি মসজিদে আর নামাজা পড়া হয় নি, বরং হিন্দু পুরোহিত সেখানে পুজো করতেন। ১৯৪৭ সালের পর থেকে সরকারের বেতনভুক কর্মচারী সেখানে পুজো করত। যাই হোক ওটি কখনওই মসজিদ নয়। বরং মন্দির। কিন্তু এক শ্রেণীর সেকুলার তাকে মন্দির বলে স্বীকার করতে নারাজ। তাই ভারতের পার্লামেন্টে 'বাবরি মসজিদ' কে কন্ট্রোভার্সিয়াল স্ট্রাকচার বা বিতর্কিত সৌধ বলে উল্লেখ করা হয়।
মসজিদের যে ছবিটি দেখছেন তা দেখলেই বুঝতে পারবেন পরিত্যাক্ত,ধূসর, মলিন, দেয়ালে শেওলা পড়া,মাটির ঢিবি হিসেবে টিকে থাকা পরিত্যাক্ত ওই স্থানটির গুরুত্ব হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল ওটা ভাঙ্গার পরই।যে স্থানে কোন দিন কোন মুসলিম ভুলেও ঢুকত না সেটি তখন হয়ে ওঠে তাদের কাছে পবিত্র ধর্মস্থান।হাস্যকরই বটে। এখন সেখানে মুসলিমরা নামাজ পড়তে চায়,মসজিদ বানাতে চায়। অথচ এটা নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল মুসলিমদের।মসজিদটি ১৫২৭ খ্রীষ্টাব্দে ভারতের প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে হিন্দু স্থাপনা ভেঙ্গে নির্মিত হয় এবং তার নাম অনুসারে নাম করন করা হয়।এর পর কালের আবর্তে ব্রিটিশ শাসনের আগে থেকে বছরের পর বছর মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল এটি।
বাবরী মসজিদের জায়গাতে যে মন্দির ছিল তা প্রত্নতত্ত্ব পরীক্ষায়ও নিশ্চিত ভাবে প্রমানিত হয়।২০০৩ সালে আদালতের আদেশক্রমে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাবরী মসজিদের উপর প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু করে এবং সেখানে যে রিপোর্ট দেয়া হয় সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, খননকাজের পর স্পষ্ট দক্ষিনভারতীয় রিতির মন্দিরের নিদর্শনের দেখা মিলেছে। পাথর,কারুকার্যময় ইট,জলপাত্র,ফুলপাতার কারুকাজ, পদ্ম ফুলের কারুকাজ, এগুলোর সন্ধান মিলেছে।
ক/http://www.rediff.com/
খ/http://en.wikipedia.org/
১৯৯২ সালে জনরোষে যখন বিতর্কিত স্থাপনা সমূহ সরিয়ে রাম মন্দির পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করা হয় সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত ১১ থেকে ১২ শতকের ২৬৫ টি দেবনাগরী অক্ষরে লেখা ফলক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০০৩ সালের ১২ মার্চ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত খনন কাজ চালায় এবং ১৩৬০ টি বস্তু সেখান থেকে সংগ্রহ করে। ৫৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়, বাবর নির্মিত তথাকথিত মসজিদের নিচে সুবৃহৎ হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন বিদ্যমান।এমনকি ওই স্থানে মানুষের অবস্থা খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকের সময় থেকে যা কার্বন ডেটিং পরিক্ষার মাধ্যমে প্রমানিত।মজার ব্যপার হল খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকে ভারতবর্ষে তো দুরের কথা ইতিহাসেই ইসলাম বলে কিছু খুজে পাওয়া যায় না। http://en.wikipedia.org/
এই লেখার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই প্যারাটি। বাবরী মসজিদের রায় হয় এলাহবাদ কোর্টে ২০১০ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর।তিন জন বিচারকের সমন্বয়ে গড়া বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন। বিচারক তিনজন হলেন, বিচারপতি এস আর আলাম, বিচারপতি ভানওয়ার সিং এবং বিচারপতি খেমাকারন। রায়ে তিন জন বিচারকই স্পষ্ট করে দেন যে, বাবরী মসজিদ স্থলে আগে বৃহৎ হিন্দু স্থাপত্য ছিল। এ রায়ের ফলে ওই স্থান সমান তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া হয় হিন্দু মহাসভা,সুন্নি ওআকফ বোর্ড ও নিরমহি আখড়ার মধ্যে।
অবশ্য আমি মনে করি বাবরি একটা প্রাচীন নিদর্শন, এখানে পুনরায় রাম মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করা উচিত হয় নি। কিন্তু এটাও দেখার বিষয় যে এই ঘটনায় সেখানকার মুসলিম জনসাধারণের জানমালের কোন ক্ষতি হয় নি। আর এই ঘটনার পরও মুসলিম অধ্যুষিত অযোধ্যার মানুষ বিজেপিকেই (বাবরি কান্ডের জন্য যে দলকে দায়ী করা হয়) ভোট দিয়ে জিতিয়েছে।
কিন্তু বাবরি পরবর্তী সন্ত্রাসে হাজার হাজার হিন্দুকে ভারত ও বাংলাদেশে (বিশেষ করে বাংলাদেশে) মারা হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালানো হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে, তা নিয়ে সেকুলাররা একেবারেই নীরব। বরং অনেকে আবার এই সব হিংসার জন্যও বাবরি কান্ডকেই দায়ী করে। সত্যিই তো ওরা যদি রামজন্মভূমিতে রাম মন্দির পুনঃস্থাপনের চেষ্টা না করত তাহলে তো মুসলমানরা এই সব কাজ করত না।
এখানে অনেকেই বলে, হিন্দুরা ভারতে মুসলমানদের কেন এই করে না, তাই করে না, তারা কেন মেনীমুখোর মত সহ্য করে। আমি বলি ভারতে হিন্দু সংগঠনগুলো যে সংযম দেখায় তার জন্য সকলের তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারণ তাদের একটা সামান্য ভুল কাজের জন্য বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের হিন্দুদের অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। বাবরি কান্ডই তার প্রমাণ।
অথচ এই ভারতবর্ষে বাতাস আজও কত সোমনাথ, বিশ্বনাথ মন্দির ভাঙ্গার দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ায়। সেজন্য কি মুসলিমরা কোন দিন ক্ষমা চেয়েছে?-নিরোদ সি চৌধুরী,(তথাকথিত) আব্রাহামিক মতবাদের অনুসারীদের গোঁড়ামী ও নিগ্রহের সংস্কৃতি সম্বন্ধে বলেন, "মুসলিমদের নূন্যতম অধিকার নেই বাবরী মসজিদ ধ্বংস সম্পর্কে অভিযোগ করার।১০০০ খ্রিষ্টাব্দ হতে কাথিওয়ার থেকে বিহার,হিমালয় থেকে বিন্ধ্যাচল পর্যন্ত প্রতিটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে।উত্তর ভারতের একটি মন্দিরও ধ্বংস থেকে বাঁচেনি।যে কয়েকটি বেঁচেছিল সেগুলো এইকারনেই যে প্রতিকূল ভৌগলিক অবস্থানের কারনে মুসলিম বাহিনী সেখানে পৌঁছতে পারেনি।অন্যথা এটা ছিল ধ্বংসের এক বিরামহীন যজ্ঞ।আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন কোন জাতি ই এটা ক্ষমা করবেনা।অযোধ্যার ঘটনা কখনোই ঘটতো না যদিনা মুসলিমরা(রাম মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ করার) ঐতিহাসিক সত্যটাকে স্বীকার করত।"
*এক জঙ্গি মুঘল আউরংজেব ধ্বংস করে ৮০ থেকে ষাট হাজার মন্দির।কি!অবিশ্বাস্য মনে হয় তাই http://en.wikipedia.org/
*কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, ১১৯৪ সালে কুতুবউদ্দিন আইবেক নামক দস্যু প্রথম আক্রমনেই এক হাজার মন্দির ধুলির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল।https://en.wikipedia.org/
*সুলতান মাহমুদ গজনি সোমনাথ মন্দির আক্রমন করে পঞ্চাশ হাজারের উপর নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে।
অথচ বিশ্বের অন্য কোন জাতি হলে এই ধর্ম অবমানার শোধ ঠিকই নিত। কিন্তু ভারত বর্ষ বলে শোধ নেয়া দুরের কথা উল্টো সোমনাথ মন্দির ভেঙে নির্মিত মসজিদ সরকারি টাকায় আবার পাশেই নির্মাণ করে দেয়া হয়... http://
*কৃষ্ণজন্ম ভূমি মথুরায় নির্মিত কেশব দেউ মন্দিরের স্থলে নির্মিত মসজিদ ইদ্গাহ সরকারি টাকায় রক্ষনাবেক্ষন করা হয়... http://
*ভারতের অন্যতম প্রাচীন মন্দির কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের স্থলে নির্মিত জ্ঞানবাপী মসজিদ সরকারি টাকায় সংস্কার করা হয় এবং তা রক্ষার জন্য ‘ বিশেষ ধর্মস্থান আইন’ তৈরি করা হয়; আর আদি স্থানের দাবী ছেড়ে পাশে মন্দির পুনঃস্থাপন করা হয়।... http://
অথচ এক রাম মন্দির পুনঃস্থাপনের চেষ্টার কারণে এসব ঘটনা যেন আজ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
No comments:
Post a Comment