২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের
মামলার রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকেই
হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে। ২৪ দিনে দেশের ৩২টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের
ওপর হামলা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত এসব হামলায় অন্তত ৩১৯টি মন্দির,
বাড়ি, দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা
হয়। এগুলোর মধ্যে দোকান ১৫২টি, বাড়ি ৯৬টি ও মন্দির ৭১টি।
এরপর আরও অনেক জায়গাতে হামলা হয়েছে।
সাঈদীর রায় ঘোষণার কিছুদিন আগে থেকেই নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে জামাত-শিবির সমর্থিত
পত্রিকাগুলোতে উস্কানীমূলক প্রারোচনা দেয়া হতে থাকে । যেমন, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় বলা হয়, “শাহবাগ
স্কয়ারে বাম-রাম ও কমিউনিস্টদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। তথাকথিত
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির নাটক মঞ্চস্থ করার আড়ালে মূলত ইসলামের দুশমনেরা দেশ থেকে
ইসলাম নির্মূলের হুঙ্কার দিচ্ছে। ” ১৫ ফেব্রুয়ারি,
২০১৩ প্রকাশিত একই পত্রিকায় আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেন,
“বর্তমানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং চিহ্নিত নাস্তিকরা
যেভাবে একের পর এক ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারমূলক আঘাত হানার প্রয়াস এবং
দাড়ি-টুপীধারী পুরুষ ও পর্দানশীন নারীদের উপর হামলা চালানোর মত বর্বরতা ও দুঃসাহস
দেখাচ্ছে, তাতে কোন মুসলমানই উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেনা।
তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুসলমানদেরকে এক কালিমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ
করেন।”
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম প্রত্রিকায় জাগপা সভাপতি
শফিউল আলম প্রধান বলেন, “এটা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট যে,
আমাদের ধর্ম স্বাতন্ত্র্য, স্বাধীনতার
বিরুদ্ধে আল্লাহর দুশমনরা প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম সভ্যতার
বিরুদ্ধে ইহুদি ও ব্রাহ্মণ্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই শাহবাগে প্রজেক্ট
চালু করা হয়েছে।” সংগ্রাম পত্রিকার ২২ ফেব্রুয়ারি,
২০১৩ সংখ্যায় বিবিসির বংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সিরাজুর রহমান
বলেন, “এ দেশে প্রধানমন্ত্রী আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের
কথা ভাবতে পারেন না। ফসল ভালো হলে তিনি ‘মা-দুর্গার’
প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।” একই পত্রিকাটির
২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ এর সম্পাদকীয় তে বলা হয়েছে, “আবার নারী-পুরুষ একই সাথে, একই কাতারে নামাজ
পড়েছে। আবার হিন্দুরাও নাকি নামাজে অংশগ্রহণ করেছে।” একইভাবে,
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সংখ্যায়
চরমোনাইপীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মো: ফয়জুল
করিমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “দেশের ২৭টি জেলার প্রশাসক
হিন্দু, ২০০ ওসি হিন্দু, সচিবালয়সহ
সর্বক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আর প্রকৃত মুসলমান আমলা
ও কর্মকর্তারা হচ্ছেন ওএসডি বা চাকরিচ্যুত।”
দৈনিক আমার দেশের ১০ ফেব্রুয়ারি
২০১৩ সংখ্যায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, “ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক … সংখ্যালঘু
শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমার দেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। … ভারতীয় কায়দায় প্রদীপ প্রজ্বলন : গতকাল সমাবেশের পঞ্চম দিনে
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর উপস্থিতিতে ভারতীয় হিন্দুদের রীতিতে প্রদীপ প্রজ্বলন
করা হয়।” আমার দেশের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ প্রকাশিত আরেকটি
নিবন্ধে মাহমুদুর রহমান, সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালকে
সুলতানা কামাল চক্রবর্তী নামে অভিহিত করেন। একইভাবে গোলাম আযমও ১৪ আগষ্ট, ১৯৭১ সালে এক অনুষ্ঠানে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন
আহমেদকে শ্রী তাজউদ্দীন নামে উল্লেখ মুক্তিযু্দ্ধের সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে চেষ্ট
করেছিলেন।
এই মাহমুদুর রহমান এর আগে ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন
রুখতে ইতিহাস জানা দরকার’ শিরোনামে লেখাতে
লিখেছে, “বাংলাদেশের মানুষের ভিন্ন
সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে দেয়ার লক্ষ্যে এদেশের ক্ষমতাসীন মহল শরত্চন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়ের মতো করেই বাঙালি এবং মুসলমানকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ রূপে দাঁড়
করানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শাহবাগে সার্বক্ষণিক স্লোগান,
‘আমি কে তুমি কে, বাঙালি বাঙালি’,
প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে বাংলাদেশের
পরিবর্তে বাংলার গুণকীর্তন, সংসদে বাংলা ও বাঙালির বন্দনা,
মিডিয়ায় বাঙালিত্ব প্রচারণার আড়ালে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু
সংস্কৃতির জয়গান—এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।”
ভারতের ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে “প্রোটেস্টারস অ্যাট শাহবাগ ইন বাংলাদেশ ব্যাকড বাই ইন্ডিয়া” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটির
কিছু শব্দ বিকৃত করে,
উস্কানিমূলক শব্দ ব্যবহার করে পরদিন বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি সংখ্যার ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের
শিরোনাম ছিল “ভারতের মদতে শাহবাগ আন্দোলন: ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন”।
এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদনটির
শিরোনাম নিয়েও যথেষ্ট বিভ্রান্তির অবকাশ আছে। প্রতিবেদনটির
শিরোনাম হতে পারত ‘‘ইন্ডিয়া সাপোর্টস শাহবাগ প্রোটেস্ট’’। তাহলে
হয়তো ‘আমার
দেশ’ রং মাখিয়ে সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা দেওয়ার সুযোগ পেত
না।
‘আমার দেশ’-এর
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
“শাহবাগ আন্দোলন ভারতের মদতপুষ্ট বলে
জানিয়েছে দেশটির সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া।…
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের
রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ের আন্দোলনকারীদের প্রতি প্রতিবেশি ভারতের জোরালো
মদত রয়েছে। মদতের
প্রমাণ হিসেবে প্রতিবেদনে ভারতের অন্যতম দুজন নীতিনির্ধারকের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করা
হয়েছে। এদের একজন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা
উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন এবং অন্যজন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ।”
অথচ, ‘আমার দেশ’
পত্রিকায় শিবশঙ্কর মেননের বক্তব্যের বাংলা অনূদিত ভাষ্যে কোথায় ‘মদত’ দেওয়ার কখা উল্লেখ করা হয়নি।
যেমন, ‘আমার দেশ’-এর অনূদিত ভাষ্যে বলা হয়েছে, “শিবশঙ্কর মেনন
শুক্রবার বলেছেন, ‘বাংলাদেশি মুক্তমনা তরুণরা শাহবাগে
বিক্ষোভ করছে। তারা
উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মৌলিক মূল্যবোধকে সমর্থন দিচ্ছে।”
একইভাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান
খুরশীদের বক্তব্যের অনুবাদে ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় ‘সংহতি’, ‘জোরালো
অনুভূতি’ ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যাবহার করা হয়েছে।
অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই আমার দেশের অনূদিত
ভাষ্যে ‘মদতের’ পরিবর্তে সমর্থন
ও সংহতি কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলা ভাষায় ‘মদত’
শব্দটি মূলত নঞর্থক ও ‘সমর্থন’ শব্দটি ধনাত্নক অর্থে ব্যাবহার করা হয়। ‘মদত’ শব্দটি সচরাচর সমর্থনের সমার্থক হিসেবে
ব্যবহার হতে দেখা যায় না।
তাহলে ‘আমার
দেশ-এর প্রতিবদনটিতে ’সমর্থন’ ও ’সংহতি’ শব্দ দুটোর বদলে ‘মদত’ শব্দটি কেন ব্যবহার করা হল? এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, শাহবাগ আন্দোলন ভারতের
পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে এ ধারণা প্রচার করে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি অংশের
ভারতবিদ্বেষী মনোভাবকে উসকিয়ে দিয়ে আন্দোলনটিকে নসাৎ করা।
এর আগেও আমার দেশ হিন্দুদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালায়। ২০১২
সাল। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর
হাইস্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সৈয়দ আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘হুযুর কেবলা’ প্রবন্ধের
নাট্যরূপ মঞ্চায়ন হয়।
এ ঘটনার দুদিন পর ওই নাটকে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটুক্তি করা
হয়েছে মর্মে স্থানীয় ‘দৈনিক দৃষ্টিপাত’ পত্রিকায় ‘কালিগঞ্জে নাটকের মাধ্যমে মহানবীকে
(সা.) অসম্মান-তৌহিদী জনতার প্রতিরোধে ভণ্ডল’ শিরোনামে
একটি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
এর ফলে কয়েকদিন ধরে কালিগঞ্জে ১৫টি হিন্দু এবং মুসলমান বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের
ঘটনা ঘটে।
১১ এপ্রিল বুধবার সাতক্ষীরা
জেলা প্রশাসক ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে পত্রিকাটির
প্রকাশনা বাতিল করা হয়।
ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধনকরণ) আইন ১৯৭৩-এর ২০(ঙ)
(১)(২)(৩) উপধারা মতে ‘দৈনিক
দৃষ্টিপাত’ পত্রিকাটি বন্ধের আদেশ দেন সাতক্ষীরা জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট।
দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকায় রিপোর্টের সত্যতা যাচাইয়ে ৪ এপ্রিল ৮টি
কারণ উল্লেখ করে পত্রিকাটির সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় এবং ৩ দিনের
মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।
পত্রিকাটির সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম নোটিশের জবাব দিলেও প্রকাশিত
রিপোর্টের সপক্ষে কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন।
কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিএনপি জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক
সংগ্রাম আর দৈনিক নয়া দিগন্ত এই জামায়াতের
দালাল পত্রিকা দৈনিক
দৃষ্টিপাতকে সমর্থন করে রিপোর্ট প্রকাশ করে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/04/18/141494
http://www.dailynayadiganta.com/details/47807
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=83101
সাম্প্রদায়িক দৈনিক আমার দেশ এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/04/06/139724
করা বিক্ষোভকে “সাতক্ষীরায়
নির্যাতনের প্রতিবাদ : শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রদের
তাণ্ডব” শিরোনামে উস্কানিমূলক
রিপোর্ট প্রকাশ করে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/04/06/139724
অথচ ঐদিন কোন গাড়ি ভাঙচুরও করেনি শিক্ষার্থীরা।
স্বৈরাচারী এরশাদও একইভাবে পতনের অন্তিম
মুহুর্তে্, ১৯৯০ সালের অক্টোবরে, মওলানা মান্নানের পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবকে ব্যবহার করে স্বৈরচারবিরোধী
গণতান্ত্রিক আন্দোলন নসাৎ করার চেষ্টা করেছিল। ১৯৯০
এ অক্টোবরের ৩১ তারিখের দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস-সংক্রান্ত মিথ্যা
সংবাদের ওপর ভিত্তি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থানগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঢাকার
ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারাদেশের হিন্দু উপাসনালয়গুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর ও
লুটাপাট করা হয়।
জনগণের প্রতিরোধে যদিও হামলাকারীরা
পালিয়ে যায়, হামলায় মদতদানকারী দৈনিক ইনকিলাব ও তার অবৈধ মালিক
ডা. আলীম চৌধুরীর হত্যায় সহায়তাকারী মওলানা মান্নানকে কখনও এজন্য জবাবদিহি করতে
অথবা শাস্তি পেতে হয়নি। শুধুমাত্র
ইনকিলাবের নিবন্ধন সাময়িকভাবে (১৭ দিনের জন্য) বাতিল করা হয়েছিল।
এ দায়মুক্তির ফলশ্রুতিতে, নব্বই-উত্তর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও প্রগতিবাদী জনগণের
ওপর একের পর এক আঘাত আসতে থাকে। ১৯৯২
সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার পর, দেশব্যাপী হিন্দু সমাজের ওপর যে
বর্বর ও ভয়াবহ নির্যাতন নেমে আসে- তা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি মিলিটারি ও তাদের
দোসরদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন
ও লুণ্ঠনের বিভীষিকার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে, ২০০১ সালে নির্বাচন-উত্তর যে খুন ও ধর্ষণ হয়েছিল তা যে কোনো
গণতান্ত্রিক সমাজে নজিরবিহীন।
নির্বাচন-উত্তর
হামলার পর বহু হিন্দু পরিবারকে প্রাণের মায়া নিয়ে বসতভিটা ছেড়ে, দেশান্তরী হতে হয়েছিল। জামায়াত-বিএনপির
ক্যাডারদের হাতে সম্ভ্রমহানি হওয়া পূর্ণিমাকে বহুদিন পালিয়ে থাকতে হয়েছিল প্রাণের
মায়ায়।
আর এ সকল উস্কানীমূলক বক্তব্যেরই
পরিণতি হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর একের পর এক হামলা যা অনেক হিন্দুকে
নিরাপত্তার কারণে বসতবাড়ী ছেড়ে, শাঁখা-সিদুঁর ও ধর্মীয়
অনুষ্ঠান পরিহার করে নিজেদের ধর্মীয় স্বত্তা বর্জন করতে বাধ্য করছে। ১৯৭১ সালে
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি মিলিটারিরা একইভাবে বাঙালি পুরুষদের মুসলমানিত্ব
প্রমাণ দিতে বাধ্য করতো।
কিন্তু, স্বাধীনতার
৪২ বছর পরও যখন অমুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের ১৯৭১ সালের মতো প্রাণের মায়ায়
স্বাতন্ত্র বিসর্জন দিতে হয়, তখন মনে হয় এ কেমন স্বাধীনতা
এ কেমন স্বাধীন দেশ!