সূত্রঃ প্রথম আলো
উপমহাদেশের দুটি অঞ্চল ভারতের উত্তর প্রদেশ এবং পাকিস্তানের সিন্ধুর মধ্যে অনন্য বন্ধন আছে, আছে ব্যবধানও।
প্রথমেই বন্ধনের কথা। ১৯৪৭ সালে উত্তর প্রদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান পাকিস্তানের সিন্ধু চলে আসে। প্রদেশটির বর্তমান জনসংখ্যার ২১ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু। সিন্ধুর প্রতি পাঁচজন অধিবাসীর মধ্যে একজন ভারত এবং বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ থেকে আসা অভিবাসীদেরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম।
পূর্বপুরুষদের গ্রাম, শহর বা বসতির প্রসঙ্গ এখনো অনেকের চোখকে উজ্জ্বল করে তোলে, অন্যদের করে তোলে স্মৃতিকাতর। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ও সমৃদ্ধ পারিবারিক জীবনের প্রত্যাশায় তারা সবাই জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশত্যাগ করেছে। তাদের সন্তানদের পাঠ্যবই স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবে আগামী অনেক দশকেও অভিবাসী হিন্দুদের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে না এবং তারা অবহেলিতই থেকে যাবে।
উত্তর প্রদেশ সম্প্রতি তাদের ৪০৩ আসনের বিধানসভার সদস্য নির্বাচন করেছে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতে বেশি সংখ্যক মুসলমান বাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যার (প্রায় ২০ কোটি) মধ্যে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশই মুসলমান। রাজ্যেও প্রায় অর্ধেক সাধারণ আসনে মুসলমান প্রার্থীরা ছিলেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনকি তাঁদের মধ্যে ৬৮ জন বিধানসভার সদস্য হতে পেরেছেন। আরও ৬৪ জন দ্বিতীয় হয়েছেন।
প্রায় সব দলই মুসলমান প্রার্থী দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির (এসপি) আদিল শেখ বিধানসভার স্পিকার সুখদেব রাজহারকে পরাজিত করেছেন। সাবেক মন্ত্রী নন্দ গোপাল গুপ্ত এসপির নতুন মুখ হাজি পারভেজ আহমেদের কাছে হার মেনেছেন। চারবার জয়ী বিজেপির ইন্দ্র দেব সিং ভোটযুদ্ধে হেরেছেন মোহাম্মদ গাজীর কাছে। ফলাফলের পর কেউ অপ্রীতিকর কথা বলেনি, কোনো ধরনের অভিযোগ তোলা হয়নি, হিন্দুত্ববাদীদের ধরাশায়ী করতে কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব পাকানোর কথা বলা হয়নি, এমনকি নিম্ন বর্গের মুসলমানদের কাছে সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের পরাজয়ের পেছনে বহুল প্রচলিত বিদেশি হাতও কেউ দেখেনি।
এ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি তাদের আসন সংখ্যা ৯৭ (২০০৭) থেকে ২২৪-এ (সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) উন্নীত করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বহুজন সমাজ পার্টি ২০৬ থেকে মাত্র ৮০-তে নেমে গেছে। মাত্র ৪ শতাংশ ভোট ঘুরে যাওয়ায় এই বড় পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে এবং সব সমালোচকই বিশ্বাস করেন, মুসলমানদের ভোটই সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে।
স্মরণ রাখা দরকার, উর্দু সংস্কৃতি ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কেন্দ্র উত্তর প্রদেশ। কংগ্রেসের নিজের শহর রায়বেরেলিতে সংখ্যালঘু মুসলমান ভোটাররাই রাজনৈতিক ভাগ্য ঘুরিয়ে দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এটাই নির্বাচনের বৈচিত্র্য এবং গণতন্ত্রের ক্ষমতা।
আমি বলছি না, সীমান্তের ওপারে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। তারাও অনেক সমস্যা মোকাবিলা করে। কিন্তু অপেক্ষা করুন, আমি মনে করি দেশপ্রেম-হীনতার তকমা এড়াতে আমি যা বলতে চাই তার জন্য আমার দুঃখপ্রকাশ এবং আসল কথা বলার আগে যুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। তার চেয়ে ভালো তা উচ্চ স্বরে ও পরিষ্কারভাবে বলা।
১৯৪৭ সালে বিপুল সংখ্যক হিন্দু সিন্ধু থেকে ভারতে চলে যায় এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে সেখানকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তখন জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বহু হিন্দু দেশত্যাগ করেনি। সিন্ধুতে অমুসলিমদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ এবং উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের অর্ধেক। কিন্তু কেউ কি কখনো শুনছে, একটি সাধারণ আসনের নির্বাচনে একজন অমুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং জিতেছেন? কিছু পীড়াদায়ক তথ্য বলছি:
২০০৮ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে একজন মাত্র হিন্দু প্রার্থী ছিলেন। জাতীয় পরিষদের ২২৯ নম্বর আসনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মনোনয়ন নিয়ে মহেশ কুমার মালহানি হাজার খানেক ভোট পেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল) আরবাব জাকাউল্লার কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। সিন্ধুর প্রাদেশিক আসন পিএমএল-এফের প্রার্থী রাজবীর সিং পিপিপির আলী মারদান শাহর বিপক্ষে বিপুল ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পিপিপির ডা. দয়ারামই একমাত্র হিন্দু, যিনি ২০০৮ সালে সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
দুই দেশ ও প্রদেশের মধ্যে এটাই পার্থক্য। এর অর্থ এই নয়, পাকিস্তানে হিন্দুদের রাজনীতি হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ধার্মিক ভোটারদের জন্য হিন্দু প্রার্থীদের যথেষ্ট হালাল মনে করে না। সিন্ধুর জাতীয় ও প্রাদেশিক আসনে ২৬ জন স্বতন্ত্র হিন্দু প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নয়জন চিকিত্সক এবং অন্যদের অধিকাংশই প্রকৌশলী ও আইনজীবী। এটা সুস্পষ্ট, সিন্ধুর মধ্যবিত্ত হিন্দু শ্রেণী রাজনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। এদের মধ্যে কেউ-ই প্রকৃতপক্ষে ১০০ ভোটও পাবে না। এর অর্থ তাদেরকে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। কোনো দল কি তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সাহস করবে?
উপমহাদেশের দুটি অঞ্চল ভারতের উত্তর প্রদেশ এবং পাকিস্তানের সিন্ধুর মধ্যে অনন্য বন্ধন আছে, আছে ব্যবধানও।
প্রথমেই বন্ধনের কথা। ১৯৪৭ সালে উত্তর প্রদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান পাকিস্তানের সিন্ধু চলে আসে। প্রদেশটির বর্তমান জনসংখ্যার ২১ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু। সিন্ধুর প্রতি পাঁচজন অধিবাসীর মধ্যে একজন ভারত এবং বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ থেকে আসা অভিবাসীদেরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম।
পূর্বপুরুষদের গ্রাম, শহর বা বসতির প্রসঙ্গ এখনো অনেকের চোখকে উজ্জ্বল করে তোলে, অন্যদের করে তোলে স্মৃতিকাতর। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ও সমৃদ্ধ পারিবারিক জীবনের প্রত্যাশায় তারা সবাই জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশত্যাগ করেছে। তাদের সন্তানদের পাঠ্যবই স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবে আগামী অনেক দশকেও অভিবাসী হিন্দুদের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে না এবং তারা অবহেলিতই থেকে যাবে।
উত্তর প্রদেশ সম্প্রতি তাদের ৪০৩ আসনের বিধানসভার সদস্য নির্বাচন করেছে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতে বেশি সংখ্যক মুসলমান বাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যার (প্রায় ২০ কোটি) মধ্যে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশই মুসলমান। রাজ্যেও প্রায় অর্ধেক সাধারণ আসনে মুসলমান প্রার্থীরা ছিলেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনকি তাঁদের মধ্যে ৬৮ জন বিধানসভার সদস্য হতে পেরেছেন। আরও ৬৪ জন দ্বিতীয় হয়েছেন।
প্রায় সব দলই মুসলমান প্রার্থী দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির (এসপি) আদিল শেখ বিধানসভার স্পিকার সুখদেব রাজহারকে পরাজিত করেছেন। সাবেক মন্ত্রী নন্দ গোপাল গুপ্ত এসপির নতুন মুখ হাজি পারভেজ আহমেদের কাছে হার মেনেছেন। চারবার জয়ী বিজেপির ইন্দ্র দেব সিং ভোটযুদ্ধে হেরেছেন মোহাম্মদ গাজীর কাছে। ফলাফলের পর কেউ অপ্রীতিকর কথা বলেনি, কোনো ধরনের অভিযোগ তোলা হয়নি, হিন্দুত্ববাদীদের ধরাশায়ী করতে কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব পাকানোর কথা বলা হয়নি, এমনকি নিম্ন বর্গের মুসলমানদের কাছে সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের পরাজয়ের পেছনে বহুল প্রচলিত বিদেশি হাতও কেউ দেখেনি।
এ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি তাদের আসন সংখ্যা ৯৭ (২০০৭) থেকে ২২৪-এ (সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) উন্নীত করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বহুজন সমাজ পার্টি ২০৬ থেকে মাত্র ৮০-তে নেমে গেছে। মাত্র ৪ শতাংশ ভোট ঘুরে যাওয়ায় এই বড় পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে এবং সব সমালোচকই বিশ্বাস করেন, মুসলমানদের ভোটই সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে।
স্মরণ রাখা দরকার, উর্দু সংস্কৃতি ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কেন্দ্র উত্তর প্রদেশ। কংগ্রেসের নিজের শহর রায়বেরেলিতে সংখ্যালঘু মুসলমান ভোটাররাই রাজনৈতিক ভাগ্য ঘুরিয়ে দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এটাই নির্বাচনের বৈচিত্র্য এবং গণতন্ত্রের ক্ষমতা।
আমি বলছি না, সীমান্তের ওপারে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। তারাও অনেক সমস্যা মোকাবিলা করে। কিন্তু অপেক্ষা করুন, আমি মনে করি দেশপ্রেম-হীনতার তকমা এড়াতে আমি যা বলতে চাই তার জন্য আমার দুঃখপ্রকাশ এবং আসল কথা বলার আগে যুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। তার চেয়ে ভালো তা উচ্চ স্বরে ও পরিষ্কারভাবে বলা।
১৯৪৭ সালে বিপুল সংখ্যক হিন্দু সিন্ধু থেকে ভারতে চলে যায় এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে সেখানকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তখন জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বহু হিন্দু দেশত্যাগ করেনি। সিন্ধুতে অমুসলিমদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ এবং উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের অর্ধেক। কিন্তু কেউ কি কখনো শুনছে, একটি সাধারণ আসনের নির্বাচনে একজন অমুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং জিতেছেন? কিছু পীড়াদায়ক তথ্য বলছি:
২০০৮ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে একজন মাত্র হিন্দু প্রার্থী ছিলেন। জাতীয় পরিষদের ২২৯ নম্বর আসনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মনোনয়ন নিয়ে মহেশ কুমার মালহানি হাজার খানেক ভোট পেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল) আরবাব জাকাউল্লার কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। সিন্ধুর প্রাদেশিক আসন পিএমএল-এফের প্রার্থী রাজবীর সিং পিপিপির আলী মারদান শাহর বিপক্ষে বিপুল ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পিপিপির ডা. দয়ারামই একমাত্র হিন্দু, যিনি ২০০৮ সালে সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
দুই দেশ ও প্রদেশের মধ্যে এটাই পার্থক্য। এর অর্থ এই নয়, পাকিস্তানে হিন্দুদের রাজনীতি হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ধার্মিক ভোটারদের জন্য হিন্দু প্রার্থীদের যথেষ্ট হালাল মনে করে না। সিন্ধুর জাতীয় ও প্রাদেশিক আসনে ২৬ জন স্বতন্ত্র হিন্দু প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নয়জন চিকিত্সক এবং অন্যদের অধিকাংশই প্রকৌশলী ও আইনজীবী। এটা সুস্পষ্ট, সিন্ধুর মধ্যবিত্ত হিন্দু শ্রেণী রাজনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। এদের মধ্যে কেউ-ই প্রকৃতপক্ষে ১০০ ভোটও পাবে না। এর অর্থ তাদেরকে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। কোনো দল কি তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সাহস করবে?
No comments:
Post a Comment