জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ
দাঙ্গা
কবলিত গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে হিন্দুদেরকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার মত ঘৃণ্য পাশবিকতায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে মুসলিমরা।হিন্দু
পুরুষদেরকে মাথায় টুপি এবং মুখে দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামুলক করা হয়। মহিলাদের হাতের শাঁখা ভেঙ্গে ফেলে এবং কপালের সিঁদুর মুছে দেয় মুসলিমরা। তাদেরকে কলেমা পড়ে ইসলামে ধর্মান্তকরন করা হয়। সেখানে হিন্দু মহিলাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙ্গে তাদের স্বামী ও পুত্র ও শিশু কন্যাদের হত্যা করে ওই হিন্দু মহিলাদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে লীগ গুণ্ডারা বিয়ে করত। মুসলিমরা তাদের বাড়ি টহল দেয়া শুরু করে এবং গ্রামেরমৌলবিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসলামিক শিক্ষা নিতে বাধ্য করতে থাকে।হিন্দু পুরুষদেরকে মুসলিমরা জোর করে মসজিদে নিয়ে নামাজ পড়াত।হিন্দুদেরকে
জোর করে গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা হয় কারণ হিন্দুধর্মানুসারে
গরু তাদের কাছে পবিত্র প্রাণী বিধায় এর মাংস তারা খায় না ।হিন্দু মেয়ে এবং মহিলাদের মুসলিমরা জোর করে বিয়ে করে।ধর্মান্তরিত
হিন্দুদের আরবী নামে নতুন নামকরণ করা হয়।মুসলিম নেতারা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের নামের টাইটেল যেমন চৌধুরী,ঠাকুর প্রভৃতি নামের শেষে যুক্ত করতে অনুমতি দেয়।
অশোকা
গুপ্ত যার স্বামী চট্টগ্রামের একজন বিচারক ছিলেন। তিনি সেই সব মানুষদের মধ্যে একজন যারা সর্বপ্রথম নোয়াখালীতে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। তিনি একজন দুর্ভাগা মহিলার কথা জানতেন, যার স্বামী তাদের কাছে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন।প্রতি রাতে গ্রামের মুসলিমরা ওই মহিলাকে
ধরে নিয়ে যেত এবং ধর্ষণ করত। কিন্তু তারা গ্রাম থেকে পালাতেও পারত না।অশোকা গুপ্ত বলেন,তারা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে এ ব্যাপারে
অভিযোগ করেন। কিন্তু ওই দুর্ভাগাদের সাহায্যের জন্য কেউ ছিল না।
ধর্মান্তরিতদের চলাচল ছিল মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণাধীন।কখনও গ্রামের বাইরে যেতে হলে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিতে হত ।রামগঞ্জ
পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত খালিশপাড়াতে মুসলিমরা ধর্মান্তরিত হিন্দুদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত আদায় করে।
যখন
এই পাশবিক হিন্দু নিধন আর নেক্কার জনক ধর্মান্তকরনের খবর বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশ হতে শুরু করে আশ্চর্যজনক ভাবে মুসলিম লীগ পরিচালিত সংবাদপত্র দি স্টার অফ ইণ্ডিয়া(The Star of India) জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের ঘটনা অস্বীকার করে বসল। যদিও এসেম্বেলিতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রশ্নের উত্তরে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী বলেন শুধুমাত্র ত্রিপুরা জেলাতে ৯,৮৯৫ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা ঘটেছে।যদিও এটিত মূল সংখ্যার তুলনায় হয়ত খুবই নগন্য। নোয়াখালীতে কতগুলো ধর্মান্তকরনের ঘটনা ঘটেছে তার হিসাব হয়নি কিন্তু সহজে বোঝা যায় তার সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। এডওয়ার্ড স্কিনার সিম্পসন তার রিপোর্টে কেবলমাত্র ত্রিপুরা জেলার তিনটি পুলিশ স্টেশন যথা ফরিদ্গঞ্জ,চাঁদপুর ও হাজিগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত এলাকাতেই ২২,৫৫০ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা
লিপিবদ্ধ করেন। ডঃ তাজ-উল-ইসলাম হাশমী মনে করেন,নোয়াখালী গণ হত্যায়
যে পরিমান হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে তার কয়েকগুন বেশি হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ এবং ধর্মান্তকরন করা হয়েছে।এম.এ.খান এর মতে, নোয়াখালীর ৯৫ ভাগ
হিন্দুদেরই জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তকরন করেছিল মুসলিমরা।বিচারপতি জি.ডি. খোসলা মনে করেন, নোয়াখালীর সমগ্র হিন্দু জনগোষ্ঠীর সর্বস্ব লুট করে নেয়া হয়েছিল এবং তাদের কে জোরপূর্বক মুসলমান
বানানো হয়েছিল।কংগ্রেস
সভাপতি আচার্য্য কৃপালনির স্ত্রী সুচেতা কৃপালনি নোয়াখালিতে নারী উদ্ধার করতে যান। দাঙ্গার খলনায়ক গোলাম সরোয়ার ফতোয়া দেয়, যে সুচেতাকে ধর্ষণ করতে পারবে তাকে বহু টাকা দেওয়া হবে এবং গাজী উপাধিতে ভূষিত করা হবে। সুচেতা সবসময় পটাসিয়াম সাইনাইড ক্যাপসুল গলায় ঝুলিয়ে রাখতেন।
আনুষ্ঠানিক পর্যায়
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা এবং বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য কামিনী কুমার দত্ত ১৩ অক্টোবরে নোয়াখালীতে ব্যক্তিগত ভাবে অনুসান্ধানে যান এবং নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারেণ্টেনডেনট
আবদুল্লাহর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ১৫ তারিখে বাংলা সিভিল সাপ্লাই এর মন্ত্রীর সাথে তিনি সাক্ষাত করেন যিনি তখন নোয়াখালী যাচ্ছিলেন।নোয়াখালী
থেকে ফেরার পরে তিনি কার্যকরী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন।তিনি বিবৃতি দেন,দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় জীবনের ঝুঁকি ব্যতীত বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে পারত না।দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় ১৪ অক্টোবরের আগে
কোন আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের পাঠানো হয়নি।তিনি আরও বিবৃত করেন, কর্তৃপক্ষ মুলত বাইরের দুনিয়ার চোখ থেকে আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি লুকানোর জন্যই বেশি উদ্বিগ্ন ছিল।
১৬
অক্টোবরে কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী নোয়াখালীতে হিন্দুদের উপর চলতে থাকা পাশবিক গণ হত্যা,ধর্ষণ,জোরপূর্বক ধর্মান্তকরনের কথা স্বীকার করেন।তিনি আরও বলেন এই দাঙ্গার
সুত্রপাত কিভাবে সে ব্যপারে তার কোন ধারনা নেই।তিনি এই মর্মে বিবৃতি দেন যে,খাল-বিল সমূহের নাব্যতা কম থাকায়,ব্রিজ-সাকো গুলো ভেঙ্গে ফেলায় এবং রাস্তা গুলো আটকে রাখায় সেখানে সৈন্য পাঠানো ছিল দুরহ ব্যপার।তিনি বলেন সৈন্য পাঠানোর পরিবর্তে সেখানে ছাপানো প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে, রেডিওতে সতর্কবার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।১৮ অক্টোবর বাংলার গভর্নর ফেড্রিক ব্যুরোস, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী এবং বাংলার পুলিশের মহাপরিদর্শক প্লেনে করে আকাশ পথে দাঙ্গা উপদ্রুত ফেনী জেলার কিছু অংশ ঘুরে দেখেন। এরপরে বাংলার প্রাদেশিক সরকার নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলার করুন অবস্থা মূল্যায়নের জন্য একটি পরিদর্শক দল পাঠায়। এই পরিদর্শক দলে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের সদ্য নিয়োগ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল,বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের শ্রমমন্ত্রী শামসুদ্দিন আহমেদ,বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম,ফজলুর রহমান,হামিদুল হক চৌধুরী,মোয়াজ্জেম হোসেন,এ. মানিক, বি. ওয়াহেদুজ্জামান।
ভারত সেবাশ্রমের স্বামী অভয়ানন্দ দাঙ্গায় পীড়িতদের ত্রান বিতরণ করছেন।এটি তৎকালীন নোয়াখালীর অন্তর্গত লক্ষ্মীপুরের দালালবাজার এলাকার ছবি
|
১৯
অক্টোবর মহত্মা গান্ধীর পরামর্শে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি জীবাত্মারাম ভগবানদাস কৃপালিনী,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম,খনি ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শরৎচন্দ্র বসু,বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ,সুচেতা কৃপালিনী,
মেজর জেনারেল এ.সি. চট্টোপাধ্যায়, কুমার দেবেন্দ্র লাল খাঁ এবং আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক আকাশ পথে চট্টগ্রামে যান।[৬৪]এসময় তারা কুমিল্লাতে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি করেন যেখানে হাজার হাজার নির্যাতিত হিন্দু তাদের উপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন।বাংলার গভর্নর ফেড্রিক ব্যুরোস পরিদর্শক দলকে বলেন,প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর নির্দেশে দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।তিনি হাজার হাজার হিন্দু মহিলাদের ঘৃণ্যভাবে ধর্ষিত ও নিগৃহীত হবার প্রসঙ্গে বলেন,হিন্দু মহিলারা প্রকৃতিগত ভাবেই মুসলিম মহিলাদের তুলানায় বেশি সুন্দর।
২১
অক্টোবরে ভারত এবং বার্মার (মিয়ানমার)
আন্ডার সেক্রেটারি আর্থার হ্যান্ডারসন বাংলার প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত নোয়াখালী দাঙ্গা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন হাউস অফ কমেন্সে
পাঠ করেন।প্রতিবেদনে
বলা হয় , হতাহতের সংখ্যা তিন অঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।শরৎ চন্দ্র বসু হাউস অফ কমেন্সে
এই অদ্ভুদ মিথ্যাচারপূর্ণ
প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করে প্রত্যাখ্যান করেন।তিনি বিবৃতি দেন,জমিদার সুরেন্দ্রনাথ বসুর বসত বাড়ি এবং অফিসে আক্রমণের একটি ঘটনাতেই ৪০০ এর উপর
হিন্দুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
লক্ষ্মীপুরে রাজেন্দ্রলালের নামে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হয় |
২৫
অক্টোবরে আনন্দ বাজার এবং হিন্দুস্থান স্ট্যানডার্ড এর ব্যবাস্থাপনা পরিচালক
সুরেশ চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে নতুন দিল্লীতে একটি একটি সভা হয়। সেখানে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয় যেখানে দাঙ্গা দমনে ব্যর্থ মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভাকে অবিলম্বে অব্যহতি দিয়ে নোয়াখালীতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবী করা হয়েছিল। ২৬ অক্টোবরে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বাহিনীর জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এফ.আর.আর. বুচার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভয়াবহ দাঙ্গায় বিপর্যস্ত হিন্দু জনগোষ্ঠীর আত্মবিশ্বাস কবে নাগাদ ফিরে আসবে তা বলা অসম্ভব।
সাহায্য কার্যক্রম
ইতিহাসে
এই জঘন্য ও বর্বর হত্যাকাণ্ড ও নারী নিগ্রহের ঘটনা যখন বাইরের বিশ্বে পৌঁছাতে সক্ষম হল তখন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,ধর্মীয় সংগঠন দাঙ্গা পীড়িত নোয়াখালীর সর্বহারা হিন্দুদেরকে উদ্ধার করতে ও ত্রান বিতরণে এগিয়ে আসল। এদের মধ্যে বিশেষ প্রণিধানযোগ্য কিছু সংগঠন হলঃ ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ,হিন্দু মহাসভা,ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,ভারতীয় কম্যুনিস্ট দল,ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি, প্রবর্তক সঙ্ঘ,অভয় আশ্রম, আর্য সমাজ,গীতা প্রেস প্রভৃতি।[৭০] দাঙ্গা কবলিত হতভাগ্য হিন্দুদের জন্য ৩০ টি
ত্রানবিতরণকারী
সংস্থা এবং ৬টি মেডিক্যাল মিশন কাজ করতে থাকে।এছাড়াও সর্বস্ব হারানো দাঙ্গা পীড়িতদের জন্য গান্ধীর ‘এক গ্রাম
এক সেচ্ছাসেবী’ পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল ২০ টি অস্থায়ী ক্যাম্প।
মুসলিম দাঙ্গাকারিদের হাতে নোয়াখালীর হিন্দুদের অসহায়ত্বের সংবাদ জানার পরে হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ লাহিড়ী দ্রুত চাঁদপুরে চলে আসেন।ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নির্মল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত নরেন্দ্রনাথ দাস আরও সাহায্য কর্মীদের নিয়েকুমিল্লা ও দাঙ্গা পীড়িত অঞ্চলে প্রবেশ করেন। অবশ্য তাদের নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিল।দুর্গত,খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান হারিয়ে ধ্বংসপ্রায় হিন্দুদের জন্য একটি উড়জাহাজে করে চাল,চিঁড়া,রুটি,দুধ,বিস্কুট,বার্লি এবং ওষুধ প্রেরণ করা হয়।অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী ট্রেনে করে পাঠানো হয়।[৭২]ভাগ্যগুনে বেঁচে যাওয়া কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারা যে সকল হিন্দু পূর্ববঙ্গেরসরকারের উপর আস্থা হারিয়ে পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতে বিশেষ করে কলকাতায় চলে এসেছিল তাদের জন্য কলকাতা শহর ও শহরের বাইরে ৬০ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। এদেরকে সাহায্যের জন্য অনেক উদার ব্যক্তিবর্গ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই ফান্ডের হিসাব,সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি হিসাবরক্ষক সংস্থা M/S. P.K.Mitter & Co কে নিয়োগ দেন।
মহত্মা গান্ধীর শান্তি মিশন
মহত্মা গান্ধী দাঙ্গা পীড়িত এলাকায় শান্তি স্থাপন করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। তিনি নিজে এবং আরও কিছু ভলেণ্টিয়ার নিয়ে যে সব
এলাকায় গণহত্যা চালানো হয় সেগুলো পরিদর্শন করেন। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করেন। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ১৮ অক্টোবরে
ব্যক্তিগত ভাবে মহত্মা গান্ধীর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি গান্ধীজীকে হিন্দু গনহত্যা বিশেষ করে হিন্দু মেয়েদেরকে লাগামহীন ধর্ষণ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বলেন।বিকেলের প্রার্থনা সভাতে গান্ধীজী নোয়াখালীর বর্বরোচিত হিন্দু নিধন সম্পর্কে কিছু কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘যদি ভারতের অর্ধেক মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্থ থাকে
তাহলে ভারত কোনদিন মুক্তির স্বাদ পাবে না’।তিনি মনে করতেন ভারতের মেয়েদের মুক্তির জন্য তাদের অস্ত্র শিক্ষা নেয়া উচিত। ১৯ অক্টোবর
গান্ধীজী নোয়াখালী যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। নোয়াখালী যাত্রার আগে ডঃ অমিয় চক্রবর্তী কলকাতার নিকটে সোদপুরের অভয় আশ্রমে গান্ধীজীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।সাক্ষাৎকার গ্রহনের পর ডঃ
অমিয় চক্রবর্তী বিবৃতি দিয়ে বলেন,এই মুহূর্তের সব থেকে
গুরুত্বপূর্ণ ধর্ষিত ও অপহরিত হিন্দু মেয়েদের উদ্ধার করা। কারণ জোরপূর্বক ধর্মান্তকরনের পরে তাদের কে মুসলিমরা বোরকা দিয়ে আবদ্ধ করে রাখবে এবং আইন রক্ষাকারী বাহিনী আর তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারবে না।
গান্ধীজী
৬ নভেম্বর তারিখে নোয়াখালীর উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং পরেরদিন তিনি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পৌঁছান। সেখানে যোগেন্দ্র মজুমদারের বাড়িতে দুই রাত কাটান। নভেম্বরের ৯ তারিখে
তিনি পুনরায় খালি পায়ে যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তী সাত সপ্তাহ ধরে গান্ধীজী ১১৬ মাইল হেঁটে প্রায় ৪৭ টি বিপর্যস্ত গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি শ্রীরামপুর গ্রামের একটি অর্ধ দগ্ধ বাড়িতে তাঁর আবাস স্থাপন করেন এবং ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনি সেখানে প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন এবং স্থানীয় মুসলিম নেতাদের সাথে বৈঠক করে হিন্দুদের আস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু হিন্দু মুসলিমের মধ্যকার সম্পর্কের অনাস্থা দূর করতে গান্ধীজী ব্যর্থ হন এবং তাঁর নোয়াখালীতে অবস্থানকালেই দুর্বৃত্ত মুসলিমরা তাদের হিংস্রতা চালিয়ে যেতে থাকে।১০ নভেম্বর বিকালে গান্ধীজীর সান্ধ্যকালীন প্রার্থনা সভা থেকে দত্তপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে ফেরার পথে দুজনকে হত্যা করে মুসলিমরা।
লীলা রায়। তিনি একাই ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়েকে উদ্ধার করেন
|
গান্ধীজীর নোয়াখালী যাত্রা
এবং সেখানে অবস্থান মুসলিম নেতাদের অসন্তুষ্ট করেছিল।১৯৪৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে কুমিল্লাতে একটি শোভাযাত্রায় বক্তৃতা প্রদান কালে এ কে ফজলুল হক বলেছিলেন,নোয়াখালীতে গান্ধীর অবস্থানের কারণে ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
গান্ধীজীর প্রতি মুসলিমদের এই বিরক্তি দিন দিন বেড়েই চলেছিল।১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মুসলিম সমাজের এই বিরক্তি প্রকাশ রীতিমত অমার্জিত ও কদর্য রূপ ধারণ করে।মুসলিমরা গান্ধীজীর চলার পথে কাদা, ময়লা,আবর্জনা ছড়িয়ে রাখত।তারা গান্ধীজীর সকল সভা-সমাবেশ বয়কট শুরু করে। গান্ধীজীর সাথে সব সময় একটি ছাগল থাকত যেটি তিনি ভারত থেকে নোয়াখালীতে নিয়ে এসেছিলেন। মুসলিমরা ওই ছাগলটিকে চুরি করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে ভুরিভোজ দেয়।
গান্ধীজীর প্রতি মুসলিমদের এই বিরক্তি দিন দিন বেড়েই চলেছিল।১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মুসলিম সমাজের এই বিরক্তি প্রকাশ রীতিমত অমার্জিত ও কদর্য রূপ ধারণ করে।মুসলিমরা গান্ধীজীর চলার পথে কাদা, ময়লা,আবর্জনা ছড়িয়ে রাখত।তারা গান্ধীজীর সকল সভা-সমাবেশ বয়কট শুরু করে। গান্ধীজীর সাথে সব সময় একটি ছাগল থাকত যেটি তিনি ভারত থেকে নোয়াখালীতে নিয়ে এসেছিলেন। মুসলিমরা ওই ছাগলটিকে চুরি করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে ভুরিভোজ দেয়।
গান্ধীজী
তার নোয়াখালী মিশন অর্ধ সমাপ্ত রেখেই বাংলার মুসলিম লীগ নেতাদের অনুরোধে ১৯৪৭ সালের ২ মার্চ বিহারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। নোয়াখালী ছাড়ার একমাসেরও বেশি সময় পরে গান্ধীজী একজন কংগ্রেস কর্মীর কাছ থেকে একটি টেলিগ্রাম পান যেখানে বলা হয়েছিল,দাঙ্গা পীড়িত অঞ্চলে হিন্দুদেরকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।গান্ধীজী অত্যন্ত দুঃখের সাথে মন্তব্য করেন,
নোয়াখালীর অবস্থা এমনই দুর্বিষহ যে হিন্দুদের কে নোয়াখালী ছাড়তে হবে অথবা ধ্বংস হয়ে যেতে হবে।
শরণার্থী
বেঁচে
যাওয়া হিন্দুরা দুই ধাপে নোয়াখালী ও ত্রিপুরা( বর্তমান কুমিল্লা)
ছেড়েছিল। গনহত্যা,ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তকরন শুরুর হওয়ার সাথে সাথেই প্রথম পর্যায়ে হিন্দুরা কলকাতা পালিয়ে বেঁচেছিল।কলকাতায়
দুর্গত আশ্রয় প্রার্থীদের আসার সংখ্যা ধিরে ধিরে কমে এসেছিল যখন সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নোয়াখালী ও কুমিল্লাতে ত্রান বিতরনের ঘোষণা দিল। ১৯৪৭ সালে কোন বিকল্প হাতে না পেয়ে অবশেষে কংগ্রেস যখন ভারত বর্ষের বিভাজন মেনে নেয় তখন ত্রান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দাঙ্গায় পীড়িত ও আর্ত সহায় সম্বলহীন হিন্দুরাত্রিপুরা,আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভন্ন জায়গাতে চলে আসে যে জায়গা গুলো ভারতের ভিতর পড়েছিল। শুধু মাত্র আসামের রাজধানীগৌহাটিতেই ৫০,০০০ উপরের রিফিউজিদের অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
চলবে
চলবে
No comments:
Post a Comment