২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেলের নিচে ব্রেকিং নিউজ “মানবতাবিরোধী অপরাধে সাঈদীর ফাঁসি।” জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেন। এরপর সারা দেশ থেকে আসতে থাকে তাণ্ডবের খবর। রায়ের আগে ও পরে রাজধানীসহ ১৫ জেলায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাণ্ডব শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। প্রথম তাণ্ডবের খবর পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলা নোয়াখালীতে। বেলা দুইটায় জামায়াত-শিবিরের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের আশপাশে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে হামলা শুরু করে। এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ রাজগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ও আলমপুর গ্রামের মোহাম্মদ উল্লার ছেলে মো. লিটন (২৫) নিহত হন। নোয়াখালীতে স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সাঈদীর রায় ঘোষণার পর হঠাৎ করে এক থেকে দেড়শত লোক এর মধ্যে বেশিরভাগ ১৫-১৭ বছর বয়সী। আর তাদের অগ্রভাবে ছিল মুখবাঁধা কিছু যুবক ও মধ্যবয়সী। আল্লা হুয়াকবার, নারায়ে তাকবির উচ্চারণ করে ধর-মার, পুড় শব্দ করতে করতে রাজগঞ্জের গঙ্গাপ্রসাদ ভূঞা বাড়ি, আচার্য্য ঠাকুর বাড়ি, মালী বাড়ী, পুলিন দত্ত বাড়ি, কুরী বাড়ি, বণিক বাড়ী, শান্তি বণিক বাড়ী, শীল বাড়ী, মতিলাল বাবুর বাড়িসহ প্রায় ১০টি হিন্দু বাড়ির ভিতরে ঢুকে ভাংচুর, লুট ও প্রায় ৩৬ ঘরে আগুন ধরিয়ে সম্পূর্ণ পুঁড়ে ফেলে। এ সময় বাড়ি ঘর থেকে গৃহস্থরা পাশ্ববর্তী মুসলিম বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
এছাড়া হিন্দুদের উপাসনালয়ের মধ্যে ঠাকুর বাড়ির মন্দীর, রাজগঞ্জ বাজার মন্দির, পুলিন দত্ত বাড়ীর মন্দীর, কালীর হাট মন্দিরসহ ৫টি মন্দির ও মুর্তি ভাংচুর করে আগুন দেয়। এমন সময় ঘটনাস্থলে নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মোহতাছিম বিল্লাহ্ সবুজ ও এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুর রহিম বাবুলকে জামাত শিবির কর্মিরা বেদম মারধর করে গুরুতর আহত করে এবং তাদের দুটি ক্যামেরা ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ এলে পুলিশ ও জামাত-শিবিরকর্মিদের দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পরে সন্ধ্যার দিকে ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আসে এবং র্যাবের একটি দলও আসে।
কুরি বাড়ির খগেন্দ্র চন্দ্র দে (৮০) বলেন, আমি ’৭১’র যুদ্ধ দেখেছি। তবে কালকের (বৃহস্পতিবার) ঘটনার মতো এমন ঘটনা সে সময়ও এ এলাকায় ঘটেনি। আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রাজাকারদের তান্ডবকেও হার মানায়।
কেন নোয়াখালী দিয়েই তাণ্ডব শুরু হয় হিন্দুদের বিরুদ্ধে। এ প্রশ্ন জানতে হবে আপনাকে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখতে হবে। নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বর্তমান নোয়াখালী জেলা আগে ফেনী, লক্ষীপুর এবং নোয়াখালী জেলা নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল ছিল, যা এখনও বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত। ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর ইতিহাসের নৃশংস গণহত্যা হয় নোয়াখালীতে। নোয়াখালী দাঙ্গা নোয়াখালী গনহত্যা বা নোয়াখালী হত্যাযজ্ঞ নামেও পরিচিত,ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীন হওয়ার এক বছর পূর্বে অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৪৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশ)নোয়াখালী জেলায় স্থানীয় মুসলিমদের সংঘটিত ধারাবাহিক গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এতে নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া ও সন্দ্বীপ থানা এবং ত্রিপুরা জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম থানার অধীনে সর্বমোট প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কেন নোয়াখালী দিয়েই তাণ্ডব শুরু হয় হিন্দুদের বিরুদ্ধে। এ প্রশ্ন জানতে হবে আপনাকে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখতে হবে। নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বর্তমান নোয়াখালী জেলা আগে ফেনী, লক্ষীপুর এবং নোয়াখালী জেলা নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল ছিল, যা এখনও বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত। ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর ইতিহাসের নৃশংস গণহত্যা হয় নোয়াখালীতে। নোয়াখালী দাঙ্গা নোয়াখালী গনহত্যা বা নোয়াখালী হত্যাযজ্ঞ নামেও পরিচিত,ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীন হওয়ার এক বছর পূর্বে অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৪৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশ)নোয়াখালী জেলায় স্থানীয় মুসলিমদের সংঘটিত ধারাবাহিক গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এতে নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া ও সন্দ্বীপ থানা এবং ত্রিপুরা জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম থানার অধীনে সর্বমোট প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(তৎকালীন অবিভক্ত নোয়াখালী ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনীএবং অবিভক্ত ত্রিপুরা জেলার ছিল বর্তমান কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া অঞ্চল নিয়ে।)
হিন্দুদের উপর এই গণহত্যার শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এবং প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ছিল। এত প্রায় ৫,০০০ হিন্দু হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়,এবং হিন্দু নারী ধর্ষিণ, এবং হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।[৩] প্রায় ৫'০০০থেকে ৭'৫০০বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা,চাঁদপুর,আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়।এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদের কে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত।জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত রাখা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে।তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হত এবং যখন কোন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শক দল পরিদর্শনে আসত তখন তাদেরকে ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়া হত।হিন্দুদেরকে ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দেয়া লাগত যাকে বলা হত জিজিয়া (যা একসময় ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল।মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি কর দিত শাসকদের)।
হিন্দুদের উপর এই গণহত্যার শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এবং প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ছিল। এত প্রায় ৫,০০০ হিন্দু হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়,এবং হিন্দু নারী ধর্ষিণ, এবং হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।[৩] প্রায় ৫'০০০থেকে ৭'৫০০বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা,চাঁদপুর,আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়।এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদের কে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত।জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত রাখা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে।তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হত এবং যখন কোন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শক দল পরিদর্শনে আসত তখন তাদেরকে ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়া হত।হিন্দুদেরকে ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দেয়া লাগত যাকে বলা হত জিজিয়া (যা একসময় ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল।মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি কর দিত শাসকদের)।
বঙ্গীয় আইন সভার নোয়াখালী থেকে একমাত্র হিন্দু প্রতিনিধি হারান চন্দ্র ঘোষ চৌধুরী এই দাঙ্গাকে হিন্দুদের প্রতি মুসলিমদের প্রচণ্ড আক্রোশের প্রকাশ বলে বর্ণনা করেন।বাংলার সাবেক অর্থ মন্ত্রী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নোয়াখালী দাঙ্গাকে একটি সাধারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে দেখানোর বিতর্ককে প্রত্যাখান করেন।তিনি এ ঘটনাকে একটি সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের সুপরিকল্পিত এবং সুসংঘটিত আক্রমন বলে বর্ণনা করেন।
মহত্মা গান্ধী নোয়াখালীতে ক্যাম্প করেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নোয়াখালী ও এর আশেপাশের এলাকা গুলো ঘুরে দেখেন।যদিও এই শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।কংগ্রেস সভাপতি আচার্য্য কৃপালনির স্ত্রী সুচেতা কৃপালনি নোয়াখালিতে নারী উদ্ধার করতে যান।বেঁচে যাওয়া হিন্দুদের আত্মবিশ্বাস চিরতরে নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা কোন দিন তাদের নিজেদের গ্রামে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেনি।এর মধ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব ভারত বিভাগ মেনে নেন যার ফলে শান্তি মিশন এবং আক্রান্তদের জন্য ত্রান কার্যক্রম পরিত্যক্ত হয়। বেশির ভাগ বেঁচে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা তাদের বাড়ি-ঘর ফেলে পশ্চিম বঙ্গ,ত্রিপুরা এবং আসামে চলে আসে।
(চলবে)
(চলবে)
No comments:
Post a Comment