মোহাম্মদ সাইফুর রহমান খান |
নিরাপত্তার স্বার্থে লেখকের নাম প্রকাশ করা হল না।
বাংলাদেশে বেশ কটি কোচিং সেন্টারের মাঝে সাইফুরস অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং থেকে শুরু করে কোচিং জগতে এমন কোন পণ্য নেই যা এই প্রথিষ্ঠানটি মার্কেটিং করে না। পাঠক হয়তো ভাববেন এতকিছু থাকতে হটাৎ এই সাইফুরস কেন। অবশ্যই বলবো তার আগে এই প্রথিষ্ঠানটি সম্পরকে কিছু তথ্য দিতে চাই। সাইফুরস প্রথিষ্ঠানটির মালিক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রভাষক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান খান।বলা বাহুল্য কোন এক অজানা কারনে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এক সম্মানি জায়গা থেকে বের হয়ে এই প্রথিষ্ঠানটি চালু করেন। উনি বরাবরই বাংলাদেশের আর ৫টা উগ্র মুসলিমদের মতন একজন মানুষ। ইংরেজিতে প্রবল দক্ষতা আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে উনি এই প্রথিষ্ঠানটিকে একটি আদর্শ কোচিং সেন্টারে রূপ দিয়েছেন। তবে কি চলছে এই প্রথিষ্ঠানটি তে পড়াশুনার আড়ালে? আমি জানি এইখানে অনেকেই আছেন যারা একবার হলেও এই প্রথিষ্ঠানটিতে গিয়েছেন। আমিও গিয়েছিলাম। গিয়ে রীতিমত অবাক ও ধাক্কা খেয়েছি। কারন পড়াশুনার আড়ালে চলছে নিরব জঙ্গিবাদ আর ধর্মান্তরকরন। প্রথিষ্ঠানের ৯৫% শিক্ষক রীতিমত মওলানা। এবং ক্লাস থেকে বেশী উনারা শিক্ষার্থীদের নামাজে উৎসাহিত করেন। ধরে নিলাম এসব মওলানারা মেধার জোরেই টিকে আছেন তবে আমার প্রশ্ন হল তাহলে কেন এর প্রতিটা বইয়ে ইসলাম ও মুসলিম ধর্ম নিয়ে বিশাল এক লেখা থাকে? বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএস বা আই.এল.টি.এস এর মতন বিষয়ের সাথে এর সম্পর্ক কি? ব্যাপারটা খুবই সোজা। এসবের আড়ালে চলে নিরব ধর্ম প্রচার। আর এর শিকার হচ্ছেন সদ্য SSC বা HSC পাশ করা যুবক ছেলে-মেয়েরা।বিশেষ করে যারা হিন্দু। আমি যখন এদের ফ্রী ক্লাসগুলোতে যাই সব সময় একটা জিনিস খেয়াল করি ক্লাস শুরুর প্রথমেই ইসলাম সম্পরকে একটি লেকচার থাকে। সাথে প্রচারপত্র ও প্রজেক্টার দিয়ে ইসলামিক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। কেন? কি উদ্দেশ্য তাদের? ২*২ মিলে কি কেউ ৪ মিলাতে পারছেন? না পারলে কিছু বলার নাই। বাংলাদেশের যতো ইসলামিক জঙ্গি দল আছে তাদের সাথে যদি এই প্রথিষ্ঠানটির কোন সম্পর্ক থাকে তাহলে আমি অবাক হবো না।
একটি সত্য ঘটনা বলতে চাই। আমার বন্ধুর এক দাদা এই প্রথিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। উনি হিন্দু মানুষ দেখে প্রায়ই উনার উপর চালান হতো জোকার নায়ক(জাকির নায়েক) এর মতন মাথা মোটা প্রশ্ন বান। উনি কিছু কিছুর জবাব দিতে পারলেও বেশিরভাগ ইচ্ছা করেই দেন নাই। কারন উনি জানেন উত্তর দিলে উনার মাথাটা কয়দিন পর রাস্তায় লুটোপুটি খাবে। আকর্ষণীও বেতন ও সুযোগ সুবিধা থাকায় উনি প্রথিষ্ঠানটি ছারেন নাই।তাছাড়া বাংলাদেশে এমন প্রথিষ্ঠান আসলেই বিরল যেখানে হিন্দুদের এইসব গাজাখুরি প্রশ্নবান বা সাম্প্রদায়িকতার মুখমুখি হতে হয় নাই। যাই হোক এভাবেই চলছিল। একদিন হটাৎ করে উনার দেশের বাড়ী থেকে খুব কাছের একজন প্রতিবেশীর ছেলে (২২ বছর বয়স) ঢাকায় আসলো। সদ্য ছেলেটির বাবা গত হয়েছেন। ৩ ভাইবোনের সংসারে বড় ছেলে হিসাবে দায়িত্ব থেকেই যায়। তাই চাকরীর প্রত্যাশায় ঢাকায় পাড়ি জমানো। আমার বন্ধুর দাদার খুব দয়া হল। হিন্দু হিসাবে যদি আর একজন হিন্দুর পাশে না দাড়াতে পারলাম তাহলে কিসের ধর্ম? তাই কতৃপক্ষকে খুব অনুরধ করে ছেলেটিকে চাকরীতে রাখলেন। অস্থায়ী হিসাবে ছেলেটি তার কাজ শুরু করলো। পুরো পরিবার ছেলেটি একা চালাত। ঐ দাদার খুব তৃপ্তি হল যে ছেলেটার তথা পরিবারটির একটি গতি হল। ৬ মাস কেটে যায় এভাবেই। একদিন হটাৎ করে ছেলেটি ঐ দাদার রুমে এক বিচিত্র বেশ নিয়ে প্রবেশ করে যা দাদা কল্পনাও করতে পারেন নাই। মাথায় সাদা টুপি, পাঞ্জাবী আর কুর্তা, গা থেকে খ্যাত মোল্লাদের মতন ভুর ভুর করে আতরের গন্ধ বের হচ্ছে।হাতে তার একটা বই যা সাইফুরস এর পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘নও মুসলিমের কর্তব্য ও সঠিক ভাবে সালাত আদায়ের নিয়ম’ । অবাক হয়ে দাদা জিজ্ঞেস করলেন, ‘আশিস এই কি অবস্থা তোমার? এসব কি পরেছ?’
উত্তরে আশিস যা বললেন তা দাদার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। ‘ আশিস না দাদা আমি এখন “অমুক রহমান” ইসলাম কবুল করলাম। আজ থেকে আমি মুসলিম।‘ এক গাল নির্লজ্জ হাসি হেসে একটি উত্তর যা গা ঘিন ঘিন করার মতো। দাদা প্রশ্ন করলেন ‘হটাৎ মুসলিম হলে কেন? তোমার ধর্মে কি দোষ?’
উত্তরে আশিস বললেন ‘দাদা ২টা কারনে ছেরেছি।
১.অফিসের একজন জাকির নায়েকের লেকচারের একটা ডিভিডি দিল। তাছাড়া পিস টিভিতে দেখতাম উনার লেকচার। উনি অনেক জানেন দেখলাম আমাদের ধর্ম সম্পর্কে। তাছাড়া হিন্দু সাধুরাও উনার সাথে তর্কে হার মেনে ইসলামের মহানতা(!!!) স্বীকার করে গিয়েছেন। যে ধর্মের এত ভুল আর সেই ভুল ধর্মের যারা দিকপাল তারাও স্বীকার করেন তাহলে জেনেশুনে এইসব ধর্মে কেন থাকব? আমার পূর্ব পুরুষ ভুল করেছেন তার মানে এই না যে আমিও ভুল করবো।তাছাড়া নাম না প্রকাশ করার শর্তে উপর মহল থেকে বলা হয়েছে যদি মুসলিম হউ তাহলে চাকরী স্থায়ী হবে, বেতন বাড়বে আর যেকোনো সহযোগিতায় আমাদের তোমার পাশে পাবে। জীবনে আর তোমার অভাবের মুখ দেখতে হবে না।তাই সুযোগটা হাতছারা করি কিভাবে বলুন?
২. ইসলামে সবাই সমান।ব্রাম্মন,শূদ্র ভেদাভেদ নাই। এই যেমন দেখুন না, আমার মা কায়স্ত আর বাবা সাহা হওয়ায় কি ঝামেলা আমার বাবাকে করতে হল। সারাটা জীবন বাবাকে শুনতে হল “তুমি তো শাও”। এসব যন্ত্রণা ইসলামে নাই। এছারাও ইসলামে নারীকে যেমন অধিকার দিয়েছে তেমনি তার সীমানাও বেঁধে দিয়েছে। আমাদের হিন্দু মেয়েদের দেখুন দাদা। এরা উশৃঙ্খল আর উগ্র। স্বামীর মুখের উপর কথা আর বেয়াদবী। ইসলামে নারীকে পরিষ্কার করে বলা আছে যে স্বামীকে যারা সন্তুষ্ট করতে পারবে না তাদের বেহেশতে জায়গা হবে না। তাই মুসলিম মেয়েরা নম্র ও ভদ্র হয়। এতকিছুর পরে কিভাবে হিন্দু ধর্মে থাকি? আপনার জন্য একটা বই আনলাম। পড়ে দেখুন। আপনিও স্ব-পরিবারে ইসলামের ছায়াতলে আসুন। অনেক শান্তি।
উত্তরে দাদা বললেন “ ধর্মটা তোমার কাছে লাভ ক্ষতির হিসাব ছাড়া আর কিছুই না। তাই সব ওজন করছ।বইটা আমার থেকে তোমার বেশী দরকার।কারন তুমি নও মুসলিম। আমি না। আমি আমার ধর্ম নিয়ে অনেক শান্তিতে আছি। আর তুমি কয়টা হিন্দু ধর্মের বই পড়েছ যে জাকির নায়েক এর কোথায় ভুলে গেলে? তুমি কি জানো ৫ মিনিটে ২৫ টা ভুল যে লোক বলে তার কোথায় তুমি আজ তোমার পূর্ব পুরুষের ধর্ম ছেরে দিলে।তাছাড়া যেসব হিন্দুদের উনি উনার লেকচারে আনেন এরা কেউই ধর্মীয় কোন গুরু নন। উনি মহেন্দ্র পাল আরজের ৭ বার আমন্ত্রন প্রত্যাখ্যান করেছেন শুধু ভয়ে। জেনেশুনে এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়াতা উচিৎ ছিল। ‘ আশিসের চোখে তখন বিস্ফোরণ হচ্ছে। “এবার আসি জাতপাত আর মেয়েদের কথায়। জাতপাত নিয়ে গীতায় যা বলা আছে তা কি পড়েছ?জানি বর্তমান হিন্দু সমাজ এটা মানে না। তারপরও তা সংস্কার করার চেষ্টা না করে সুবিধাবাদি হয়ে গেলে? এইটা তো ধর্মের দোষ না তাই না? হিন্দু ধর্মে মেয়েদের যে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে তা পৃথিবীর আর কোন ধর্মে দেয় নাই। তাই আমরা মেয়েদের মা বা দেবী রুপে পূজা করে রাখি। আর মেয়েরা তো মানুষই। পূজা করলে বাঁদরও মাথায় উঠে নাচে আর এ তো মানুষ। মানছি এরা উশৃঙ্খল। তবে সবাই সমান না। এদের মাঝে এখনও এমন মেয়ে পাবে যারা পুরুষকে টাকার অঙ্কে নয় বরং হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। আর এর জন্যই আমার মতন কিছু ছেলে জীবনে উন্নতি করতে পারে।আমার কাছে আমার ধর্ম হল মায়ের মতন।মা যেমন পতিতা হলেও মা। তেমনি ধর্ম হাজার খারাপ হলেও তা আমার ধর্ম। তাকে ত্যাগ করা উচিৎ নয়। আর ধর্মটা যদি হিন্দু বা সনাতন হয় তখন তো আরও না। যাইহোক তুমি ভাল থাকো এটাই চাই। এসব বই আমার কাছে ২য় দিন নিয়ে আসলে আমি তোমার চাকরী হারাবার কারন হতে পারি। এবার আসতে পারো।‘ আশিসের চোখেমুখে তখন চরম বিষণ্ণতা আর অপরাধবোধ কাজ করছে।জানি না আজ সে কি হালে আছে। তবে ভাল নেই বলতে পারি।
যাইহোক, পাঠক আপনার অনেক সময় নষ্ট করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।এতক্ষনে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে আপনার টাকা গুলো আসলে কি কাজে ব্যাবহার করা হয়? শুধু এইটুকু বলবো ছোট ভাইবোন বা সন্তানকে কোন স্কুলে,কলেজে বা ভার্সিটিতে পড়াচ্ছেন তা আগে জেনে নিলে ভাল হয়। দেশের স্বনামধন্য একটি কোচিং সেন্টারের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে স্কুলে,কলেজে বা ভার্সিটিতে যে কি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। এইসব কোচিং সেন্টার গুলো থেকে সাবধান হন। হয়তো আপনার বোন বা মেয়ে লাভ জিহাদিদের টার্গেট হবে অথবা আপনার ভাই বা ছেলে আত্মঘাতী বোম স্কোয়াডে যোগ দেবে। তাই সাবধান হন।
সবাই ভাল থাকবেন। জয় সনাতন হিন্দু ধর্ম।
নিচে সাইফুরসের একটি বইয়ের ছবি দেওয়া হল। স্পোকেন ইংলিশ বইতে এইগুলো কেন থাকবে?
আপনাদের ওয়েবসাইটে সেলারি ভিত্তিক কাজ করার সুযোগ আছে?
ReplyDelete