এই একটি মাত্র দৃশ্য কি গোটা হিন্দু জাতিকে এক বিন্দুতে পুঞ্জিভুত করতে পারে না?সব বিভেদ ভুলে এক সাথে গর্জে তুলতে পারে না???
মালাউনের মেয়ে কে ধর্ষনে পাপ নেই, মালাউন হত্যায়ও পাপ নাই । ধরা পড়ার ভয় নেই, শাস্তির ভয় নাই ।২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতের মানুষের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়, তার ভিতর প্রকাশিত হয় হাতে গোনা কয়েক টা ঘটনা।আজ আপনাদেরকে জানাব এমন কয়েকটি ঘটনা।
পূর্নিমা রানী কে মায়ের সামনে ধর্ষন:
পূর্নিমা রানী শীল । বয়স কতোই বা হবে ? সবে অষ্টম শ্রেনী তে পড়ছে । সবে নির্বাচন হয়েছে । বিএনপি জামাট জোট সরকার জয়ী হয়েছে । চাপ পড়ছে হিন্দু পাড়াগুলোর ওপরে । মালাউনের বাচ্চা রা সব নৌকায় ছাপ মারছে । পূর্নিমা সেই রাতে বাড়ি তেই ছিল । সদ্য বিজয়ী স্থানীয় নেতা রা হামলা করলো ওই মালাউন দের ছবক শেখাতে ।ছবক যখন শেখাবে, বাদ যাবে কেন পূর্নিমা ? মায়ে সামনেই ধর্ষন করলো তাকে । এত মানুষ দেখে পূর্নিমার মা বলছিলো "বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, মরে যাবে।"
আসলেও তাই, ওতটুকু মেয়ে, ১০-১২ জনের এক দল যদি পালাক্রমে ধর্ষন করে, তবে মায়ের বাচার আশা নিয়েই শংকা করতে হয় ।অসহায় বাবা দেখলো মেয়ের ধর্ষন, মা আকুতি করলো । ধর্ষিত পূর্নিমা অবশ্য সে রাতে মরেনি । আমাদের ধর্ষিত বোন পূর্নিমার ১১ বছর অপেক্ষো করতে হল তার ইজ্জতের দামি পেতে ।
আচ্ছা, আপনাদের কি ছবি রানীর কথা মনে আছে? তিনি একজন সামান্য আওয়ামীলীগের কর্মী ছিলেন। বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। ২০০২ সালের ২১ শে অগাস্ট তৎকালীন জোট বাহিনীর ক্যাডার দ্বারা গন ধর্ষণের শিকার হন তিনি।তৎকালীন ক্ষমতাসীন ক্যাডার ছবি রানীকে বাস স্ট্যান্ড থেকে কাপড় খুলে ফেলে। এর পর তাকে বি এন পি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর একের পর এক ক্যাডার দ্বারা তিনি ধর্ষণের শিকার হতে থাকেন। ধর্ষকরা ধর্ষণ করে ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়। ছবি রানী যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন পাশের দোকানে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা বিড়ি ফুঁকছিল। তার চিৎকারে সাধারন মানুষ তো দূরে থাক, পুলিশ ও সেদিন ফিরেও তাকায়নি । ছবি রানীকে বাঁচাতে সেদিন কেউ আসেনি। ধর্ষকরা ধর্ষণ করে চলে যাবার পরে ছবি কোন মতে উঠে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। পাশের চায়ের দোকানদার খিতিশ সাহা তাকে সেই মুহূর্তে খুলনা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করান। খবর পেয়ে তৎকালীন এম পি বর্তমান খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সেখানে ছুটে যান। ছবির অবস্থা আশংকাজনক জেনে বর্তমান পি এম তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে খুলনায় ছুটে আসেন। তিনি ছবির উচ্চ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনের বিদেশে নেবার কথা বলেন। এবং দলের পক্ষ থেকে তিনি চিকিৎসা খরচ বহন করতে নির্দেশ দেন। ছবিকে খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এবং উন্নত চিকিৎসায় তিনি খানিক সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ওই একিবছর বাগেরহাটের যাত্রাপুরের ঠাকুর বাড়িতে এক রাতে ২৩ জন গৃহবধূকে জোট ক্যাডাররা ধর্ষণ করে। এবং সেখানে দুটো হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এটা কোন পরিসংখ্যান নয়। এরুপ হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায় জোট সরকার দ্বারা নির্যাতিত হন তৎকালীন সময়ে। সারা বাংলাদেশে তখন হিন্দুদের জন্য আতংকের দেশ হিসেবে পরিনত হয়। সংখ্যালঘু নির্যাতন দেখে প্রতিবেশি দেশ ভারত চাপ দিতে থাকে খালেদা- নিজামি সরকারকে। এরপরেও কাহিনী সবার অজানা নয়-
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ নির্যাতনের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে আড়ালে, অনেকে মামলা করেছে। অনেকে সে সাহসও পায়নি। অনেকে আবার লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনাও গোপন রেখেছে। এ জাতীয় অসংখ্য ঘটনা রয়ে গেছে লোকচৰুর অন্তরালে। 'মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ' শীর্ষক ধারাবাহিকের এ পর্বে থাকছে ২০০১ নির্বাচনপরবর্তী ভোলার চরফ্যাশনের সহিংসতার কিছু চিত্র।দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস যাবত চলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক, বিশেষে করে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন, এমনকি সংবাদ মাধ্যমও নির্যাতনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক চাঁদাবাজি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে এ সময়। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা ভয়ে কোন অভিযোগ পর্যনত্ম করেনি। প্রায় প্রতিটি ৰেত্রে লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবারের মহিলারা ধর্ষিত হওয়ার পরও আইনের আশ্রয় নেয়নি বা বিষয়গুলো গোপন রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানলেও বা অনুমান করলেও ৰতিগ্রসত্ম পরিবারগুলো অনেক ৰেত্রেই তা স্বীকার করেনি বা মৌন ছিল। ঘটনার ৯ বছর পর তদনত্ম কমিশন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে অজানা অনেক নির্যাতনের কাহিনী তুলে এনেছে। ভুক্তভোগীরা অনেকে ঘটনার কথা স্বীকার করলেও কেউ কেউ লিখিত বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছে। এমনকি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন বলে অনেকে তাদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখতে তদনত্ম কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।অনেকে নির্যাতনের পর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন; কেউ বা দেশ ত্যাগ করেছেন। এমন অসংখ্য ঘটনার কয়েকটি মাত্র ঘটনা তুলে ধরা হলো। চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জের উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের টিকেন্দ্র চন্দ্র দাস ওরফে আইচা রাম দাসের স্ত্রী অমীয় রাণী দাস বাড়িঘর বিক্রি করে ঢাকায় অবস্থান করছে। নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর চারদলীয় জোটের কিছু সন্ত্রাসী রাতে তাদের বাড়িতে দরজা প্রবেশ করে। এ সময় দশম শ্রেণী পড়ুয়া তার কন্যা শিল্পীকে সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা শুরম্ন হওয়ার পর শিল্পীর পিতা-মাতা তাকে দাসকান্দি গ্রামে চাচার বাড়ি পাঠায়ে দেয় বলে সন্ত্রাসীরা তাকে সে রাতে পায়নি। তবে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িঘর লুটপাট করে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং ময়েকে ফিরিয়ে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর পরিবারটি দুই মাস বাড়িছাড়া ছিল। পরে ভিটেমাটি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে।উত্তর চরফ্যাশনের রঞ্জন কুমার দাসের স্ত্রী শোভা রানী দাস তদনত্ম কমিশনকে জানায়, নির্বাচনের পরপরই কিছু সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ ১৭ হাজার টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তাকে মারপিট করে ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলেও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ নেই এবং অভিযোগ করতে রাজিও নয়। তার কথায় প্রতীয়মান হয় সন্ত্রাসীদের অনেককেই সে চেনে। কিন্তু নাম বলেনি। সে আরও বলে, আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সকল বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে এবং অনেক মহিলা এ সময় ধর্ষিত হয়।উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের সুনীল কুমার রায়ের স্ত্রী আরতী বালা রায় জানায়, নির্বাচনের পর লুটপাট ও অত্যাচার শুরম্ন হলে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ঘরের তেমন কিছু ৰতি না হলেও ৩৫টি হাঁস সন্ত্রাসীরা নিয়ে যায়। আরতী আরও জানায়, পরিস্থিতি কিছুটা শানত্ম হলে এলাকায় ফিরে জানতে পারে শোভা রানী সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিনাশ কুমার দাসের স্ত্রী সুজলা রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, নির্বাচনের পর সন্ত্রাসী দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কয়েক মাস পর তারা বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। তাদের বাড়ি মোট দুই দফায় আক্রমণ হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলার নাকের নাকফুল নিয়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঢুকে তারা তলস্নাশি চালায় এবং সোনা-গহনা, হাঁস-মুরগি, গরম্ন-ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। উলেস্নখ্য, ওই এলাকায় নাকফুল নেয়ার অর্থ হলো মহিলার সম্ভ্রমহানি। পরিবারের অনেক সদস্য ভয়ে ধানৰেতে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং জোঁকের কামড়ের শিকার হয়। সন্ত্রাসীরা মূলত সন্ধ্যার পর বাড়িঘরে আক্রমণ শুরম্ন করত। এ ঘটনায় পরিবারটি ৰোভে, লজ্জায় বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি।
একই গ্রামের বলরাম দাসের স্ত্রী কণিকা রানী দাসের ব্যাপারে জানা যায় তাদের বাড়িতে ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর রাতে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে মালামাল লুট করে এবং তার সম্ভ্রমহানি ঘটায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেও শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় তারা পুলিশকে কিছু জানানোর সাহস পায়নি। অমর চন্দ্র দাসের স্ত্রী কল্যাণী দাস সম্পর্কে জানা যায়, গভীর রাতে সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িতে এসে ধান-চাল, জামাকাপড়সহ বাড়ির সকল মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তারা তার মেয়ের খোঁজ করে এবং মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। কিন্তু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং সেখানে নেই এ কথা শুনে সন্ত্রাসীরা ৰিপ্ত হয়ে স্বামীর সামনে কল্যাণীকে ধর্ষণ করে। স্বামী বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে উপযর্ুপরি ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পরও ভয়ে ও লোকলজ্জার ভয়ে তারা থানায় কোন অভিযোগ করেনি। আসামিদের নাম বলতেও অস্বীকৃতি জানায়। সনত্মোষ কুমার দাসের স্ত্রী শেফালী রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার বাড়িতে প্রবেশ করে। সন্ত্রাসী আক্রমণের বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন নিকটবর্তী বাজারে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। সন্ত্রাসীরা বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে চলে যায়। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে তারা বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু কিছুৰণ পর রাতে আর একদল সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। এ সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনকে তারা বেদম মারপিট করে এবং অবশিষ্ট মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় সন্ত্রাসীরা মুখে কাপড় বেঁধে আসে। এ ঘটনার কিছুদিন পর তারা সকলে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
এছাড়াও প্রকৃতি রানী দাস, স্বামী লিটন দাস; রীতা রানী দাস, স্বামী-সুব্রত দাস; শোভা রানী দাস, স্বামী নিরঞ্জন দাস; শেফালী রানী দাস, স্বামী সনত্মোষ কুমার দাস, সর্বসাং দশনাথ আলীগাঁও, উত্তর চরফ্যাশন, কর্তারহাট; ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতনের কারণে ৰোভে, ভয়ে, লজ্জায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। ঝর্ণা রানী দাস, স্বামী-সুনীল কুমার দাস, সাং-দশনাথ আলীগাঁও, বাড়িঘর ছেড়ে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এর কেউই বর্তমানে চরফ্যাশনে বসবাস করে না। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, নির্বাচনের পর চারদলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট ও মারধর করে। বাড়ির মহিলারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানায়। এলাকার অনেক পরিবারই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। কিন্তু ভয়ে কিংবা পুনরায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আক্রমণের শিকার হতে হবে মনে করে অধিকাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগ করছে না, আগেও করেনি
No comments:
Post a Comment