ইচ্ছামানুষ রনি
আমার ধারণা ভারতের নির্বাচন নিয়ে খোদ ভারতীয়দের থেকে বেশি চিন্তিত হয়ে আছে বাংলাদেশীরা। নরেণ্দ্র মোদি নির্বাচনী ইশতেহারে 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত' এর মত অসাম্প্রদায়িক শ্লোগান উচ্চারণের সাথে সাথে বলেছেন, 'সংবিধান মেনে রাম মন্দিরও নির্মান করা হবে'! সুন্দর এই লাইনটার মাঝে এক পেয়ালা 'হেমলক-১৯৯২' পাওডার মেশানো এটুকু না বুঝলে মোদি দায়ী নন। এসব পড়তে পড়তে চোখে পড়ে গেলো লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কালী মন্দির ভেঙে মসজিদ করার প্রত্যক্ষ ঘোষণা দিয়েছে জামাত। যেখানে এতদিন কেউ প্রণাম করেছে, সেখানে এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হবে। কী 'অসাম্প্রদায়িকতা'! আল্লাহ-ঈশ্বরের কী সুন্দর সহাবস্থান! অবশ্য এ নিয়ে বাংলাদেশে টু শব্দটাও হবে না। ভারতে যেমন সভা-সমাবেশ করে মুসল্লিরা বিজেপিকে ভোট দিতে নিষেধ করছে সেখানে বাংলাদেশে কোনোদিন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-উপজাতিদ ের কাওকে দেখেছে কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপি-জামাতকে ভোট দিতে বারণ করেছে! এ তো অসম্ভব কল্পনা! অবাস্তব!
সাঈদীর চন্দ্রাভিযানের পর এত হিন্দু নির্যাতন হলো এদেশে, শত শত মন্দির ভাঙা হলো, হিন্দুদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পোড়ানো হলো- একজন হিন্দু একটা মামলা ঠুকেছে বলে আমার জানা নেই। রামুর ঘটনার মূল আসামি জেলে বসেই নির্বাচনে জিতেছে, সেটা জানেন তো? যশোর-দিনাজপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় যে হিন্দু নির্যাতন হলো- এখন পর্যন্ত ক'জন ধরেছে বাংলাদেশে 'আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক' সংখ্যালঘুদের সরকার? একজনেরও শাস্তি হয়েছে? যশোরে দুই গৃহবধু ধর্ষিত হলো, একাত্তর টিভি ধর্ষকদের নাম সহ প্রকাশ করলো, তাদের কিছু হয়েছে? যশোর-দিনাজপুর গেলো, বরিশাল-পাবনার নির্যাতনকারীদের কারও? ২০০১ থেকে ২০০৬ ধরলে তো নির্যাতনের ইতিহাস বই হয়ে যাবে। সেসব থাক। একটা অনুসিদ্ধান্তে পৌছেছি, এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধদের মত সর্বংসহা জাতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি থাকার সম্ভাবনা ডাইনোসর প্রাপ্তির সম্ভাবনার সমতুল্য।
প্রথম আলোতে দেখলাম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে না পড়ে তাই তাদেরও বাংলা-ইংরেজি সহ সাধারণ শিক্ষার বইগুলো পড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পর্যন্ত খুব সুন্দর শোনায়। এর পরের অদ্ভুত সব প্রস্তাবনা টুকু পড়ার পর আপনার গা ঘিনঘিন করবে। মাদ্রাসা শিক্ষার উপযোগী করতে ষষ্ঠ শ্রেণীর জর্জ হ্যারিসনের 'দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' অধ্যায় থেকে জর্জ হ্যারিসনের ছবি বাদ দিতে বলা হয়েছে। সমস্যা- গিটার বাজানোরত অবস্থায় শ্মশ্রুমন্ডিত জর্জ হ্যারিসনের ছবি! তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি এরকম- এক কিশোর হাফপ্যান্ট পরে নৌকা বাইছে আর এক কিশোরী শাপলা তুলছে। মাদ্রাসার বইয়ে প্রচ্ছদ পরিবর্তন করে ওই কিশোরকে পাজামা আর কিশোরীকে হিজাব পরাতে বলা হয়েছে। পাজামা পরে নৌকা-জাহাজ চালানো না হয় সিন্দাবাদে দেখেছি, হিজাব পরে এক সাত-আট বছরের কিশোরী শাপলা-শালুক তুলছে; ছবিটা দেখতে কী সুন্দরই না লাগবে! অষ্টম শ্রেণীর বইয়ে লালন শাহের পদ্য 'মানবধর্ম' বাদ দিয়ে ফররুখ আহমেদের 'মেঘ বৃষ্টি আলোর দেশে' পদ্যটি অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটি সেটা অনুমোদনও করেছে। একই বইতে বিপ্রদাশ বড়ুয়ার 'মংডুর পথে' বদলে 'মদিনার পথে'র অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছু বাদ দেওয়া বা প্রতিস্থাপন এক কথা, সবচেয়ে আশ্চর্যকর- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তৈলচিত্রের ভূত' এর নাম বদলে 'তৈলচিত্রের আছর' নাম রাখতে বলা হয়েছে!
একসময় রক্তের মাঝে আমারও বিপ্লব ছিলো। দেশ বদলানোর স্বপ্ন আমিও দেখতাম। মাঝ দুপুরে নদীতে সুর্যের আলো ঝলকানোর মত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমার চোখেও ঝলকানি দিতো। ডায়রির পাতায় বড় করে 'বাংলাদেশ' লিখতাম। বাংলাদেশের মাঝের 'ং' টা দিতাম লাল জেল পেন এ। 'সেদিন গিয়াছে' ব্রহ্মপুত্রের জলে ভেসে। বেশ আগেই দেশপ্রেমের সৌধ বানিয়ে তাতে ফুল দিয়ে স্যালুট ঠুকে ঘরে ফিরে গোসল সেরেছি। ভালো আছি।
আমার ধারণা ভারতের নির্বাচন নিয়ে খোদ ভারতীয়দের থেকে বেশি চিন্তিত হয়ে আছে বাংলাদেশীরা। নরেণ্দ্র মোদি নির্বাচনী ইশতেহারে 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত' এর মত অসাম্প্রদায়িক শ্লোগান উচ্চারণের সাথে সাথে বলেছেন, 'সংবিধান মেনে রাম মন্দিরও নির্মান করা হবে'! সুন্দর এই লাইনটার মাঝে এক পেয়ালা 'হেমলক-১৯৯২' পাওডার মেশানো এটুকু না বুঝলে মোদি দায়ী নন। এসব পড়তে পড়তে চোখে পড়ে গেলো লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কালী মন্দির ভেঙে মসজিদ করার প্রত্যক্ষ ঘোষণা দিয়েছে জামাত। যেখানে এতদিন কেউ প্রণাম করেছে, সেখানে এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হবে। কী 'অসাম্প্রদায়িকতা'! আল্লাহ-ঈশ্বরের কী সুন্দর সহাবস্থান! অবশ্য এ নিয়ে বাংলাদেশে টু শব্দটাও হবে না। ভারতে যেমন সভা-সমাবেশ করে মুসল্লিরা বিজেপিকে ভোট দিতে নিষেধ করছে সেখানে বাংলাদেশে কোনোদিন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-উপজাতিদ
সাঈদীর চন্দ্রাভিযানের পর এত হিন্দু নির্যাতন হলো এদেশে, শত শত মন্দির ভাঙা হলো, হিন্দুদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পোড়ানো হলো- একজন হিন্দু একটা মামলা ঠুকেছে বলে আমার জানা নেই। রামুর ঘটনার মূল আসামি জেলে বসেই নির্বাচনে জিতেছে, সেটা জানেন তো? যশোর-দিনাজপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় যে হিন্দু নির্যাতন হলো- এখন পর্যন্ত ক'জন ধরেছে বাংলাদেশে 'আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক' সংখ্যালঘুদের সরকার? একজনেরও শাস্তি হয়েছে? যশোরে দুই গৃহবধু ধর্ষিত হলো, একাত্তর টিভি ধর্ষকদের নাম সহ প্রকাশ করলো, তাদের কিছু হয়েছে? যশোর-দিনাজপুর গেলো, বরিশাল-পাবনার নির্যাতনকারীদের কারও? ২০০১ থেকে ২০০৬ ধরলে তো নির্যাতনের ইতিহাস বই হয়ে যাবে। সেসব থাক। একটা অনুসিদ্ধান্তে পৌছেছি, এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধদের মত সর্বংসহা জাতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি থাকার সম্ভাবনা ডাইনোসর প্রাপ্তির সম্ভাবনার সমতুল্য।
প্রথম আলোতে দেখলাম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে না পড়ে তাই তাদেরও বাংলা-ইংরেজি সহ সাধারণ শিক্ষার বইগুলো পড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পর্যন্ত খুব সুন্দর শোনায়। এর পরের অদ্ভুত সব প্রস্তাবনা টুকু পড়ার পর আপনার গা ঘিনঘিন করবে। মাদ্রাসা শিক্ষার উপযোগী করতে ষষ্ঠ শ্রেণীর জর্জ হ্যারিসনের 'দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' অধ্যায় থেকে জর্জ হ্যারিসনের ছবি বাদ দিতে বলা হয়েছে। সমস্যা- গিটার বাজানোরত অবস্থায় শ্মশ্রুমন্ডিত জর্জ হ্যারিসনের ছবি! তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি এরকম- এক কিশোর হাফপ্যান্ট পরে নৌকা বাইছে আর এক কিশোরী শাপলা তুলছে। মাদ্রাসার বইয়ে প্রচ্ছদ পরিবর্তন করে ওই কিশোরকে পাজামা আর কিশোরীকে হিজাব পরাতে বলা হয়েছে। পাজামা পরে নৌকা-জাহাজ চালানো না হয় সিন্দাবাদে দেখেছি, হিজাব পরে এক সাত-আট বছরের কিশোরী শাপলা-শালুক তুলছে; ছবিটা দেখতে কী সুন্দরই না লাগবে! অষ্টম শ্রেণীর বইয়ে লালন শাহের পদ্য 'মানবধর্ম' বাদ দিয়ে ফররুখ আহমেদের 'মেঘ বৃষ্টি আলোর দেশে' পদ্যটি অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটি সেটা অনুমোদনও করেছে। একই বইতে বিপ্রদাশ বড়ুয়ার 'মংডুর পথে' বদলে 'মদিনার পথে'র অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছু বাদ দেওয়া বা প্রতিস্থাপন এক কথা, সবচেয়ে আশ্চর্যকর- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তৈলচিত্রের ভূত' এর নাম বদলে 'তৈলচিত্রের আছর' নাম রাখতে বলা হয়েছে!
একসময় রক্তের মাঝে আমারও বিপ্লব ছিলো। দেশ বদলানোর স্বপ্ন আমিও দেখতাম। মাঝ দুপুরে নদীতে সুর্যের আলো ঝলকানোর মত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমার চোখেও ঝলকানি দিতো। ডায়রির পাতায় বড় করে 'বাংলাদেশ' লিখতাম। বাংলাদেশের মাঝের 'ং' টা দিতাম লাল জেল পেন এ। 'সেদিন গিয়াছে' ব্রহ্মপুত্রের জলে ভেসে। বেশ আগেই দেশপ্রেমের সৌধ বানিয়ে তাতে ফুল দিয়ে স্যালুট ঠুকে ঘরে ফিরে গোসল সেরেছি। ভালো আছি।
No comments:
Post a Comment