ত্রয়োদশ
শতাব্দী
থেকে
চতুর্দশ
শতাব্দীর
মধ্যভাগ
ভাগ
পর্যন্ত
প্রায়
দেড়শত
বছর
বাংলা
সাহিত্যের কোন
নিদর্শন
পাওয়া
যায়নি,
এই
যুগকে
আখ্যায়িত
করা
হয়েছে বাংলা সাহিতের অন্ধকার
যুগ হিসেবে।
বাংলা সাহিত্যের ১২০০-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” বা “বন্ধ্যা যুগ” বলে কেউ কেউ মনে করেন। ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর “লাল নীল দীপাবলী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন- “১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি।এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।”
বাংলা সাহিত্যের ১২০০-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” বা “বন্ধ্যা যুগ” বলে কেউ কেউ মনে করেন। ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর “লাল নীল দীপাবলী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন- “১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি।এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।”
এসময়ের
সাহিত্য
নিদর্শন:
১.
প্রাকৃত
ভাষার
গীতি
কবিতার
সংকলিত
গ্রন্থ
‘প্রাকৃত
পৈঙ্গল’
২.
রামাই
পণ্ডিত
রচিত
‘শূন্যপুরাণ’
(গদ্যপদ্য
মিশ্রিত)
৩.
হলায়ুধ
মিশ্র
রচিত
‘সেক
শুভোদয়া’
(গদ্যপদ্য
মিশ্রিত)
৪.
ডাক
ও
খনার
বচন
আরব ইসলামী সাম্রাজ্যবাদী ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে অতর্কিতে লক্ষণ সেনের রাজধানী নদীয়ায় প্রবেশ করলে বাংলায় সেন বংশের শেষ শাসক অশীতিপর বৃদ্ধ লক্ষণ সেন পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলে এই বিজয় সূচিত হয়। তুর্কি বিজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে মুসলমান শাসনের শুরু হলে দেড়’শ বছর এর স্থায়িত্ব ধরে নিয়ে এ সময়ে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব ছিলনা । শামসুদ্দিন ইলিয়স শাহ ১৩৪২ সালে গৌড়ের সিংহাসন দখলে নিয়ে দিল্লির শাসনমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার পুত্র সেকান্দর শাহের শাসনামলে আবির্ভাব হয় কবি বড়– চণ্ডীদাসের। এই বড়– চণ্ডীদাসের রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যই মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন।
ইতিহাসকারেরা মনে করেছেন মধ্যযুগের ‘দেড়’শ দু’শ কিংবা আড়াই’শ বছর ধরে হত্যাকাণ্ড ও অত্যাচার চালানো হয় কাফেরদের ওপর। তাদের জীবন জীবিকা এবং ধর্ম-সংস্কৃতির ওপর চলে বেপরোয়া ও নির্মম হামলা। উচ্চবিত্ত ও অভিজাতদের মধ্যে অনেকেই মরল, কিছু পালিয়ে বাঁচল, আর যারা মাটি কামড়ে টিকে রইলো তারা ত্রাসের মধ্যেই দিন রজনী গুণে গুণে রইল। কাজেই ধন, জন আর প্রাণের নিরাপত্তা যেখানে অনুপস্থিত, যেখানে প্রাণ নিয়ে সর্বক্ষণ টানাটানি, সেখানে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার বিলাস অসম্ভব। ফলে সে সময়ে সাহিত্য সংস্কৃতির উন্মেষ বিকাশের প্রশ্নই উঠেনা।’ ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের সম্পর্কে লিখেছেন ‘শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা বাংলা ও তাহার চতুস্পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলামের অর্ধচন্দ্র খচিত পতাকা প্রোথিত হইল। ১৩শ হইতে ১৫শ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত প্রায় দুই শত বছর ধরিয়া এই অমানুষিক বর্বরতা রাষ্ট্রকে অধিকার করিয়াছিল, এই যুগ বঙ্গসংস্কৃতির তামসযুগ, য়ুরোপের মধ্যযুগ ঞযব উধৎশ অমব- এর সহিত সমতুলিত হইতে পারে।’ ড. সুকুমার সেনের মতে ‘মুসলমান অভিযানে দেশের আক্রান্ত অংশে বিপর্যয় শুরু হয়েছিল।’ গোপাল হালদারের মতে তখন ‘বাংলার জীবন ও সংস্কৃতি তুর্ক আঘাতে ও সংঘাতে, ধ্বংসে ও অরাজকতায় মূর্ছিত অবসন্ন হয়েছিল। খুব সম্ভব সে সময়ে কেউ কিছু সৃষ্টি করবার মত প্রেরণা পায়নি।’
কোন কোন পণ্ডিতের মতে এসময়ে ‘বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বারম্বার হরণকারী বৈদেশিক তুর্কিদের নির্মম অভিযান প্রবল ঝড়ের মত বয়ে যায় এবং প্রচণ্ড সংঘাতে তৎকালীন বাংলার শিক্ষা, সাহিত্য, সভ্যতা সমস্তই বিনষ্ট ও বিলুপ্ত হয়ে যায়।’
ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ‘শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা মুসলমানেরা অমানুষিক বর্বরতার মাধ্যমে বঙ্গসংস্কৃতির ক্ষেত্রে তামস যুগের সৃষ্টি করে।’ তিনি মনে করেন ‘বর্বর শক্তির নির্মম আঘাতে বাঙালি চৈতন্য হারিয়েছিল’ এবং ‘পাঠান, খিলজি, বলবন, মামলুক, হাবশি সুলতানদের চণ্ডনীতি, ইসলামি ধর্মান্ধতা ও রক্তাক্ত সংঘর্ষে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় কূর্মবৃত্তি অবলম্বন করে কোন প্রকারে আত্মরক্ষা করেছিল।’ তিনি আরও লিখেছেন ,‘তুর্কি রাজত্বের আশি বছরের মধ্যে বাংলার হিন্দু সমাজে প্রাণহীন অখণ্ড জড়তা ও নাম পরিচয়হীন সন্ত্রাস বিরাজ করিতেছিল।...কারণ সেমীয় জাতির মজ্জাগত জাতি দ্বেষণা ও ধর্মীয় অনুদারতা। ..১৩শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই বাংলাদেশ মুসলমান শাসনকর্তা, সেনাবাহিনী ও পীর ফকির গাজীর উৎপাতে উৎসন্নে যাইতে বসিয়াছিল। শাসনকর্তৃগণ পরাভূত হিন্দুকে কখনও নির্বিচারে হত্যা করিয়া, কখনওবা বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করিয়া এ দেশে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে আরম্ভ করেন। হিন্দুকে হয় স্বধর্ম ত্যাগ, না হয় প্রাণত্যাগ, ইহার যে কোন একটি বাছিয়া লইতে হইত।’ ভূদেব চৌধুরীর মতে, ‘বাংলার মাটিতে রাজ্যলিপ্সা, জিঘাংসা,যুদ্ধ, হত্যা, আততায়ীর হস্তে মৃত্যু-নারকীয়তার যেন আর সীমা ছিলনা। সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর প্রজাসাধারণের জীবনের উৎপীড়ন, লুণ্ঠন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ধর্মহানির সম্ভাবনা উত্তরোত্তর উৎকট হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই জীবনের এই বিপর্যয় লগ্নে কোন সৃজনকর্ম সম্ভব হয়নি।’ তার মতে বখতিয়ার খিলজি মুসলিম বিজেতাদের চিরাচরিত প্রথামত বিগ্রহ মন্দির বিধ্বস্ত করে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন নতুন মসজিদ। মাদ্রাসা ও ইসলামিক শিক্ষার মহাবিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠা করে, বিধর্মীদের ধর্মান্তরিত করে ধর্মীয় উৎসাহ চরিতার্থ করেন। বস্তুত, বখতিয়ারের জীবনান্তের পরে তুর্কি শাসনের প্রথম পর্যায়ের নির্মমতা ও বিশৃংখলার প্রাবল্যের দরুণ এই পলায়নপ্রবণতা আরও নির্বারিত হয়েছিল।
এই লেখায় যে সকল পন্ডিতদের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের লেখাগুলোকে তুলে ধরা হয়ছে, তাতে মনে হয়, শুধু মুসলিম শাসকেরাই নির্মম ঘাতকের ভূমিকা পালন করেছিল| কিন্তু বাস্তব কি তাই..? মহামান্য লেখককূল যদি Biased View পরিহার করে ইতিহাসের সঠিক পর্যালোচনা করতেন তাহলে দেখা যেত যে, যুদ্ধ মানেই অকারণ রক্তপাত, সেটা মুসলিম-খ্রীষ্টান-ইহুদী নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য| শুধু শুধু মুসলিমদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কোনও মানে হয়না| বরং প্রকৃত পক্ষে মুসলিমরা রাজ্য জয়ের জন্য নরহত্যা করলেও তারা আমাদের দেশটিকে নানান শিল্প-সাহিত্য-কৃষ্টি-স্থাপত্য দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে| এখানে মিছেই বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের সাথে মুসলিম রাজত্বকালকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে| আপনাদের পাতাগুলি সুন্দর, লেখাগুলিও| কিন্তু এইভাবে কোনো নির্দিষ্ট একটি জাতিকে বদনাম না করলেও চলত.......!
ReplyDeleteযাহা সত্য তাহাই লেখা হয়েছে। ইতিহাসকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই।
Delete