চিত্রগুপ্ত
প্রতিদিনের অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা অথচ ভয়ংকর চিত্র -এড়িয়ে যাবেন না প্লিজ।
১) আমার ৪+ বয়েসী ছেলেটা ব্যাগ ভর্তি সমস্ত বই খাতা স্কুলে যায়। স্কুলে অ আ ক খ শিখা ছাড়া আর কোন কাজ নেই ওর। ও ক্লাস রুমে বেশীক্ষন বসে থাকতে চায় না। যেটুকু সময় ও বসে থাকে, এর জন্য ওকে রীতিমত ঘুষ দিতে হয় আমাদের। কোন কোন সময় এখনো অবধি গুচিয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারে না। কিন্তু রীতিমত হতবাক হতে হলো মাত্র কয়েকদিন আগে ওর মুখেই “ডান্ডি” শব্দটি শুনে। ও ওর মাকে বলছে, “মা আমরা ডান্ডি?” আমি ও আমার স্ত্রী রীতিমত হতবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম- “বাবু এতো খুবই পঁচা কথা, তুমি একথা কোথ্থেকে শিখছো?” ও ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে বলল “বাহ রে ইস্কুলের ..... মামা তো আমাকে কয় আমি ডান্ডি”। হ্যাঁ অপবিত্র পাকিরা অপবিত্র উর্দ্দূ ভাষায় বঙ্গীয় হিন্দুদের ডান্ডি বলত। এখন পাকিরা নেই, কিন্তু পাকি বীর্যে জন্ম নেয়া পশু গুলি ছড়িয়ে আছে দেশের সর্বত্র। এমনকী অক্ষর জ্ঞান দেবার প্রতিষ্ঠান গুলিতেও। একারণে আমার শিশু সন্তানটি মাত্র ৪+ বয়েসে শিখেছে এ জেনেছে সে “ডান্ডি” অন্যদেরদের থেকে আলাদা। শব্দটি আমি বা আমার পরিবার ওকে শিখায়নি। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই স্কুলে গিয়ে শিখে গেছে। সাবাস বাংলাদেশ! সাবাস।
২) সদা সর্বদা উৎফুল্ল আমার কলিগ সজলদার বছর দশেক বয়েসী ছেলেটা পড়ত ধানমন্ডিস্থ ইংলিশ মিডিয়ামের পরিচালিত একটি অখ্যাত স্কুলে। সজলদা লক্ষ্য করল তা ছেলে স্কুলে কিছু দিন যাতায়াত করার পর ওর আচরনে কেমন পরিবর্তণ এসেছে। মা-বাবাকে আগের মত প্রনাম করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয় না, ঘরে রক্ষিত গৃহদেবতার বিগ্রহে প্রমান করে না, মন্দিরে যেতে চায় না, যদিও জোর করে নেয়া হয়, তখন মন্দিরে বিগ্রহে প্রনাম করে না। মা-বাবা প্রতি সব সময় কেমন যেন কট মট করে তাকায়। সব চেয়ে আশ্চর্যের কথা ছেলেটি খাবার সময় বিড় বিড় করে কী সব আওড়ায়। বিষয়টি চাকুরী দম্পতি সজল বাবু ও তার স্ত্রীর নজরে আসার পর আদরের সোনা মনিকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পায়, “খাবার সময় বিসমিল্লা বলতে হয়, মন্দিরে মুর্তি, ঘরে মুর্তি এগুলো কোন কাজে আসবে? তোমরা ধর্ম পালন কর না কেন?” ইত্যাতি ইত্যাদি। এসব শুনে এ দম্পতি রীতিমত অবাক বিস্ময়ে হতবাক হওয়া ছাড়া আর উপায় ছিলো না। কিন্তু এ দম্পতি মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ওর সমস্ত কথা শুনার পর ওর কাছ থেকে জানতে চাইল কোত্থেকে সে এগুলো শিখেছে? উত্তরে জানাল স্কুলের ম্যাডাম আর স্যাররা শিখিয়েছে। এদম্পতি পরদিন থেকে তাদের সন্তানকে ঐস্কুলে পাঠাননি। পরবর্তী কিছুদিন স্কুলে না পাঠিয়ে ওকে কাউন্সিলিং করার পর শিশুটির মনস্ত্বাত্বিক অবস্থা পূর্বের অবস্থানে আসার পর খৃষ্টান মিশনারী স্কুলে নতুন করে ভর্তি করিয়েছেন।
৩) পুরান ঢাকা একটি বেসকারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র অন্তু, বয়স দশ বছর হল। গতকাল ও ওর মাকে বলছে “মা আমাদের ধর্ম নেই”? উত্তরে ও মা ওকে ধমক দিল। এ শিশুটির সাথে আর মায়ের বাক্যালাপ ঘটছে আমার সামনেই। আমি তাৎক্ষনিক শিশুটির সামনে ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে শিশুটির কাছে জানতে চাইলাম “বাবা তুমি ধর্ম বিষয়ে কি শুনেছো এবং কোথায় শুনেছো?” শিশুটি জানাল ও স্কুলের সহপাঠীরা ওকে বলেছে ওর ধর্ম নেই, যা তার সহপাঠীদের মায়েরা তাদের শিখিয়েছে। এবং বারণ করেছে যে বিধর্মী হিন্দুদের সাথে যেন না মিশে। একারনে স্কুলে অন্তুর কোন বন্ধু নেই। উল্টো ক্লাসের সবাই ওকে হিন্দু হিন্দু বলে ক্ষ্যাপায়, পানির বোতল থেকে ওর গায়ে পানি ছিটায়। এসব কথা শুনে শিশুটির মা হতবাক হয়।
উপরোল্লিখিত তিনটি কাল্পনিক নয়, বাস্তব ঘটনানুসারে লিখিত। প্রতিটি ঘটনার অভিবাবকরা আমার সামনে হতবাক হয়েছেন। কিন্তু আমি হতবাক হইনি। কারণ আমি জানি এধরনের ঘটনা প্রায় স্কুলেই প্রতিটি সংখ্যালঘু শিশু সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ের সাথে ঘঠে থাকে। যদিও স্কুলগুলি কোন বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাধীনে সাধারণ শিক্ষার জন্য পরিচালিত হচ্ছে। যে সকল মা-বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে শিশুদের কাউন্সিলিং করছে, তারা তো সান্তনা পাচ্ছেন। কিন্তু যারা এক্ষেত্রে উদাস থাকছেন, তাদের জন্য ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। আমি জানি না শিশু শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা এগুলো অবগত কি না। যদি অবগত না হন, কিংবা জেনেও না জানা ভান করছেন, তবে নিশ্চয় পুরোজাতি এর খেশারত দিতে হতে পারে, যেদিনটি খুব বেশী দূরে নয়।
উদাসীন হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ সহ এধরনের নামীয় কথিত সংখ্যালঘুর নেতৃত্বদানকারী সংগঠন গুলির নেতৃবৃন্দ।
আমার এক ফেবু বোন আমাকে ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে তার একটি স্মৃতিকথা জানিয়েছেন, যা হরহামেশা দেশব্যাপি ঘটে যাচ্ছে। ঐবোনটি ছোট্ট বেলায় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়তো। ছাত্রাবাস্থায় ঐস্কুলে তখন কোন হিন্দুধর্ম শিক্ষক ছিলো না। এজন্য হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুসলিম বন্ধুদের ইসলাম ধর্ম শিক্ষা ক্লাসে বসে ক্লাস করতো। ঐক্লাসের ধর্মশিক্ষক প্রায়ই হিন্দুধর্ম নিয়ে উল্টা পাল্টা কথার অবতারণা করতো। বোনটি জানিয়েছেন, এতে অন্য হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা মনক্ষুন্ন হলেও তার উপর কোন প্রভাব পড়তো না। কেননা এই বোনটি ভাগ্যবতী তার পরিবার থেকে পারিবারিক মূল্যবোধের যে শিক্ষা পেয়েছিলো তা তাকে শক্ত থাকতে সাহায্য করেছে। এই বোনটি সত্যি ভাগ্যবতী যে তার পরিবার তাকে পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষা পেয়েছিলো। কিন্তু ক’জন আছে এভাবে, যারা তাদের পরিবার থেকে ধর্ম বিষয়ে জানতে কিংবা শিখতে পারে ?
ঠিক এমহুর্তে দেশের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে গড়ে একজন করেও হিন্দুশিক্ষক নেই। হিন্দুধর্ম শিক্ষক নিয়োগতোতো নাই। সুতরাং এদেশের সংখ্যালঘু নেতৃত্বের দাবীদার হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ কিংবা বাংলাদেশ জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ নামীয় কথিত সংখ্যালঘুর নেতৃত্বদানকারী সংগঠন গুলির এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। বরং এরা কে কত সেক্যুলার হতে পারে, কে কত নেতৃতোষন করতে পারে, কে কত অর্থ উপার্যন করতে পারে এ ধান্ধায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
কথিত সংখ্যালঘু নেতৃবন্দের উদাসীনতার কারণেই এখন সময় এসেছে প্রতিটি পরিবার তাদের শিশু সন্তান নিয়ে নতুন করে ভাবার। পাশাপাসি সদাশয় সরকার ও প্রকৃত অসাম্প্রদায়িকচেতনার ব্যক্তিবর্গ অনুগ্রহ করে বিষয়টা কী দেখবেন -মাধ্যমিক স্কুল গুলোর প্রতিটি শ্রেণীতে ধর্মশিক্ষা আছে কিন্ত হিন্দু ধর্ম শিক্ষক আছে কি না? হিন্দু শিক্ষার্থীদের ধর্ম শিক্ষার ক্লাস করানো হয় কি না? অন্য ধর্মের ক্লাসের বসিয়ে এধরনের মানসিক নির্যাতনের মত ঘটনা অহরহ হচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার যায় কি না?
এটা আমাদের সকলের জীবনেই ঘটেছে। মুসলিমরা জন্ম থেকে হিন্দুদের ঘৃণা করতে শিখে।
ReplyDelete