পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় মারপিট ও ইটপাটকেলের আঘাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও পুলিশের উপপরিদর্শকসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিদের ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ডেমরা ইউনিয়নের ডেমরা বাজারের চা ব্যবসায়ী সুকুমার তামলীকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে।
ফরিদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ঘটনাটি নিয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য সম্প্রীতি সভা করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে অভিযোগকারী স্কুলছাত্রীর বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই ছাত্রীর বাবা জানান, এ ঘটনায় তাঁর মেয়ে খুব ভয় পেয়েছে। সে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে এসেছে। অনেক কান্নাকাটি করেছে। গ্রামের লোকজন তাকে দেখতে ভিড় করায় অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছে। এর বাইরে কোথায় কী হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না।
অভিযুক্ত সুকুমার তামলী বলেন, ‘মেয়েটি আমার দোকানে পানি খেতে এসেছিল। আমি শুধু তার হাত ধরে বসতে বলেছি। এতেই কিছু শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারপিট করে। তবে তাদের কারও নাম আমি জানি না।’
ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর ওই এলাকার সব সম্প্রদায়ের মুরব্বিদের নিয়ে সম্প্রীতি বৈঠক করা হয়েছে। আর কোনো ঝামেলা হবে না বলে তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এর পরও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুকুমারকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদেরও মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাতটার দিকে ডেমরা বাজারের হাজি জয়েন উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী বিদ্যালয়ের সামনের একটি কোচিং সেন্টারে পড়তে আসে। সেখানে পৌঁছার পর সে পাশের বাজারে সুকুমার তামলীর চায়ের দোকানে পানি পান করতে যায়। এ সময় সুকুমার তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে সে চিৎকার করে ছুটে গিয়ে সহপাঠীদের বিষয়টি জানায়। এতে তার সহপাঠীরা উত্তেজিত হয়ে সুকুমার তামলীকে মারপিট ও তাঁর দোকান ভাঙচুর করে। পরে স্থানীয় লোকজন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সুকুমারকে আটকে রাখে।
খবর পেয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ফরিদপুর থানার পুলিশের একটি দল আহত অবস্থায় সুকুমার তামলীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যেতে চায়। এ সময় শিক্ষার্থীসহ বাজারের কিছু লোকজন উত্তেজিত হয়ে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়ে সুকুমারকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের এসআই রেজাউল করিম ও কনস্টেবল সোহেল রানা আহত হন।
এদিকে পুলিশ চলে যাওয়ার পর স্থানীয় এলাকাবাসী ও আশপাশের শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা দলবেঁধে ডেমরা পূর্বপাড়া গ্রামে গিয়ে সুকুমারের বাড়িসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা ফিরে আসার সময় রাস্তার দুই পাশে হিন্দু-অধ্যুষিত পালপাড়া ও হলদারপাড়া গ্রামের আরও ১০টি বাড়ির সীমানাঘেরা টিনের বেড়া ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
No comments:
Post a Comment