ভারতের সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিং যাদব ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
আজ (বৃহস্পতিবার) লখনউতে একটি
নির্বাচনী সভায় তিনি এ বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে পরিত্যক্ত
শক্তি মিলে গণধর্ষণে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সমালোচনা করে মুলায়ম সিং যাদব বলেন,
"ছেলেরা কখনও-সখনও ভুল করে ফেলে। এজন্য তাদের ফাঁসি দেয়া উচিত নয়।
আমরা ক্ষমতায় এলে ধর্ষণ আইন সংশোধন করব।"
দিল্লিতে চলন্তবাসে মেডিকেল ছাত্রীকে
গণধর্ষণের পর তীব্র আন্দোলনের মুখে ধর্ষণ বিরোধী আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান
রাখা হয়। নতুন আইন অনুযায়ীই মুম্বাইয়ের শক্তি মিল গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের
সম্প্রতি প্রাণদণ্ড দেয় আদালত। এই নতুন আইনের বিরোধিতা করে এবং ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে
তিনি বলেন, "ওরা তো ছেলে, ভুল তো ওদের হতেই পারে।"
মুলায়মের এই মন্তব্যে সামাজিক
যোগাযোগের সাইট, রাজনৈতিক মহল ও মহিলা সংগঠনের
মধ্যে তীব্র বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
মহিলা সংগঠনগুলোর দাবি,
এ ধরনের মন্তব্য করে নারীদের অপমান করেছেন মুলায়ম। এমনকী নিজের
নিম্ন মানসিকতারও পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
তবে, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও মহিলাদের নিয়ে
আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। একটি গ্রামে
রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে মুলায়ম বলেছিলেন, "সমৃদ্ধশালী
পরিবারের মহিলারাই শুধু জীবনে এগোতে পারবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনারা গ্রামের মহিলারা কোনোদিন সুযোগ পাবেন না। কারণ আপনারা অত
আকর্ষণীয় নন।"
উল্লেখ্য ৪ এপ্রিল ভারতের মুম্বাই নগরে এক নারী ফটোসাংবাদিককে গণধর্ষণের ঘটনায় তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন দেশটির এক আদালত।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তিন
আসামির নাম কাশিম বেঙ্গলি, বিজয় যাদব ও মোহাম্মদ সালিম।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী মুম্বাইয়ের একটি সাময়িকীতে আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। গত বছরের ২২ আগস্ট ওই নারী সাংবাদিক এক পুরুষ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মুম্বাইয়ের শক্তি মিল এলাকায় একটি প্রতিবেদনের কাজে যান। সেখানে তাঁকে ওই তিন আসামিসহ মোট পাঁচজন ধর্ষণ করে। এদের মধ্যে একজন কিশোরও ছিল।
দেখুন সেখানে ধর্ষকদের ভিতর দুইজনই মুসলিম।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী মুম্বাইয়ের একটি সাময়িকীতে আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। গত বছরের ২২ আগস্ট ওই নারী সাংবাদিক এক পুরুষ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মুম্বাইয়ের শক্তি মিল এলাকায় একটি প্রতিবেদনের কাজে যান। সেখানে তাঁকে ওই তিন আসামিসহ মোট পাঁচজন ধর্ষণ করে। এদের মধ্যে একজন কিশোরও ছিল।
দেখুন সেখানে ধর্ষকদের ভিতর দুইজনই মুসলিম।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তিন আসামি এ ঘটনার মাত্র এক মাস আগে জুলাইতে ১৮ বছর বয়সী এক টেলিফোন অপারেটরকেও ওই একই স্থানে গণধর্ষণ করেছিল বলে জানা গেছে।
তার মানে কি এই দাঁড়ায় না মুলায়াম সিং যাদব মুসলিম ভোট ব্যাংকের জন্যই মুসলিম ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা রধ করতে চাইছেন?
আপনাদের জানিয়ে রাখি অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি মুক্তির আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠার সময় থেকেই সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদবের নামের আগে ‘মওলানা’ কথাটি জুড়ে গিয়েছিল। কারণ তার অতিরিক্ত মুসলিম প্রেম। সেই থেকে ক্রমে ক্রমে মুলায়মই হয়ে উঠেছেন উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের ‘উদ্ধারকারী’। রাজ্যে যতবার ভোট হয়েছে, সমর্থনে কখনো-সখনো টাল খেলেও মুসলমানরা ক্ষোভে বা অভিমানে জোটবদ্ধভাবে একবারও মুলায়মের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেননি। এর বলয় থেকে বের হতে পারেন নাই তার ছেলে অখিলেশ যাদবও।
আপনাদের দুর্গা শক্তি নাগপালের কথা মনে আছে? মসজিদের দেওয়াল ভাঙাকে কেন্দ্র করে সাসপেন্ড হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের আইএএস অফিসার দুর্গা শক্তি নাগপাল। ২৮ বর্ষীয় এই মহিলা আইএএস অফিসারের সাসপেনস্ন্ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে সমাজবাদী পার্টি পরিচালিত অখিলেশ যাদবের সরকার। রাজ্যের গৌতম বুদ্ধনগর এলাকায় অবৈধ বালুর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন স্থানীয় সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট নাগপাল। তিনি সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মাণাধীন একটি মসজিদের দেয়াল ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এ কারণে তাঁকে গত ২৭ জুলাই বরখাস্ত করা হয়। রাজ্য সরকারের যুক্তি, নাগপালের নির্দেশের কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তার মানে কি মুসলিমরা অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণ করবে আর কিছু বলা যাবে না? এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্ন ঘটে? এদিকে প্রতিবেশি বাংলাদেশে শত শত মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে তাও তারা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ঘোষণা করে কিভাবে?
দলের প্রধানকে টেক্কা দিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন ভারতের সমাজবাদী পার্টিরই আরেক নেতা আবু আজমি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে ধর্ষণের সাজা ফাঁসি। কিন্তু ভারতে মেয়েদের কোনো সাজা দেওয়া হয় না। শুধু পুরুষরাই সাজা পায়। এক্ষেত্রে মহিলাদেরও দোষ থাকে।
এনডিটিভিকে
দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিং যাদবের ধর্ষণ মন্তব্য সম্পর্কে
প্রশ্ন করা হলে আবু আজমি বলেন,
দলনেতা কী প্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন তা আমার জানা নেই। তবে আমার
ব্যক্তিগত ধারণা জানতে চাইলে বলব, যদিও ইসলাম ধর্মে
ধর্ষণের সাজা ফাঁসি। মহিলারাও ধর্ষণের ঘটনায় দায়ী। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো
পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।"
নিজের
বক্তব্যের সপক্ষে আজমির যুক্তি,
ভারতে কোনো ব্যক্তি যদি মহিলার ইচ্ছায় যৌনমিলন করে তাতে কোনো
আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেই ফাঁসি। দুজনের মধ্যে কিছু
ভুল হলেই, মহিলা ক্ষুব্ধ হয়ে যদি অভিযোগ জানিয়ে দেন তাহলেই
ফাঁসি। ইচ্ছা-অনিচ্ছার জন্য জীবন-মরণ পার্থক্য হয়ে যায়।
আবু
আজমি আরো বলেন, সম্প্রতি এরকম ধরণের অনেক ঘটনা দেখা গিয়েছে, যেখানে
কেউ ছুঁলেও মহিলারা অভিযোগ দায়ের করেন। না ছুঁলেও অভিযোগ দায়ের করেন। এটা এখন সমস্যা
হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে পুরুষদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ইচ্ছাতে হোক বা ইচ্ছার
বিরুদ্ধে, ধর্ষণের সাজা ইসলাম অনুযায়ী ফাঁসি হওয়া উচিত।
আমি আমার ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব না।"
এই সমস্যার সমাধানও বাতলে দিয়েছেন আজমি। সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে
তিনি বলেন, বিবাহিত বা অবিবাহিত কোনো মহিলা যদি নিজের
ইচ্ছাতে বা অনিচ্ছায় অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলন করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট পুরুষ ও মহিলা দুজনকে ফাঁসি দেওয়া উচিত।
তার মানে কি ধর্ষিতারও ফাঁসি হবে?
তার মানে কি ধর্ষিতারও ফাঁসি হবে?
No comments:
Post a Comment