সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত নিরাপত্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী সেনাদের মধ্যে চলমান তীব্র লড়াই গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী দামেস্কের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিদ্রোহীরা সরকারের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয়ের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিক্ষোভকারীরা জানান, সরকারি প্রশাসনের প্রধান কার্যালয়ের কাছেই নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি সেনাদের প্রচণ্ড লড়াইয়ের খবর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সম্প্রচার করেছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় টিভিতে গতকাল দেখানো হয়, প্রেসিডেন্ট বাশার নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে শপথ গ্রহণ করাচ্ছেন। গত বুধবার আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশারকে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছিল না। সিরিয়ার সরকারবিরোধী সূত্র ও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা গতকাল দাবি করেন, তিনি রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে দেশের উপকূলীয় পর্যটন শহর লাতাকিয়ায় অবস্থান করছেন। শিয়া অধ্যুষিত লাতাকিয়া এলাকা তাঁর নিজ সম্প্রদায় আলাবি শিয়া সম্প্রদায়ের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
গত বুধবার রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর হামলায় হেলিকপ্টার এবং কামান ব্যবহার করেছে।
লন্ডনভিত্তিক সিরিয়াবিষয়ক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, দামেস্কে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার) সরকার ও বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে কমপক্ষে ২১৪ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ১২৪ জন, সরকারি সেনা ৬২ জন এবং বিদ্রোহী ২৮ জন।
বুধবারের আত্মঘাতী বোমা হামলার পর হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি বলেন, ‘আমি মনে করি, ওই ঘটনায় এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ‘সিরিয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তপাত এখনই বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে সিরিয়ায় অবস্থান করা জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের মেয়াদ আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে। নতুন করে পর্যবেক্ষকদের সময় বাড়ানো এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপের বিষয়টি নির্ভর করছে রাশিয়া ও চীনের ভূমিকার ওপর। গতকাল বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
সিরিয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে পশ্চিমা মনোভাব এবং দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাশিয়াকে রাজি করাতে জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত কফি আনান এ সপ্তাহে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সর্বশেষ বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে সিরিয়া বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে সিরিয়া বিষয়ে দুই দেশই আগের মতোই বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।
সিরিয়া আরব বিশ্বে বর্তমানে একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেখানে শিয়া-সুন্নী-দ্রম্নজসহ বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠী এবং খ্রিস্টান সহ বহু ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায় রয়েছে। সরকারে প্রাধান্যে রয়েছে সংখ্যালঘু আলাউইট সম্প্রদায় যারা শিয়া মুসলিমদের একটি শাখা। সিরিয়ায় কল্যাণমূলক অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র শাসক বাথ পার্টির জাতীয়তাবাদী রাজনীতিরই ফসল।
এখন প্রেসিডেন্ট বাসারের পতন হলে সেখানে উগ্র ইসলামী শক্তি ইসলামিক ব্রাদারহুডের উত্থান ঘটবে। সিরিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালে তিনি ব্যাপক দমন অভিযান চালিয়ে সংগঠনটিকে একেবারে ধ্বংস করে দেন। দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ব্রাদারহুড আবার উঠে দাঁড়িয়েছে এবং এখন সিরিয়ার একটি অন্যতম শক্তিশালী সংগঠনরূপে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ব্রাদারহুডের একজন নেতা মুলহেম দ্রাউবি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা বাশার আল আসাদের পতনের জন্য সংগ্রাম করছি, গণভিত্তি খোঁজার জন্য নয়। মুক্ত সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রতিযোগিতার বিষয়টি আমরা ছেড়ে দিয়েছি।
সৌদি ওয়াহিবারা যে সব সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে বিপুল অর্থ দিয়ে সাহায্য করে তার অন্যতম হচ্ছে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড। এই বিশাক্ত সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা ১৯২৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বাননা। বলাবাহুর্য কট্টরপন্থি লোক ছিলেন বাননা। এর শিষ্যরা সবাই বিশ্বজুড়ে নাকি ওয়াহাবীবাদ কায়েমের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার শপথ নিয়েছিল।
ইসলামিক সন্ত্রাস আজ বিশ্বের জন্য হুমকি। তাই আমাদের উচিত প্রেসিডেন্ট বাসারকে সমর্থন করা।
No comments:
Post a Comment