জেসমিন পাঁপড়ি, স্টাফ করসেপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে ও নেতৃত্ব দিয়ে মা, কাকা, ভাই, ভাগিনাসহ ৫ স্বজনকে গুলি করে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন শহীদ পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা। তিনি সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৬ষ্ঠ সাক্ষী।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ এপ্রিল তার চোখের সামনে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা ব্রাশফায়ার (গুলি) করে হত্যা করে নির্মল চন্দ্র শর্মার মা পঞ্চবালা শর্মা, বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা, ছোট কাকা ডা. মাখন লাল শর্মা, ছোট ভাই সুনীল শর্মা ও ভাগিনা দুলাল শর্মাকে। গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান তার বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার মধ্যগহিরা গ্রামে তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় জানিয়ে সাক্ষী জানান, একই দিন তাদের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গণহত্যা চালায় সাকার নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।
এ ঘটনায় শেষ মুহূর্তে কাত হয়ে পড়ে যাওয়ায় গুলি না লাগায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান সে সময়কার ২৫ বছরের যুবক নির্মল নিজেই। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে নির্মল ও তার আরেক ভাই বিমল চন্দ্র শর্মা ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নেন। পরে দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
বর্তমানে ৬৭ বছর বয়সী আইনজীবী নির্মল শর্মা সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ সেদিনকার নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সোমবার বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের ৬ষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন করেন অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা। এজন্য সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সাক্ষ্য দানকালে শহীদ ৫ জন স্বজনের হত্যাকারী হিসেবে সাকা চৌধুরীকে চিহ্নিত করে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওই গণহত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন নির্মল। মধ্যাহ্ন বিরতির পরে দুপুর ২টা থেকে ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।
ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেরা মুলতবি করেছেন।
এদিকে সাক্ষী নির্মলের কান্নায় ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠলেও উপস্থিত সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেকে পেছনে বসে মিটিমিটি হাসতে দেখা গেছে। আবার সাক্ষ্য দানকালে সাক্ষীর কালেমা উচ্চারণ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আপত্তি করে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হন। সাকা চৌধুরী নিজেও এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘‘আমি এমনই হতভাগা অপদার্থ অধম সন্তান যে, বেঁচে থেকেও পুত্র হিসেবে মায়ের মুখাগ্নি করতে পারিনি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অন্তেষ্টিক্রিয়া করতে পর্যন্ত পরিনি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা, ব্রাশফায়ারের পরে প্রায় বিশ পঁচিশ দিনের মতো শুধুমাত্র ডাবের পানি খেয়ে ছিলেন। তার বাম হাতে ও বাম পয়ে গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে যুদ্ধাহত হয়ে অবশ্য পাঁচ-ছয় বছর বেঁচে ছিলেন। তবে ব্রাশফায়ারের গুলি লেগে কাকা ডা. মাখন লাল শর্মার মাথার খুলি উড়ে গেলেও তিনি কয়েকদিন পরে মারা যান।’’
‘‘তবে আমার বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা, ভাগিনা দুলাল শর্মা, মা পঞ্চবালার সবারই বাম পাশে গুলি লেগে ডান পাশ দিয়ে বের হয়। গুলির সঙ্গে তাদের সবার পেটের নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে আসে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাড়িতে খাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনারা আমাদের উঠানে আসে এবং আমাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ব্রাশফায়ার হত্যা করেন। ওই সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও সঙ্গে ছিলেন।’’
উল্লেখ্য, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ১৪ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর এ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি এবং শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ভাতিজা গৌরাঙ্গ সিংহ ও পুত্র প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন আসামিপক্ষ। ওই ৫ জন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে সাকারে বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ তুলে ধরলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী হিসেবে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা।
তিনি বলেন, ‘‘আমার নাম অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা। বয়স আনুমানিক ৬৭ বছর, গ্রাম মধ্যগহিরা, রাউজান, পিতার নাম মৃত জয়ন্ত কুমার শর্মা। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল প্রায় ২৫ বছর। আমি এমএসএস, এলএলবি, চট্টগ্রামের জেলা জজকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত।’’
নির্মল বলেন, ‘‘১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের হাটহাজারী দীঘির উত্তর পাড়ের ইপিআর প্রতিরোধ সেন্টারের প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানি সেনারা হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। আর কোনো প্রতিরোধ সেন্টার না থাকায় আমরা আমাদের মধ্যগহিরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ১৩ এপ্রিল সকালে বাবা, মা, ভাই ও ভাগিনাদের নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমনকি আমার বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা তার হাটহাজারীর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘এ সময় আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে অবস্থিত মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা শুনতে পাই। ঘোষণায় বলা হচ্ছিল, কেউ তোমরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে কোথাও যাবে না। এলাকায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে। কারো কোনো অসুবিধা হবে না। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গেলে লুটপাট হয়ে যেতে পারে। কাজেই কেউ পালাবে না। বারবার মাইকে এ ঘোষণা শুনতে পেয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমার বড় কাকাও সেই ঘোষণায় আশ্বস্ত হয়ে ফিরে আসেন।’’
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে নির্মল বলেন, ‘‘আমি, আমরা ছোট ভাই ও ভাগিনা খেতে বসেছিলাম। আমার মা পরিবেশন করছিলেন। এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা আমাদের ঘরের দরজায় উপস্থিত হয়। সশস্ত্র সৈন্যদের একজন তাদের ভাষায় বলেন, তোমরা ঘরের বাইরে বের হয়ে এসো। তোমাদের মারবো না।’’
‘‘আমরা ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এলাম। পাকিস্তানি সেনারা আমাদের পেছন থেকে ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে হাত তুলে দাঁড়াতে বলায় আমি সেটা করলাম। এ সময় ২ জন পাকিস্তানি সেনা আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি মাথা না নাড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে তাদের অবস্থান দেখছিলাম। মা, বাবা, কাকা, ভাইসহ অন্যরা সে সময় চিৎকার, কান্নাকাটি করছিলেন। আমার কাকা ডা. মাখন লাল শর্মা তাদের মূল লক্ষ্য বুঝতে পারি। কোনো প্রতিরোধ করতে গেলে কাকার পরিবারকে মেরে ফেলবে, বুঝতে পেরে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলাম।’’
‘‘এক সময় আমার বাবা, মা, ভাই তিনজন এগিয়ে এসে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে কান্নাকাটি করে প্রাণভিক্ষা করতে থাকায় তারা ধমক দিয়ে তাদের ভাষায় বলে, ‘চুপ করো, ঘরের ভেতর যাও। আমরা তখন ঘরের ভেতর চলে যাই। ৪/৫ মিনিট পরে দেখলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কাকা ডা. মাখন লাল শর্মাকে টেনে-হিঁচড়ে তার ঘর থেকে উঠোনে এনে ফেললেন। কাকাকে বাঁচাতে আমিসহ পরিবারের সদস্যরা বাইরে এসে কান্নাকাটি করতে থাকি।’’
‘‘পরিবারের কেউ কেউ সাকা চৌধুরীসহ পাকিস্তানি সেনাদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকেন। প্রাণভিক্ষা করেন। এ সময় তারা আমাদের লাইন ধরে দাঁড়াতে বলে। আমরা লাইন ধরে দাঁড়ালে তারা ১৫ হাতের মেতো দূরে গিয়ে বসে পড়তে বলে। আমরা পশ্চিমমুখী হয়ে বসে পড়ি। সাকাসহ পাকিস্তানি সেনারা পূর্বমুখী হয়ে দাঁড়ায়।’’
নির্মল বলেন, ‘‘ওই ভাবে বসে থাকা অবস্থায় তারা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অ্যাঙ্গেল করে পূর্ব দিকে তাক করে আমাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। গুলি করার আগ মুহূর্তে আমি কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তারা দু’বার ব্রাশ ফায়ার করে। আমি চুপ করে পড়ে থাকি। উঠলেই গুলি করবে, এ ভয়ে-আতঙ্কে কাঁপতে থাকি।’’
সাক্ষী বলেন, ‘‘এক সময় সবাই চুপ হয়ে যান। শুধু একটি গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। এরপর বুঝতে পারলাম, সাকা চৌধুরীসহ পাকিস্তানি সেনারা চলে যাচ্ছে।’’
নির্মলের এরপরের বর্ণনা ছিল ভয়াবহ ও মর্মষ্পর্শী। তিনি বলেন, ‘‘আমি উঠে দেখলাম, মা পঞ্চবালা শর্মার পেটের বাম দিকে গুলি ডান দিকে নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা ও ভাগিনা দুলাল শর্মারও একইভাবে নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। ছোট ভাই সুনীল চন্দ্র শর্মাও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’’
নির্মল জানান, ‘‘সেদিন নিহত ৫ জনের মধ্যে শুধু ছোট কাকা ডা. মাখন লাল শর্মার গুলি লেগে মাথার খুলির একাংশ উড়ে গেলেও তিনি তৎক্ষনাৎ মারা যাননি। তবে পরে তিনি মারা যান।’’
বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা ছিলেন স্বাস্থ্যবান। তার বাম পায়ের উরুতে গুলি লেগে মাংস বের হয়ে আসে। তার বাম হাতও গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও তিনি বেঁচে ছিলেন।’’
সাক্ষী বলেন, ‘‘আমি ওই সময় ওঠে দেখি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সৈন্যরা পূর্বদিকে চলে গেছেন। এদিকে গুলির শব্দ শোনার প্রায় পাঁচ মিনিট পরে মেজ ভাই বিমল শর্মা সেখানে আসেন। পরে আমরা দুই জনে মিলে হালদা নদী পার হয়ে হাটহাজারীর দিকে চলে যাই। সন্ধ্যার আঁধারে আমরা আবার বাড়ি ফিরে আসি। দেখতে পাই, কাকা এবং বাবা গোঙাচ্ছেন। বাবা ক্ষীণ কণ্ঠে পানি থেতে চান। তিনি আমাদেরকে বলেন, তোমরা চলে যাও। একটি ঘটিতে বাবাকে পানি দিয়ে আমরা আবার চলে আসি।’’
ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নটার দিকে আমাদের বাড়ির উত্তর পাশে আলিম চৌধুরীর বাড়িতে যাই। তাকে আমরা দানু চাচা বলে ডাকতাম।
‘‘ওই রাত আলিম চৌধুরীর বাড়িতে কাটাই। পরের দিন ভোরে ফজরের নামাজের সময় আমাদের দুই ভাইয়ের মাথায় দু’টি টুপি দিয়ে কালেমা শিখিয়ে দানু চাচা আমাদেরকে তার বাড়ি থেকে প্রায় আধা মাইল পথ এগিয়ে দিয়ে আসেন।’’
‘‘আমরা দুই দিন হেটে রামগড় দিয়ে ভারতে চলে যাই। পরের দিন সাবলোমে যাই। সাবলোম থেকে যাই শরণার্থী শিবিরে। পরে আগরতলা ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে আনুমানিক বিশ কি পঁচিশ দিন পরে দেশে ফিরে এসে ১নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এর আগে আমি তদন্ত সংস্থার কাছে বক্তব্য দিয়েছি। আমি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিনি। এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।’’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
৫৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন।
৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। ৩ মে ও ৭ মে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটম্যান) উপস্থাপন সম্পন্ন করার মাধ্যমে শুরু হয় সাকা চৌধুরীর বিচার।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ এপ্রিল তার চোখের সামনে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা ব্রাশফায়ার (গুলি) করে হত্যা করে নির্মল চন্দ্র শর্মার মা পঞ্চবালা শর্মা, বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা, ছোট কাকা ডা. মাখন লাল শর্মা, ছোট ভাই সুনীল শর্মা ও ভাগিনা দুলাল শর্মাকে। গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান তার বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার মধ্যগহিরা গ্রামে তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় জানিয়ে সাক্ষী জানান, একই দিন তাদের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গণহত্যা চালায় সাকার নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।
এ ঘটনায় শেষ মুহূর্তে কাত হয়ে পড়ে যাওয়ায় গুলি না লাগায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান সে সময়কার ২৫ বছরের যুবক নির্মল নিজেই। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে নির্মল ও তার আরেক ভাই বিমল চন্দ্র শর্মা ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নেন। পরে দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
বর্তমানে ৬৭ বছর বয়সী আইনজীবী নির্মল শর্মা সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ সেদিনকার নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সোমবার বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের ৬ষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন করেন অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা। এজন্য সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সাক্ষ্য দানকালে শহীদ ৫ জন স্বজনের হত্যাকারী হিসেবে সাকা চৌধুরীকে চিহ্নিত করে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওই গণহত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন নির্মল। মধ্যাহ্ন বিরতির পরে দুপুর ২টা থেকে ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।
ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেরা মুলতবি করেছেন।
এদিকে সাক্ষী নির্মলের কান্নায় ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠলেও উপস্থিত সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেকে পেছনে বসে মিটিমিটি হাসতে দেখা গেছে। আবার সাক্ষ্য দানকালে সাক্ষীর কালেমা উচ্চারণ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আপত্তি করে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হন। সাকা চৌধুরী নিজেও এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘‘আমি এমনই হতভাগা অপদার্থ অধম সন্তান যে, বেঁচে থেকেও পুত্র হিসেবে মায়ের মুখাগ্নি করতে পারিনি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অন্তেষ্টিক্রিয়া করতে পর্যন্ত পরিনি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা, ব্রাশফায়ারের পরে প্রায় বিশ পঁচিশ দিনের মতো শুধুমাত্র ডাবের পানি খেয়ে ছিলেন। তার বাম হাতে ও বাম পয়ে গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে যুদ্ধাহত হয়ে অবশ্য পাঁচ-ছয় বছর বেঁচে ছিলেন। তবে ব্রাশফায়ারের গুলি লেগে কাকা ডা. মাখন লাল শর্মার মাথার খুলি উড়ে গেলেও তিনি কয়েকদিন পরে মারা যান।’’
‘‘তবে আমার বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা, ভাগিনা দুলাল শর্মা, মা পঞ্চবালার সবারই বাম পাশে গুলি লেগে ডান পাশ দিয়ে বের হয়। গুলির সঙ্গে তাদের সবার পেটের নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে আসে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাড়িতে খাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনারা আমাদের উঠানে আসে এবং আমাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ব্রাশফায়ার হত্যা করেন। ওই সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও সঙ্গে ছিলেন।’’
উল্লেখ্য, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ১৪ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর এ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি এবং শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ভাতিজা গৌরাঙ্গ সিংহ ও পুত্র প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন আসামিপক্ষ। ওই ৫ জন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে সাকারে বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ তুলে ধরলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী হিসেবে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা।
তিনি বলেন, ‘‘আমার নাম অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা। বয়স আনুমানিক ৬৭ বছর, গ্রাম মধ্যগহিরা, রাউজান, পিতার নাম মৃত জয়ন্ত কুমার শর্মা। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল প্রায় ২৫ বছর। আমি এমএসএস, এলএলবি, চট্টগ্রামের জেলা জজকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত।’’
নির্মল বলেন, ‘‘১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের হাটহাজারী দীঘির উত্তর পাড়ের ইপিআর প্রতিরোধ সেন্টারের প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানি সেনারা হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। আর কোনো প্রতিরোধ সেন্টার না থাকায় আমরা আমাদের মধ্যগহিরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ১৩ এপ্রিল সকালে বাবা, মা, ভাই ও ভাগিনাদের নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমনকি আমার বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা তার হাটহাজারীর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘এ সময় আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে অবস্থিত মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা শুনতে পাই। ঘোষণায় বলা হচ্ছিল, কেউ তোমরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে কোথাও যাবে না। এলাকায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে। কারো কোনো অসুবিধা হবে না। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গেলে লুটপাট হয়ে যেতে পারে। কাজেই কেউ পালাবে না। বারবার মাইকে এ ঘোষণা শুনতে পেয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমার বড় কাকাও সেই ঘোষণায় আশ্বস্ত হয়ে ফিরে আসেন।’’
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে নির্মল বলেন, ‘‘আমি, আমরা ছোট ভাই ও ভাগিনা খেতে বসেছিলাম। আমার মা পরিবেশন করছিলেন। এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা আমাদের ঘরের দরজায় উপস্থিত হয়। সশস্ত্র সৈন্যদের একজন তাদের ভাষায় বলেন, তোমরা ঘরের বাইরে বের হয়ে এসো। তোমাদের মারবো না।’’
‘‘আমরা ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এলাম। পাকিস্তানি সেনারা আমাদের পেছন থেকে ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে হাত তুলে দাঁড়াতে বলায় আমি সেটা করলাম। এ সময় ২ জন পাকিস্তানি সেনা আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি মাথা না নাড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে তাদের অবস্থান দেখছিলাম। মা, বাবা, কাকা, ভাইসহ অন্যরা সে সময় চিৎকার, কান্নাকাটি করছিলেন। আমার কাকা ডা. মাখন লাল শর্মা তাদের মূল লক্ষ্য বুঝতে পারি। কোনো প্রতিরোধ করতে গেলে কাকার পরিবারকে মেরে ফেলবে, বুঝতে পেরে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলাম।’’
‘‘এক সময় আমার বাবা, মা, ভাই তিনজন এগিয়ে এসে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে কান্নাকাটি করে প্রাণভিক্ষা করতে থাকায় তারা ধমক দিয়ে তাদের ভাষায় বলে, ‘চুপ করো, ঘরের ভেতর যাও। আমরা তখন ঘরের ভেতর চলে যাই। ৪/৫ মিনিট পরে দেখলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কাকা ডা. মাখন লাল শর্মাকে টেনে-হিঁচড়ে তার ঘর থেকে উঠোনে এনে ফেললেন। কাকাকে বাঁচাতে আমিসহ পরিবারের সদস্যরা বাইরে এসে কান্নাকাটি করতে থাকি।’’
‘‘পরিবারের কেউ কেউ সাকা চৌধুরীসহ পাকিস্তানি সেনাদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকেন। প্রাণভিক্ষা করেন। এ সময় তারা আমাদের লাইন ধরে দাঁড়াতে বলে। আমরা লাইন ধরে দাঁড়ালে তারা ১৫ হাতের মেতো দূরে গিয়ে বসে পড়তে বলে। আমরা পশ্চিমমুখী হয়ে বসে পড়ি। সাকাসহ পাকিস্তানি সেনারা পূর্বমুখী হয়ে দাঁড়ায়।’’
নির্মল বলেন, ‘‘ওই ভাবে বসে থাকা অবস্থায় তারা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অ্যাঙ্গেল করে পূর্ব দিকে তাক করে আমাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। গুলি করার আগ মুহূর্তে আমি কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তারা দু’বার ব্রাশ ফায়ার করে। আমি চুপ করে পড়ে থাকি। উঠলেই গুলি করবে, এ ভয়ে-আতঙ্কে কাঁপতে থাকি।’’
সাক্ষী বলেন, ‘‘এক সময় সবাই চুপ হয়ে যান। শুধু একটি গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। এরপর বুঝতে পারলাম, সাকা চৌধুরীসহ পাকিস্তানি সেনারা চলে যাচ্ছে।’’
নির্মলের এরপরের বর্ণনা ছিল ভয়াবহ ও মর্মষ্পর্শী। তিনি বলেন, ‘‘আমি উঠে দেখলাম, মা পঞ্চবালা শর্মার পেটের বাম দিকে গুলি ডান দিকে নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা ও ভাগিনা দুলাল শর্মারও একইভাবে নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। ছোট ভাই সুনীল চন্দ্র শর্মাও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’’
নির্মল জানান, ‘‘সেদিন নিহত ৫ জনের মধ্যে শুধু ছোট কাকা ডা. মাখন লাল শর্মার গুলি লেগে মাথার খুলির একাংশ উড়ে গেলেও তিনি তৎক্ষনাৎ মারা যাননি। তবে পরে তিনি মারা যান।’’
বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা ছিলেন স্বাস্থ্যবান। তার বাম পায়ের উরুতে গুলি লেগে মাংস বের হয়ে আসে। তার বাম হাতও গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও তিনি বেঁচে ছিলেন।’’
সাক্ষী বলেন, ‘‘আমি ওই সময় ওঠে দেখি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সৈন্যরা পূর্বদিকে চলে গেছেন। এদিকে গুলির শব্দ শোনার প্রায় পাঁচ মিনিট পরে মেজ ভাই বিমল শর্মা সেখানে আসেন। পরে আমরা দুই জনে মিলে হালদা নদী পার হয়ে হাটহাজারীর দিকে চলে যাই। সন্ধ্যার আঁধারে আমরা আবার বাড়ি ফিরে আসি। দেখতে পাই, কাকা এবং বাবা গোঙাচ্ছেন। বাবা ক্ষীণ কণ্ঠে পানি থেতে চান। তিনি আমাদেরকে বলেন, তোমরা চলে যাও। একটি ঘটিতে বাবাকে পানি দিয়ে আমরা আবার চলে আসি।’’
ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নটার দিকে আমাদের বাড়ির উত্তর পাশে আলিম চৌধুরীর বাড়িতে যাই। তাকে আমরা দানু চাচা বলে ডাকতাম।
‘‘ওই রাত আলিম চৌধুরীর বাড়িতে কাটাই। পরের দিন ভোরে ফজরের নামাজের সময় আমাদের দুই ভাইয়ের মাথায় দু’টি টুপি দিয়ে কালেমা শিখিয়ে দানু চাচা আমাদেরকে তার বাড়ি থেকে প্রায় আধা মাইল পথ এগিয়ে দিয়ে আসেন।’’
‘‘আমরা দুই দিন হেটে রামগড় দিয়ে ভারতে চলে যাই। পরের দিন সাবলোমে যাই। সাবলোম থেকে যাই শরণার্থী শিবিরে। পরে আগরতলা ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে আনুমানিক বিশ কি পঁচিশ দিন পরে দেশে ফিরে এসে ১নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এর আগে আমি তদন্ত সংস্থার কাছে বক্তব্য দিয়েছি। আমি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিনি। এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।’’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
৫৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন।
৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। ৩ মে ও ৭ মে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটম্যান) উপস্থাপন সম্পন্ন করার মাধ্যমে শুরু হয় সাকা চৌধুরীর বিচার।
No comments:
Post a Comment