শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন (জন্মাষ্টমী) উপলক্ষে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। |
অগণতান্ত্রিক পন্থায় কেউ যেন ক্ষমতায় আসতে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সংবিধানে একটি সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন (জন্মাষ্টমী) উপলক্ষে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা আজ মঙ্গলবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সব ধর্ম ও সম্প্র্রদায়ের সমান অধিকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে সাম্প্র্রদায়িক বিভেদ থাকবে না, মানুষের মাঝে বিরাজ করবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। যেখানে নারী পুরুষ-নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকে নির্বিঘ্নে তাদের মৌলিক ও ধর্মীয় অধিকার ভোগ করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও অর্থ পাচারকারীদের বিচার বন্ধ করতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটি মহল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারী ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিচার বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে।’ এই কালো অধ্যায়ের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে তিনি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে শান্তিপূর্ণ ও উত্সবমুখর পরিবেশে ঈদ ও পূজাসহ সব উত্সব উদযাপিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন একসঙ্গে ঈদ, পূজা এবং অন্যান্য উত্সব ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা ও জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, তারা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ বা লালন করেনি বরং তারা পরাজিত শক্তির পদাঙ্ক অনুসরণ এবং দেশকে উল্টোপথে চালিত করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছিল।
‘দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালন’—কৃষ্ণের এ বাণী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এই নীতিবাক্য অনুসরণে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার এই আইন পাস করে এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার হরিজন ও দলিতদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা হরিজন ও দলিতদের জীর্ণ বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি।’ তিনি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সি আর দত্ত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কানুতোষ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র দেবনাথ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, চট্টগ্রাম জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
No comments:
Post a Comment