ব্রাহ্মণ ২
অরুন চন্দ্র মজুমদার
প্রথম পর্ব
আগেই বলা হয়েছে, যিনি নগরীর হিত কামনা করেন তিনিই হবেন পুরোহিত। বাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য বর্ণের মানুষও তো ছিল, যারা নগর কিংবা রাজ্যের মঙ্গল/হিত কামনা করতো। সুতরাং রাজ পুরোহিত নামক উচ্চাশনের এ পদটিতে শুধু বাহ্মণ নিয়োগ দেয়া হতো কেন? এ সঙ্গতঃ কারনেই চলে আসে। গতকাল এখানে থেমে ছিলাম।
আগেই উল্লেখ করেছি, বর্ণচতুষ্টয়ের প্রথম এবং উচ্চতম বর্ণ হল ব্রাহ্মণ । ব্রাহ্মণ বর্ণজাত ব্যক্তিগণই সমাজে শিক্ষক, আধ্যাত্মিক গুরু, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এবং ধর্মীয় বিধানকর্তার ভূমিকা পালন করার অধিকারপ্রাপ্ত। সম্ভবতঃ বেদে ব্রাহ্মণদের বিষয়ে এভাবে উল্লেখ আছে। শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ বিপ্র (অর্থাৎ জ্ঞানী) এবং দ্বিজ (অর্থাৎ দু'বার জাত) হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন। ব্রাহ্মণরা অন্যান্য বর্ণের মানুষের মত একবার মাতৃগর্ব থেকে জন্ম গ্রহন করেন। এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশ গ্রহন, পরিচালন, বেদোক্ত নিয়মে পূজার্চ্ছনার রীতি নীতি শিক্ষা ও প্রয়োগ, বিয়ে, পারলৌকিক কার্য ইত্যাদি সামাজিক ও পারিবারিক ধর্মীয় কার্যগুলি সম্পন্ন করার অধিকার লাভের জন্য ব্রাহ্মণ কিশোরদের উপনয়ণ করাতে হয়, যা অন্য বর্ণাশ্রয়ী প্রয়োজন পড়ে না । ব্রাহ্মণ কিশোরদের এই উপনয়ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিজ করা হয়। এ দ্বিজ মানে দ্বি-জাত, অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জাতক হবার শামিল। এখানে শ্রী গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কর্তৃক গুণ ও কর্মভেদে বর্ণের কথাটা উল্লেখ করা যায়। কেহ শুধুমাত্র জন্মাশ্রয়ী হলেই ব্রাহ্মণ হয়ে যাবেন না। প্রথমে দ্বিজ ও পরে দ্বিজোত্তম ও বিপ্র হতে হয়।
সুতরাং বাহ্মণগন পুরোহিত হতেন। এ পুরোহিত শুধু রাজা কিংবা রাজ পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিটি পরিবারের জন্য নির্ধারিত একজন পুরোহিত প্রথা সেই আদি যুগ থেকে চলে আসছে, যা এখনও বিদ্যমান আছে। বাহ্মণ পুরোহিত বেদাধি শাস্ত্র অধ্যয়ণ করে নিজেরা উজ্জিবিত হতেন, তাদের অধিনস্ত যযবানদের শাস্ত্রানুসারে পথ দেখিয়ে সাংসারিক ও আধ্যাত্বিক পথ গুলোকে সুগম করে দিতেন। এসকল কারণে বাহ্মণ পুরোহিতগন আদরণীয় ছিল এবং বাহ্মণদের পৌরহিত্ব পেশা অত্যন্ত উচুমানের ও সম্মাণিত পেশা হিসেবে বিবেচিত ছিল।
রাজা, রাজপরিবার, কিংবা সাধারণ্যের জন্যে যে বাহ্মণ পুরোহিত ছিলেন, তারা সবাই ঋষি বশিষ্ঠ, ঋষি সান্ড়িল্য কিংবা কৃপাচার্যের মত ছিলেন না। কিছু কিছু বাহ্মণ পুরোহিত ছিলেন রাজা সোমকের রাজ পুরোহিত ঋষি ঋত্বিকের মত ব্রাহ্মণত্বের অহংকারে আত্ম অহংকারী, নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণ । ঘটনাটা সংক্ষেপে খুলেই বলি। কবিগুরুর একটি কবিতা থেকে পাওয়া গল্প - রাজা সোমক ছিল প্রজা ব্যৎসল অত্যন্ত সুশাসক একজন রাজা। একটি পুত্র সন্তানের আশায় তিনি একাধিক রাণী ঘরে আনেন। অনেক দান দক্ষিণা ও চেষ্ঠার পর পরিশেষে রাজ পরিবার আলোকিত করে রাজার একটি পুত্র সন্তান হল। রাজাপুত্র বাৎস্যলে অনেক সময় রাজ কার্য ভুলে যেতেন। একদিন মহারাজ রাজ সভায় সভাসদ সমেত কার্যরত থাকা অবস্থায় অন্তঃপুর থেকে প্রিয় সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে সভায় ছেড়ে অন্তপুরের দিকে পা বাড়ালেন। এমনি সময় রাজপুরোহিত ঋষি ঋত্বিক সভায় প্রবেশ করলেন। মহারাজ কোন দিকে খেয়াল না করে সোজা অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সভায় পুণরায় সভায় ফিরে এলেন। মহারাজ রাজসভায় এসে লজ্জিত ও বিনর্মভাবে অন্তঃপুরে যাবার কারণ ব্যাখা করলেন। রাজপুরোহিত ঋত্বিকের চরণ স্পর্শ করে ক্ষমা চাইলেন প্রবেশের সময় অভ্যর্থণা জানাতে পারেনি বলে। কিন্তু রাজপুরোহিত ঋত্বিকের মন গলাতে পারেন নি।
******ক্রমশ চলবে*******
আগেই বলা হয়েছে, যিনি নগরীর হিত কামনা করেন তিনিই হবেন পুরোহিত। বাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য বর্ণের মানুষও তো ছিল, যারা নগর কিংবা রাজ্যের মঙ্গল/হিত কামনা করতো। সুতরাং রাজ পুরোহিত নামক উচ্চাশনের এ পদটিতে শুধু বাহ্মণ নিয়োগ দেয়া হতো কেন? এ সঙ্গতঃ কারনেই চলে আসে। গতকাল এখানে থেমে ছিলাম।
আগেই উল্লেখ করেছি, বর্ণচতুষ্টয়ের প্রথম এবং উচ্চতম বর্ণ হল ব্রাহ্মণ । ব্রাহ্মণ বর্ণজাত ব্যক্তিগণই সমাজে শিক্ষক, আধ্যাত্মিক গুরু, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এবং ধর্মীয় বিধানকর্তার ভূমিকা পালন করার অধিকারপ্রাপ্ত। সম্ভবতঃ বেদে ব্রাহ্মণদের বিষয়ে এভাবে উল্লেখ আছে। শাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণকুলজাত ব্যক্তিগণ বিপ্র (অর্থাৎ জ্ঞানী) এবং দ্বিজ (অর্থাৎ দু'বার জাত) হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন। ব্রাহ্মণরা অন্যান্য বর্ণের মানুষের মত একবার মাতৃগর্ব থেকে জন্ম গ্রহন করেন। এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশ গ্রহন, পরিচালন, বেদোক্ত নিয়মে পূজার্চ্ছনার রীতি নীতি শিক্ষা ও প্রয়োগ, বিয়ে, পারলৌকিক কার্য ইত্যাদি সামাজিক ও পারিবারিক ধর্মীয় কার্যগুলি সম্পন্ন করার অধিকার লাভের জন্য ব্রাহ্মণ কিশোরদের উপনয়ণ করাতে হয়, যা অন্য বর্ণাশ্রয়ী প্রয়োজন পড়ে না । ব্রাহ্মণ কিশোরদের এই উপনয়ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিজ করা হয়। এ দ্বিজ মানে দ্বি-জাত, অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জাতক হবার শামিল। এখানে শ্রী গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কর্তৃক গুণ ও কর্মভেদে বর্ণের কথাটা উল্লেখ করা যায়। কেহ শুধুমাত্র জন্মাশ্রয়ী হলেই ব্রাহ্মণ হয়ে যাবেন না। প্রথমে দ্বিজ ও পরে দ্বিজোত্তম ও বিপ্র হতে হয়।
সুতরাং বাহ্মণগন পুরোহিত হতেন। এ পুরোহিত শুধু রাজা কিংবা রাজ পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিটি পরিবারের জন্য নির্ধারিত একজন পুরোহিত প্রথা সেই আদি যুগ থেকে চলে আসছে, যা এখনও বিদ্যমান আছে। বাহ্মণ পুরোহিত বেদাধি শাস্ত্র অধ্যয়ণ করে নিজেরা উজ্জিবিত হতেন, তাদের অধিনস্ত যযবানদের শাস্ত্রানুসারে পথ দেখিয়ে সাংসারিক ও আধ্যাত্বিক পথ গুলোকে সুগম করে দিতেন। এসকল কারণে বাহ্মণ পুরোহিতগন আদরণীয় ছিল এবং বাহ্মণদের পৌরহিত্ব পেশা অত্যন্ত উচুমানের ও সম্মাণিত পেশা হিসেবে বিবেচিত ছিল।
রাজা, রাজপরিবার, কিংবা সাধারণ্যের জন্যে যে বাহ্মণ পুরোহিত ছিলেন, তারা সবাই ঋষি বশিষ্ঠ, ঋষি সান্ড়িল্য কিংবা কৃপাচার্যের মত ছিলেন না। কিছু কিছু বাহ্মণ পুরোহিত ছিলেন রাজা সোমকের রাজ পুরোহিত ঋষি ঋত্বিকের মত ব্রাহ্মণত্বের অহংকারে আত্ম অহংকারী, নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণ । ঘটনাটা সংক্ষেপে খুলেই বলি। কবিগুরুর একটি কবিতা থেকে পাওয়া গল্প - রাজা সোমক ছিল প্রজা ব্যৎসল অত্যন্ত সুশাসক একজন রাজা। একটি পুত্র সন্তানের আশায় তিনি একাধিক রাণী ঘরে আনেন। অনেক দান দক্ষিণা ও চেষ্ঠার পর পরিশেষে রাজ পরিবার আলোকিত করে রাজার একটি পুত্র সন্তান হল। রাজাপুত্র বাৎস্যলে অনেক সময় রাজ কার্য ভুলে যেতেন। একদিন মহারাজ রাজ সভায় সভাসদ সমেত কার্যরত থাকা অবস্থায় অন্তঃপুর থেকে প্রিয় সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে সভায় ছেড়ে অন্তপুরের দিকে পা বাড়ালেন। এমনি সময় রাজপুরোহিত ঋষি ঋত্বিক সভায় প্রবেশ করলেন। মহারাজ কোন দিকে খেয়াল না করে সোজা অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সভায় পুণরায় সভায় ফিরে এলেন। মহারাজ রাজসভায় এসে লজ্জিত ও বিনর্মভাবে অন্তঃপুরে যাবার কারণ ব্যাখা করলেন। রাজপুরোহিত ঋত্বিকের চরণ স্পর্শ করে ক্ষমা চাইলেন প্রবেশের সময় অভ্যর্থণা জানাতে পারেনি বলে। কিন্তু রাজপুরোহিত ঋত্বিকের মন গলাতে পারেন নি।
******ক্রমশ চলবে*******
No comments:
Post a Comment