শ্রেণী মুক্ত সমাজ কখনই সম্ভব নয় তবে জাত-পাতের ঝামেলা ও
বৈষম্যহীন সনাতনী সমাজ সম্ভব
অরুন চন্দ্র মজুমদার
আমাদের সমাজে বর্ণবাদ, বর্ণপ্রথা বা কৌলিণ্য প্রথা তথা জাত-পাতের ঝামেলা এক সময় ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। সামাজিক বিবর্তণের ফলে একটু কমেছে বটৈ কিন্তু এখনো জাত-পাতের ঝামেলা হিন্দু সমাজে বহাল আছে। তবে চরম কৌলিণ্য প্রথা এখন নাই বললেই চলে। চরম কৌলিণ্য প্রথা মানে উচ্চ বংশীয় মান মর্যাদা। চরম কৌলিণ্য প্রথার সময় বিদ্যাহীন, বিত্তহীন হয়েও কোন মানুষ কিংবা পরিবার শুধু উচ্চ কৌলিণ বংশীয় মর্যাদায় সমাজের উচ্চাশনে বসে প্রভাব খাটাতে পারতেন। সামাজিক বিবর্তনের সুবাদে বর্তমান সমাজে সে সুযোগ নেই। আমাদের সমাজে বর্তমান বর্ণভেদ প্রথার যে রুপটি এখন দেখা যায়, এটি মূলতঃ অর্থনৈতিক অসাম্যতা নির্ভর বর্ণভেদ প্রথা, এটি মোটেই উচ্চ বংশীয় কৌলিণ নির্ভর নয়। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পারিবারিক সম্বন্ধ স্হাপনের ক্ষেত্রে পাত্রীপক্ষ পাত্রপক্ষের বিশেষ করে পাত্রের আর্থিক অবস্হা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। ছেলেটির পারিবারের আগের অবস্হা কি ছিল সেটাতো চিন্তায় আনেই না, বরং ছেলেটির পরিবারে ঘনিষ্ট অন্য সব সদস্য/সদস্যার সামাজিক ও আর্থিক অবস্হান কী সেটা বিবেচনার ক্ষেত্রে গৌণ। এটাতো আরেঞ্চ ম্যারেজের ক্ষেত্রে। দেখুন লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতীক্রম ব্যতীত যে কোন মেয়েই আর্থিক সামর্থ ও সম্ভাবনাহীন ছেলের প্রস্তাবে রাজী হন না। এ ব্যাপারে আজকের প্রণয়প্রার্থী যুবক/যুবতীরাই ভাল বলতে পারবেন।
সনাতন ধর্মের এই তথা জাত-পাতের ঝামেলা /প্রথা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এটিতে ধর্মাবরন থাকলেও প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে পুরোপুরি আর্থিক নির্ভর একথা অনেকই পরোক্ষ ভাবে মানতে বাধ্য। এজন্যে স্বামীজি বিবেকানন্দ /শ্রী রামকৃষ্ণ (সঠিক মনে পড়ছে না) বলেছেন “জাত ডুকেছে ভাতের হাঁড়ির ভিতর” ।
সনাতন ধর্ম এই প্রথা নিয়ে কি বলে সেটা না দেখে অনেকেই ধর্মকেই আক্রমন করে বসেন। আমি ধর্ম নিয়ে বেশি কিছু বলবো না- শুধু বলবো সমাজে শাস্ত্রে বর্ণিত এই প্রথার বিকৃত রূপই প্রচলিত ছিল।
সনাতন ধর্মে শাস্ত্র বর্ণিত যে বর্ণপ্রথা এসেছে তা হলো গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুসারে যা গীতায় বলা হয়েছে। তবে বৈষম্যের কথা বলা হয়নি। এমন কোন মানব সমাজ হতে পারে না বা পারবে না যেখানে শ্রেণী থাকবে না। আমরা কি বলতে পারবো বর্ণপ্রথাকে গালি দেওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের মাঝে শ্রেণী নেই? আমরা কি বলতে পারবো সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রেণী নেই? রাজতন্ত্রের কথা নাই বা বললাম- সেখানে তো শ্রেণী স্বীকার্য হয়ে আছে।
কর্ম ও গুণে সমাজে যে শ্রেণীবিভাগ আছে, এটি ছিল, বর্তমান সমাজেও আছে, ঈশ্বরের সৃষ্টি যতদিন আছে ততদিনই থাকবে। সমাজে রয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, শ্রমিক প্রভৃতি শ্রেণীর লোক। আর এই শ্রেণীবিভাগটা গুণ ও কর্মের অনুসারেই হয়েছে।
কিন্তু শ্রেণী বিন্যাসের সাথে আমাদের আমরা যোগ করলাম শ্রেণী বৈষম্য, যা পুরোপুরি অর্থ নির্ভর এবং এটি সমাজের বিশেষতঃ হিন্দু সমাজের অগ্রগতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে সামর্থ্য নির্ভর শ্রেণী বৈষম্য। এগুলো তো দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই- আপনার আমার চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে। আপনি- আমিই বৈষম্যগুলো করে যাচ্ছি বা এর শিকার হচ্ছি ( যদিও পণ্ডিতদের আলোচনায় দোষ শুধু সনাতন ধর্মের)।
প্রচলিত বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করা যাবে- যদি মানুষ তার মানসিকতা পরিবর্তন করে। কিন্তু শ্রেণীহীন করা সম্ভব নয়, কখনই সম্ভব নয়। কাউকে না কাউকে তো শিক্ষার ভার নিতে হবে। কাউকে না কাউকে তো চিকিৎসক হতে হবে। কাউকে না কাউকে তো আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে। কাউকে না কাউকে হতে হবে রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী। কাউকে হতে হবে সৈনিক। কাউকে হতে হবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। তাহলে কি হলো? শ্রেণী তো রয়ে গেল। তবে এরা যাতে কেউ কাউকে ঈর্ষা না করে, এদের মধ্যে কেউ যাতে কারও অধিকার না হরণ করে- এইসব ব্যাপারগুলো সমাজে নিশ্চিত করা যেতে পারে যা গড়ে তুলবে বৈষম্যহীন সমাজ।
এখন কেউ যদি বলে- আমরা শ্রেণীহীন সমাজ গঠন করব তবে তার চেয়ে মিথ্যুক দুনিয়াতে আর কেউ নেই। তার চেয়ে অজ্ঞানী-অন্ধ দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সে শুধু বলতে পারে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করব। এর বাইরে সে যেতে পারবে না। স্বয়ং ভগবানও তা করতে পারবেন না, কারণ 'স্রষ্টার আর সৃষ্টির'-শুরু থেকেই শ্রেণী বিভাগ হয়ে গেছে।
ভগবান সমাজের মানুষের শ্রেণী বিন্যাস করেছেন, এমনকি প্রকৃতিতেও শ্রেণী শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। এসব শ্রেণী বিন্যাস সৃষ্টি রক্ষার স্বার্থে হয়তো করা হয়েছে। কিন্তু তিনি শ্রেণী বৈষম্য করেননি। একটু লক্ষ্য করলে বুঝা যায় এক এক শ্রেণী গুণ ও কর্ম ভেদে এক এক দিয়ে সমৃদ্ধ। কিন্তু মানুষ এটিকে পূঁজি করে যা করেছে, তা হল বৈষম্য। আর এ শ্রেণী বৈষম্যটাই হলো সভ্যতার কাল। আমরা ইচ্ছে করলেও গুণ ও কর্ম ভেদে শ্রেণী বিন্যাস মুছাতে পারব না, কিন্তু আমাদের সৃষ্ট শ্রেণী বৈসম্য কমাতে পারি প্রকৃত শিক্ষার আলো দিয়ে।। ******অরুন চন্দ্র মজুমদার, ৩০/০৭/২০১২ইং
অরুন চন্দ্র মজুমদার
আমাদের সমাজে বর্ণবাদ, বর্ণপ্রথা বা কৌলিণ্য প্রথা তথা জাত-পাতের ঝামেলা এক সময় ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। সামাজিক বিবর্তণের ফলে একটু কমেছে বটৈ কিন্তু এখনো জাত-পাতের ঝামেলা হিন্দু সমাজে বহাল আছে। তবে চরম কৌলিণ্য প্রথা এখন নাই বললেই চলে। চরম কৌলিণ্য প্রথা মানে উচ্চ বংশীয় মান মর্যাদা। চরম কৌলিণ্য প্রথার সময় বিদ্যাহীন, বিত্তহীন হয়েও কোন মানুষ কিংবা পরিবার শুধু উচ্চ কৌলিণ বংশীয় মর্যাদায় সমাজের উচ্চাশনে বসে প্রভাব খাটাতে পারতেন। সামাজিক বিবর্তনের সুবাদে বর্তমান সমাজে সে সুযোগ নেই। আমাদের সমাজে বর্তমান বর্ণভেদ প্রথার যে রুপটি এখন দেখা যায়, এটি মূলতঃ অর্থনৈতিক অসাম্যতা নির্ভর বর্ণভেদ প্রথা, এটি মোটেই উচ্চ বংশীয় কৌলিণ নির্ভর নয়। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পারিবারিক সম্বন্ধ স্হাপনের ক্ষেত্রে পাত্রীপক্ষ পাত্রপক্ষের বিশেষ করে পাত্রের আর্থিক অবস্হা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। ছেলেটির পারিবারের আগের অবস্হা কি ছিল সেটাতো চিন্তায় আনেই না, বরং ছেলেটির পরিবারে ঘনিষ্ট অন্য সব সদস্য/সদস্যার সামাজিক ও আর্থিক অবস্হান কী সেটা বিবেচনার ক্ষেত্রে গৌণ। এটাতো আরেঞ্চ ম্যারেজের ক্ষেত্রে। দেখুন লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতীক্রম ব্যতীত যে কোন মেয়েই আর্থিক সামর্থ ও সম্ভাবনাহীন ছেলের প্রস্তাবে রাজী হন না। এ ব্যাপারে আজকের প্রণয়প্রার্থী যুবক/যুবতীরাই ভাল বলতে পারবেন।
সনাতন ধর্মের এই তথা জাত-পাতের ঝামেলা /প্রথা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এটিতে ধর্মাবরন থাকলেও প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে পুরোপুরি আর্থিক নির্ভর একথা অনেকই পরোক্ষ ভাবে মানতে বাধ্য। এজন্যে স্বামীজি বিবেকানন্দ /শ্রী রামকৃষ্ণ (সঠিক মনে পড়ছে না) বলেছেন “জাত ডুকেছে ভাতের হাঁড়ির ভিতর” ।
সনাতন ধর্ম এই প্রথা নিয়ে কি বলে সেটা না দেখে অনেকেই ধর্মকেই আক্রমন করে বসেন। আমি ধর্ম নিয়ে বেশি কিছু বলবো না- শুধু বলবো সমাজে শাস্ত্রে বর্ণিত এই প্রথার বিকৃত রূপই প্রচলিত ছিল।
সনাতন ধর্মে শাস্ত্র বর্ণিত যে বর্ণপ্রথা এসেছে তা হলো গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুসারে যা গীতায় বলা হয়েছে। তবে বৈষম্যের কথা বলা হয়নি। এমন কোন মানব সমাজ হতে পারে না বা পারবে না যেখানে শ্রেণী থাকবে না। আমরা কি বলতে পারবো বর্ণপ্রথাকে গালি দেওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের মাঝে শ্রেণী নেই? আমরা কি বলতে পারবো সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রেণী নেই? রাজতন্ত্রের কথা নাই বা বললাম- সেখানে তো শ্রেণী স্বীকার্য হয়ে আছে।
কর্ম ও গুণে সমাজে যে শ্রেণীবিভাগ আছে, এটি ছিল, বর্তমান সমাজেও আছে, ঈশ্বরের সৃষ্টি যতদিন আছে ততদিনই থাকবে। সমাজে রয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, শ্রমিক প্রভৃতি শ্রেণীর লোক। আর এই শ্রেণীবিভাগটা গুণ ও কর্মের অনুসারেই হয়েছে।
কিন্তু শ্রেণী বিন্যাসের সাথে আমাদের আমরা যোগ করলাম শ্রেণী বৈষম্য, যা পুরোপুরি অর্থ নির্ভর এবং এটি সমাজের বিশেষতঃ হিন্দু সমাজের অগ্রগতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে সামর্থ্য নির্ভর শ্রেণী বৈষম্য। এগুলো তো দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই- আপনার আমার চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে। আপনি- আমিই বৈষম্যগুলো করে যাচ্ছি বা এর শিকার হচ্ছি ( যদিও পণ্ডিতদের আলোচনায় দোষ শুধু সনাতন ধর্মের)।
প্রচলিত বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করা যাবে- যদি মানুষ তার মানসিকতা পরিবর্তন করে। কিন্তু শ্রেণীহীন করা সম্ভব নয়, কখনই সম্ভব নয়। কাউকে না কাউকে তো শিক্ষার ভার নিতে হবে। কাউকে না কাউকে তো চিকিৎসক হতে হবে। কাউকে না কাউকে তো আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে। কাউকে না কাউকে হতে হবে রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী। কাউকে হতে হবে সৈনিক। কাউকে হতে হবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। তাহলে কি হলো? শ্রেণী তো রয়ে গেল। তবে এরা যাতে কেউ কাউকে ঈর্ষা না করে, এদের মধ্যে কেউ যাতে কারও অধিকার না হরণ করে- এইসব ব্যাপারগুলো সমাজে নিশ্চিত করা যেতে পারে যা গড়ে তুলবে বৈষম্যহীন সমাজ।
এখন কেউ যদি বলে- আমরা শ্রেণীহীন সমাজ গঠন করব তবে তার চেয়ে মিথ্যুক দুনিয়াতে আর কেউ নেই। তার চেয়ে অজ্ঞানী-অন্ধ দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সে শুধু বলতে পারে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করব। এর বাইরে সে যেতে পারবে না। স্বয়ং ভগবানও তা করতে পারবেন না, কারণ 'স্রষ্টার আর সৃষ্টির'-শুরু থেকেই শ্রেণী বিভাগ হয়ে গেছে।
ভগবান সমাজের মানুষের শ্রেণী বিন্যাস করেছেন, এমনকি প্রকৃতিতেও শ্রেণী শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। এসব শ্রেণী বিন্যাস সৃষ্টি রক্ষার স্বার্থে হয়তো করা হয়েছে। কিন্তু তিনি শ্রেণী বৈষম্য করেননি। একটু লক্ষ্য করলে বুঝা যায় এক এক শ্রেণী গুণ ও কর্ম ভেদে এক এক দিয়ে সমৃদ্ধ। কিন্তু মানুষ এটিকে পূঁজি করে যা করেছে, তা হল বৈষম্য। আর এ শ্রেণী বৈষম্যটাই হলো সভ্যতার কাল। আমরা ইচ্ছে করলেও গুণ ও কর্ম ভেদে শ্রেণী বিন্যাস মুছাতে পারব না, কিন্তু আমাদের সৃষ্ট শ্রেণী বৈসম্য কমাতে পারি প্রকৃত শিক্ষার আলো দিয়ে।। ******অরুন চন্দ্র মজুমদার, ৩০/০৭/২০১২ইং
No comments:
Post a Comment